Books

খোয়াবনামা Pdf Download by আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

Khowabnama book by Akhtaruzzaman Elias pdf – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস খোয়াবনামা Pdf Download

 

মানুষের আজকের এই এতকিছুর জন্ম কোথা থেকে? আমার বিশ্বাস, ক্ষুধা থেকে। মানুষ প্রথম যে প্রয়োজনীয়তা মেটাতে চায়, সেটা ক্ষুধা। পেটে খাবার থাকলে তখন আসে যৌনতা। আর দুটো বিষয় যদি মোটামুটিভাবেও মিটে যায়, তখন মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। নানা রকমের স্বপ্ন। সুখের স্বপ্ন, সমৃদ্ধির স্বপ্ন। মানুষ যত এগিয়ে যায় তার স্বপ্ন তত বড় হয়। সে যত পায়, পায় খোয়াব তত বদলে যায়। মানুষের সেই খোয়াব নিয়েই ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’।

মানুষের মাঝে বাঙালীরা বোধয় খোয়াব একটু বেশি দেখে। তারা ঘুমিয়ে খোয়াব দেখে, জেগে জেগে খোয়াব দেখে। সেই খোয়াবে মিশে থাকে ইতিহাস, পুরাণ, ঘটে যাওয়া নানা বিষয়। কিছু কথা, উপকথা মানুষকে এতোটা বেঁধে ফেলে যে সে এখান থেকে বের হতে পারে না কখনও। তার খোয়াব ঘুরপাক খায় ওই নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে। তমিজের বাপ এমনই এক লোক।

তমিজের বাপ আবোর, মানে বোকা। তার কেবল খাওয়ার চাহিদা। পেট পুরে ভাত খেতে পারলেই হয়। বাকি আর কিছু চায় না। বুড়ো মানুষটার পাশে যুবতী বৌও তার মাঝে কোন আকাঙ্ক্ষা জাগায় না। তমিজের বাপের খাওয়া মিটে গেলে ঘুমিয়ে থাকে, কিংবা জেগে জেগে খোয়াব দেখে। সে খোয়াব হলো মুনসির খোয়াব। যে নাকি কাৎলাহার বিলের পাশে পাকুড় গাছে উঠে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেই তার আরশ।

আদতে ইলিয়াস এই তমিজের বাপের মধ্যে এঁকেছেন আবহমান বাংলার এমন কিছু মানুষের কথা, যারা তাদের বিশ্বাসের মধ্যে এতোটা ঢুকে থাকে যে দুনিয়ার বাস্তবতা তাদের কাছে কোন অর্থ বহন করে না। তমিজের বাপ চিনত বিল, বিলের মাছ আর চেরাগ আলী মুনসিকে। সেখানেই সে থেমে ছিল তার বাকিটা সময়। জীবনভর সে ওই নিয়েই থেকে গেছে।

এদিকে বদলে যাওয়া সময়ের স্রোতে ভেসেছে তার উত্তরপুরুষ তমিজ। সে খিয়ারে গেছে ধান কাটতে। মাঝির সন্তান হয়েও এক সময় জমি চাষ করে সে থিতু হওয়ার খোয়াব দেখেছে। সেই সঙ্গে খিয়ারে কাজ করতে গিয়ে সে উদবুদ্ধ হয়েছিল নতুন দিনের চেতনায়। মানুষের অধিকারের আদায়ে তার রক্তের মধ্যে প্রতিবাদ এসে জমেছিল।

 

khowabnama book by akhtaruzzaman elias pdf 2165

কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়েই এখানে ক্ষমতার নানা ব্যবহার চলে। সেই ক্ষমতার প্রতিভু শরাফত মণ্ডল। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভূমির মালিকদের দাপট, তাদের ক্ষমতার ব্যবহার এবং মানুষকে দাবিয়ে রাখার প্রবণতা তার মাঝে দেখা যায়। কিন্তু সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে। কালাম মাঝিদের মতো মানুষদের খোয়াব থাকে নিজেকে বড় করে তোলার। সে খোয়াব তারা পূর্ণ করে।

এরই মাঝে যারা ক্ষেত, বিল, গ্রামের হাট থেকে বেরিয়ে শহরের বাতাস গায়ে লাগায়, তারা বৃহত্তর পরিমণ্ডলের হাওয়া গাঁয়ে ছড়িয়ে দেয়। তখন কারও কারও মনে পাকিস্তান কায়েম করার খোয়াব জাগে। সে খোয়াব সত্য মনে হয় যখন লীগের লোকজন এসে তাদের তাতিয়ে যায়, আশ্বাস দিয়ে যায়। তখন খোয়াব ভেঙে যায় কারও কারও। পুরাতন আনন্দবাজারের খবরে কলকাতায় মুসলমান হত্যার খবরে এখানেও মারা যায় অনেকে। সেখান থেকে ভেঙে যায় আরও খোয়াব।

