Books

বিজন ভট্টাচার্য নাটক Pdf Download (All)

All বিজন ভট্টাচার্য নাটক Pdf book free Download links:

 

গোত্রান্তর নাটক pdf download links

কিত্তনখোলা নাটক pdf 
দেবীগর্জন নাটক pdf download
সওদাগরের নৌকা নাটক pdf download
শ্রুতি নাটকের বই pdf

আরও পড়ুনঃ

অন্তঃশূন্যে অন্ধ হিম; হিমায়িত এক রহস্যের উপাখ্যান
• পাঠ সংক্ষেপঃ
ঢাকায় বেড়ে ওঠা বড্ড খেয়ালি এবং অন্যরকম একটা ছেলে ‘রাশেদ খন্দকার’। চিলেকোঠার ছোট্ট একটি ঘর, একটি রকিং চেয়ার, মেঝেতে বিছানো জাজিম, আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বইময় একটি মনোরমা জগতের ভেতর দিয়ে খুব সুন্দর যাচ্ছিল রাশেদের দিনকাল৷ যৌবনের শুরুর দিককার সর্বগ্রাসী অনিয়ন্ত্রিত একটি ঝড় যেন তার ভেতরকার যাবতীয় অস্থিরতা নিভিয়ে দিল। বান্ধবী ইরার চলে যাওয়ার পর থেকে একাকিত্বই তার নিত্যকার সঙ্গী।
বড়ভাই মাহফুজের পরামর্শে ঘরকুনো স্বভাবের এই রাশেদ বাবা-মা’কে ছেড়ে পড়ালেখার জন্য পাড়ি জমায় সুদূর রাজশাহীতে। একাকিত্ব ঘুচিয়ে আনতে এবং বন্ধু নাজমুলের একান্ত আবদারে তার বাড়িতে বেড়াতে যায়। ঝিমিয়ে পড়া জীবনে রাশেদের জন্য এই সফরটা একটা প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে পুঠিয়ার একটি পুরোনো জমিদার বাড়ি।
জমিদার বাড়ির আঙিনায় সর্বশেষ জমিদার সোমনাথ বাবুর নিষিদ্ধ ‘নীলাম্বরী’র ধ্বংসস্তূপের হাতছানি ফিরে ফিরে ভাবিয়ে তোলে রাশেদকে। এখানকার সাবেক কর্মচারী বয়োবৃদ্ধ মুনিম বাবুর কাছে নীলাম্বরী নামক এই বাঈজী বাড়ি এবং সোমনাথ বাবুর অমায়িক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে শোনার পর একটি অজানা কৌতুহল চেপে বসে রাশেদের মাথায়। তার দিনমান ব্যস্ততা হয়ে ওঠে সোমনাথ বাবু।
মৃত্যুর আগে একটি ডায়েরি রাশেদের হাতে তুলে দিয়ে যান মুনিম বাবু। যে ডায়েরির পাতায় পাতায় সোমনাথ বাবু একে একে বর্ণনা করেছেন নিজের না-বলা জীবনালেখ্য। লিখেছেন তার বিমাতা কুমুদিনী দেবীর কথা। লিখেছেন স্ত্রী কমলা ও একমাত্র পুত্রসন্তান সুদীপ্তের কথা। সাথে সাথে এঁকেছেন জুবায়দা চৌধুরী নাম্নী এক অনিন্দ্য রূপবতীর রূপের অল্পবিস্তর ইতিবৃত্ত।
একদা শীতের শুরুতে জমিদার বাবুর অনুরোধে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র-শিক্ষকের একটি দল। দলের দুজন মেয়ের একজন ছিলেন হিন্দু নীলিমা ও আরেকজন সেই অপরূপ সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী জুবায়দা চৌধুরী। সপ্তাহকালব্যাপী এই নিমন্ত্রণের সাতদিনের মাথায় ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত এবং তারই সাথে আকস্মিক এক ঘটনা। জ্বলেপুড়ে ভস্ম হয়ে যায় সোমনাথ বাবুর সর্বসাধারণ–নিষিদ্ধ ‘নীলাম্বরী’। ভস্ম হয়ে যান জমিদার বাবু নিজেও।
এরপরে শত করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি সোমনাথ বাবুর স্ত্রী কমলা এবং শিশুপুত্র সুদীপ্তকে। খোঁজ মেলেনি সোমনাথ বাবুর আমন্ত্রিত অতিথি নীলিমা ও আকাঙ্ক্ষিত প্রিয়দর্শিনী জুবায়দারও। সেদিন কি তাহলে এদের সবাই সেই আগুনে ভস্ম হয়েছিলেন? জানতে হলে ডুবতে হবে ‘অন্তঃশূন্যের অন্ধ হিমে’৷
• পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
