Books
লা মিজারেবল বাংলা পিডিএফ – les miserable bangla pdf
লা মিজারেবল ইফতেখার আমিন Pdf Download বই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র
বই: লা মিজারেবল
লেখক: ভিক্টর হুগো
অনুবাদক: ইফতেখার রসূল জর্জ
প্রকাশনী: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
মূল্য: ১২০ টাকা
জনরা: চিরায়ত সাহিত্য
**হালকা স্পয়লার আছে
এই বইটা লা মিজারেবলের ঠিক অনুবাদ নয়, ভাবানুবাদ৷ অনুবাদক মূল গল্পের ধারা যথাসম্ভব বজায় রেখে নিজের ভাষায় লিখে গেছেন। ফরাসি ভাষায় রচির মূল বইটার বিস্তৃতি ছিল ১৪৬২ পৃষ্ঠা জুড়ে। এর মধ্যে একটি বাক্যেই নাকি আবার রয়েছে ৮২৩ শব্দ। ভাবা যায়! আর আমি কিনা পড়েছি মাত্র ৮০+ পৃষ্ঠার একেবারে সংক্ষিপ্ত ভাবানুবাদ। তবে আমার উপর এই ছোট বইটার প্রভাবও বিস্তর।
গল্পটা জা ভালজার, দুঃখই যার চির বিশ্বস্ত এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সঙ্গী। চারিদিকে আদিগন্ত বিস্তৃত পানিস্বরূপ দুঃখের সাগরে ভাসছে সে। সুখের দুরাশায় মত্ত হয়ে সে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে ডাঙায় পৌছাবার। কিন্তু হায়! জীবনের একেকটা অধ্যায় পেরিয়ে যেতে থাকে, কোথায় সেই ডাঙা। সাঁতরে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার এই বৃথা চেষ্টা দেখে যেন আড়াল থেকে তার ভাগ্যও পরিহাস করে ওঠে৷ মাঝে মধ্যে চোরা দ্বীপের স্বল্পক্ষণের আশ্রয় যেন শুধুই আক্ষেপ বাড়ায়। ফের দুঃখ ভাসিয়ে নেয় জা ভালজাকে সীমা-পরিসীমাহীন দুঃখের মহাসাগরে।
বোনের পরিবারের জন্য রুটি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে জা ভালজা৷ সামান্য রুটি চুরির দায়ে হয় ৫ বছরের কারাদণ্ড, যা প্রলম্বিত হয় ১৯ বছর পর্যন্ত। কারাগেরে বাইরে মুক্ত দুনিয়ায় যেন আরো এক দূর্বিষহ জীবন আগলে নেয় তাকে৷ “দাগী আসামি” তকমা লেগে যাওয়া জা ভালজা যেন সকলের দৃষ্টিভঙ্গীতে জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট রূপে ধরা দেয়। এক ধর্মযাজকের করুণা যেন তাকে নতুন করে জীবন শুরু করার অনুপ্রেরণা জোগায়। কিন্তু অতীত তাড়া করে বেরায় তাকে। ভাগ্যের চপোটাঘাতে বারবারই দুঃখের সমুদ্রে ভেসে যায় জা ভালজা। এক পর্যায়ে নিজের পালিত কন্যা কোজেতকে ঘীরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে সে। কোজেতের জীবনে পেরিয়ে যায় অনেকগুলো বসন্ত, যৌবনে পা দেয় সে। তার জীবনেও আসে কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার মানুষটি। সেখানেও বাজে বিপত্তি। জা ভালজার পুরো জীবনের দুঃখ বিলাসের গল্প এবং ফ্রান্সের তৎকালীন পরিস্থিতিই উঠে এসেছে পুরো উপন্যাসে।
বইটা পড়ার সময় অজান্তেই চোখের কোণে পানি এসে জমা হয়, অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে অস্পষ্ট দেখায় বইয়ের লেখাগুলো। কন্ঠ অবরুদ্ধ হয়ে আসে৷ জীবন কারো প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে? জা ভালজার দূর্ভোগ্যের জন্য দায়ী বিচার ও সমাজব্যবস্থা, লোকেদের চিন্তাধারা থেকে শুরু করে সবকিছুর প্রতি ক্রোধে ঘৃণায় হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আমি অসহায়, কিছুই করার নেই আমার। অশ্রুভেজা নয়নে পড়ে যেতে থাকি জা ভালজার দুঃখ বিলাসের গল্প। তবে সবচাইতে বেশি ঘৃণার জন্ম হয় একটা অদৃশ্য বস্তুর প্রতি, সেটা জা ভালজার ভাগ্য। ভালজার জীবনের প্রদীপ শিখা যখন নিভু নিভু, সেই মুহূর্তেও ভুল বোঝাবোঝিকে হাতিয়ের করে তার দুঃখ বিলাসকে শতভাগ পূর্ণতা দেয়ার নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠে তার ভাগ্য৷ কি নির্মম! ধর্মযাজকের মতো কিছু চরিত্র পাঠককে স্মরণ করিয়ে দেয় মানবতার অস্তিত্বের কথা। অন্যদিকে জাভেয়রের কর্মনিষ্ঠা পাঠককে সন্তুষ্ট করার বদলে আরো বিষিয়ে তোলে তার প্রতি। উপন্যাসে সামান্য রোমাঞ্চের ছোঁয়াও ছিল। তবে উপন্যাসটিকে শুধু দূর্ভাগা জা ভালজার গল্প ভাবলে ভুল হবে। উপন্যাসটা যেন তৎকালীন ফ্রান্সের এক জীবন্ত চিত্র।