মানবজনম pdf সাদাত হোসাইন – Manobjonom by Sadat Hossain PDF
Manobjonom by Sadat Hossain PDF
book | মানবজনম pdf |
Author | সাদাত হোসাইন |
Publisher | ভাষাচিত্র |
ISBN | 9789849280224 |
Edition | 1st Published, 2017 |
Number of Pages | 528 |
Country – link | বাংলাদেশ – Download PDF |
Language | বাংলা Pdf Download |
একটা লেখা নিয়ে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে সূক্ষ্ম হয়তো আর কারুরটাই হতে পারেনা। তার পারসেপশান থেকে শুরু করতে গেলে চলে যেতে হবে একদম বইয়ের শেষ পাতায়। মানবজনম বইটার শেষে একটা লাইন আছে, ‘অপেক্ষা আর বিভ্রমের নামই হয়তো মানবজনম’। মানবজনম কি তাহলে আসলেই বিভ্রম? কিংবা আমরা সারাটা জীবনজুড়েই কি অপেক্ষাই করে যাই কারো জন্য? কেউ প্রেমিকার জন্য, কেউ প্রেমিকার জন্য, ভালবাসার মানুষের জন্য, কেউ স্বপ্নের জন্য, কেউ প্রাপ্তির জন্য, কেউ আগামীকালকের জন্য… সবাই আমরা অপেক্ষায় থাকি। অপেক্ষা করতে করতেই আসলে মানবজনমটা কেটে যায়। এটাই কি তবে মানবজনমের কাহিনী?
আচ্ছা, মানবজনমের কাহিনী কি সংক্ষেপ করা সম্ভব? আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তটা কোনটা? তাহলে হয়তো আপনি নির্দিষ্ট একটা মুহূর্তের কথা বলবেন, কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের বেচে থাকার প্রত্যেকটা মুহুর্তই আসলে সমান গুরুত্বপূর্ণ, এখানে কম গুরুত্বপূর্ণ বা বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে কিছু নেই। ধরুন আপনি রাস্তা পার হচ্ছেন, মুহুর্তের জন্য একটা ট্রাক আপনার পাশ দিয়ে গা ঘেঁষে চলে গেল, আপনি খেয়ালো করেননি যে সেকেন্ডেরো ভগ্নাংশের সময়ের মধ্যে হয়তো আপনি মারা যেতে পারতেন! আপনি খেয়াল করেননি বলেই সে মুহুর্তটা আপনার কাছে হয়ে গেল অগুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যেটি হতে পারে পৃথিবীতে আপনার সবচে গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত!
মানবজন্ম জুড়েই যে অসংখ্য ঘটনা ঘটে সেই ঘটনা ঘটার পেছনে একটা মাত্র ঘটনা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে- তা হচ্ছে জন্ম। জন্ম না হলে পৃথিবীতে ঘটা বাদবাকি কোন ঘটনাই কিন্তু ঘটতে পারতো না। তাহলে মনবজনম কি তবে সেই জৈবিক জন্মের গল্প?
কিন্তু জৈবিক জন্ম যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জৈবিক মৃত্যুও গুরুত্বপূর্ণ। কারন মনে যাবার সাথে সাথেই সকল ঘটন। শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ মানবজন্ম মানেই মৃত্যু। আমরা জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি। তবে মানবজনম কি জৈবিক মৃত্যুর গল্প?