অনেকদিন হয়ে গেল বইয়ের ভুবন থেকে দূরে আছি। ধরা হয় না, তাই পড়া হয় না। হঠাৎ কাছের এক সহপাঠীর মাধ্যমে পেলাম ‘অন্তঃশূন্যে অন্ত হিম’। বই এবং লেখিকার নাম দেখে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো। নাম দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম লেখিকা কোন এক বোগদাদি এবং এটা বোধয় অনূদিত উপন্যাস। ভুল ভাংলো ফ্ল্যাপের পেছনের দিকটায় তার পরিচিতি পড়ার পর।
আমি সাধারণত থ্রিলার বা রহস্যপোন্যাস খুব কম পড়ি। এমনিতেই পড়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই গল্পটার থিম পড়ার পরে বেশ আয়েশ করেই পড়তে বসে পড়লাম। শুরুর দিকে একে একে সব বর্ণনা দিয়ে যাওয়াটা খানিকটু হালকা মনে হলেও কয়েক পৃষ্ঠার পর যেন তলিয়ে যেতে লাগলাম। বইয়ের জগতে একজন নবীন লেখিকার লেখা যেমনটা হওয়ার কথা বলে ভেবেছিলাম, পেলাম ঠিক তার উলটো।
গল্পের টাইমলাইন এবং সেটিং করতে গিয়ে লেখিকা যেমন মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, প্রতিটি বিষয়ের সাবলীল এবং মনোহরি বর্ণনা দিয়ে যেভাবে গল্পকে টেনে নিয়ে গেছেন, সচরাচর এমনটা একজন নবীন বইওয়ালা লেখক বা লেখিকার মধ্যে পাওয়া দুষ্কর। গল্পের থিম বাছাইয়ে যেমন নতুনত্ব ছিল (অন্তত আমার কাছে তা-ই মনে হয়েছে), ঠিক তেমনই উত্তেজনা ছিল প্রতিটি প্লট এবং অধ্যায়ে। প্রতিটি ক্যারেক্টারের বর্ণনায় ছিল ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ।
ক্যারেক্টারের কথা উঠতেই মনে পড়ে গেল লেখিকার বর্ণনায় জীবন্ত এক পরমা সুন্দরী জুবায়দার কথা।বইটা পড়েছি আরো দেড় কি দুমাস আগে। কিন্তু দারুণ এই বইটায় জুবায়দার কথা ভুলতে পারছি না বলেই হয়তো এতোদিন পরে হলেও রিভিউ লিখতে বসা। জুবায়দা নামটায় যেমন রাজকীয়তা আছে, আমার মনে হয় লেখিকা এই নারীটিকে তারচেও সুন্দর করে উপস্থাপনে সক্ষম হয়েছেন। ঠিক যতটা সুন্দর হলে রাশেদ তার প্রেমে পড়তে পারে। যতটা ব্যক্তিত্ববান হলে মায়ের বয়েসী জুবায়দাকে আড়ালে আবডালে চেতনে অবচেতনে কল্পনা করতে পারে। ঠিক যতটা সুন্দর হলে…
একটি বিশেষ ক্যারেক্টারকে স্মরণ না করে পারছি না। কেয়ারটেকার ‘নুরু মিয়া’ দিনরাত কী অবিরাম সেবা করার মধ্য দিয়ে রাশেদের খেয়াল রাখত! মনে কতো আশা ছিল সে একটি বিশাল রেস্তোরার মালিক হবে। এবং নিজহাতে বাবুর্চির কাজটা সে একলাই সামাল দেবে। এই নুরু মিয়ার প্রতি অবচেতনেই আমার একটা মায়া জন্মে গিয়েছিল, তাকে একটি নির্মম নিয়তির দিকে ঠেলে দিয়ে লেখিকা সেই মায়াটাকে নিঃশব্দে হত্যা করেছেন।
গল্পের ফ্লো ধরে রাখতে সর্বত প্রচেষ্টা করা হয়েছে। গল্পের সেটাপে সোমনাথ বাবুর ডায়েরিটা খুবই প্রয়োজন ছিল। এই একটি ডায়েরি লিখতে লেখিকা যে নিমগ্ন শ্রম দিয়েছেন, তা সহজেই অনুমেয়। প্রাত্যহিক রোজনামচার শুরুতে কোথাও উইলিয়াম শেক্সপীয়ার, কোথাও প্লেটো, কোথাও মার্ক টোয়েন এবং কোথায় কবীগুরু রবী ঠাকুরের বর্ণালী পঙক্তিগুলো কোট করায় সোমনাথ বাবুর ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান ও অভিরুচির মধ্য দিয়ে লেখিকার সাহিত্যসুধা এবং রুচিবোধ আরো সুক্ষ্মভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
গল্পের ক্লাইমেক্স এবং এন্ডিংয়ে একটা টুইস্ট আছে, যেটা না থাকলেই নয়। কিন্তু পাঠক হঠাৎ টের পাবেন যে, বিষয়টা এমনভাবে থাকতে হয় না। অর্থাৎ, হঠাৎ ধাক্কা খেলে যেমন হয় ঠিক তেমনই। এখানে লেখিকা এমন একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন, যা সত্যিই থ হয়ে যাওয়ার মতো। গল্পকার ও ঔপন্যাসিকদের স্বার্থকতা বোধকরি এখানেই।
