All Bangla Novel Book Pdf free Download

মহাকাশের প্রাণী জাফর ইকবাল Pdf Download

mohakasher prani pdf by jafor iqbal – মহাকাশের প্রাণী জাফর ইকবাল Pdf Download করুন একদম ফ্রিতেই।

ডাউনলোড করুন-  click here

আরও পড়ুনঃ 

ডানাহীন প্রজাপ্রতি:  এখানে দীড়িয়ে কি করছিস? –  ওড়নার মাথা দিয়ে চোখের পানি মুছে মায়ের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে হাটে মোনা । একটু আগে সে মায়ের সাথে তর্ক করে এখানে এসে দীড়িয়েছে। আস্তে আস্তে হেটে রাস্তার ঢালু দিকে যাচ্ছে। ওর মা’ও পিছনে পিছনে হাটছে তবে দশ পনের গজ দুরত্ব রেখে। ফুরফুরে বাতাস, সরিষা ফুলের অপূর্ব সমাহার, ক্ষেতের ভিতর ভোমরার গুঞ্জন, গম গাছের সবুজ পাতার দোলা আর নদীর বিশাল চর চারদিককে আকৃষ্ট করে দেয়। মোনা জানে, এই প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলি উপভোগ করার মত।

 

কিন্তু এখন ‘ওর কাছে সবকিছু বিষাক্ত মনে হচ্ছে। ূ  নদীর বুকে হাটছে মোনা। একসময় এখানে স্রোত ছিল। স্রোতের প্রতিকূলে এবং অনুকূলে চলেছে লঞ্চ, ষ্টিমারসহ অসংখ্য বড় বড় নৌযান। এখন শুধু নৌকা চলে। তাও অনের’দূর দিয়ে। বসবাসের জায়গা থেকে পানির দূরত্ দুই কিলোমিটারের বেশি হবে। দুই কিলোমিটার চর হেঁটে পানির কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে। ওর স্না’এখন অনেক দূরে। প্রায় এক’শ গজ । মায়ের দিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস টানে সে। দুই পায়ের পাজামা হাটুর কাছে টেনে উঠিয়ে খালি পায়ে পানিতে নামে। ওর মা সামনের দিকে আসছে। মেয়েটা যে পানিতে নামছে তা বুঝতে পেরে মনে মনে ভাবছে- মোনা কি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে?  ককটেলের মত মোনার মায়ের শরীর । মনে হয় যেকোন সময় বিস্ফোরণ ঘটবে। মায়ের এই শরীর ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে ওর। মা যে কেন এমন ভুল করল! আফসোস করে মোনা । মায়ের ভূলের জন্য সে আফসোস করে তাতে কি মায়ের কিছু যায় আসে? জীবনের কোনকিছুতে কারো কিছু যায় আসে না। যায় আসে না মোনা এবং মোনার মায়েরও। ওরা যেন একে অপরের সই এবং একে অপরের শক্রু।

 

ওরাঁ যখন ঝগড়া করে তখন কেউ বুঝতেই পারবে না সম্পর্কে দুজন মা-মেয়ে। যখন বন্ধুর মত একজন আরেকজনকে মনের কথা খুলে বলে তখনও কেউ বুঝতে পারবে না ওরা মা- মেয়ে। বাহিরের কেউ জানুক বা না জানুক, ওরা দুইজন যে একে অপরের শক্র তা নিজেরা জানে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ওরা একে ওপরের শত্রু জেনেও কেউ কারো কোন ক্ষতি করতে পারে না, একজন আরেকজনের উপর নির্ভর করে পথ চলে।  স্বচক্ষে কোনদিন সাগর দেখেনি মোনা। টেলিভিশনের পর্দায় যে সাগর দেখেছে তাকে পদ্মার চরের সাথে তুলনা করে। পদ্মার বিশাল বালুকা চর আর ঢেউ দেখে সাগরের সাথে তুলনা করাটা অস্বাভাবিক মনে হয় না ওর কাছে। পানির নিচে বালির উপর খালি পায়ে হাটতে বেশ ভাল লাগে ওর | মাঝে মাঝে মনে হয় একটু গভীরে নেমে স্লোতের সাথে দেহটাকে ভাসিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো। সাথে সাথে মনে হয় দেহটাকে ভাসিয়ে লাভটাই বা কি! সে বেঁচে থাকলে যেমন কারো কোন সুখ-দুঃখ নেই তেমনি মরে গেলেও কারো কোন সুখ-দুঃখ থাকবে না।  মা এসে তীরে দীড়িয়েছে। মায়ের ছায়াটা পানির মধ্যে দেখতে পাচ্ছে মোনা।

