the-art-of-war-pdf-part-3

# All part; https://pdfpoka.com/the-art-of-war-pdf-bangla/

০৬ অধ্যায় – সক্ষমতা এবং দুর্বলতা

সানজু বলেন:

সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্রে যারা প্রথমে আসে এবং শত্রুর আসার অপেক্ষায় থাকে তারা সেখানে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিতে পারে; যারা পরে আসে তারা সাধারণত ক্লান্ত অবস্থায় এবং দুশ্চিন্তায় থাকে। আর যারা যুদ্ধে অত্যন্ত সুদক্ষ তারা শত্রুর আমন্ত্রণে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে না বরং শত্রুকে কৌশলে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে আসে।

একজন যোগ্য যোদ্ধা শত্রুকে বিভিন্ন সুযোগের লোভ দেখিয়ে নিজের সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে আসার সামর্থ্য থাকতে হবে। আবার যোগ্য যোদ্ধাই শত্রুর থেকে পাওয়া সুযোগের লোভকে প্রতিরোধ করে তাকেই শিকারে পরিনত করেন।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, শত্রুর আসার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে যদি আপনি তাকে আটকে দিতে পারেন তবে সে আসার সাহস পাবে না। আর তাই মাস্টার ওয়াং বলেন: ‘ইঁদুর গর্তের মুখে যদি একটা বিড়াল দাঁড়ায় তবে দশ হাজার ইঁদুরও সেখান দিয়ে আসার সাহস করবে না; যখন দুর্গের মুখে একটা বাঘ পাহাড়ায় থাকে তখন দশ হাজার হরিণও সীমানা পার হওয়ার সাহস করে না।’

.

শত্রু যখন শান্ত হতে যাবে, তখন তাকে অশান্ত করে তোলার সামর্থ্য থাকতে হবে; যখনই খেতে চাইবে, তখন তাকে ক্ষুধার্ত রাখতে হবে; যখন জিরিয়ে নিতে যাবে, তখন তাকে দৌড় করিয়ে মারতে হবে।

এমন জায়গায় উদয় হোন যেখান থেকে সে শক্তি বাড়িয়ে নিতে যাবে; যেখানে সে আপনাকে আশা করেনি সেখানে গোপনে তৈরি থাকুন। যদি একহাজার লি কোন বাধা ছাড়া এগুতে পারেন তবে বুঝতে হবে আপনি শত্রুর কোন উপস্থিতি ছাড়াই এতটুকু এগিয়েছেন।

সাও সাও এর ভাষ্যমতে, বাধা ছাড়াই এগিয়ে যান, প্রয়োজনে আঘাত করুন, যেখানে শত্রু প্রতিরক্ষা করবে সেখানে এড়িয়ে যান, এমন জায়গা থেকে আঘাত করুন যেখানে শত্রু ঘুনক্ষরেও ভাবতে পারে নি।

নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যেখানে আপনি আক্রমণ করছেন সে জায়গাটা এমন হবে যেখানে শত্রু আপনাকে বাধা দেয়ার কোন সুযোগ না পায়। নিশ্চিত হয় নিতে হবে যেখানে আপনি প্রতিরক্ষা করছেন সে জায়গায় শত্রু আক্রমণ করার সাহসও না পায়। আর তাই, যারা আক্রমনে দক্ষ, শত্রু জানতেও পারবে না তারা কোথায় আক্রমণিত হতে পারে; যারা প্রতিরক্ষায় সামর্থ্যবান, তখন শত্রু সিদ্ধান্তও নিতে পারবে না কোথায় আক্রমণ করতে হবে।

.

ধুর্ত এবং অত্যন্ত বুদ্ধিমানেরা নিজেদের চলার পথে কোন চিহ্ন রেখে যায়; তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর এভাবেই তিনি শক্রর জন্য আতঙ্ক হয়ে ওঠেন।

হো ইয়েন-সি এর ভাষ্যমতে, আমার শক্তিশালি জায়গাটাকে শত্রুর কাছে দুর্বল হিসেবে প্রতিয়মান করি এবং দুর্বলতাটাকে শক্তিশালী হিসেবে যার কারনে তার শক্তিটাকে আমি দুর্বল করে তুলি আর তার মধ্যে এমন বিশ্বাস করাতে পারি যেন সে আমার থেকে শক্তিশালী নয়। আমার কাছে আসার পথগুলিকে গোপন করে রাখি যাতে করে কেউ সেটা ধরে এগিয়ে আসতে না পারে; নিশ্চুপ অপেক্ষা করি যাতে করে কেউ আমার উপস্থিতি বুঝতে না পারে।

যারা অপ্রতিরোধ্য তাকে দুর্বল জায়গায় আঘাত করুন; যে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাকে অতর্কিত আক্রমণ করুন।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, বাতাসের বেগে আক্রমণ করুন, আলোর বেগে ধাবিত হোন।

সানজু বলেন, যখন আমি যুদ্ধের ইচ্ছা প্রকাশ করি, আমার শত্রু তখন উঁচু দেয়াল তুলে প্রতিরোধ করেও যুদ্ধে না জড়িয়ে পারে না, তাকে এমনভাবে আক্রমণ করি যেখান থেকে সে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। আমি যখন যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে চাই, মাটিতে একটা লম্বা লাইন একে আমি নিজেকে প্রতিরক্ষা করি; শত্রু আমাকে আক্রমণ করাতে সক্ষম হবে না কারণ সে যে দিকে যেতে চায় আমি তাকে অন্যদিকে ধাবিত করি।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, চু-কো লিয়াং একবার ইয়াং পিং এ ঘাটি তৈরি করে এবং ওয়েই ইয়েন আর তার অন্যসব জেনারেলদের নির্দেশ দেন সকলে একত্রিত হয়ে যেন পুর্ব দিকে ধাবিত হয়। চু-কো লিয়াং দশহাজার সৈন্য রেখে যান শহর রক্ষার কাজে। তারপর অপেক্ষা করেন ফলাফল শোনার জন্য। সুসু-মা আই বলেন: ‘চু-কো লিয়াং শহরেই ছিলেন; তার সৈন্যসংখ্যাও যথেষ্ট ছিল না; আর তিনি যুদ্ধে ততটা পারদর্শীও ছিলেন না। তার জেনারেল আর অফিসাররা নিজেদের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছিল।’ ঠিক সে সময়ে চু-কো লিয়াং এর তেজস্বীতা জেগে উঠল। তার সৈন্যদেরকে আদেশ দিলেন শুয়ে যেতে এবং তাদের ব্যনার আর পতাকা নামিয়ে রাখতে এবং ডামাডোল বন্ধ রাখতে। তার সৈন্যদেরকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বাইরে যাওয়ার নিষেধ করলেন। চারটা দরজা খুলে দিয়ে রাস্তা খালি করে দিলেন।

সুসু-মা আই শত্রু সেনাদের ঘাপটি মেরে থাকা সন্দেহ করল, এবং তার সৈন্যদেরকে উত্তরের দিকে তাড়িয়ে দিলেন।

চু-কো লিয়াং তার প্রধান অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বললেন: ‘সুসু-মা আমি ভেবেছিলাম আমি একটা গোপন আস্তানা প্রস্তুত করে রেখেছি এবং পাহাড়ের ভেতরে লুকিয়ে গেছি।’ সুসু-মা আই ব্যপারটা পরে জেনেছিল এবং খুব দ্রুততার সাথে সেখান থেকে উদ্ধার পেয়েছিল।

তিনি বলেন, যদি আমি শত্রুর সৈন্য বিন্যাস ব্যবস্থা সম্পর্কে যথেষ্ঠ জানতে সক্ষম হই ঠিক তখনই আমি নিজের সৈন্যবিন্যাস গোপন করে ফেলব আর তারপরই আমি আক্রমণে গিয়ে তার বাহিনীর মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করব। আর আমি যদি শত্রুর সৈন্যবিন্যাসের বিভক্তির সময় আক্রমণ করি তখন সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে আঘাত হানব। সেখানে বিভিন্ন দিক থেকে তার চেয়ে এগিয়ে থাকব। তারপর আমি যদি শক্রর নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বারবার আঘাত হানি, যেগুলোকে আমি আগে থেকে সরাসরি আক্রমনের পরিকল্পনা করেছিলাম।’

তু-মু এর ভাষ্যমতে, অনেক সময় আমি সাধারন কিছু সৈন্য এবং তেজস্বী ঘোড়া দ্বারা আক্রমণ করি যেখানে শত্রু অপ্রস্তুত থাকে, মাঝেমাঝে শক্তিশালী তীরন্দাজ এবং আচার দ্বারা আক্রমণ করি শত্রুর একেবারে মুলে আঘাত করার জন্য, তাকে সেখান থেকে পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য করি, ডান থেকে বায়ে ঘুরি এবং সামনে গিয়ে সতর্কবার্তা শব্দ করি, এবং এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে আক্রমণ করি।

দিনের আলোতে আমি তাকে পতাকা এবং ব্যনার দেখিয়ে এড়িয়ে যাই আর রাতে যুদ্ধ ডামাডোল বাজিয়ে হতভম্ভ করে দিই। তারপর ভয়ে সে তার সৈন্যদেরকে বিভক্ত করে দেয় পূর্ব সতর্কতামূলক অযথা প্রস্তুতি নেয়ার জন্য।

প্রতিপক্ষ কখনও জানবে না আমি কোথায় তাকে আক্রমণ করব, যদি সে তা জানতে না পারে তবে আমাকে আটকানোর জন্য সে তার সৈন্যদেরকে বিভক্ত করে বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতি নেবে। আর যখন সে অনেকগুলো জায়গায় আমার সাথে যুদ্ধ করতে যাবে তখন সেখানে সৈন্যসংখ্যা এমনিতেই কম হবে। সে যদি সামনের দিকে প্রস্তুতি নেয় তবে তার পেছনের দিকে অবশ্যই দুর্বল থাকবে, এবং যদি পেছনের দিকে প্রস্তুতি নিতে যায় তবে সামনের দিকটা থাকবে নড়বড়ে প্রতিরক্ষা। বামে যদি প্রস্তুতি নেয় তবে ডানের প্রস্তুতি হবে ভয়ানকভাবে দুর্বল এবং ডানে নিলে বায়ে সৈন্য থাকবে একেবারে নগণ্য। আর সে যদি সব দিকে প্রস্তুতি নিতে যায় তবে তার সব দিকটায় দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হবে।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, শত্রু পক্ষ অনুমানও করতে পারবে না আমার রথ গাড়িগুলো প্রকৃতপক্ষের কোন দিকে যাবে, বা অশ্বারোহী সৈন্যরা কোন দিক থেকে আসবে, বা পদাতিক সৈন্যবাহিনী কোন দিক থেকে আক্রমণে যাবে, আর তাই তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে সব দিকে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। যার ফলে তারা এমনিতেই ভীত এবং দুর্বল হবে এবং তার শক্তি বিভক্ত হয়ে আমার সাথে বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করতে যাবে এবং এই সুযোগে আমি আলাদাভাবে তাদের প্রতিটা দলের সাথে আমার বিশাল শক্তি নিয়ে যুদ্ধ করতে পারব।

.

