Books
(All New) নামহট্ট বই Pdf Download
বইঃ নামহট্ট বই Pdf Download লিঙ্ক ফ্রি –
➤ Download Link 1 (Google Drive)
ইসকন বই pdf download – প্রশ্ন করুন উত্তর পাবেন pdf
আরও পড়ুনঃ
বইয়ের নাম:পথের পাঁচালী
লেখক:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
রিভিউ লিখেছেন:আদনান রাফিন
বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,বাংলার সাধারণ মানুষের সহজ-সরল জীবনের অসাধারণ আলেখ্য নির্মাণ করে বাংলা কথাসাহিত্যে যেকজন লেখক অমর হয়ে আছেন তাদের মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম।বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বনগ্রাম মহাকুমার মুরারিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনের অভিন্ন সম্পর্কের চিরায়ত তাৎপর্যে তার কথাসাহিত্য মহিমান্বিত।
‘পথের পাঁচালী’ বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা অন্যতম সেরা কালজয়ী উপন্যাস।সাহিত্যমূল্য বিচারে এটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ রচনা তো বটেই,বাংলা সাহিত্যেরই অন্যতম সেরা উপন্যাস।এ উপন্যাসটি গ্রামীণ জীবনের প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাই-বোনের আনন্দিত জীবনের আখ্যান নিয়ে রচিত হয়েছে। কিন্তু উপন্যাসটি ভাই-বোনের চিরায়ত সম্পর্কের মধ্যেই থেমে থাকেনি।
‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটি মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত।
ক.বল্লালী-বালাই
খ.আম-আঁটির ভেঁপু
গ.অক্রূর সংবাদ
উপন্যাসের প্রথমভাগে দেখা যায় একজন বিধবা নারীর জীবনের শেষ ভাগের সামাজিক পরিস্থিতি তথা তৎকালীন সমাজের নারীদের দুর্দশা।যেখানে ইন্দির ঠাকুরুন চরিত্রের মাধ্যমে চিত্রিত হয়েছে সেইসব অসহায় নারীর শেষ জীবনের অসহায়ত্বের গল্প।
উপন্যাসের দ্বিতীয় ভাগ তথা ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ এ অংশটিই উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয়।যেখানে অপু ও দুর্গা দুই ভাইবোন।যারা হতদরিদ্র পরিবারের বেড়ে উঠেছে।কিন্তু এই দারিদ্রতা তাদের শৈশবে প্রধান হয়ে ওঠেনি।বরং খোলামেলা গ্রামীণ-জীবন,সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা,বর্ষার দিনে আম কুড়ানো এবং বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে তাদের কৌতুহল যেন মানুষের চিরায়ত শৈশবকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।এ অংশে অপু-দুর্গার জীবনের আনন্দময় সব স্মৃতি ছাড়াও প্রাপ্তি-বঞ্চনা সকল অনুভূতিরই দেখা পাওয়া যায়।অপু-দুর্গার বাবা ‘হরিহর’ চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে তৎকালীন শিক্ষিত সমাজের দৈন্যদশা।আর সর্বজয়া তো পল্লি-মায়ের শাশ্বত চরিত্র হয়ে উঠেছে!
এই উপন্যাসের তৃতীয় অংশ অর্থাৎ ‘অক্রূর সংবাদ’ অংশের মাধ্যমে ধনী-গরিবের বৈষম্যের চিত্র সুচারুরূপে চিত্রিত হয়েছে।যেখানে আর্থিক দৈন্যদশার কারণে হরিহর ও তার পরিবারকে ছেড়ে যেতে হয় অপু-দুর্গার ছোট্ট জীবনের আনন্দময় স্মৃতির আঁতুড়ঘর নিশ্চিন্দিপুরকে!একটুখানি আর্থিক স্বচ্ছতার লোভে স্মৃতিবিজড়িত নিশ্চিন্দিপুর ছাড়ার পরও কি হরিহরের পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছিল?কিংবা কি হয়েছিল তাদের পরিণতি-তা জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’।
এ পর্যায়ে মনে হতে পারে,তাহলে তো উপন্যাসটি আমাদের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনের সাধারণ আখ্যান ছাড়া কিছুই নয়!আসলেই তাই।আকর্ষণীয় কিংবা অবাক করে দেওয়ার মতো কোনো গল্প নাই-একথা সত্য তবে রয়েছে আমাদের খুবই পরিচিত এই সমাজ এবং মানুষগুলোর সূক্ষ্ম ও অনুপুঙ্খ বর্ণনা।এক্ষেত্রে লেখক কোন কৃত্রিমতার আশ্রয় নেননি।বরং প্রতিটি চরিত্রের কাজের পাশাপাশি তার চিন্তা ও কল্পনার অভূতপূর্ব এক মিশ্রণ রয়েছে এ উপন্যাসে।সোনাডাঙ্গা মাঠ,আম কুড়ানো, শকুনের ডিম সংগ্রহ,বনভোজন কিংবা অপুর কল্পনার জগৎ প্রভৃতির মাধ্যমে লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেন আমাদের শৈশবের স্মৃতিগুলোরই পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছেন।এ সবই যেন আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় আমার সেই শৈশবের গ্রামীণ জীবনে।কাকতালীয় হলেও সত্য,আমি গ্রামে বেড়ে উঠলেও বর্তমানে বাস করি শহরে।এ কারণে উপন্যাসের অনেক অংশ আমার জীবনের সাথে কিছুটা হলেও মিলে যায়।
এছাড়া এ উপন্যাসে রয়েছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য,তৎকালীন সমাজের ধর্মীয় কুসংস্কার সহ আরও অনেক কিছুই।বস্তুত,এই উপন্যাসটি আদি ও বর্তমান সমাজের সামাজিক রীতিনীতি ও কুসংস্কারেরই প্রতিচ্ছবি।বলা বাহুল্য,এই সামাজিক বৈষম্য আজকের একাবিংশ শতাব্দীর উন্নত সমাজেও পরিলক্ষিত হয়।আর এখানেই লেখকের সার্থকতা ফুটে উঠেছে।
পরিশেষে বলব,বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অপুর দৃষ্টিতে শৈশব-স্মৃতির যে চিত্র অঙ্কন করেছেন, তা প্রতিটি মানুষকেই তার শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য।প্রতিটি সাহিত্যপ্রেমী মানুষ অবশ্যই এই উপন্যাসটি একবার পড়ে দেখতে পারেন।