রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বই

রাজর্ষি উপন্যাস Pdf Download

Rajorsi Pdf Download by  Rabindranath Tagore

বই : রাজর্ষি
লেখক : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( credit:Shariful Islam)
ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্য। প্রতিদিনের মতো নদীর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে একদিন তিনি এক অদ্ভূত প্রশ্নের সামনে পড়লেন। হাসি নামের ছোট্ট একটা মেয়ের ছোট্ট একটা প্রশ্ন ‘ এত রক্ত কেন?’ ভীষণভাবে আঘাত করল তার মস্তিষ্ককে। ঘটনাটা হলো দেবী কালির মন্দিরে বলির রক্ত দেখে হাসি প্রশ্নটা করে। আর এই প্রশ্নেই রাজা চিন্তাজগতে ডুবে যান। আসলেই তো দেবীর তো মায়াবী হওয়ার কথা কিন্তু তার নামেই কেন রক্তের বন্যা – এই প্রশ্ন তার মনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে। আর এরপরেই তিনি এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ; তিনি তার রাজ্যে বলি নিষিদ্ধ করেন এবং এই আইন অমান্যকারীর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান দেন।
কিন্তু রাজার এই সিদ্ধান্ত সবাই মানবে কেন?! স্বভাবতই প্রথম প্রতিবাদটা আসে রাজ পুরোহিত রঘুপতির কাছ থেকে। আলোচনায় যখন কাজ হয় না তখন বাঁকা পথ ধরে রঘুপতি, সাথী করে রাজার ভাই যুবরাজ নক্ষত্ররায়কে। শুরু হয় একট গভীর সংকটের। এর মধ্যে এদের সাথে যুক্ত হয় মোগল শাসকরাও ; শাহজাহান-পুত্র শাহ সুজার সাথে সন্ধি করে ত্রিপুরা আক্রমণ করতে উদ্যত হয় রঘুপতি-নক্ষত্র জোট। কিন্তু কোমলপ্রাণ রাজা তো যুদ্ধের মাধ্যমে আরও রক্তপাত করতে চান না, ফলে ঘটনা নেয় নতুন মোড়।
ইন্টারেস্টিং একটা তথ্য দিয়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া শুরু করি। এতদিন তো জানতেন কবিরাজরা স্বপ্নে কোনো রোগের ওষুধ পায় বা প্রাচীন যুগের কবিরা স্বপ্নে দেবী কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে কাব্য রচনা করেন ( দুটোই আমার মনে হয় বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর ধান্দা!) কিন্তু কবিগুরুও যে স্বপ্নে উপন্যাসের প্লট পান তা বোধহয় জানতেন না! এই উপন্যাসের প্লট কবিগুরু পেয়েছিলেন ট্রেনের কামরায় ঘুমাতে ঘুমাতে। প্রেমের অহিংস প্রকাশের সাথে হিংস্র শক্তি পূজার দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি যে স্বপ্নটা দেখেন তারই বর্ধিত রূপ এই উপন্যাসটা। আরেকটা তথ্য হলো বাস্তবিকই ত্রিপুরায় গোবিন্দমাণিক্য নামক এক সন্ন্যাসী রাজা ছিলেন অর্থাৎ বইটাকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা চলে।
ছোটবেলায় রাজর্ষি শব্দের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় হয় সন্ধি এবং সমাস পড়ার সময়ে। স্বরসন্ধি পড়ার সময় রাজা + ঋষি = রাজর্ষি বা কর্মধারয় সমাস পড়ার সময়ে যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি তো আমরা সবাই পড়েছি বোধহয়। সন্ধি বা সমাস থেকে এটা পরিষ্কার যে উপন্যাসটিতে এক এক ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যিনি একই সাথে রাজা এবং ঋষির বৈশিষ্ট্য ধারণ করবেন। আর এই রাজর্ষি হলেন রাজা গোবিন্দমাণিক্য। তিনি একদিকে যেমন সিংহাসনে বসে আপন ভাইকেও শাস্তি দিতে কুন্ঠিত হন না তেমনি অন্যদিকে সব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নির্জন বনপ্রান্তেও বাস করতে পারেন। তার সম্পর্কে বলা ‘ তিনি সব ছেড়ে দিয়েও ( ঋষির মতো) যেন সব পেলেন ( রাজার মতো)’ বাক্যটাই একদিকে তার চরিত্র সম্পর্কে বলে আবার অন্যদিকে উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা দেখায়।