যারা সংখ্যায় নগণ্য তারা শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করবে; যারা সংখ্যায় বেশি তারা তার প্রতিপক্ষকে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে বাধ্য করবে। সেনানায়ক যদি জেনে থাকেন তাকে কোথায় এবং কখন যুদ্ধ করতে হবে তার সৈন্যরা একহাজার লি পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারবে এবং যুদ্ধক্ষেত্র খুঁজে বের করবে। কিন্তু কেউ যদি যুদ্ধক্ষেত্র এবং কোন সময়ে যুদ্ধ হবে তা সুস্পষ্টভাবে জানা না থাকে তবে বামের সৈন্যরা ডানের সৈন্যদের এবং ডানের সৈন্যরা বামের সৈন্যদের সামনের সৈন্যরা পেছনের এবং পেছনের সৈন্যরা সামনে সাহায্য করতে পারবে না।

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, যারা যুদ্ধে পারদর্শী তারা অবশ্যই জানে কোথায় এবং কখন লড়াই করতে হবে। ফলে তারা রাস্তার দূরত্ব মেপে নেয় এবং দিনক্ষণ ঠিক করে নেয়। তারা সৈন্যদেরকে আলাদা আলাদা লাইনে এগিয়ে নিয়ে যায়। যারা দূরের তারা প্রথমে রওয়ানা দেবে, যারা কাছের তারা অপেক্ষাকৃত পরে যাত্রা শুরু করবে। এভাবে করলে বিভিন্ন জায়গা থেকে রওয়ানাকৃত সৈন্যরা যদি একহাজার লি দূরে থেকেও যাত্রা করে তবুও তারা একই সময়ে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় মিলিত হতে পারবে। এটা এমন যেন মানুষ শহরের বাজারে আসছে।

সানজু বলেন, ইউয়েহ এর সৈন্যসংখ্যা আমি অনুমান করতে পেরেছিলাম, আমার শক্তি সামর্থ্য বেশি থাকার কারনে আমি এর থেকে কি সুবিধা পেতে পারি? তাই আমি বলতে পারি বিজয় নিজেই সৃষ্টি করা যায়। শত্রু সংখ্যা যতই বেশি হোক আমি তাকে আমার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত করতে প্রতিরোধ করতে পারব।

চিয়া লিন এর ভাষ্যমতে, শত্রু সংখ্যা বেশি হলেও, যদি সে আমার সামরিক কৌশলগুলি ধরতে না পারে, তবে তাকে একটু পর আমার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য করতে পারব যাতে করে সে স্থির হয়ে কোন পরিকল্পনা করতে না পারে।

এভাবে শত্রুর পরিকল্পনাগুলি জেনে নিতে পারলে আপনি নিজইে বুঝতে পারবেন আপনার নেয়া কোন পরিকল্পনা কাজে লাগবে আর কোনটা নয়। সেজন্য,

এক. তাকে উত্তেজিত করে তুলুন এবং তার গতিবিধি নিশ্চিত করুন।

দুই. তার সৈন্যবিন্যাস লক্ষ করুন এবং যুদ্ধক্ষেত্র নির্ণয় করুন।

তিন. তার পরিকল্পনার ভেতরে প্রবেশ করুন এবং জানুন কোথায় তার প্রচুর শক্তি রয়েছে এবং কোথায় দুর্বলতা রয়েছে।

চার. চুড়ান্ত কাজটা হল তার সৈন্যের বিন্যাস গঠন প্রনালি জানা। আর তা করতে পারলে যতই গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাক না কেন আর যতই পরিকল্পনা সাজাক না কেন আপনার বিরুদ্ধে তা ব্যবহারে কোন কাজে আসবে না। সৈন্যবিন্যাসটা এমন হতে পারে যে আমি পরিকল্পনা করেছি জয়ের জন্য কিন্তু বেশির ভাগ সৈন্যই তা জানতে পারল না। বাহ্যিক বিষয়টা সকলের দৃষ্টিগোচর হলেও কেউই বুঝতে পারবে না আমার বিজিত হওয়ার কৌশলগুলি।

তারপর, আমি যখন একটা জয় অর্জন করি, সেই কৌশলগুলি আমি আর কাজে লাগাই না কিন্তু পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে অসংখ্য কৌশল আমি তৈরি করে নেই।

.

একজন সৈনিককে পানির সাথে তুলনা করা যেতেই পারে, যেমনটা পানি উঁচু পাহাড়কে এড়িয়ে গিয়ে পাশের নীচু জমিকে প্লাবিত করে, ঠিক একজন সৈনিক শক্তিশালী জায়গাটা ছেড়ে গিয়ে দুর্বল জায়গায় আঘাত হানে। আর পানি যেমন ভুমির গঠনের উপর ভিত্তি করে নিজেকে সেভাবে গড়ে তোলে, ঠিক সেভাবে একজন সৈনিক পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে জয় ছিনিয়ে আনে। আর পানির যেমন নির্দিষ্ট কোন গঠন নেই, ঠিক তেমনি যুদ্ধের কোন নির্দিষ্ট শর্তও নেই। এভাবেই, একজন যোদ্ধা তার কৌশলগুলি পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন করে জয়ী হতে পারে। মনে রাখবেন, এই পাঁচটা উপাদানের কোনটাই স্থায়ী নয়; চারটা ঋতুর কোনটাই সারাজীবন স্থায়ী নয়; কোন কোন দিন ছোট আবার কোন কোন দিন বড়, আর চাঁদেরও অমাবশ্যা-পূর্নিমা আছে।

০৭ অধ্যায় – রণকৌশল

সানজু বলেন:

সৈন্য নিয়োগ দেয়ার সময় সেনানায়ক প্রথমে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দেশ পান। তিনি সৈন্য জড়ো করেন এবং দেশের জনগণের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করেন। তিনিই সৈন্যদেরকে প্রশিক্ষিত এবং উজ্জীবিত করে একত্রিত করেন এবং তাদেরকে শিবির অনুযায়ী ভাগ করে দেন।

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, সেনানায়ক সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের হুকুম পেলে টেম্পল কাউন্সিলের আর্শিবাদ বার্তাসহ সশ্রদ্ধ চিত্তে স্বর্গীয় আদেশ কার্যকরের উদ্দেশ্যে শত্রুকে শাস্তি দিতে যাত্রা শুরু করেন।

যুদ্ধে রণকৌশলের মত কঠিন দ্বিতীয় কোন কাজ নেই। রণকৌশলের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি কঠিন তাহল শত্রুর কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ রাস্তা খুঁজে বের করা এবং দুর্ভাগ্যকে সৌভাগ্যে পরিণত করা। সেজন্য পথে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে শত্রুকে আপনার পেছনে আসার সুযোগ করে দিন। তারপর কিছুদূর গিয়ে হঠাৎই ফিরে আসুন শত্রুকে চমকে দিয়ে আক্রমণ করুন। সৈন্যরা এই কৌশলটা সহজেই বুঝতে পারবে।

সাও সাও এর ভাষ্যমতে, শত্রুকে বুঝান আপনি অনেক দূরে। তার যাত্রা করার পরে আপনি যাত্রা করুন এবং তার পরিকল্পনা মাফিক নির্দিষ্ট জায়গায় তার আগেই আবির্ভূত হোন কারণ দূরত্ব কতটুকু তা অনুমান এবং হিসেব করে আপনি আগে থেকেই বলতে পারেন।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, যিনি এই কৌশলের সুযোগটাকে নিজের অনুকূলে করতে চান তিনি কঠিন কোন রাস্তা বেছে নেন এবং সেখানে যাওয়ার জন্য সহজ কোন উপায় খুঁজে বের করে নেন। দূর্ভাগ্যকে তিনি সৌভাগ্যে রুপান্তরিত করেন। তিনি শত্রুকে দেখাবেন যেন তিনি দেরি করছেন কিন্তু হঠাৎই দ্রুতগতিতে শত্রুর দিকে ধাবিত হবেন।

.

সুযোগ এবং বিপদ উভয় বিষয়ই রণকৌশলের উপর নির্ভর করে।

সাও সাও এর ভাষ্যমতে, দক্ষ যোদ্ধা এই কৌশলের সুবিধাটা পাবেন; আর যদি তা না পারেন তবে তিনি বিপদে পড়বেন।

যিনি পুরো সৈন্যবাহিনী একটা সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ধাবিত করেন তবে তিনি যেন হেরে গেলেন। যদি তিনি সুযোগটা নেয়ার জন্য শিবির ছেড়ে বেড়িয়ে যান তবে আগে যা জমা করেছিলেন তার সবটাই লুট হয়ে যাবে।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, কেউ যদি জমাকৃত সম্পদ নিয়ে বের হন তবে তার এগুনোর গতি নিশ্চিতভাবে কমে যাবে আর এর কারণে তিনি সুযোগটা হারাবেন। যদি তিনি ভারি জিনিসপত্র রেখে যান এবং সেগুলো পাহাড়ায় অল্প কিছু সৈন্য রেখে যান তবে তার মনে আতঙ্ক থাকবে হয়তো সেগুলো তিনি হারাতে পারেন।

