অনুভূতির অভিধান তাহসান খান Pdf Download
onuvutir ovidhantahsan khan pdf book free download – অনুভূতির অভিধান Pdf Download by তাহসান খান:
বইঃ অনুভূতির অভিধান
লেখকঃ তাহসান খান
মূল্য : ২০০ টাকা
প্রকাশনী : অধ্যয়ন
ক্যাটাগরি: গল্প
১ম প্রকাশঃ বইমেলা ২০২১
আরও দেখুন-
চার ইঞ্চি কপালঃ তোমার কি “আনন্দ আশ্রম” ছবিটার কথা মনে আছে। কেন থাকবে না। মল্লিকা অসুস্থ বলে আমি ওকে দেখতে গিয়েছিলাম আর সেখানেই তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হল. ড্রইং রুমের ফ্লোরে বসে তুমি ভিসিআরে “আনন্দ আশ্রম” দেখছিলে আর লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের পানি মুছছিলে। সেদিন তোমার এঁ দৃশ্য দেখে আমি মনে মনে হেসেছিলাম কিন্ত যেদিন আমি বাসায় বসে টিভি পর্দায় আনন্দ আশ্রম দেখেছিলাম তখন আমার অবস্থাও তোমার মতই হয়েছিল তবে আমার কান্নার দৃশ্য কেউ দেখেনি। দেখবে কেমন করে কারণ তুমি যে গভীর জলের মাছ। এই ভাল হবে না বলছি। আমাকে নিয়ে তামাশা করলে আমি কিন্তু তোমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ব। তুমি আমার কচু করবে। তাই না! আচ্ছা, এক্ষুণি দেখাচ্ছি মজা ।
দৌড়ে নিয়োধারার টির বেক ননি বন জকি এসে দেখে হামীম নেই। কোথায় আর যাবে। যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন হামীমের শরীরে পানিটা না দেয়া পর্যন্ত শান্তি নেই মীরার। পানির জগ হাতে নিয়ে অন্য দিকে ফিরতেই পিছন থেকে হামীম এসে মীরাকে জড়িয়ে ধরল অমনি ঠাস করে পড়ে গিয়ে জগটা ভেঙে গেল আর মেঝেতে পানিতে একাকার হয়ে গেল। মীরাকে ছেড়ে হামীম ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলল- আমি বারবার বলি, ইয়ার্কির নাম লোকশান, ইয়ার্কি করো না, ইয়ার্কি করলে ক্ষতি হবে নিশ্চিত, তারপরও আমার কথা শোন না। তাহলে তুমি আমাকে ক্ষ্যাপাও কেন! ক্ষ্যাপাই মানে! আমি কি মিথ্যা বলেছি না কী। তুমি যদি গভীর জলের মাছ না হবে তবে আমার মত ছেলেকে পাগল করলে কিভাবে। দীর্ঘ ত্রিশটি বছর একা একা কাটিয়েছি । কই, কোন মেয়ে তো আমাকে পটাতে পারেনি। এই তুমি এসে আমার সর্বনাশটা করলে। হঠাৎ আমাকে ভালবেসে ফেললে । ও…ভাল তাহলে আমি একাই বেসেছিলাম! তুমি বুঝি আমাকে ভালবাসনি? আমি তো ভালবেসেছি বিপদে পড়ে। তুমি যদি আমাকে টার্গেট না করতে, আমাকে উদ্দেশ্য করে ইনিয়ে বিনিয়ে চিঠি না লিখতে তবে আমি কখনোই আগ বাড়িয়ে তোমাকে লিখতাম না।
তোমার কপাল ভাল যে আমার মত মেয়ের নজর তোমার দিকে পড়েছিল। নয়ত এখনো তুমি ব্যচেলর থাকতে। সেটাই তো ভাল ছিল। সারাদিন ডিং-ডিং করে ঘুরে বেড়াতাম আর আরামে কেটে যেত সারাটা জীবন। ঘর-সংসারের ঝামেলায় মানুষ জড়ায়! যারা পাগল তারাই ঘর-সংসার করে । আমাকেও বাধ্য করলে পাগলের খাতায় নাম লেখাতে। পাগল হয়ে বেশ করেছ। আমাকে-বিয়ে করে আমার চৌদ্দগোরষ্ঠি উদ্ধার করেছ। তুমি যদি আমাকে বিয়েএনাঁঁকরতে তাহলে যে গলায় দড়ি দিতে