কিন্তু এসব খোয়াবের সাথে কোন সংযোগ নেই কুলসুমের। কেননা সে জীবনে প্রায় কিছুই দেখেনি। সে দেখেছে তার দাদা চেরাগ আলীকে, দেখেছে তমিজের বাপকে। একজন শোলোক লিখে গেয়ে বেড়াত, অন্যজন সেই শোলোকে কী পেয়েছিল, কুলসুম কোনদিন বোঝেনি। কিন্তু তার সেই দেখা জগতের মাঝেই ঘুরে বেড়াতে থাকে কুলসুম।

ভাঙা গড়া আর মানুষের একান্ত খোয়াবের মধ্য থেকে বৃহত্তরের ব্যঞ্জনা নিয়ে আসা গল্প, ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’। ইলিয়াসকে নিয়ে লেখা সহজ না, সে ধৃষ্টতা করবো না। তবে খোয়াবনামা নিয়ে কিছু বলাই যায়। অনেক কিছু বলেও ফেলেছি। তারপরও কিছু বাকি থাকে। লেখকের এই উপন্যাসের ভাষা তার ‘চিলেকোঠার সেপাই’ থেকে আলাদা। একদম প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মুখের ভাষায় লেখা এ উপন্যাস।

লেখায় লেখকের সততা বলে একটা ব্যপার আছে। আমাদের আজকের দিনের লেখায় সে জিনিসটা নানা কারণে অনুপস্থিত। সে নিয়ে পরে কখনও বলা যাবে। বিষয়টা একটু বিস্তৃত। তবে ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ পড়লে বোঝা যায় একজন লেখক তার লেখার প্রতি কতটা সৎ হতে পারেন কিংবা ভাবলে অবাক হতে হয় যে কতটা সৎ হলে এমন একটা উপন্যাস লেখা যায়।

ইলিয়াসের লেখায় জাদুবাস্তবতা আছে কিনা, সে নিয়ে তর্ক হতে পারে। কিন্তু ইলিয়াস তার ‘খোয়াবানামা’য় নানা জায়গায় অসাধারণ ঘোর সৃষ্টি করেছেন। কাৎলাহার বিল, পাকুড় গাছ, তার আশপাশ দিয়ে তমিজের বাপের ঘুরে বেড়ানোর বর্ণনায় অবশ্যই ঘোর তৈরি হয়। তেমনি ঘোর তৈরি হয় যখন কালাম মাঝি চড়ে বসে কুলসুমের উপর।

চরিত্র সৃষ্টি এবং চিত্রণে ইলিয়াস অসাধারণ কিছু কাজ করে গেছেন। ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসে হাড্ডি খিজিরের পর এই উপন্যাসে অবাক করা চরিত্র এই তমিজের বাপ। একটা মানুষ প্রায় কোন কথা না বলে, কোন জায়গায় না থেকে জুড়ে আছে পুরো উপন্যাসে। হাড্ডি খিজির যতটা ‘অ্যাকটিভ’ ছিল, তমিজের বাপ ততটাই ‘প্যাসিভ’। এই থেকে না থাকা বা না থেকেও থাকাটা সবচেয়ে বড় ম্যাজিক ছিল ‘খোয়াবনামা’-র।

শেষটা করবো একটা প্রশ্ন দিয়ে। প্রশ্নটা হলো, ‘মানুষের সবচেয়ে বড় খোয়াব কী?’

উত্তরটা দিয়ে দেই। মানুষের সবচেয়ে বড় খোয়াব বলো, ‘খাদ্য’।

শরাফত মণ্ডলের ছেলেরা বড় মানুষ হয়ে যেতে পারে। কালাম মাঝি নিজেকে তুলতে পারে নতুন উচ্চতায়। প্রেমে পড়ে কিংবা ছন্নছাড়া হয়ে কেরামত জেলে যেতে পারে। ভাবের আবেশে থাকা মানুষ বৈকুণ্ঠ হতে পারে পাকিস্তান আন্দোলনের বলি। নতুন পাকিস্তানে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারে তমিজ। একদিন হঠাৎ যোগ দিতে পারে তেভাগায়। এতোসব মহৎ কিংবা স্বার্থপর খোয়াব থেকে অনেক দূরে তমিজের মেয়ে সখিনা গিয়ে দাঁড়ায় উইঢিবিতে।

সেখান থেকেই সে দেখে দূরে জ্বলা একঝাঁক জোনাকি। সখিনার মা ফুলজানেরও মনে হয় ওখানে জোনাকির আগুন জ্বালিয়ে হেঁশেল ধরিয়েছে কেউ। কে সে? সে তমিজের বাপ হবে। কেননা মুনসির খোয়াব হারিয়ে গেছে অনেক দিন আগেই। গ্রামের নতুন কিংবদন্তী তমিজের বাপ। যে কিনা সখিনার দাদা। তাই হয়ত সখিনা, ফুলজান কিংবা অন্য নামের কোন একজন মানুষ, আবহমানকাল ধরে এমন করেই কারও উপর ভরসা করে থাকে।

উনুন জ্বলবে। ভাত হবে। পেট ভরবে।

Khoabnama pdf Download from google drive link:

 Download

 

Khoabnama pdf Download from mediafire

 Download

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!