যদি এমনটা হয়ে থাকে যে কেউ দ্রুত অস্ত্র তৈরি করে দিন রাত একহাজার লি যাওয়ার জন্য যাত্রা করল তবে সেখানে যদি তিনজন কমান্ডারও থাকে তবুও তার ধরা পড়বে। সবচেয়ে তেজস্বী সৈন্যরা আগে পৌঁছুবে আর দুর্বলরা সেখানে পৌঁছার জন্য রাস্তায় খাটা খাটুনি করেই যাবে, এই পদ্ধতি অবলম্বনের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে মাত্র দশভাগের একভাগ সৈন্যই এসে পৌঁছুতে পারবে।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত একজন সৈন্য দিনে ত্রিশ লি পর্যন্ত যেতে পারে। দ্রুত গেলে ত্রিশলি এর দ্বিগুণ যেতে পারে যেটা হল দ্বিতীয় পর্যায়। আপনি যদি দিন-রাত যেতে থাকেন তবে একশ লি পর্যন্ত যেতে পারবেন। আর যদি এই উপায়ে যেতে থাকেন তবে সৈন্যরা অবশ্যই আটক হতে বাধ্য। সানজু যখন এমনটা বলেছেন, তখন এর মানে দাঁড়ায়, যদি এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তবে দশজনে মাত্র একজনই গন্তব্যে পৌঁছুতে পারবে। তিনি বলতে চেয়েছেন, যখন আর কোন উপায় থাকবে না এবং আপনাকে অবশ্যই সুযোগটা পাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে হবে, আপনার সৈন্যদের মধ্যে সবচেয়ে তেজস্বী দশজন সৈন্যকে খুঁজে বার করুন যারা প্রথমে যাবে আর বাকিদেরকে নির্দেশ দেবেন তাদেরকে অনুসরণ করতে। আর এভাবে আপনি দশহাজার সৈন্যের মধ্যে এক হাজার সৈন্যকে বেছে নিলেন যারা খুব ভোরে পৌঁছুবে এবং বাকিরা একের পর এক পৌঁছুতে থাকবে, কেউ সকালের শেষের দিকে, কেউ কেউ দুপুরে, যাতে করে কেউই বিরক্ত না হয় এবং সময়মত সকলে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে যাবে। তাদের চলার গতি কোনভাবেই থেমে যাবে না। সুযোগটা পাওয়ার জন্য অবশ্যই কৌশলগতভাবে কঠিন একটা কাজ হতে যাচ্ছে। তবুও তেজস্বী ঐ এক হাজার সৈন্য সেখানে শত্রুকে প্রতিরোধ করতে যথেষ্ট। আর ততক্ষণে বাকি সৈন্যরা সেখানে এসে পৌঁছে যাবে।

পঞ্চাশ লি এগিয়ে যাওয়ার জন্য মার্চ করলে, সৈন্য কমান্ডারই পেছনে পড়ে যাবেন, আর এই পদ্ধতিতে মাত্র অর্ধেক সৈন্যই যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছুবে। ত্রিশ লি এগিয়ে যাওয়ার জন্য মার্চ করলে, দুই-তৃতীয়াংশ সৈন্য পৌঁছুতে পারবে। এই পদ্ধতি অনুসরণে সৈন্যরা ভারী অস্ত্র-সস্ত্র, শিবিরের সরঞ্জামাদি, খাবার এবং গচ্ছিত ধন-সম্পত্তি হারাবে।

লি চুয়ানের ভাষ্যমতে, যুদ্ধে শস্যকনা এবং খাদ্য লোহার তৈরি সুরক্ষা দেয়ালের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী।

যারা চলার পথের পাহাড়, বন, ঝুঁকিপূর্ণ গিরিখাত, জলাভুমি এসব পেরিয়ে যাবার কৌশলগুলি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবেন তাদের এগিয়ে যাওয়ার গতি এমনিতেই বহুলাংশে কমে যাবে। যারা যুক্তিযুক্ত উপায় খুঁজে বের করতে পারবেন না তারা এই রকম জায়গাতে সেখান থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে পারবেন না।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, কান’জু বলেন: ‘সাধারণত, মার্চ করার আগে কমান্ডারের হাতে অব্যশই একটা মানচিত্র থাকবে যেখানে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার বিপদগুলি সম্পর্কে অবহিত হবেন। আর এর মাধ্যমে রথ এবং ঘোড়া সওয়ারেরা চলার পথের পানির গভীরতা এবং রাস্তার খানা-খন্দ জেনে নিরাপদে এগিয়ে যেতে পারে। সৈন্যরা যাতে ওয়াগনগুলো যাওয়ার সময় পাহাড়ের ঢাল, নদীর গভীরতা, পাহাড়ি জমি, বন-জঙ্গল, রাস্তার দুরত্ব, পথিমধ্যে শহরগুলোর আয়তন ইত্যাদি সহজেই পেরিয়ে যেতে পারে। এই সব কিছুই তাকে জানতে হবে। সেনানায়কের মাথায় এই সব কিছুর স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে; আর এসব করতে পারলেই সেনানায়ক এই সব জায়গার সুবিধাগুলি ব্যবহার করতে পারবেন।

লি চিং বলেন: ‘…আমাদেরকে সবচেয়ে সাহসি অফিসার নির্বাচন করতে হয়েছে এবং যিনি বুদ্ধিসম্পন্ন এবং স্থানীয় পথ পরিচালকদের সাহায্য নিতে হয়েছে যাদের মাধ্যমে গোপনে পাহাড়ে এবং বনের ভেতরে নিঃশ্বব্দে এগিয়ে গেছি, নিজেদের কোন পদচিহ্ন পর্যন্ত রাখিনি।

.

এখনকার যুদ্ধের ভিত্তি হলো প্রতারণা। তাই সুযোগ বুঝে এগিয়ে যান এবং পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা পরিবর্তন করুন এবং শুধুমাত্র সৈন্যদের প্রতি মনোযোগ দিন। যখন এগিয়ে যাচ্ছেন তখন বাতাসের ক্ষিপ্রতায় আগান; ঘন বনের সাথে মিশে যান; যখন শত্রুর উপর আঘাত হানবেন তখন আগুনের মত তেজ্বদ্বীপ্ত হোন; যখন প্রতিরোধ করবেন তখন পাহাড়ের মত অটল থাকুন। আপনার পরিকল্পনা হবে আকাশের কালো মেঘের মত রহস্যময় আর যখন এগুবেন তখন বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে যান।

লুটের সময় আপনার সৈন্যদেরকে ভাগ করে দিন যাতে সব লুট কম সময়ে নিয়ে আসতে পারে আর যা লুট হবে সেগুলো তাদের মধ্যে বিলি করে দিন। আগে ভালো করে পরিস্থিতির অবলোকন করুন, তারপর এগিয়ে যান।

.

যিনি ডিরেক্ট এবং ইনডিরেক্ট অ্যাপ্রোচের কৌশলগুলি ভালো করে রপ্ত করেন, তিনিই জয়ী হন। এগুলিই হল যুদ্ধের রণকৌশল।

দ্য বুক অব মিলিটারি অ্যাডমিনিস্ট্রিশন বলছে: ‘যুদ্ধের ময়দানে যেহেতু কারও কথা শোনা যায় না তাই ড্রাম ও ঘন্টা ধ্বনির ব্যবহার করা হয়। আবার একই দলের সৈন্যরা যেহেতু একজন আরেকজনকে দেখতে পায় না তাই পতাকা ও ব্যানার ব্যবহার করা হয়। এখন জোর ধ্বনি এবং ড্রামের শব্দ, ব্যানার আর পতাকা এসব ব্যবহার করে সৈন্যদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে হয়। কোন সাহসি সৈন্য একাকি এগিয়ে যাবে না, আবার ভীতুরাও একাকি পালানোর চেষ্টা করবে না, সবাই একত্রে আগাবে বা পেছাবে। এটাই হল বড় সৈন্যদের পরিচালনা কৌশল।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, সামরিক আইন আছে: যখন এগিয়ে যেতে হবে তখন যদি থেমে যান এবং থেমে যাওয়ার সময় তখন যদি এগিয়ে যান তবে তাদের শিরোচ্ছেদ নিশ্চিত।

অউ চি একবার চিন রাজ্যের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে, সেখানে তার একজন একগুয়ে অফিসার ছিলেন। তিনি এতটাই অস্থির হয়ে পড়েছিলেন যে আক্রমনের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছিলেন না। নির্দেশের অপেক্ষা না করে তিনি আক্রমণে গিয়ে দুজন শত্রু সৈন্য হত্যা করে ফিরে এলেন। অউ চি ফরমান জারি করে তাকেই হত্যা করে ফেললেন।

আর্মি কমিশনার তাকে সতর্ক করে বললেন: সে তো প্রতিভাবান একজন অফিসার ছিল; তাকে হত্যা করাটা ঠিক হয়নি। অউ চি জবাবে বললেন: “আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সে অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন অফিসার আমি নিশ্চিত কিন্তু এর পাশাপাশি সে অবাধ্যও ছিল।

একারনেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

সানজুর মতে, রাতের যুদ্ধে যতবেশি সম্ভব মশাল এবং যুদ্ধের ড্রামাডোল ব্যবহার করুন, দিনের বেলায় যুদ্ধ হলে ব্যানার আর পতাকা ব্যবহার করে নিজেদের সৈন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, বিশাল সৈন্যবাহিনী গুলো ছোট ছোট দলেরই সমষ্টি, আর তাই সামনে, পিছনে, ডানে, বায়ে, সৈন্যদের আলাদা-আলাদা শিবির থাকে। আর এগুলো এমনভাবে বসানো হয় যে কমান্ডার ইন-চিফের শিবির থাকে একেবারে মাঝখানে। আর সৈন্যদের শিবিরগুলো চারিদিক থেকে বৃত্তের মত ঘুরে বসানো হয়। কয়েকটা কোনায় এত শক্ত শিবির গড়ে তোলা হয় যেন প্রত্যেকটা পি লেই এর মত একটা সমাবেশ।

একটা শিবির থেকে আরেকটার দূরত্ব পঞ্চাশ থেকে একশ পা এর বেশি নয়। মাঝের রাস্তাটা এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে সৈন্যরা সেখানে মার্চ বা প্যারেড করতে পারে। শিবিরগুলোর প্রবেশমুখ এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে এক শিবির অন্য শিবিরকে তীর ধনুক এবং বল্লম ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করতে পারে।

চারটা শিবিরের দুটো রাস্তা যেখানে ক্রস করে সেখানে একটা ছোট দুর্গ গড়ে তুলে তার মাথায় একটা মশাল জ্বালানো হয়। দুর্গের ভেতরে গোপন সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়। দুর্গের মাথায় মই দিয়ে উঠতে হয় যেখানে আবার সৈন্যদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। অন্ধকারে যদি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে কেউ যুদ্ধের ডামাডোল শুনে তবে সে ঐ চার শিবিরের মধ্যকার মশালটি জ্বালিয়ে জাগিয়ে তুলে। আর রাতে আক্রমণ করতে হলে শত্রুদেরকে কোন না কোন প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতে হবে যেখানে ছোট ছোট শিবির থাকে যাদের নিজস্ব শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকে এবং উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম কোন দিক থেকে আক্রমণ করবে শত্ৰু সেটা বুঝতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে।

