Sadat Hossain all Books Pdf Download

আরশিনগর সাদাত হোসাইন Pdf Download

সাদাত হোসাইন এর বই গুলোর মূল্য অত্যধিক হওয়ার কারণে পাঠকদের কেনার সাধ্যের বাইরে চলে যায় অনেক সময়। তবে এক্ষেত্রে আরশিনগর বইয়ের দাম একটু কম রয়েছে। যাই হোক, আরশিনগর বই pdf download and Review টি পড়তে পারেন:

বইয়ের বিবরণ:

বইয়ের নাম: আরশিনগর।
লেখকের নাম: সাদাত হোসাইন।
ক্যাটাগরি: সমকালীন উপন্যাস
ফাইল ফরম্যাট: Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড)
file সাইজ:  ২২ মেগাবাইট
প্রকাশনী: ভাষাচিত্র
১ম প্রকাশঃ 2016 সাল
মোট পেজ সংখ্যাঃ ২৭২ পৃষ্ঠা

আরশিনগর সাদাত হোসাইন রিভিউঃ

আরশিনগর বইটির রেটিং ৮/১০ দেব। জগতের সবকিছুর ঋণ চোখের কাছে আর চোঁখের ঋণ আয়নার কাছে জীবন ও জগতের সবটা দেখা এই চোখ শুধু আয়নাতেই দেখতে পায়।কি অদ্ভুদ হিসাব! এই ঋন তাই জগতেরও।আমি এই জগতের নাম দিয়েছি আরশিনগর!!! এই লেখাটি অসম্ভব ভলো লেগেছে।
আরশি! যার চোখভর্তি মায়া।এই মায়া ছেড়েই আরশির মা নিলুফা বেগম চলে যায় পরপারে।শুরু হয় আরশির দুষ্কর পৃথিবীতে বেদনার জীবনযাত্রা।
আরশির বাবা মজিবর মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করে লাইলিকে শর্তের বিনিময়ে।আরশির সৎ মা আরশিকে আপন করে নেয়।কিন্তুু লাইলির সন্তান হলে পুরো চিত্র বদলে যায়।আরশি হয়ে যায় লাইলির চোখেঁর কাটা।অন্যদিকে আরশির একমাত্র অবলম্বন তার দাদি মারা যায়।আরশি সকলের মাঝে একা হয়ে যায়।তাদের সংসারে সবচেয়ে বড় ধাক্ক দেয় লতু হাওলাদার সে মজিবর মিয়াকে একবারে পঙ্গু করে ঘরে বসিয়ে দেয়।আরশির জীবনে বড় ধরনের বিপদ আসে।এমন সময় আর্বিভাব হয় মসজিদের ইমাম সাহেরের কে তিনি,আরশিকে কোথায় নিয়ে যান জানতে হলে পড়তে হবে উপন্যাসটি।
অন্যদিকে গ্রামের ডাক্তার শুকরনজন সাহেবের ছেলে আশিষের স্ত্রী মিলি সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় তখন তাদের সংসারে আরশি আলো হয়ে আসে।মিলি সুস্থ্য হয়ে যায়।আরশিকে স্কুলে ভর্তি করানে হয়।মাস্টার রেখে পড়ানো হয়।কিন্তুু মিলির দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার মিলি আগের মতো হয়ে যায় সে মনে করে আরশি তার সন্তানের ক্ষতি করবে।এই সমস্যা সমাধানে আশিষ আরশিকে হোস্টেলএ রেখে পড়াশোনা করায়।
অন্যদিকে আরশির গ্রাম যযাতিপুর মৃ্ত্যুপুরিতে রূপ নেয়।গ্রামে হত্যা নিয়মীত ব্যাপার হয়ে যায়।লতু হাওলাদার তার আধিপত্য বিস্তারের জন্য ধ্বংসলীলা চালায়।