কিন্তু এই জৈবিক জন্ম ও মৃত্যুর মাঝামাঝি প্রাত্যাহিক জীবনে আমাদের সম্পর্কের জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। আমাদের অনুভূতিরর জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। আমাদের লালসার জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। আমাদের বোধের জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। আমাদের পরিচিত মানুষের চেনা মুখের জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। মানবজনম মূলত এমন অসংখ্য জন্ম ও মৃত্যুর গল্প…
কাহিনী নির্যাস ও চরিত্রচিত্রণঃ
জলের আকালের মৌসুমে বৃষ্টিতে সব জলাশয়ের প্রাণীগুলোই বিপুলানন্দে ছুটাছুটি করে। শুধু যে মাছগুলো জালে আটকা পড়ে , তাদের কাছে ঐ বৃষ্টি অসহ্য লাগে। ঐ রিমঝিম বৃষ্টি, হিমেল হাওয়া কিছুই তাদের অনুভূত হয় না… তবে তাদের দেখে চকচক করে উঠে ধুরন্ধর জেলের চোখ।
কিংবা বিষধর সাপও যখন সাপুড়ের বাক্সে বন্দী হয়, তখন সে হয়ে যায় নিতান্তই নিরীহ। সেই নিরীহ সাপ নাচিয়ে নিজের আধিপত্য জানান দেন সাপুড়ে….
তৈয়ব উদ্দিন খাঁ হচ্ছেন সেই জেলে কিংবা সাপুড়ে। কিন্তু তিনি কি ভাবতে পেরেছিলেন অসময়ে সেই সাপ তার দিকেই ফনা তুলবে? কিংবা বিষকাটা ফোটাতে আসবে নিরীহ বন্দি মাছ??? এই গল্পটা তৈয়ব উদ্দীন খাঁর
গল্পটা আব্দুল ফকিরের। ‘পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই’ -এই উক্তির আদলেই যেন গড়া! ভয়াবহ বিকৃত চরিত্রের এক মানুষ ও ভীষন ই স্নেহপরায়ণ এক পিতার। যার অলৌকিক ক্ষমতায় তিনি নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যান। তবে সবকিছুরই শুরু আছে শেষ হয়ে যায়। এটা হতে পারে আব্দুল ফকিরের মতো নির্মমভাবেও!!!
কিছু মানুষ জন্ম নেয় ভুল সময়ে। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা সেই মানুষগুলোর সংগে খাপ খাওয়াতে পারে না প্রচলিত সময়। অসময়ের পৃথিবীতে তাই সেই মানুষগুলো হয়ে যায় অস্পৃশ্য!… তেমনি ভুল যায়গায় ফোটা এক ফুল কোহিনূর। এই গল্পটা কোহিনূরের।
শ্বাসরোধ নিশ্চিত জেনেও ক্ষুদ্র মশা কেন আজলা ভরে পান করে খুন? কেন আলোর অনন্ত উৎস জানতে চায় ঘাসফড়িঙ?? মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে কেন পাখা মেলে উইপোকা??? কেন তারা ক্ষয়ে যাওয়া এতো ভালবাসে???? ঠিক যেমনি ভাবে ভালবাসার অপেক্ষায় ক্ষয়ে যাচ্ছে পারুলের একটা জীবন…! এই গল্পটা পারুলের।
গল্পটা নয়নের। তৈয়ব উদ্দীন খাঁর চোখের মনি, কোহিনূরের একমাত্র আপনজন, এক পৃথিবী নিখাদ ভালবাসা উপেক্ষা করে যার জন্য হেমা আগলে রেখেছে সবটুকু ভালবাসা, হেমার সেই প্রিয়তম নয়ন। কিন্তু এই সব পরিচয় ম্লান করে দেয় একমুহূর্তে পাওয়া এক পরিচয়। নয়ন জানে একমূহুর্তে অনেক কিছুই মনে হতে পারে, কিন্তু তা দিয়ে সমগ্র জীবন চলবে না। আবার সমগ্র জীবনের জন্যে আপনি যে সাধনায় পথ চলা, তা উলট-পালট হয়ে যেতে পারে একমূহুর্তেই। তাই একমুহুর্ত কিংবা সমগ্র জীবন কোনটাকেই অস্বীকার করতে পারে না নয়ন!