কমান্ডার ইন-চিফ অথবা কোন সৈন্য শিবির আক্রমণের খবর যেই পাবে শত্রুকে ভেতরে ঢুকতে দেবে; সৈন্যরা তারপর ড্রামের শব্দ করলে সব শিবির থেকে শব্দের প্রতিত্তের দেবে। সব দূর্গগুলোর মশাল জ্বালিয়ে দিনের মত আলো সৃষ্টি করা হয়। পাশাপাশি সৈন্য-অফিসাররা প্রবেশ দরজা বন্ধ করে দেয় এবং একদল সৈন্য চারিদিক থেকে পাল্টা আক্রমনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। চারিদিক থেকে তীর-ধনুক এবং বল্লম ছোঁড়া হয় শত্রুদের টার্গেট করে।

তবে আমাদের সবচেয়ে ভাববার বিষয় হল শত্রুরা কখনও রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করে না, যদি সে জানে যে আক্রমণ করলে পরাজয় নিশ্চিত।

কমান্ডার যদি সৈন্যের সাহসিকতার প্রশংসা না করেন, তবে একজন সৈন্যের তেজস্বীতা মন্থর হয়ে যেতে পারে।

হো ইয়েন-সি এর ভাষ্যমতে, অউ চি বলেন: ‘লক্ষ সৈন্যের সামরিক তেজস্বীতা নির্ভর করে শুধুমাত্র একজন মানুষের উপর। তিনিই হলেন তাদের তেজদ্বীপ্তির একমাত্র চাবিকাঠি।

মেই ইয়াও চেন এর ভাষ্যমতে, যদি একজন সৈন্য তার সাহসিকতার পুরস্কার না পায়, তাহলে যেন কমান্ডার ঐ সেনার হৃদয়ের মালিকানাও হারালেন।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, হৃদয় হল সৈন্যের এমন একটা জিনিস যার দ্বারা কমান্ডার তার উপর আধিপত্য করতে পারে। আর তাই আদেশ পালন করবে নাকি সন্দেহ পোষণ করবে, সাহসিকতা প্রদর্শন করবে নাকি কাপুরুষের মত পালাবে এই সবকিছুই একজন সৈন্যের মনোবলের উপর নির্ভর করে। এ কারনেই বিচক্ষণ সেনানায়ক সৈন্যদের হৃদয় জয় করে শত্রুর বিরুদ্ধে তাকে যেতে উৎসাহিত করেন। সে যুদ্ধক্ষেত্রে এমন ভাব করবে যেন শত্রু তার সম্পর্কে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে এবং শত্রুকে ভাবতে শুরু করায় যেন তার প্রতিপক্ষ অত্যন্ত ভয়ানক। এভাবেই সে তার শত্রুর মন চুরি করে এবং পাশাপাশি তার সমস্ত শক্তিও।

সকালের দিকে সৈন্যদের তেজস্বতা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ থাকে, দুপুরের দিকে ঝিমিয়ে পড়ে এবং সন্ধার দিকে তাবুতে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। আর তাই যারা বিচক্ষণ যোদ্ধা তারা শত্রুর তীক্ষ্ণ তেজস্বীতার সময় তাকে এড়িয়ে যান, যখন শত্রুর মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে তখন তাকে আক্রমণ করে এবং তারপরই তার সৈন্যরা ঘরে ফিরে যেতে চায়। এটাই হল সৈন্যের মনোবল নিয়ন্ত্রণ করা।

প্রবল আক্রমণাত্নক সময়ে দক্ষ যোদ্ধারা বিশৃঙ্খল শত্রুর জন্য অপেক্ষা করে; বিশ্রামের সময় শত্রুদের নিজেদের মধ্যে গোলযোগের সুযোগ খুঁজে। এটাই হল সৈন্যদের মানষিকতার সক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, দৃঢ় মনোবলের সময় সৈন্যরা শত্রুর বিশৃঙ্খলা দেখে ঘাবড়ে যায় না।

যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি শত্রুর আসার জন্য অপেক্ষা করুন; সেক্ষেত্রে আপনার জিরিয়ে নেয়া সৈন্যরা ক্লান্ত শত্রুর সাথে ভালোভাবে খাবার সেরে নেয়া সৈন্যরা ক্ষুধার্ত শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে। এটাকে বলা হয় সৈন্যদের শারীরিক সক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ।

সুদক্ষরা কখনই গোছানো শত্রুর আগে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না, তাদের যত ভালো প্রস্তুতি থাকুক না কেন। এটাই হল পরিস্থিতির প্রয়োজনে পরিকল্পনার পরিবর্তনের সক্ষমতা।

.

সৈন্য সাজানোর উপায় হল, যখন শত্রু উঁচু পাহাড়ে আছে তখন তার সামনাসামনি যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়া; শত্রুর পেছন দিক থেকে সরে যাওয়ার সময় তার প্রতিরোধ না করে বরং আক্রমণ করতে হবে। শত্রু যখন পেছনে সরে যাওয়ার ভান করে, তখন তার পিছু নেয়া যাবে না। শত্রুর সবচেয়ে দুর্ধর্ষ বাহিনীকে আক্রমণ করা যাবে না। সবগুলো টোপ একসাথে দেয়া যাবে না।

মেই ইয়াও-চেন এর ভাষ্যমতে, যে মাছ টোপ একসাথে গিলে নেয় সেই ধরা পড়ে; টোপ হিসেবে সব সৈন্যকে একসাথে পাঠালে পরাজয় নিশ্চিত।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, ‘তৃমাত্রিক কৌশল’ বলছে: প্রয়োজনের অপ্রতুল টোপ খেয়ে ফেললে সেই মাছই ধরা পড়বে।

তাবুতে ফিরে যাওয়ার সময় শত্রুকে বাধা না দেয়াই ভালো। চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলা শত্রুকে পালিয়ে যাবার জন্য একটা পথ খোলা রাখতে হবে।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, তাকে বুঝতে দিন যেন একটা রাস্তা তার সামনে রয়েছে, এবং তার মধ্যে এই ভাবনার সৃষ্টি হতে দিন যেন মৃত্যু ভিন্ন অন্য একটা পথ তার সামনে খোলা আছে। তার এই ভাবনার ফলে তার মধ্যে যে রিল্যাক্স তৈরি হবে সেই সময়ই আক্রমণ করুন।

শত্রু যাতে কোন উপায়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, প্রিন্স ফুঁ চিয়া বলেন: বন্য পশু যখন সামনে নিশ্চিত মৃত্যু দেখতে পায়, তখন সে প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যায়। আর এটা একজন মানুষের বেলায়ও সত্য! যদি তারা বুঝতে পারে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল যুদ্ধ করা, তবে তারা প্রবল আক্রমণ করবে।

হান সমাট সুয়ার এর আমলে, চাও চুয়াং-কু বিদ্রোহি গোষ্ঠী চিয়াংদের দমন করতে গেলে চিয়াং উপজাতিরা দেখল তাদেরকে দমনে বিশাল সৈন্যবাহিনী আসছে। তারা তাদের ভারি সব জিনিসপত্র ফেলে গিয়ে ইয়েলো নদীর কিনারায় দুর্গ গড়ে তুলল। সৈন্যদের এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে রাস্তাগুলো ছিল খুবই ক্ষীণ। আর তাই চুয়াং কার্ডিনাল তার সৈন্যদেরকে ধীরে সুস্থে ক্ষীণ রাস্তা দিয়ে পাঠাতে লাগলেন।

কেউ একজন বলে উঠল: আমাদের প্রচুর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের এগুনোর গতি অত্যন্ত ধীর।

চুয়াং-কু জবাবে বললেন: ‘বিদ্রোহিরা এখন উন্মত্ত হয়ে আছে। আমি তাদেরকে আর নাড়াতে চাই না। যদি তাদেরকে এমনটা বুঝতে দেই যে তাদের যুদ্ধ ছাড়া আর কোন উপায় নেই তবে তারা কোন দিক তাকাবে না। মৃত্যু পর্যন্ত ক্ষিপ্র গতিতে তারা যুদ্ধে লিপ্ত হবে।

সব জেনারেলরাই একসাথে বলে উঠলেন: ‘অসাধারণ কৌশল! এগুলোই হল সৈন্য পরিচালনার বিচক্ষণ কৌশল।

 

০৮ অধ্যায় – রণকৌশলের ব্যতিক্রমী নয় ভাবনা

সানজু বলেন:

সাধারণত একটা সামরিক অভিযানে সৈন্য নিয়োগের পদ্ধতি হল: কমান্ডার প্রথমে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের থেকে নির্দেশ পেলে নিয়মিত সৈন্য সমাবেশের মাধ্যমে সেখান থেকে সৈন্য জোগাড় করেন। সৈন্য শিবির কোথায় স্থাপন করলে সর্বোচ্চ সুযোগ পাবেন ও কিভাবে যুদ্ধ শুরু করবেন তা সম্পর্কে সানজুর মত,

এক. মার্চ করে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি নিচু কোন এলাকায় সৈন্য শিবির স্থাপন করা যাবে না।

দুই. মিত্র রাজ্যের সাথে আলোচনার আয়োজন করে মিত্রবাহিনী গঠন করতে হবে।

তিন. জনশূন্য এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় গড়িমসি করা একেবারেই উচিত নয়।

চার. চারিদিকে জনাকীর্ণ স্থান থেকে যুদ্ধ সরঞ্জামাদি এবং খাবার পর্যাপ্ত পরিমানে জোগাড় করে নিন।

পাঁচ. রুক্ষ-শুকনো জমিতে যুদ্ধ করুন।

ছয়. কিছু রাস্তা আছে যেগুলো দিয়ে কখনও যাতায়াত করবেন না; কিছু সৈন্য আছে যাদেরকে ঘাটাবেন না; কিছু শহর আছে যেখানে হামলা করবেন না; এবং কিছু জমি আছে যেখানে ভুলেও যুদ্ধ করতে যাবেন না।

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, সানজু এর দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন যেন শক্রর কিছু চালাকি থাকতে পারে যেখানে উঁচু দেয়াল এবং গভীর খাদ দ্বারা মূল্যবান সম্পদ বেষ্টিত করে রেখেছেন। সেখানে আক্রমণ করা যাবে না। যদি আপনি সেই শহরে আক্রমণ করেন এবং সেখানে পৌঁছুনো এতটাই খরচ হবে যে সৈন্য পাঠিয়ে সেখান থেকে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে যাবে। আর তাই সেটা আক্রমণ করা ঠিক হবে না।

সাত. এমন কিছু পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে যেখানে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকেও মান্য করা যাবে না।

সাও সাও এর ভাষ্যমতে, যুদ্ধের একেবারে টানটান উত্তেজনায় সেনানায়ককে কিছুতেই সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের দ্বারা আটকানো উচিত হবে না।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, ওয়েই লিয়াজু বলেন: ‘অস্ত্র হল দুর্ভাগ্যপূর্ণ একটা যন্ত্র; দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ হল উত্তৰ্ষতার সম্পূর্ণ বিপরীত; মৃত্যুদূত স্বর্গ এবং মর্তের মধ্যে যেমন পার্থক্য সৃষ্টিকারী নন; এবং যুদ্ধে দুত দু-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টির জন্য দায়ি নন।’

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, কং-ফু চি বলেন: ‘যখন যথাযথ কার্য সম্পাদনের উপায় দেখবে; সেটা সম্পাদনের জন্য আদেশ দিতে দেরি করবে না।’

.