• কিছু অসঙ্গতিঃ
নির্মাতা নির্মাণ করলে এর আলোচনা যেমন হবে, সমালোচনাও তেমনই স্বাভাবিক একটা বিষয়। সমালোচনার জন্য নয়, বরং একজন ছোটখাটো সচেতন পাঠক হিসেবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে কিছু বিষয়ের সাংঘর্ষিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। যা নিচে তুলে ধরছি।
১. নিষিদ্ধ ‘নীলাম্বরী’ জ্বলেপুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়ার কারণে সোমনাথ বাবুসহ বেশ কিছু জীবন হারিয়ে যায়। যেহেতু এই আগুন লাগার বিষয়টাই সবচেয়ে বড় এবং সবকিছুর মূল, সেহেতু বিষয়টার একটা ক্লিয়ারেন্স থাকলে বোধহয় ভালো হতো। বিশাল একটা জমিদার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটবে, সোমনাথ বাবুর মতো নন্দিত গুণীজন, পরোপকারী এবং মহৎ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ মারা পড়বে, অথচ প্রশাসনিক তদন্ত হবে না, মামলা মোকদ্দমা হবে না, এবং অগ্নিসংযোগের মূল হোতা চিহ্নিত হবে না, এ হতে পারে না। বিষয়টা অস্বাভাবিক।
তদন্তে অন্য কেউ ধরা না পড়লেও লেখিকা যদি এলাকাবাসির সন্দেহের তীর সোমনাথ বাবুর দিকেও ছুড়ে দিতেন, তাও বিষয়টার একটা রফাদফা হয়ে যেত। কিন্তু ‘শেষ হয়েও হলো না শেষ’– উপন্যাসের এই রীতিকে অক্ষুণ্ণ রাখার কথা কেউ যদি বলেন, তাহলে আর প্রশ্নই থাকে না।
২. নীলাম্বরী যখন পুড়ে রাখ হয়ে যায়, সে সময়ের আরো বহু আগ থেকেই সোমনাথ বাবু ভবনটাতে ছিলেন। সঙ্গত কারণেই তিনি আর ফিরতে পারেননি। মৃত্যুর পূর্বে সোমনাথ বাবু ডায়েরিও লিখেছিলেন এবং সেই দিনের রোজনামচা ছিল যথেষ্ট দীর্ঘ। প্রশ্ন হলো, সবকিছু পুড়ে ছাঁই হয়ে যাওয়ার পরেও ডায়েরি কী করে অক্ষত রয়ে গেল? অথচ যেখানে বাঁচতে পারলেন না জ্বলজ্যান্ত মানুষগুলো। এরও কোনো স্পষ্ট বর্ণনা কোত্থাও নেই৷ দুয়েক বাক্যে আশাকরি বিষয়টা ক্লিয়ার করা যেত।
৩. পুরো বইয়ের আদ্যোপান্ত রাশেদের জবানবন্দিতে উত্তম পুরুষে বর্ণিত হয়েছে। তাই সবকিছু রাশেদের পরিদর্শিত বিষয়ের বর্ণনা হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং এটাই সঙ্গত। কিন্তু বইয়ের সতের নং অধ্যায়ে গিয়ে হঠাৎ জুবায়দা চৌধুরীর একলা বিকেলের কিছু ভাবনাকে বর্ণনা করা হয়েছে, আবার এই অধ্যায়ের শেষেই নাম পুরুষে জুবায়দা চৌধুরীর প্রবাসী ছেলের সাথে আলাপনের ব্যাপারে বলা হয়েছে। রাশেদ যেখানে পুরোপুরি অনুপস্থিত। যে সব ভাবনার কিছুই সে জানে না।
উত্থাপিত বিষয়গুলো একান্তই আমার নিজের। এর সঙ্গে কারো ঐক্যমত্য পোষণ করা আবশ্যক নয়। লেখিকার কাছে যদি সঙ্গত মনে হয়, আশাকরি পরবর্তী মুদ্রণে বিষয়টার প্রতি লক্ষ্য করবেন।
পরিশেষে লেখিকার সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা ও নেক হায়াত কামনা করি। সুস্থ সুন্দর গতিময় ও অবিচ্ছিন্ন হোক তার লেখালেখির ইহযাত্রা, এবং এক ঘুমভাঙা সকালে উঠে দেখবেন তার বই বেস্টসেলার এ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছে, এই দুয়া করি।
ইসহাক নাজির | রাত ০২:২৭ মিনিট |
২৬.০৮.২০২১ইং | বৃহস্পতিবার |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!