ভূমিকাতে লেখক যেমন বলেছেন প্রেমের অহিংস প্রকাশ বনাম হিংস্র প্রকাশের দ্বন্দ্ব এই উপন্যাসটির মূল আলোচ্য বিষয়। একদিকে গোবিন্দমাণিক্যের জীব প্রেমে বলিয়ান হয়ে ও দেবীকে মমতাময়ী জেনে বলি নিষিদ্ধ করা আর অন্যদিকে রয়েছে পুরোহিত রঘুপতির মত আঁকড়ে পড়ে থাকা। এই দুই মতের যে দ্বন্দ্ব তাই পুরো উপন্যাসটিতে বারবার এসেছে। এক মত একজনকে বলি নিষিদ্ধ করিয়েছে, যুদ্ধ করা থেকে বিরত রেখেছে, প্রকৃতির মাঝে সন্তুষ্টি খুঁজে নিতে শিখিয়েছে আর বিপরীত মত বলি বা যুদ্ধের মাধ্যমে বেশি বেশি রক্ত ঝরাতে চেয়েছে, সবকিছু ভোগ করতে বলেছে। তো এই দুইমতের মধ্যে লেখক কোন পক্ষে? তিনি গোবিন্দমাণিক্যের পক্ষে থেকে মানুষের হিংস্রতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, সামাজিক প্রথাকে অস্বীকার করেছেন, আধুনিকতার পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন।
বইটার চরিত্রায়ন খুব সুন্দর। রাজর্ষি গোবিন্দমাণিক্য থেকে শুরু করে ছোট্ট চরিত্র হাসি পর্যন্ত চরিত্রগুলো স্বমহিমায় উজ্জ্বল। রাজার কঠিন ও কোমল দিকের উন্মেষ, রঘুপতির আপন লক্ষ্য অর্জনে যেকোনো পথের আশ্রয় নেওয়া, জয়সিংহের অন্তর্দ্বন্দ্ব, নক্ষত্ররায়ের দূবর্লতা, ধ্রুব বা তাতার সরলতা, হাসির জিজ্ঞাসা – সবকিছু অসাধারণভাবে এসেছে।
বইটা বেশকিছু ছোট ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও তুলে ধরেছে। হাসি আর তাতার সম্পর্ক যেন চিরপরিচিত অপু-দূর্গার কথা মনে করিয়ে দেয়। নক্ষত্ররায়ের ক্ষমতা পেয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়ার দিকটা দূর্বলের হাতে ক্ষমতার স্বরূপকেই পুনরায় স্মরণ করায়। গোবিন্দমাণিক্যের সিংহাসনে বসে ভাইকে শাস্তি দেওয়া ও পরে অন্তঃপুরে কাঁদা – মুকুট পরিহিত যেকোনো রাজার ট্র্যাজেডির কথাই বলে।
প্রেম বা ভক্তির অহিংস প্রকাশের সাথে হিংস্র শক্তি পূজার দ্বন্দ্বের কথা উপন্যাসটি বলেছে ঠিক আছে কিন্তু যে জায়গায় আমার খটকা লেগেছে তা হলো রবীন্দ্রনাথরা তো আগে থেকেই ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী। আর ব্রাহ্মরা যে মাটির মূর্তির পূজা করে না বা বলি সহ হিন্দুদের অনেককিছুই মানে না তা তো আগে থেকেই জানা। তো এই যে বলির বিরুদ্ধে বলা বা রঘুপতির হাত দিয়ে মূর্তি উৎপাটন – এগুলো কি তার পূর্বপুরুষদের কথারই প্রতিধ্বনি হয়ে গেল না?! মানে যেটা বলতে চাচ্ছি, উপন্যাসের কৃতিত্ব লেখক পেলেও এই ধারণা সম্ভবত তার পারিপার্শ্বিক থেকেই এসেছে।
আরেকটা ব্যাপার বলা যায় সেটা হলো বইটার শেষদিকের অতিরিক্ত প্যাঁচানো ঘটনাক্রম। লেখক অবশ্য ভূমিকাতেই স্বীকার করেছেন বালকদের জন্য লেখা বইটা মূল বইয়ের অর্ধেকেই শেষ করার ইচ্ছা ছিল তাঁর কিন্তু পত্রিকার চাপে তাঁকে লম্বা করতে হয়েছে। সম্ভবত তাই অর্ধেকের পর থেকে বইয়ের কাহিনী কিছুটা হালকা হয়ে গিয়েছে। মোগলদের সম্পর্কে কয়েক পাতা ইতিহাসের বই থেকে তুলে দিয়ে তিনি কাহিনীকে মোগলদের সাথে জুড়তে চাইলেও কেমন যেন ঠিক জোড়া লাগে নি সেখানটায়।
তো, সার্বিকভাবে বলা যায় দু-একটা ব্যাপার বাদ দিলে বইটা একটা আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক উপন্যাস ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজর্ষি উপন্যাস Pdf free Download links:
Download (link 1)
or

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!