ভালোবাসা নামক মরীচিকার পেছনে ছুটে চলা আরশির জীবনে কি কখনো ভালোবাসা এসেছিল? আরশিনগরে হাটা কি কখনো এক টুকরো স্বস্তির সন্ধান দিয়েছিল? অনেক প্রশ্ন সবগুলোর উত্তর আছে আরশিনগর নামক উল্টোজগতের ভেতর!
এই উপন্যাসটি একবার হলেও ভাবাবে জীবনের মানে একবার হলেও উপলব্দি করাবে প্রত্যেক মানুষের বুকে পুষে রাখা দুঃখকে।
বইয়ের ১ম কিছু অংশঃ ৭,৮, ৯
নিলুফা বানু মারা গেলেন সন্ধ্যেবেলা ।
তার পাশে কাপড়ের পুঁটলির ভেতর শুয়েছিল আরশি। আরশির নাম অবশ্য তখনও রাখা হয়নি। সদ্যোজাত শিশু। নিলুফার শরীরের অবস্থা ভালাে ছিল না।
গত দু’দিন থেকেই তার ব্যাথা উঠেছে। কিন্তু সমস্যা জটিল। বাচ্চা আছে পেটের ভেতর উল্টো হয়ে। খােদেজা দাই অভিজ্ঞ ধাত্রী। দশ গ্রামে এক নামে সবাই তাকে চেনে। প্রসবের সময় সে থাকা মানে নিশ্চিন্ত মন। কিন্তু নিলুফার অবস্থা দেখে খােদেজা দাই আঁৎকে উঠল। তার মুখ গেল শুকিয়ে। সে নিলুফার
শাশুড়ি আম্বরি বেগম আর স্বামী মজিবর মিয়াকে ডাকল। তারপর কাঁপা গলায় বলল ‘বিপদ, মহাবিপদ। ডাক্তার ডাকতে হইবাে। ডাক্তার ডাইকা আনাে।’
মজিবর মিয়া কী করবে? এই গাঁয়ের নাম যযাতিপুর। বর্ষাকালে এমনিতেই এর চারদিকে মাইলের পর মাইল জলে ডুবে থাকে। তার ওপর এ বছর বন্যায় পানি বাড়ছে চারদিকে। সপ্তাহখানেক হলাে টানা বর্ষণ। কাছাকাছি ডাক্তার বলতে একমাত্র মালােপাড়ার শুকরঞ্জন ডাক্তার। তাও হাঁটাপথে মাইল পাঁচেকের পথ। মজিবর মিয়া গরু দুটোকে নাইয়ে কেবল দাওয়ায় বসেছিল ভাত খাওয়ার জন্য। ভাত খাওয়া হলাে না। সে উঠে হাঁটা দিল । মালােপাড়া থেকে শুকরঞ্জন
ডাক্তারকে নিয়ে পৌছাল গভীর রাতে। শুকরঞ্জন ডাক্তার গম্ভীর মুখে নিলুফাকে দেখলেন। নিলুফার সারা মুখ তখন নীলবর্ণ। ডাক্তার দীর্ঘসময় শেষে ঘর থেকে বের হলেন। মুজিবর মিয়াকে ডেকে আগুন চাইলেন। তারপর মুখে বিড়ি খুঁজে
দিয়ে বললেন, যা হওয়ার হবে, মানুষের হাতে তাে আর সব ক্ষমতা নাই। তবে ভগবান চাইলে অসম্ভবও সম্ভব হয়।
শেষ অবধি অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। আড়াই দিন বাদে নিলুফা বানু কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে এবং অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়ে তখনও তার শ্বাস বইছে।
তবে সে শ্বাস খুব ক্ষীণ। গত দু’দিনে তার টানা পানি ভেঙেছে, রক্ত গিয়েছে।
ব্যাথায় নীলবর্ণ নিলুফা বানুর মুখের রঙ এখন ফ্যাকাশে সাদা। তাকে কোথাও bনেওয়ার উপায় নেই। আশপাশের কোথাও কোনাে হাসপাতাল নেই। এই তুমুল বন্যা-বাদলের দিনে মজিবর মিয়া কী করবে জানে না। কিছু ভেবে পায় না।