হতো। এতদিনে আমার কবরের মাঁটি! সমান হয়ে যেত। তুমি কবরের পাশ দিয়ে হেটে যেতে আর বলতে- ইস, কেন যে মেয়েটাকে বিয়ে করলাম না! এত সুন্দরী মেয়েটার রূপ-যৌবন মাটিতে খেয়ে নিল! কেন যে আমি খেতে পারলাম না। হে খোদা, তুমি কি আবার ওকে জীবিত করে দিতে পার না! তুমি কি ওকে আমার স্ত্রী রূপে দুনিয়ায় পাঠাতে পার না! আর কিছু বলবে? আরো! মাফ চাই। এখন মাফ চাও কেন। আরো বল আমি শুনি। যাক এ প্রসঙ্গ বাদ দাও। এখন বলতো শুনি তোমার বান্ধবী মন্ত্িকা কোথায় আছে? সেটা তো আমার চেয়ে তোমারই ভাল জানার কথা। বিয়ের পর ওর সাথে আমার আর যোগাযোগ হয় নি। তোমরা পারও বটে। প্রাণপ্রিয় বান্ধবীদের ভূলে যেতে তোমাদের একটুও সময় লাগে না। মল্লিকা আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী ছিল এটা তোমাকে কে বলল? প্রাণপ্রিয় না হলে তার অসুখের সময় তুমি দেখতে গিয়েছিলে কেন।
ভালই তো সেবা-যত্ব করেছিলে। ওসব আলোচনা বাদ দাও তো। একটা বিষয় নিয়ে মন্পসিকার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছিল এটা তুমি ভালভাবেই জান। ঝগড়ার পর থেকে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। ঝগড়াটা মিটিয়ে নিলেই পারতে । যত যাই বল, কারো সাথে ঝগড়া করে বন্ধুতৃপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করা উচিত না। আফটার অল সে কিন্ত তোমার উপকার করেছিল। মন্লিকার স্বামী আর আমি এক জায়গায় চাকরি করতাম বলেই তো আমার সাথে তোমার দেখা হয়েছিল আর সম্পর্ক হয়েছিল। হ্যা হয়েছে, বেশ বলেছেন। এখন লেকচার বন্ধ করে আপনার ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে বের হন। মহারানী ক্ষেপে গেলেন কেন! 4 না না, আপনার এমন পিরিতের কথা শুনে যাত্রাপালার নায়িকাদের মত “জিরো জিরো সেভেন” নাচ নাচব। মানে! যাত্রাপালার নায়িকাদের জিরো জিরো সেভেন নাচটা আবার কেমন? শোন বাশরীর আব্বু, আর ঢং করোনা । আমার সামনে থেকে যাও নয়ত ভাঙ্গা কীচের টুকরাগুলির উপর খালি-পায়ে দীড়িয়ে যাব। মীরার স্বভাব খুব ভালভাবেই জানে হামীম। এই মুহূর্তে ওর মেজাজ গরম হয়ে গেছে এবং কীচের টুকরাগুলির উপর খালি পায়ে দীড়াতে একটুও দ্বিধা করবে না। তাই আর কোন বাক্য ব্যয় না করে মীরার সামনে থেকে সরে গেল – সে। কিছুদিন আগে কথা বলার এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে বটি দিয়ে নিজের উপর আঘাত করল । হাত কেটে সাথে সাথে রক্ত বেরিয়ে গেল। হামীম দৌড়ে গিয়ে হাত ধরতেই ধাকা দিয়ে সরিয়ে দিল। যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে তাকিয়ে বলল- আমাকে ধরবে না। যদি ধর তাহলে আরো বাড়াবাড়ি করব। ভয় পেয়ে সরে গিয়েছিল হামীম। নিজের হাত নিজে বীধতে বাধতে একা একা অনেক বকাবকি করছিল হামীমকে উদ্দেশ্য করে। এসব অভ্যাস দেখতে দেখতে এখন সয়ে গেছে। রক্তারক্তি কিছু দেখলে অবশ্য হামীমের শরীরটা কেমন যেন করে। মীরা ওর স্ত্রী। বার বছর আগে বিয়ে হয়েছে দুজনের । বিয়ের আগে চুটিয়ে দু-তিন বছর প্রেমও করেছিল । বিয়াল্লিশ বছরের হামীম আর পয়ত্রিশ বছরের মীরার দাম্পত্য জীবন কখনো খুব সুখের কখনো খুব দুঃখের । কিছুদিন পরপর