মায়ের দিকে তাকাতে ইচ্ছে-হয়না ওর। বিশেষ করে এই মুহূর্তে তাকাতে ইচ্ছে করছে না। না তাকিয়ে রুক্ষ গলায় বলল- এখানে এসেছ কেন, বাসায় যাও।  তুই যাবি না! কাদো কীদো গলায় বলে শাহীনা।  তুমি যাও, আমি কিছুক্ষণ পর আসছি।  কিছুক্ষণ পর গেলে আমিও কিছুক্ষণ এখানে থাকি। তারপর দুইজন একসাথে যাই।  মোনা জানে, সে না যাওয়া পর্যন্ত মা’ও যাবে না। তাই পানি থেকে উঠে সালোয়ার ঠিক করে বাসার দিকে হাটে।  ডানে মুগ ডালের ক্ষেত। সোনা মুগ। বামে গম ক্ষেত। সবুজ গাছ। এখনো গম হয়নি। মাঝ-খানের আইল দিয়ে হাটে মোনা । বাসায় যেতে ইচ্ছে হয়না। বাসার বাইরে থাকতে ইচ্ছে হয় কিন্ত লোকের দৃষ্টিতে পড়তে চায় না। লোকে ওকে নিয়ে সমালোচনা করে। তীব্র সমালোচনা । সামনা-সামনি করে, আড়ালে করে। সমালোচনার কিছু অংশ কানে আসে । বড় খারাপ লাগে তখন। খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই কারণ লোকে মিথ্যা কিছু বলে না, যা বলে তার অনেকটাই সত্যি।

হাটতে হাটতে মনে মনে নিজের সাথে কথা বলে সে- আমার নাম ময়না আক্তার। আধুনিক যুগে এই নামটা বেমানান। বর্তমান সময়ে যে ধরণের নামের প্রচলন শুরু হয়েছে তাতে ময়না নামটা নিয়ে লোকে ব্যঙ্গ করে। ময়না, তুমি আমার ময়না, ওরে আমার ময়না পাখি, ও মোর ময়না গো ইত্যাদি ইত্যাদি। লোকের এরকম মন্তব্য থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য “ময়না” নামের “য় টা বাদ দিয়ে ম এর সাথে একটা “ঢা” যুক্ত করে সংক্ষিপ্ত করে মোনা” বানিয়েছে আমার মা-বাবা, আমিও তাতে একমত।  আমার বয়স যখন নয় বছর তখন আকরাম উদ্দিন নামে এক সরকারি চাকরিজীবি লোকের সাথে মায়ের বিয়ে হয়। আমরা ছিলাম দুই ভাইবোন। আমার বড় এক ভাই আছে। মায়ের বিয়ের সময় ভাইয়ের বয়স ছিল এগার । তখন আমি এতকিছু বুঝতে না পারলেও আমার এগার বছর বয়সি ভাই অনেককিছু বুঝত। সে মায়ের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। ভাই যেমন মায়ের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি তেমনি আমার সতবাবা অর্থাৎ আকরামও ভাইকে পছন্দ করত না। ফলে ভাই অন্যত্র চলে গেল। এসব নিয়ে মায়ের কষ্টের যেমন শেষ ছিল না তেমনি দ্বিতীয় স্বামী ছাড়া উপায়ও ছিল না। ছেলেমানুষ, যেখানেই যাক না কেন, সে কিছু একটা করে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারবে । এই বলে মনকে বুঝ দিয়ে আকরামের সংসারে মন দিল।  ছোটবেলা থেকেই আমি যথেষ্ট সুন্দরী । সুন্দরী বলেই হয়ত আমার দ্বিতীয় বাবার কোন অভিযোগ ছিল না। আমাকে সে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। ভাইকে হারিয়ে আমি যে মনে মনে কত কষ্ট পেতাম তা কেউ বুঝত না। বাবার আদর পারতাম না। বিভিন্ন জায়গায় থেকে বড় হচ্ছে সে। এক সময় আমিও মায়ের মত মনে করলাম । সে ছেলেমানুষ, একভাবে না একভাবে ওর দিন বেশ কেটে যাবে। দিন কেটে যেত বটে, মাকে এবং আমাকে দেখার জন্য সে প্রায়ই ছটফট করত।  মোনা, তাড়াতাড়ি চল আমি একটু বাথরুমে যাব।  আমিও কি তোমার সাথে বাথরুমে যাব?  এটা কেমন কথা, তুই আমার সাথে বাথরুমে যাবি কেন!  তুমি এমনভাবে বলছ মনে হচ্ছে আমাকে নিয়েই বাথরুমে যাবে।  রাস্তার মধ্যে তর্ক করিস না । তাড়াতাড়ি চল।  এত কথা বল কেন, তোমার দরকার থাকলে তুমি যাও।

 

মহাকাশের প্রাণী জাফর ইকবাল বইটি কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!