একজন সুবিবেচক সেনানায়ককে যুদ্ধে সাফল্য অর্জনে নয়টি ব্যতিক্রমী চিরায়ত কৌশল খুব ভালো ভাবে রপ্ত করে নিতে হয়।

চি-লিন এর ভাষ্যমতে, সেনানায়ককে অবশ্যই তার সামর্থ্যের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে যাতে করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন। তিনি কিছু নিয়মকানুনের মধ্যে ধরাবাধা থাকতে পারবেন না।

সেনানায়ক যদি নয়টি ব্যতিক্রমী চিরায়ত কৌশল খুব ভালো ভাবে রপ্ত করতে না পারেন তবে যতই পরিচিত আর সুবিধাজনক জায়গায় তিনি ঘাটি তৈরি করুন না কেন যুদ্ধক্ষেত্র এবং টেরেইনের সুবিধাগুলি তিনি নিজের অনুকুলে করতে পারেবেন না।

চি-লিন এর ভাষ্যমতে, যুদ্ধের পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে একজন সেনানায়কের ভাগ্য পাল্টে যেতে পারে।

সামরিক অভিযানের দিক নির্দেশনার সময় কেউ যদি এই চিরায়ত নয়টি রণকৌশলগুলো কাজে লাগানোর সময় সামরিক কৌশলগুলির সন্নিবেশ ঘটাতে

পারেন তবে তার যদি যুদ্ধ ক্ষেত্র এবং টেরেইনের সেই ‘পাঁচটি সুবিধা জানাও থাকে তবুও তিনি তার সৈন্যদেরকে যথাযথ উপায়ে কাজে লাগাতে পারবেন না।

চি-লিন এর ভাষ্যমতে, এখানে পাঁচটি চিরায়ত ব্যতিক্রমধর্মী কৌশল হল:

এক. একটা রাস্তা, সেটা অল্প দূরত্বেরও হতে পারে; সেটা অনুসরণ করা যাবে না যদি সেখানে কোন বিপদ আছে বলে সন্দেহ হয়।

দুই, একজন সৈন্য, যদি আক্রমণিত হয়েও থাকে তবুও শত্রুকে পাল্টা আক্রমণ করা যাবে না যখন সে জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে থাকে।

তিন. একটা শহর, জনশূন্য এবং আক্রমণিত হওয়ার আশংকা থাকলেও, সেখানে আক্রমণ করা যাবে না সেখানে মূল্যবান সম্পদ থাকলেও সেখানে অনিয়মিত সৈন্য বাহিনী দ্বারা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করলেও আক্রমণ করা যাবে না। এর মানে হল সেনারা তাদের নেতার প্রতি অনুগত এবং বিজ্ঞ নেতাদের পরিকল্পনাগুলো সবসময় অসংঙ্গায়িত হয়ে থাকে।

চার. একটা ভূমি, অনেক ছোট হতে পারে, সেখানে যুদ্ধে জড়ানো যাবে না যদি তারা সেটা দখলও করে ফেলে; কারণ সেখানে প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে, অথবা হতেও পারে সেটা দখল করে তার কোন লাভ হল না। কিন্তু সেখানে যুদ্ধে জড়ানো মানে পাল্টা আক্রমণের তোপে পড়তে পারেন এবং পরে ভুগতে হবে।

পাঁচ. সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ, সেটা মান্য করা বলে উচিত মনে হলেও মান্য করা যাবে না, যদি সেনানায়ক বুঝতে পারেন যে এটার মধ্যে রাজধানী থেকে কোন ভুল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এই পাঁচটি শর্ত অবশ্যই মেনে চলতে হবে যেহেতু এগুলো দৃষ্টিগোচর হবেই এবং পরিস্থিতির কারণে সেগুলো সামনে আসবেই, এবং সেগুলো আগে থেকে নিশ্চিত করা যাবে না। আর এই কারণেই, বুদ্ধিমান সেনানায়ক তার কর্ম সম্পাদনের সময় অবশ্যই অনুকূলে এবং প্রতিকূলে থাকা বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন।

সাও সাও এর ভাষ্যমতে, তিনি সুবিধাগুলির মধ্যে থাকা বিপদগুলোকে এবং বিপদের মধ্যে কোন সুযোগ থাকলে সেগুলোকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।

অনুকূলে থাকা সুযোগগুলো নেয়ার মাধ্যমে তিনি পরিকল্পনাটাকে কার্যকরের আরও সহজ করে তুলবেন; প্রতিকুলে থাকা সুবিধাগুলো নিজের করে নেয়ার মাধ্যমে তিনি বিপত্তিগুলোকে সহজ করে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসবেন।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুর থেকে যদি কোন সৌভাগ্য পেতে চান তবে আপনাকে সৌভাগ্যটাকে শুধু সুযোগ ভাবলেই হবে না; সৌভাগ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এটাও মনে রাখতে হবে যে শত্রুর দ্বারা আপনারও ক্ষতি হতে পারে।

হো ইয়েন-সি এর ভাষ্যমতে, সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য উভয়ই পাশাপাশি সহাবস্থান করে। একটা অপরটার পরিপূরক।

যিনি দু-প্রতিবেশির মাঝে ঝগড়া বিবাদের সমাধান করতে যান তিনিও সেখানে আহত হতে পারেন।

চি-লিন এর ভাষ্যমতে, শত্রুর কোন ক্ষতি করার পরিকল্পনা শুধুমাত্র একটা পদ্ধতিতেও কার্যকর নাও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তার পারদর্শী এবং প্রতিভাবান সঙ্গীরা তার পরিকল্পনার বিরোধীতা করতে পারে। এর কারণ হল তিনি ভালোভাবে পরিকল্পনাটা প্রণয়নে যোগ্য উপদেষ্টা নিয়োগ দেননি। অথবা তিনি কোন বিশ্বাসঘাতককে পাঠিয়েছেন। অনেক সময় ধূর্ত লোক পাঠালে সে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। অথবা এমন অনেক দুত আছে যারা রাজ্যের জনগণকে তাদের সম্পদ পাঠানো বন্ধ করে দিতে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। অথবা আপনাকে দিয়ে সুন্দরী কোন রমনি হরন করাবে যাতে আপনার সম্মানহানী ঘটে।

.

শত্রু আপনাকে একাধারে বিজিত হতে সুযোগ দিতে থাকবে এবং আপনাকে একের পর এক সুযোগ সামনে এনে দেবে। সকল যুদ্ধের একটা নিজস্ব মতবাদ আছে, কখনও মনে করা যাবে না যে শত্রু আপনার পেছনে আসছে না, বরং সচেতন থাকতে হবে যেকোন সময় শত্রুর সাথে সংঘর্ষ হতে পারে। সে জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, এমনটা মনে করা যাবে না যে, তারা আর আক্রমণ করবে না, বরং সবসময় যাতে বিজিত হতে পারেন সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

হো ইয়েন-সি এর ভাষ্যমতে, রাজা অউ এর যুদ্ধ কৌশল’ বলছে: ‘পুরো পৃথিবীর মানুষ যখন শান্ত, নিশ্চয়ই কেউ একজন তার বগলের নিচে একটা তরবারি প্রস্তুত রেখেছে।’

.

সানজুর মতে, পাঁচটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো একজন সেনানায়কের চরিত্রে থাকাটা খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার।

এক, তিনি যদি একগুয়ে স্বভাবের হন, তবে তিনি মারা পড়বেন; দুই. যদি ভীতু হন, তবে ধরা পড়বেন; তিন. যদি বদমেজাজি হন, তবে নিজেই নিজের বোকামির ফাঁদে পড়বেন;

চার. যদি সম্মানের প্রশ্নে বেশি দুর্বল হোন, তবে সম্মানের প্রশ্নে তিনি চূড়ান্ত পরিণতি বরণ করে নিতেও দ্বিধাবোধ করবেন না;

পাঁচ. যদি অসহিষ্ণু হোন, তবে নিজের ভুলের জন্য নিজেই অপদস্থ হবেন। এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্য একজন সেনানায়কের চরিত্রের অত্যন্ত খারাপ দিক এবং সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিপজ্জনক। একটা সৈন্যদলের সর্বনাশ এবং সেনানায়কের মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে একজন সেনানায়কের এই সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এগুলো নিয়ে তাকে গভীর চিন্তা ভাবনা করতে হবে।

 

০৯ অধ্যায় – দ্য মার্চ

সানজু বলেন:

এক. সাধারণত একটা সামরিক অভিযানে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যখন প্রস্তুতি নেবেন তখন তাদের মুখোমুখি অবস্থান নেবেন, পাহাড় পেরিয়ে সমভূমির কাছাকাছি থাকবেন। পাহাড়ের পাদদেশে উঁচুভুমিতে শিবির স্থাপন করুন এবং সূর্যের মুখোমুখি থাকুন। নিচু সমভুমিতে যুদ্ধ করুন। আক্রমণের ক্ষেত্রে কিছুতেই পাহাড়ে উঠবেন না। যতটা পারবেন চেষ্টা করুন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নিতে। কোন নদী পেরিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে হলে সেটা পার হয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে যান। নদীর কিনারায় একেবারেই থাকবেন না। শত্রুকে আক্রমণের উদ্দেশ্যে যদি নদী পার হতেই হয় তবে পানির কিনারায় তাবু তৈরি করবেন না। শত্রুর অর্ধেক সৈন্য নিজেদের সৈন্যদের ভেতরে মিশে যেতে দিন, তারপর আঘাত হানলে সুবিধা বেশি পাবেন।

হো ইয়েন-সি এর ভাষ্যমতে, এক বসন্ত এবং শরৎকালের মধ্যবর্তী সময়ে ডিউক সাং এসেছিলেন হাং নামক স্থানে চু সৈন্যদের আক্রমণের উদ্দেশ্যে। ডিউক সাং তার সৈন্যদেরকে আক্রমণের নির্দেশ দিলেন যখন চু সৈন্যরা সকলে নদী পেরিয়ে গেছে। যুদ্ধ মন্ত্রী বলেন: আমাদের চেয়ে শত্রু সৈন্য অনেক বেশি ছিল। আমি ডিউক সাং এর কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম চু সৈন্যদের আক্রমণের। জন্য, তখনও তারা সকলে নদী পেরোতে পারেনি। ডিউক সাং জবাবে বলেছিলেন: না, এখনই নয়।’

ইতোমধ্যে চু সৈন্যরা নদী পেরিয়ে গেছে কিন্তু তখনও অবস্থান নিতে পারে নি, যুদ্ধ মন্ত্রী আবারও আক্রমণের অনুমতি চাইলে ডিউক বলেন: ‘এখনও না । তারা তৈরি হলে তারপরই আমরা আক্রমণে যাব।’

সে যুদ্ধে সাং সৈন্যরা পরাজিত হয়েছিল, ডিউক মারাত্মকভাবে আহত হলেন, এবং তার অফিসারদেরকে কতল করা হয়।

দুই. আক্রমণের উদ্দেশ্য থাকলে, আপনার প্রতিপক্ষকে নদীর কিনারায় আক্রমনের সুযোগ দেবেন না। সূর্যের দিকে মুখ করে উঁচু জমিতে অবস্থান নিন। নিচু ভ্যালিতে কখনও অবস্থান নেবেন না।

এসব কিছুই নদীর আশে পাশে বা কাছাকাছি অবস্থান নেয়ার কথা বলেছি। তীর থেকে সরে যেতে পারলে কিভাবে পরিকল্পনা সাজাবেন তার কথা বলছি এবার।

.

দ্রুত তীর থেকে সরে পড়ন। তীরে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করবেন না। যদিও বা নদীর কাছাকাছি এসে বিস্তীর্ণ জমিতে অবস্থান নিতেই হয় তবে পেছনে কিছু ঘাস বিস্তীর্ণ জমি ফেলে আসুন। এই কাজটা করবেন তখনই, যখন সেখানে অন্য কোন উপায় না থাকে। তীর পেরিয়ে যদি সমতল ভূমিতে পৌঁছুতে পারেন তবে নিজের সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিন। পেছনে এবং ডানে উঁচু ভুমি রাখুন, যুদ্ধক্ষেত্রটা হবে ঠিক সামনে আর পেছনে তো আপনি নিরাপদ।

আর এগুলো হল সমতলভূমিতে অবস্থান নেয়ার কৌশল।

সানজু বলেন, এই পরিস্থিতিতে কিভাবে অবস্থান নেবেন এবং সুযোগ আদায় করে নেবেন তার কৌশল বললাম। এই কৌশলগুলি অনুসরণ করে ইয়েলো রাজা চারটা রাজ্য দখল করতে সক্ষম হোন। একজন সৈন্য নিচু জমির চাইতে উঁচু জমিই বেশি পছন্দ করে; সূর্যের আলো পেতে চায় এবং ছায়াযুক্ত স্থান অপছন্দ করে। এমন পরিস্থিতি পেলে সৈন্য তার শক্তি সামর্থ্য সম্পর্কে আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে পারে। একজন সৈন্য কিছুতেই হেরে যাওয়া মেনে নিতে পারে না। যখন উঁচু ঢিবি, পাহাড়ি এলাকা পাবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই সুর্যের আলোতে নিজেকে অবস্থান নেবেন এবং এগুলোকে ডানে এবং পেছনে রাখবেন।

এই কৌশলগুলি একজন সৈন্যের জন্য অত্যন্ত ফলদায়ক এবং এর মাধ্যমে ভূমি থেকে যে সুবিধাগুলি পাওয়া যেত তা পেতে সাহায্য করবে। সানজু ভূমিকে বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত করেছেন :

‘হ্যাভেনলি ওয়লস’, ‘হ্যাভেনলি প্রিজনস’, ‘হ্যাভেনলি নেটস’, ‘হ্যাভেনলি ট্র্যাপস’, এবং হ্যাভেনলি ক্র্যাকস’, ইত্যাদি চোখে পড়লেই দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়ুন। শত্রুর দিকে আগানোর চিন্তা বাদ দিন।

সাও সাও এর ভাষ্যমতে, প্রবল বর্ষণে পাহাড়ের পাদদেশে পানি জমে যাওয়াই হল ‘প্রিসিপশাস টরেন্টস’। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা সমতল ভূমিকে ‘হ্যাভেলি ওয়েল’ বলা হয়। যখন পাহাড়ের পাদদেশ ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং যাওয়ার পথটা একটা খাঁচার মত তখন সেটাকে বলা হয় হ্যাভেনলি প্রিজন। যেখানে কিছু সৈন্য এগিয়ে গিয়ে মাঝে কোন ফাঁদে পড়ে বিভক্ত হয়ে যায় তখন সেটাকে বলা হয় ‘হ্যাভেনলি নেট’ । জোয়ারে ডুবে যাওয়া ভূমিকে বলা হয় হ্যাভেনলি ট্র্যাপ’। যেতে যেতে পাহাড়ি পথ যদি ছোট হয়ে আসে এবং মাঝ পথে কিছুটা ডুবন্ত তখন সেটাকে বলা হয় হ্যাভেনলি ক্র্যাক।

এমন জায়গাগুলোকে এড়িয়ে চলুন এবং আপনার শত্রুকে সেদিকে খেদিয়ে নিয়ে যান। তাদের মুখোমুখি হয়ে পেছনদিকে সরে এমন জায়গাগুলিতে ঢোকার জন্য তাদেরকে বধ্য করুন।

.

সৈন্যদের চলার পথে ভয়ঙ্কর গিরিখাত অথবা স্পঞ্জ জাতীয় ঘাসে ভরা বিপজ্জনক জমি থাকতে পারে। তাছাড়া ঘন বন জঙ্গল এবং পাহাড়ে ঘেরা দুর্গের মত জায়গা থাকতে পারে। এমন সব জায়গায় শত্রু ফাঁদ পেতে রাখতে পারে।

শত্রু খুবই কাছে কিন্তু অল্প সংখ্যক শত্রু দেখা যাচ্ছে তার মানে সে তার সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করছে। সে যখন আপনাকে তার দিকে আক্রমনের টোপ দেবে তার মানে সে এমন জায়গায় অবস্থান করছে যেখান থেকে সে ভুমির সুবিধাটা গ্রহন করে আপনার বিরুদ্ধে তা কাজে লাগাতে চাইছে। সানজু কিছু লক্ষনের কথা বলে গেছেন যেগুলো দেখে আপনার শত্রু সম্পর্কে ভাল অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন:

এক. ঘন বনে যদি গাছ নড়তে দেখা যায় তবে বুঝতে হবে শত্ৰু এগিয়ে আসছে।

দুই. ঘাসের উপর অনেক সংখ্যক দৃশ্যমান প্রতিবন্ধকতা লাগিয়ে রাখার মনে, শত্রু আপনাকে ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।

তিন. বন-জঙ্গল থেকে হঠাৎ পাখি উড়ে গেলে বুঝবেন শত্রু সেনারা সেখানে ফাঁদ পেতে অপেক্ষা করছে; বন্য প্রানি হচকিত হয়ে পালিয়ে গেলে মনে করবেন শত্রু হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে।

চার. দূরে কোথাও যদি ধুলি কলাম বা স্তম্ভের মত আকাশে উড়ে তখন বুঝবেন শত্রু রথ নিয়ে এগিয়ে আসছে; আর যদি দেখেন ধুলি মেঘ নিচু হয়ে অনেকখানি এলাকা জুড়ে, বুঝবেন শত্রুর পদাতিক বাহিনী আসছে।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, শত্রুর রথ এবং ঘোড়ার গাড়িগুলো যখন দ্রুত এগিয়ে আসে তখন মাছের ঝাকের মত এক দল বেধে একের পর এক এগিয়ে আসে। আর এই কারনেই ধুলা সিলিন্ডারের মত লম্বাটে গোলাকার আকারে ঘুরতে থাকে।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, সৈন্য নিয়ে যখন সেনানায়ক এগুবেন তখন পরিদর্শক দল আগে আগে গিয়ে পথে কোন বিপত্তি আছে কিনা তা পর্যবেক্ষন করে। যদি দেখে যে শত্রু সেনারা ধুলার মেঘ উড়িয়ে এগিয়ে আসছে দ্রুত তারা ফিরে এসে কমান্ডিং জেনারেলকে তা জানায়।

পাঁচ. যখন দেখবেন ছোট ছোট ধুলার মেঘ একটা জায়গায় চারিপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে বুঝবেন শত্রু আগুন জ্বালানোর কাঠ সংগ্রহ করছে; আর যখন দেখবেন নিচু ধুলার মেঘ একটা বিশাল এলাকাজুড়ে স্থির হয়ে আছে তখন বুঝে নিতে হবে শত্রু সৈন্যরা সেখানে শিবির স্থাপন করছে।

ছয়. শত্রুর দুত যখন সুর পাল্টে কথা বলে অথচ পাশাপাশি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তারমানে সে আপনার বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

সাত. শত্রুর কথাবার্তায় যদি প্রতারণার ছাপ খুঁজে পান আর পুর্বেই একবার আক্রমণ করে গেছে, তাহলে তারা পশ্চাদপসরণ করার পায়তারা করছে।