মীরার বদ মেজাজী রোগ হয়। সামান্য কোন ব্যাপারকে অসামান্য বানিয়ে তোলে । ইদানিং এই রোগটা গাঢ় হচ্ছে। আগে দু-চার মাস পরপর এই রোগের লক্ষণ দেখা যেত কিন্তু ইদানিং মাসের মধ্যে দু-চার বার এই ব্যাপারটা দেখা যায়। রোগটা যখন উঠে তখন হামীমকে যা খুশি তাই বলে গালাগাল দেয় এমনকি এক পর্যায়ে দুজনার মধ্যে মারামারিও লেগে যায়। মারামারি করতে গিয়ে দুজনেই কম বেশি আহত হয়। কারো জন্য কারো মনেই ভালবাসার কোন কমতি নেই তবুও ওদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয় । ঝগড়াঝাঁটির এক পর্যায়ে দুজনেই দুজনার ভূল বুঝতে পারে এবং দুজনেই তখন কেঁদে বুক ভাসায়।
মীরা বদ মেজাজি তবে মনটা খুব ভাল । মানুষের জন্য প্রাণ খুলে কিছু করতে পারলেই ওর খুব ভাল লাগে। মানুষের জন্য প্রাণ খুলে অনেক কিছুই করতে চায় সে কিন্তু যাদের জন্য কিছু করতে চায় তারাই ওকে কষ্ট দেয়। সেই কষ্ট কখনো ওকে বদ মেজাজি বানিয়ে তোলে কখনো ভাবিয়ে তোলে কখনো কীদিয়ে তোলে । বিয়ের পর থেকে সবকিছুই হামীমের সাথে শেয়ার করে। খুব গোপন ব্যাপারগুলি কারো কাছেই শেয়ার করে না। এগুলি ওর মাথার ভিতরেই জমা থাকে এবং ঘৃণ .৫পাকার মত ওর মাথাটাকে কামড়ায়। ঘুণ পোকার দলগুলি যখন কোন কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তখন আপনা আপনি রেগে যায়। সেই রাগ কখনো মেয়ের উপর কখনো ছেলের উপর কখনো স্বামীর উপর বর্ষিত হয়। রাগের উপর কোন কন্ট্রোল নেই মীরার। যখন রাগ উঠে তখন সে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ । স্বামী সন্তানের সামনে নিজের গায়ে নিজে প্রহার করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চায়। রাগ কমে গেলে একদম উল্টো। মীরা আশাবাদী স্বপ্রবিলাসী স্পষ্টবাদি প্রতিবাদী ভাবুক সাহসী সংযমী শাততিপ্রিয় একজন মানুষ। পৃথিবীকে নিয়ে পৃথিবীর মানুষকে নিয়ে সে অনেক ভাবে কিন্তু কিছুই করতে পারে না। অনেক কিছুই ওর বুকের ভিতর আর মাথার ভিতর ডিগবাজি খায় কিন্তু বাস্তবে প্রতিফলন ঘটাতে পারে না। এই দেশের সামাজিক নিয়ম-কানুন ওর ভাল লাগেনা । ভাল লাগেনা রাষ্ট্রীয় নিয়ম- কানুনও । অন্তত ছয়মাসের জন্য হলেও ওর প্রধানমন্ত্রী হতে ইচ্ছে হয়। মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত এমএলএ ফাটাকেষ্ট ছবিটা দেখে সে একটা চার্ট তৈরি করে রেখেছে। জীবনে যদি কখনো এমন সুযোগ আসে তাহলে খুব সহজেই লুফে নিবে। চার্ট দেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। তবে ফাটাকেস্টের মত পনের দিনের মন্ত্রীত্ দিয়ে ওর হবে না। ওর চাই কমপক্ষে ছয়মাস।
অনুভূতির অভিধান তাহসান খান এর বইটির পিডিএফ শীঘ্রি আশোছে। ততক্ষণ সাথেই থাকুন।
Downloadআরও পড়ুনঃ