আজ দুপুরে সে আবারও ছুটে গেছে শুকরঞ্জন ডাক্তারের কাছে। শুকরঞ্জন ডাক্তার সব শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর খুব ধীরে চোখ থেকে চশমা খুলে চশমার কাচ মুছলেন। একখানা বিড়ি ধরালেন। শেষে শান্ত গলায় বললেন, ‘মানুষ তাে মৃত্যুর জন্যই জন্মায় মজিবর। মৃত্যু ছাড়া এই জন্মের কোনাে মূল্য নাই।

নিলুফা বানুর জ্ঞান আছে। শুধু জ্ঞানই আছে তা নয়, সে স্পষ্ট চিন্তাও করতে পারছে। সে দেখল, সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটা কাপড়ের পুঁটলির ভেতর থেকে পিটপিট করে চাইছে। সন্তানের মুখ দেখে যতটা আনন্দে আপুত হওয়ার কথা ছিল, ততটা আপুত সে হতে পারল না। মেয়েটার গায়ের রঙ কি কালাে? এই চিন্তা তাকে অস্থির করে ফেলল। এমনিতেই এই মেয়ে হবে মা মরা মেয়ে। তার ওপর গায়ের রঙ যদি হয় কালাে, তাহলে বাকি জীবন বিপদের অন্ত থাকবে না। তার নিজের গায়ের রঙ অবশ্য ভালাে। কিন্তু মেয়ে পেয়েছে বাবার গায়ের রঙ। নিলুফা বানু মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে চিন্তামুক্ত হলাে। মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হলাে, এই মেয়ের গায়ের রঙ কোনাে সমস্যা না। এর চোখভর্তি মায়া। এই মায়াবতী মেয়ে মমতার অদ্ভুত চাদর বিছিয়ে বিপদের সব পথ পাড়ি দেবে। সে নিশ্চিন্তে নিঃশ্বাস ছাড়ল। তারপর খানিক উঁচু হয়ে মেয়ের মুখ দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু শরীর সায় দিল না। নিথর পড়ে রইল বিছানায় । নিলুফা বানুর মনে হচ্ছে সে শ্বাস নিতে পারছে না। দম ভারী হয়ে আসছে। তার চারপাশে কয়েক জোড়া উৎসুক চোখ । তার শাশুড়ি, পূব পাড়ার খােদেজা দাই, বৃদ্ধ এছাহাকের মা, শেফালী বু। আর কি কেউ আছে? থাকলেও সে দেখতে পেল না। চোখ খুলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে কিংবা ঝাপসা হয়ে আসছে দৃষ্টি। সে জানে না, মৃত্যুর আগে ঠিক কোন মুহূর্তে মানুষের দৃষ্টিশক্তি নিভে যায়! কেউ কি জানে! আচ্ছা তার স্বামী মজিবর মিয়া কই? সে কি ডাক্তার নিয়ে ফিরেছে? শুকরঞ্জন ডাক্তারের চেম্বার বহু দূরের হাঁটা পথ। সে কখন ফিরবে কে জানে! মানুষটা জানে, নিলুফা টিকবে না। সে একা কেন, সবাই জানে। শুকরঞ্জন ডাক্তারও জানে। তাও এই অবস্থায় গেছে। শুধু শুধু আবারও এতটা পথ ছুটল। মরার সময় মানুষটার মুখ দেখে মরতে পারলেও এক শান্তি। কিন্তু ততক্ষণ টিকে থাকতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কোমর থেকে পা অবধি চিটচিটে রক্তে ভিজে আছে। সে বারকয়েক চেষ্টা করছিল পা নাড়াতে, কিন্তু পারল না। পুরাে শরীরই প্রায় অসাড়। কাপড়ের পুঁটলির ভেতর থেকে মেয়েটা পিটপিট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিলুফা বানুর হঠাৎ মনে হলাে সেই চোখের ভেতর সে তার নিজের মুখ দেখতে পাচ্ছে। একদম স্পষ্ট পরিষ্কার! স্বচ্ছ আয়নার মতাে।

