শাপমোচন PDF book: Shapmochan pdf Download by Falguni Mukhopadhyay
বই:শাপমোচন।
লেখক:ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়।
যেখানে ভালোবাসা আছে,সেখানে অধিকার নেই।যেখানে অধিকার আছে,সেখানে ভালোবাসা নেই।যেখানে ভালোবাসা,অধিকার দুটোই আছে,সেখানে আমরা নেই। তবুও মানুষের অন্তর চিরদিন আশাকেই আশ্রয় করে। সেই আশা পূর্ণ হবার আশাতেই জীবন সুন্দর। গল্পের নায়ক-নায়িকা, মহেন্দ্র-মাধুরীর নীরব অথচ জাগ্রত প্রেমোপাখ্যান এই “শাপমোচন”।উপন্যাসটি পড়ে আমার মনে হয়েছে- ভালোবাসার মতো শাশ্বত,প্রেমের মতো সুন্দর,অভিমানের মতো স্নিগ্ধ,অপেক্ষার মতো অনন্য পৃথিবীতে আর কিছুই নেই।
যেখান সেখান হতে নিজের মেধার মূল্যায়ন আশা করতে গিয়ে,আমরা যখন মেধার মহিমাকেই ছোট করে ফেলে হাহাকারে মেতে থাকি! তখন মহেন্দ্র-মাধুরীর কথোপকথন আমার মনে পড়ে-
” সোনা যতক্ষণ খনিতে থাকে,তাকে খুঁজতে যায় কম লোক,আবার যখন সে গিনি হয়ে মনিকারের শো-কেসে বসে,তখন রাস্তার পথচারীও তাকে দেখতে দাঁড়িয়ে যায়।তাতে খনির সোনার দাম কমে না। উত্তরে মাধুরী বলে- “দাম কথাটা আপেক্ষিক,মানুষের চাহিদা হিসেবেই ওর মূল্য।কুকুরের কাছে হীরের দাম কতটুকু??
মাধুরীদের প্রেমে ভুল বোঝাবুঝি নেই,আছে শুধু নীরব শ্রদ্ধাসমর্পণ।একটাই আকাঙ্ক্ষা,তারা একে অপরকে বুঝতে না পারুক,ভুল যেন না বুঝে,কারণ আকাশকে তো বোঝা যায় না,তাতে আকাশের মর্যাদা কমে না।তাদের প্রেমে আত্মকেন্দ্রিক অধ্যাত্ম্যসাধনা নেই,আছে বিশ্বকেন্দ্রিক প্রেম সাধনা।তাইতো,সূর্যের ডোবাতে মাধুরী পৃথিবীর কান্না নয়,বরং হাসি দেখতে পায়।কারণ, “পৃথিবীর প্রেম এতই সত্য যে,কাল সূর্যকে আবার আসতে হবে”
অথচ,তাদের এই ভালোবাসা,এই প্রেম, আর দশটা প্রেমের মতো একঘরে বন্দি হয় না। তাদের ঘর বাঁধা হয় না,কিন্তু মুক্তির মাঝে তারা যে দৃঢ় বন্ধন স্থাপন করেছে,তা কি ভাঙা সম্ভব??স্মৃতি কি এতই তুচ্ছ! মূল্যহীন!
আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী বলেন- “যে দানের কোনো প্রতিদান হয় না,তাই ভালোবাসা”।সে অর্থে আমরা কজন ভালোবাসি?কিন্তু মাধুরী বেসেছিল।১০ টা বছর কোনো প্রত্যুত্তর না পাওয়া সত্ত্বেও, যে মহেন্দ্রকে চিঠি দিতে ভুলে নি। মহেন্দ্রকে চেয়ে সে মহেন্দ্রের মহিমাকে ছোট করেনি ঠিকই,কিন্তু অন্তরে বাহিরে তারই নামে পৃথিবী রচে গেছে।অথচ মাধুরী জানতেই পারেনি,১০ বছর ধরে মহেন্দ্র সৃষ্টিকর্তার কাছে মহাশান্তির ঘর বেঁধেছে।জানতে পারলেই বা কী হতো!
হৃদয়ের তুলসীতলায় যে মানুষকে,যে ভালোবাসাকে আমরা প্রত্যহ পূজা করি,বাহিরে তার থাকা না থাকা,ধরা দেয়া না দেয়াতে কীই বা যায় আসে?
আমি তো জানি, আমার শ্রদ্ধা মিথ্যা নয়। পূজার মাধ্যমে আমার ভালোবাসা তর্পন,সে তো মিথ্যা নয়!এটুকুই তো যথেষ্ট
প্রিয় উক্তি:
বয়সে তুমি ঢের ছোট,কিন্তু যেখানে তুমি বড় বিরাট,সেখানে আমাদের শ্রদ্ধা অগাধ,অকুন্ঠ হয়ে রইল।
তোমার প্রতি কারো ভালোবাসাকে ঋণ ভেবে অপরপক্ষের ভালোবাসাটুকুকে খাটো কোরো না।
মানুষ বড় অসহায়।তার জীবনে মধু থেকে জল বেশি, তার বিষ মধুর মধুকেই শুধু নষ্ট করে না,মৌচাকেও শত ছিদ্র করে দেয়।মধু তা বলে ফেলনা নয়।তাকে ধরবার শক্তি মৌচাকের থাকা দরকার,নইলে গড়িয়ে যাবে।
অভিমান,আদর, আবদার,অভাব অনটনের মধ্যে গড়া আনন্দের অমৃতকুঞ্জই হলো নীড়।
ফুলের আয়ু কম,তাই বলে তার ফোটার গৌরব কেন কম হবে?
দীর্ঘ জীবন যদি কর্মে পরিপূর্ণ হয়,তবেই সার্থক,নইলে সে অভিশাপ।
গলার কারসাজিকে গলাবাজি বলা যায়,তাতে গান হয়,সংগীত হয় না।গীত তো নয়ই।ওর জন্য দরকার,সে দুঃখানুভূতির,যেটা
দূর্বলকে জয় করতে যাওয়ার কোনো মহিমা নেই।সে শুধু সপ্তরথী ঘিরে অভিমূন্যকে হত্যার কলঙ্ক।