গল্পটা রাহাতের। যে জানে তার উজাড় করা ভালবাসা তার প্রেয়সীর গ্রহে কোন কালেই প্রবেশ করবে না, যার সব ভালবাসা অন্য এক পৃথিবীর, তবুও তার সবটুকু নিখাদ ভালবাসা তার জন্যই! পরম আবেগে সে তার জন্য লিখে যায়-
…তোকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব,তোর জন্য ইচ্ছে চেপে রাখা,
আমার ইচ্ছে পোড়ায় যদি তোকে,তাই তো এমন ইচ্ছে চেপে থাকা।
তোর জন্য আকাশ ছেড়ে দিয়ে, আমিই নাহয় বেছে নিলাম খাঁচা,
তোর জন্য কান্না বুকে রেখে,আমার এমন হাসি মুখে বাঁচা।
গল্পটা হেমার। হেমা গানটা শোনে।একবার,দুইবার,তিনবার।সে ভাবে রাহাত তাকে ভেবেই কথাগুলো লিখেছে! কী তীব্র অনুভূতি নিয়েই না কথাগুলো লিখেছে রাহাত! কিন্তু রাহাতের এই অনুভূতিগুলো সে কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি। কোনদিন হয়তো পারবেও না। হেমা গানটা যতোবার শুনেছে তার শুধু নয়নের কথা মনে হয়েছে। ঠিক এই অনুভূতিগুলোই সে তার বুকের ভিতর সযতনে নয়নের জন্য পুষে রাখে…!
গল্পটা আমাদের। যে আমরা ভালবাসতে ভালো লাগে বলেই ভালবাসি। কই, ভালবাসা পাইনা বলে তো খারাপ লাগে না! একটা শূন্যতা বোধ হয়। তবে জীবনে এই শুন্যতা বোধের দরকার আছে…!
কিংবা এই গল্পটা সেই কথার, যে কথা যায়না বলা..!! যেমন বলা যায় না, ” তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কি অসম্ভব ভালবাসি! তুমি যতোটুকু ভাবো তারচে হাজারগুন বেশী! তোমাকে না দেখতে দেখতে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। তোমার গলা না শুনতে শুনতে আমি তোমার কণ্ঠস্বর ভুলে গেছি। তুমি কি আজ সারাদিন আমার সামনে বসে থাকবে? তাহলে আমার তেষ্টাটা মিটবে। আর তুমি খানিক পর পর আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে বলতে থাকবে যে তুমি আমায় ভালোবাসো! অসম্ভব ভালোবাসো!”
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
কিছু গল্প থাকে যেগুলো জীবনের সাথে ওতোপ্রোত ভাবে মিশে যায়, এটা তেমনি এক গল্প। অনেকটাই সুবিশাল একটা বই। আমি দুই তৃতীয়াংশ স্বাভাবিক ভাবেই পড়েছি, কিন্তু শেষ ভাগে এসেই ঘটলো বিপত্তি! আমার মধ্যে অদ্ভুত এক শুন্যতা কাজ করতে লাগলো, বারবার খালি মনে হচ্ছিল বইটা শেষ না হোক, আমি যেন অই মানুষগুলোর সাথে বড় বেশী পরিচিত হয়ে গেছি, কিন্তু শেষ না করেও থাকতে পারছিলাম না।
রাহাতের জন্য বড্ড খারাপ লাগছিল, ভালবাসা মিশ্রিত এক খারাপ লাগা। নিজেকে বড় বেশি রাহাত ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছিল। এটা এমনি এক বই যাতে আপনি আপনাকে খুজে পাবেন… কোন এক চরিত্রে।
খুব সম্ভবত লেখব তার বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে অসাধারণ কল্পনাশক্তির সেরা নিদর্শন রেখেছেন এই উপন্যাসে। উনার কবিতার হাতও যে কতোটা দারুন, তা তিনি মানবজনমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটা নদীর ঢেউ, আর্তনাদ, ভালবাসা, উচ্ছ্বাস আমি অনুভব করতে পেরেছি…
আপনার হয়তো খুব বেশী বাস্তবতা ভাল লাগতে পারে, কিংবা ভালবাসতে পারেন কল্পনায় উড়তে… আপনি যাই হোন না কেন এই গল্পের জীবন আপনি অনুভব করবেন। দেখা পাবেন বিভ্রম আর অপেক্ষার মানবজনমের..