আট. দুত যখন ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিমায় কথা বলে, এবং কিছু শর্তে সটকে পড়তে চায়, তাহলে বুঝতে হবে তারা যুদ্ধের কিছু সময় বিরতি চায়। আর এই সুযোগে তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাইছে।

নয়. কোন উপযুক্ত কারণ অথবা গ্রহনযোগ্য প্রতিনিধি ছাড়াই যখন শত্রু সন্ধির প্রস্তাব করে, বুঝতে হবে এর পেছনে নিশ্চই কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে।

দশ. শত্রুর হালকা রথগুলো যখন ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে এসে ঘোড়াসওয়ারদের পাশাপাশি অবস্থান নেয়, বুঝতে হবে শত্রু যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজাচ্ছে।

এগারো. যখন শত্রুসেনারা ক্ষিপ্র গতিতে যে যার স্থানে অবস্থান নিচ্ছে, তখন বুঝে নিতে হবে আক্রমনের সময় খুবই সন্নিকটে।

এগারো. যখন শত্রুর অর্ধেক সেনা এগিয়ে আসে আর বাকিরা পালিয়ে যাওয়ার ভান করে, তারমানে শত্রু আপনাকে ধোঁকা দেয়ার পায়তারা করছে।

বারো. যখন শত্রু সেনারা তাদের নিজেদের অস্ত্রের উপর ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়, তখন বুঝে নিবেন তারা ক্ষুধায় ক্লান্ত।

তেরো. শত্রুর পানি সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সৈন্যরা যখন পানি সংগ্রহ করতে এসে নিজেরাই পানি পান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন বুঝতে হবে ক্যাম্পে থাকা সকল সৈন্যই পানির তৃষ্ণায় ব্যাকুল।

চৌদ্দ. শত্রু সৈন্যদের সামনে কোন সুযোগ পড়ে আছে আর তারা তা পেতে এগিয়ে না আসলে বুঝতে হবে তারা এখন ক্লান্ত-বিদ্ধস্ত।

পনেরো. শত্রু ক্যাম্পের ওপর পাখির আনাগোনা দেখলে বুঝবেন, তারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছে।

চেন হাও এর ভাষ্যমতে, এর মাধ্যমে সানজু বুঝিয়েছেন, এই উপসর্গগুলো দেখে শত্রুর সম্পর্কে যা শুনছেন তা সত্য না মিথ্যা তার বিচার আপনি নিজেই করতে পারবেন।

ষোল. রাতের গভীরে শত্রু ক্যাম্প থেকে চেঁচামেচির শব্দ ভেসে এলে অনায়াসেই অনুমান করে নিতে পারবেন, শত্রু সৈন্যরা কোন কারনে ভয় পেয়েছে।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, শত্রুর সৈন্যরা এখন ভীত এবং অনিরাপদ। তারা হৈ চৈ করে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।

সতেরো. সৈন্যদের মাঝে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে, বুঝবেন সেনাপ্রধান তার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি হচ্ছেন।

চেন হাও এর ভাষ্যমতে, কোন আদেশ প্রদানে সেনানায়ক যদি কঠোর না হন তবে অফিসাররা সহজেই তা অমান্য করতে সাহসি হয়।

আঠারো. শত্রু শিবিরের চারিদিকে তাদের হাতে থাকা পতাকা ও ব্যনারগুলো এলোমেলোভাবে উড়তে, দেখলে বুঝবেন তাদের মনোবল তলানিতে এসে ঠেকেছে।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, চ্যাং সাও এর যুদ্ধে লু রাজ্যের ডিউক চুয়াং এর কাছে চি পরাজিত হলে সাও কেই অনুরোধ করলেন চি সৈন্যদের পিছু নেয়ার অনুমতির জন্য। ডিউক সাও কেই কে জিজ্ঞেস করলেন তিনি পিছু নেয়ার অনুমতি কেন চাইছেন। কেউ জবাবে বললেন: ‘আমি তাদের রথগুলোকে এলোমেলোভাবে যেতে দেখেছি। আর তাদের পতাকা ও ব্যানারগুলি এখানে সেখানে উড়ছে। আর তাই তাদেরকে পিছু ধাওয়া করার জন্য অনুমতি চেয়েছি।’

উনিশ. অফিসারদের আচরণে অসন্তোষ দেখা গেলে বুঝবেন সেনাদলের ভেতরে হতাশা ভর করেছে।

চেন হাও এর ভাষ্যমতে, সেনানায়ক যদি অপ্রয়োজনীয় কোন পরিকল্পনা নিয়ে পড়ে থাকেন, তবে অফিসাররা যুদ্ধে অবহেলা করবে।

বিশ. যখন দেখবেন সৈন্যরা তাদের ঘোড়াগুলোকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছে আর নিজেরাও পেটপুরে খেয়ে নিচ্ছে, কিন্তু কোন তৈজসপত্র ঝুলতে দেখছেন না আর তাবুও গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে, বুঝবেন তারা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতির শেষের দিকে।

একুশ. সৈন্যরা যখন সুযোগ পেলেই নিজেদের মধ্যে স্বল্পস্বরে কথা বলতে শুরু করে, এর মানে হল তারা তাদের জেনারেলের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছে।

একুশ. কমান্ডারদের বেশি বেশি পুরস্কার দিতে দেখলে, বুঝবেন তারা আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছে, কারণ দীর্ঘ অভিযানের শেষের দিকে তারা সেনা বিদ্রোহের ভয়ে থাকে। আর বেশি বেশি শাস্তি দিতে দেখলে বুঝবেন কমান্ডাররা প্রচন্ড দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে।

বাইশ. অফিসাররা যখন দোষী সৈন্যদেরকে শাস্তি দিতে ভয় পায়, এর মানে শত্রু সেনাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছে গেছে।

তেইশ. শত্রু সৈন্যরা যখন প্রবল উদ্বিপনাতে থাকে, আর আপনার সামনে থাকা সত্ত্বেও আক্রমণও করছে না আবার পিছুও হটছে না, তবে আসল ঘটনাটা কি তা আপনাকে অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে।

.

যুদ্ধে অল্প সংখ্যক সৈন্য কোন সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে না। শুধুমাত্র সৈন্যদের পেশিশক্তির উপর ভিত্তি করে যুদ্ধে যাওয়াটা বোকামি। সংখ্যায় কম মানে আপনার সরাসরি পেশিশক্তি বলে আক্রমনের সুযোগ কম। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় আক্রমনের কৌশলটা ব্যবহার করতে পারলে, কম সংখ্যক সৈন্য নিয়েই জেতা সম্ভব। যার দূরদৃষ্টি নেই আর যে তার শত্রুকে অবজ্ঞা করে, নিশ্চই শত্রুর কাছে তার পরাজয় ঘটে। সৈন্যদেরকে যদি তাদের বিশ্বস্ততার পুরস্কার না দিয়ে শাস্তি দেয়া হয় তবে তারা অবাধ্য হয়ে যাবে। যদি বাধ্য না হয়, তাহলে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সৈন্যরা যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়, আর তাদের ভুলের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা না থাকে তবে তাদেরকে দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর তাই, তাদেরকে দ্রভাবে নির্দেশ প্রদান করুন এবং তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে শেষ শক্তিটুকুও কাজে লাগান আর তখনই জয় নিশ্চিত তা আগে থেকেই বলে দেয়া যায়। যথাযথ কার্যকর নির্দেশ যদি সৈন্যদের জন্য প্রদান করা হয়, তবে তারা বাধ্য হবে। আর উপযুক্ত পরিবেশ ছাড়া অযথা নির্দেশ প্রদান করলে যেগুলোর কথার সাথে কাজের মিল থাকে না তা যদি সৈন্যদের উপর প্রদান করা হয় তবে তারা এমনিতেই অবাধ্য হবে। আদেশ যদি নিয়মিতভাবে বিশ্বাসযোগ্য এবং পর্যবেক্ষণ সমৃদ্ধ হয়, তখন কমান্ডারের সাথে সৈন্যদের সন্তোষজনক সম্পর্ক নিশ্চিত হয়।

 

১০ অধ্যায় – দ্য টেরেইন

সানজু বলেন:

প্রকৃতি অনুসারে ভুমিকে একসেসেবল, এন্ট্রপিং, ইনডিসাইসিভ, কনট্রিকটেড, প্রেছিপশাস, এবং ডিসট্যান্ট এই ছয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সানজুর মতে,

এক. একসেসেবল গ্রাউন্ড হল এমন ধরনের জায়গা যেখানে যাতায়াতের ভাল রাস্তাঘাট থাকে, তাই চলাচল সহজ আর দ্রুত হয়। এই ধরনের ভুমির ক্ষেত্রে যারা আগে পৌঁছুতে পেরেছে এবং উঁচু আর সূর্যের দিক করে অবস্থান নিতে পারে এবং সৈন্যদের জন্য রসদ সরবরাহ ঠিক রাখতে পারে; সেই লড়াইয়ে সুবিধা জনক অবস্থানে থাকে।

দুই. যে এলাকায় ঢোকা সহজ কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন তেমন জায়গাকে বলা হয় এন্ট্রপিং বা এন্ট্যাংলি। এমন জায়গার প্রধান একটা বৈশিষ্ট্য হল যদি শত্রু অপ্রস্তুত থাকে তবে আপনি তাকে সহজেই পরাজিত করতে পারবেন। আর শত্রু যদি প্রস্তুত থাকে আর আপনি হেরে গেলেন, তবে সেখান থেকে বেঁচে ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর তাই এমন জায়গায় আক্রমণ করা অলাভজনক।

তিন. ইনডিসাইসিভ বা টেম্পেরাইজিং গ্রাউন্ড হল এমন এক ধরনের এলাকা যেখানে উভয় দলের জন্য প্রবেশ করা কষ্টসাধ্য। এ ধরনের এলাকায় ছোট নদীনালা, কর্দমাক্ত চাষা জমি, জলাভুমি এসব থাকে। ফলে সেনাদের চলার গতি কমে যায়। এ ধরনের জমির ক্ষেত্রে নিজে সেখানে প্রবেশ না করে শত্রু সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রলুব্ধ করুন। আর শত্রুর অর্ধেক সৈন্য বেরিয়ে আসলেই আক্রমণ করুন যাতে শত্রুর বাকি অর্ধেক সৈন্য বেরিয়ে এসে যুদ্ধে অংশ নেয়ার আগেই প্রথম অর্ধেক পরাজিত হয়।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, লি চিং এর ‘আর্ট অব ওয়ার’ বলছে: ‘যে ভুমিতে কোন পক্ষের জন্যই সৌভাগ্য অপেক্ষা করছে না তেমন জায়গায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শত্রুকে বেরিয়ে আসার জন্য বাধ্য করুন। অপেক্ষা করুন, তাদের অর্ধেক সৈন্য বেরিয়ে এলেই আক্রমণ করুন।’