নাকফুলটা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে। আচ্ছা, এটা কি কোনাে বিভ্রম! তার সময় কি ফুরিয়ে এসেছে! মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে মানুষ কি নানা ধরনের বিভ্রমে আচ্ছন্ন হয়! নিলুফা বানু কিছুই বুঝতে পারল না। তবে সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেয়ের চোখের দিকে। মেয়েও তাকিয়ে আছে। কেবল মাঝে মাঝে সামান্য সময়ের জন্য চোখের পাতা ফেলছে। নিলুফা বানু সেই চোখের দিকে তাকিয়ে অতি কষ্টে ফিসফিস করে বলল, ‘মা রে, এমন আয়নার মতােন চোখ নিয়া জন্মাইলি। কিন্তু সেই আয়না চোখে নিজের মায়রেই তাে আর দেখতে পাবি না রে মা’ । মেয়ে কিছু বুঝল কিনা কে জানে। শান্ত, গভীর চোখে তাকিয়েই রইল । সে কি জানে, এই মানবজনম মা ছাড়া কি প্রবলভাবেই না বৃথা? নিলুফা বানু কাঁদল না। সে ইশারায় শাশুড়িকে ডাকল। আম্বরি বেগম ধীর পায়ে নিলুফার কাছে এলেন। নিলুফার মনে হলাে এই বৃদ্ধ মানুষটিকে তার অনেক কথা বলার আছে। সে মাতৃহারা হতে যাওয়া তার মেয়েটাকে এই মানুষটার কাছে রেখে যাচ্ছে। এই মানুষটাকে তার অনেক অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু অতটা সময় বােধহয় তার নেই। সে প্রবল কষ্টে ঠোট ফাক করল। তারপর বিড়বিড় করে অদ্ভুত এক কথা বলল। সে বলল, আম্মা, এর নাম রাইখেন আরশি। এর চোখ আরশির মতােন’।

মজিবর মিয়া যখন উঠোনে পা রাখল তখন ভর সন্ধ্যা। টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যার আকাশ যতটা কালাে হওয়ার কথা, এই আকাশ তার চেয়েও বেশি কালাে। উঠোনের অর্ধেকটা জুড়ে পুঁই আর ঝিঙের মাচা। মাগরিবের আজানের আগে আগেও ঝিঙে ফুলগুলােকে দিব্যি ধকধক করে জ্বলতে দেখা যায় রােজ। অথচ আজ ঝিঙেফুলগুলাে যেন আবছা ছায়া হয়ে আছে। হাঁটু অবধি কাদা নিয়ে মজিবর মিয়া উঠোনে এসে দাঁড়াল। টিনের ছােট চৌচালা ঘরখানা তার সামনে। টানা বৃষ্টিতে সেই ঘরের বাঁশের বেড়ার অবস্থা হাড় জিরজিরে কুঁজো বুড়ির মতােন। এই বুঝি ঝরঝর করে ঝরে পড়বে। ঘরের ভেতর থেকে তীব্র চিৎকার ভেসে আসছে। নবজাতক শিশুর চিৎকার। মজিবর মিয়ার ছুটে ঘরে যাওয়ার কথা। তার প্রথম সন্তান। কিন্তু মজিবর মিয়া ছুটে গেল। । সে শুকরঞ্জন ডাক্তারের ব্যাগ হাতে উঠোনে পাচপেঁচে কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে রইল। অনেকক্ষণ। তারপর মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাল। তখন দূরে কোথাও মাগরিবের আজান হচ্ছে। কেমন গুমােট, শূন্য আকাশ। বুকের ভেতরটা ফাকা করে দেয়। সে দীর্ঘসময় আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। শুকরঞ্জন ডাক্তার এখনও আসেনি। সে মজিবর মিয়ার সঙ্গে হেঁটে তাল মেলাতে পারেনি। অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। কতক্ষণে এসে পৌছাবে কে জানে! অবশ্য কারাে আসা না-আসায় এখন আর কিছু যায়-আসে না। কোনাে কিছুতেই না। এভাবেই কাহিনী আগাতে থাকে………………

arshinagar by sadat hossain pdf free download  link:

Click HereDownload PDF ]

or

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!