অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী PDF – Ordhek Nari Ordhek Issori Pdf Ahmed Sofa
বইঃ অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী pdf
লেখকঃ আহমদ ছফা
Book | অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী |
Author | আহমদ ছফা |
Publisher | মাওলা ব্রাদার্স |
ISBN | 9844100585 |
Edition | 6th Print, 2013 |
Number of Pages | 144 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা,. Pdf Download |
বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য লেখকদের তালিকা করলে ‘আহমেদ ছফা’র নামটি প্রথম দিকেই থাকবে। আহমেদ ছফা’র আত্মজৈবনিক উপন্যাস হলো “অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী”। তিনি নিজেই দাবি করেছেন, অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী তার আত্মজৈবনিক উপন্যাস। উপন্যাসটির বেশিরভাগ চরিত্রের অস্তিত্ব তার নিজের জীবনে বিদ্যমান ছিল বলে স্বীকারও করেছেন তিনি।
অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী প্রথমে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় “প্রাণপূর্ণিমার চান” নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে উপন্যাস হিসেবে বর্তমান নামে ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়।
উপন্যাসটি উত্তম পুরুষে রচিত। উপন্যাসটির কথক জাহিদ তার প্রেয়সী সোহিনী কে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখে। সেই চিঠিতে জাহিদ তার পূর্ববর্তী যে নারীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিলো তাদের সম্পর্কে সোহিনীকে বর্ণনা করে। উপন্যাসটির কাহিনী মূলত এই চিঠিকে কেন্দ্র করেই। অর্থাৎ এই চিঠিটির মাধ্যমেই লেখক সম্পূর্ণ কাহিনী বর্ণনা করেছেন। এ ধরনের বর্ণনারীতির সাথে আমার এই বইয়ের মাধ্যমেই প্রথম পরিচয় ঘটে।
সোহিনীর প্রতি লেখকের অগাধ প্রেম ছিলো। লেখকের ভাষায় সোহিনী ছিলো তার কাছে “অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বেদনা। অর্ধেক কষ্ট, অর্ধেক সুখ। অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী”। সোহিনীর প্রতি লেখকের প্রেমের বর্ণনা অবশ্যই ঈর্ষনীয়। এই বর্ণনা নারী মনে আলোড়ন তুলতে সক্ষম। লেখক তার প্রেয়সীকে তার পূর্বের প্রেমের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রথমেই বলেন দুরদানার নামের এক নারীর কথা যে আর্ট ইন্সটিটিউট এর ছাত্রী ছিলো। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে লেখকের সাথে পরিচয় হয় দুরদানার। সে সময়কার একটি মেয়ে ছেলেদের মতো পোষাক পড়ে ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে কলেজে যাওয়ার দৃশ্যটি আজও কল্পনা করতে কষ্ট হয়। কিন্তু ডাকসাইটে মেয়ে দুরদানা সে সময় কাউকেই তোয়াক্কা না করে নিজের মতোই চলতো। ঘটনার পরিক্রমায় জাহিদের সাথে পরিচয় ঘটে দুরদানার। জাহিদের কাছের মানুষ ঘনিষ্ঠজনরা যতই জাহিদকে দুরদানার সাথে মিশতে মানা করে ততই যেনো জাহিদ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। দুরদানার সাথে মেলামেশার কারনে তাকে অনেক আক্রমণেরও স্বীকার হতে হয়। মানুষের কথায় দুরদানার নারীত্ব নিয়ে জাহিদের মনে সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু জাহিদ যখন দুরদানার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে তার নারীত্বের উপস্থিতি টের পায় তখন জাহিদ ও দুরদানা দুজনেই তাদের সম্পর্ককে আগে বাড়ানোর ক্ষেত্রে সচেতন হয়ে যায়। ধীরেধীরে তাদের মাঝে দুরত্ব তৈরী হয় ও এক সময় জাহিদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় দুরদানা।
গল্প কথক জাহিদ যে আহমেদ ছফা সে তো আগেই বলা হয়েছে। পাঠকের মনে দুরদানার পরিচয় জানারও ইচ্ছা থাকতে পারে। টিএসসি চত্বরের বিখ্যাত ভাস্কর্য “স্বোপার্জিত স্বাধীনতা“র কারিগরি শামীম শিকদারই এই দুরদানা আফরাসিয়াব!
গল্পকথক জাহিদের সাথে হঠাৎই একদিন দেখা হয় অনিন্দ্য সুন্দরী শামারোখের। তাকে নিয়ে প্রতিটি মহলেই ছিলো সমালোচনা। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ তাকে শিক্ষক হিসেবে যোগদানে বাধা দিচ্ছিলো। তখন জাহিদ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। শুরু হয় শামারোখের সাথে জাহিদের পথচলা। অনিন্দ্য সুন্দরী এই মহিলার প্রতি জাহিদের আকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকে। লেখক শামারোখের প্রতি তার আকর্ষণের কথা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন। তিনি ঘুড়ানো প্যাঁচানো কথার আশ্রয় নেননি। জাহিদ শামারোখের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরীটা পাকা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান এবং একসময় সফলও হন। তখনই শামারোখের এক নতুন চেহারা দেখতে পায় জাহিদ। যে শামারোখ একসময় জাহিদের রুমে এসে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে সেই শামারোখই চাকরী হওয়ার পর যারা তার চাকরীর বিরোধিতা করেছিলো তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করছে আর জাহিদের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। একসময় জাহিদ ও শামারোখের সম্পর্কের অবসান ঘটে।
এই কন্যা শামারোখের পরিচয় ঘাটতে গিয়ে জানা যায় তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সুরাইয়া খানম।
শামারোখের রূপের কাছে পুরুষরা ছিলো অসহায়। এই শামারোখ তার রূপের জাদুতে আটকে ফেলে তৎকালীন তরুন কবি শাহরিয়ারকে। চালচুলোহীন এই কবি তরুন বয়সে বিপথে গিয়ে এক দুরারোগ্য রোগ বাধিয়ে ফেলেন। পরে বিলাত থেকে চিকিৎসা করে দেশে ফিরেই তার সাথে দেখা হয় শামারোখের। শামারোখের প্রেমে পাগল হয়ে তিনি ওষুধ-পথ্য সেবনে অনিয়ম শুরু করেন। শামারোখের জন্য লিখেন অসাধারণ কিছু কাব্য। কিন্তু অসুস্থ রোগীর অনিয়ম বেশীদিন সহ্য হয় না। একসময় মারা যান এই তরুন প্রতিভাবান কবি। এই কবির আসল নাম ছিলো কবি আবুল হাসান।
উপন্যাসটি পড়ে যতটা উদ্বেলিত হয়েছি ঠিক ততটাই হতাশ হয়েছি। হতাশ এই কারনে যে, যে সোহিনীর কাছে লেখক দুরদানা ও শামারোখের রূপের এমন অসাধারণ বর্ণনা দিয়েছেন সেই সোহিনী সম্পর্কে লেখক কিছুই বলেননি, পাঠককে সম্পূর্ণ ধাঁধায় রেখে বর্ণনা করে গেছেন দুই নারীর প্রতি তার প্রেম। লেখক চেয়েছিলেন এই উপন্যাসের দ্বিতীয় খন্ড লিখতে। কিন্তু তা আর হলো না, পাঠক সোহিনীর ধাঁধায় থেকেই হয়ত নিজ কল্পনায় সাজিয়ে নেবে আহমেদ ছফার “অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী”কে।