চার. কনস্ট্রিকটেড গ্রাউন্ডে প্রবেশের পর চারিদিক থেকে ঘেরা থাকে। তবে সেখানে প্রবেশের বিভিন্ন রাস্তা থাকতে পারে। এমন জায়গায় যদি আপনি আগে পৌঁছুতে পারেন তবে ঢুকে প্রবেশের সবগুলো রাস্তা বন্ধ করে দিন। আর আপনার প্রতিপক্ষ আগে প্রবেশ করে রাস্তা বন্ধ করে দিলে অরক্ষিত কোন রাস্তা খুঁজে বার করুন। একেবারেই তেমনটা না পেলে আক্রমণের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

পাঁচ. প্রেসিপশাস গ্রাউন্ডে আগে দখল করে কিছুটা উঁচু জায়গায় সূর্যের দিক মুখ করে প্রস্তুতি গ্রহণ করে শত্রুর জন্য অপেক্ষা করুন। আর শত্রু যদি এমন জায়গাটা আগে থেকেই দখল করে রাখে, তাহলে তাকে অনুসরন করার চেষ্টা না করে বরং চেষ্টা করুন শত্রুকে তার অধিকৃত এলাকা থেকে নেমে আসতে বাধ্য হত।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, সমতল ভুমিতে কেউ যদি আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে তাহলে এই জায়গাটা আর কতটুকুই বা বিপজ্জনক হতে পারে! শত্রুর জন্য এমন জায়গা কি ছেড়ে দেয়া উচিত?

শত্রুর সমপরিমাণ শক্তি থাকলে যখন শত্রু আপনার থেকে বহু দুরে থাকে তখন শত্রুর কাছে গিয়ে যুদ্ধ করা মানে তার জানাশোনা এলাকায় যুদ্ধ করা। আর তেমনটা করা অনর্থক। এগুলো হল ছয় ধরনের যুদ্ধক্ষেত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে একজন সেনাপ্রধানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল এমন জায়গাগুলো অত্যন্ত সুদক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করে ভুমি অনুযায়ি রণকৌশল প্রস্তুত করা।

মেই ইয়াও-চেন এর ভাষ্যমতে, আর তাই বলা যায়, টেরেইন হল যুদ্ধের মৌলিক একটা উপাদান যার আনুকুল্যতার মাধ্যমে সৈন্যরা সহজে জয় নিশ্চিত করতে পারে।

.

সৈন্যরা যখন অবাধ্য, ক্ষুদ্ধ, বিশৃঙ্খল অথবা বিদ্ধস্ত তখন তারা পালাতে বাধ্য হয়, আর এমনটা ঘটে সেনাপ্রধানের ভুলের কারণে। এটাকে প্রকৃতির প্রতিকুলতার উপর কখনও দায়ি করা যায় না। অন্যান্য কারণগুলিও সমভাবে দায়ী:

এক. যদি টেরেইনের সুবিধাটা নিয়ে শত্রু বাহিনী তার শক্তির চেয়ে দশগুন। শক্তি অর্জন করতে পারে তবে ফলাফল অত্যন্ত জঘন্য হতে পারে।

তু-মু-এর ভাষ্যমতে, যখন একজনকে দশজনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, প্রথমে প্রতিপক্ষের সেনাপ্রধানের বিচক্ষণতা এবং কৌশলগুলির সাথে তুলনামুলক বিচার করতে হয়। সেক্ষেত্রে সৈন্যরা কি সাহসী না ভীতু, আবহাওয়া, টেরেইনের থেকে কি কি সুযোগ পাওয়া যেতে পারে, সৈন্যরা কি ক্ষুধার্ত, তারা কি চিন্তিত আর ক্লান্ত কিনা।

দুই. সৈন্যরা যখন অফিসারদের থেকে বেশি বুদ্ধিমান হয় তখন সৈন্যদল অবাধ্য হয়ে উঠে।

তিন. অফিসাররা যখন সাহসী আর সৈন্যরা নিষ্ক্রিয় তখন পুরো দলের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা দেয়।

চার. বয়োজ্যেষ্ঠ অফিসাররা যদি রাগি এবং অবাধ্য হয়, এবং সব কিছুর পর্যবেক্ষণ না করে শত্রুর মুখোমুখি হয় অথবা কমান্ডারের নির্দেশ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে আক্রমণে যায়, তখন পুরো সৈন্যদলের শৃঙ্খলা ভেঙে যেতে বাধ্য।

পাঁচ. সেনানায়কের নৈতিক মনোবল যদি দৃঢ় না হয় এবং তার শিষ্যরা যদি কঠোর না হয়, যখন তার নির্দেশনা সকলকে প্রলুব্ধ করতে না পারে, যখন অফিসারদের জন্য ধরাবাধা নিয়ম তৈরি করে দেয়া হবে এবং যখন সৈন্যদের গঠনাকৃতি অগোছালো হয় তখন সৈন্যদলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

ছয়. কমান্ডার যখন শত্রু সৈন্য অনুমান করতে ব্যর্থ হন এবং অপেক্ষাকৃত কম সৈন্য পাঠান বিশাল কোন শত্রুর বিরুদ্ধে, অথবা কম শক্তিশালী সৈন্য পাঠায় দুর্ধর্ষ কোন সৈন্যদের মোকাবেলা করতে, তখন এর ফলাফল ভয়ঙ্কর হয়।

যখন এই ছয়টি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সেই সেনাদল কিন্তু তখন পরাজয়ের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছে বলে বুঝে নিতে হবে। এই পরিস্থিতিগুলো সেনানায়ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে মোকাবেলা করতে হয়।

যুদ্ধক্ষেত্র এবং সৈন্য শিবির থেকে সেখানে চলাচলের পথটা যদি দখলে আনা যায় তবে সেটা বিজয়ী হওয়ার সবচেয়ে বড় সহযোগিতা। আর তাই শত্রুর বর্তমান অবস্থার অনুমান, দূরত্ব পরিমাপ করা, টেরেইনের বাধাবিপত্তিগুলো জানাই হল একজন সেনানায়ক হিসেবে জয় নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা। যিনি এই বিষয়গুলো ভালোভাবে রপ্ত করে যুদ্ধ করেন তবে নিশ্চিত বিজয়ী হবেন; আর যিনি এসব সম্পর্কে জ্ঞান রাখবেন না তার পরাজয় নিশ্চিত।

পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার দ্বার প্রান্তে কিন্তু সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ আক্রমণ না করতে নির্দেশ প্রদান করল, তখন সেনানায়কের উচিত হবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। যদি পরিস্থিতি পরাজয়ের দ্বার প্রান্তে হয়, আর সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করল, তবে সেনানায়কের পক্ষে নির্দেশ অমান্য করাই উপযুক্ত কাজ।

এবং যে সেনানায়ক ব্যক্তিগত খ্যাতির জন্য চিন্তা না করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং শুধুমাত্র নিজের শাস্তির কথা না ভেবে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দেন, কিন্তু তার একমাত্র উদ্দেশ্য হল তার লোকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তিনিই হলেন রাষ্ট্রের অমুল্য সম্পদ। কারণ এমন সেনানায়ক তার সৈন্যদেরকে তারই সন্তানের মত মনে করেন। আর তাই সৈন্যরাও তার সাথে বিপদসংকুল পথে যেতেও রাজি থাকে এবং তার কথায় মৃত্যু বরণ করতেও প্রস্তুত থাকে।

একজন সেনানায়ক যদি যুদ্ধে সৈন্য পাঠিয়ে তাদেরকে যথাযথভাবে পরিচালনা করতে না পারেন; তিনি তাদেরকে এতটাই ভালোবাসেন যে তার কমান্ড মান্য করতে বাধ্য করতে না পারেন; সৈন্যরা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আর সেনানায়ক তাদেরকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন, তবে তারা নষ্ট সন্তানদের সাথে তুলনার যোগ্য এবং কোন কাজের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সানজুর মতে জয়-পরাজয়ের পাল্লা কার দিকে কোনটা যাবে তা আগে থেকেই পূর্বলক্ষণ দেখে বলে দেয়া যায়:

এক। আপনার সৈন্যরা যদি আক্রমনের জন্য একেবারে প্রস্তুত হয়ে থাকে, কিন্তু আপনি জানেন না যে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অভেদ্য কিনা তবে আপনার জয়-পরাজয়ের চান্স ফিফটি ফিফটি।

দুই. আপনি যদি জানতে পারেন যে শক্র আক্রমণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পারদর্শী আর তারা যদি জানতে পারে যে আপনার সৈন্যরা তাদের আক্রমণের জন্য এখনও প্রস্তুত নয়, তবে সেক্ষেত্রেও আপনার জয়-পরাজয়ের চান্স ফিফটি ফিফটি।

তিন. আপনি যদি জানেন যে শত্রু আক্রমণ করতে একেবারে প্রস্তুত এবং আপনার সৈন্যরাও আক্রমণের জন্য উপযুক্ত কিন্তু টেরেইনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আপনার আক্রমণ করাটা উচিত হবে না, সেক্ষেত্রে আক্রমণ করলে আপনার জয়-পরাজয়ের চান্স ফিফটি ফিফটি। তাছাড়া যারা যুদ্ধে পারদর্শী তারা কোন ভুল-ত্রুটি ছাড়াই অগ্রসর হোন; যখন দ্বন্দ্ব যুদ্ধ শুরু করেন তখন তাদের জন্য যুদ্ধের সরঞ্জামাদি আর খাবারের কোন অভাব হয় না। আর তাই আমি বলতে চাই: ‘শত্রুকে জানুন, নিজের সক্ষমতা সম্পর্কেও জ্ঞান রাখুন; তাহলেই আপনার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। টেরেইন এবং যুদ্ধক্ষেত্র সম্পর্কে যথেষ্ট জানুন, আবহাওয়া সম্পর্কে খোঁজ রাখুন; তবেই আপনি অপরাজেয় হতে পারবেনা।

# All part; https://pdfpoka.com/the-art-of-war-pdf-bangla/

Back to top button
error: Content is protected !!