Sadat Hossain all Books Pdf Download
নিঃসঙ্গ নক্ষত্র Pdf Download সাদাত হোসাইন – nisongo nokkhotro pdf
book | নিঃসঙ্গ নক্ষত্র |
Author | সাদাত হোসাইন |
Publisher | ভাষাচিত্র |
ISBN | 9789849280439 |
Edition | 1st Published, 2018 |
Number of Pages | 270 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা Pdf Download |
পুরো বই জুড়ে যেন বিস্বাদের মেঘ। তারটা সেই শুরুতেই ছিড়ে গিয়েছে। অন্ধকার ধেয়ে আসে সবসময়, সেই মেঘে ভেসেছে চাদের আলো-একটু বের হলেই তা ঢেকে গিয়েছে। হয়তো মাঝে মাঝে হিমুর মত স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি-এবার বোধ হয় কিছু হবে-সাথে সাথে চোখের জলে বইয়ের পাতাগুলি ঝাপসা হয়ে এসেছে। আচ্ছা তখন কি করতে হয়-হ্যা দুই এক বার চোখের পাতা ফেললেই হবে। পানি গড়িয়ে যাবে।
ছোটবেলায় আপার কোন কথা না শুনে উল্টাপাল্টা কিছু করতে থাকলে আপা তখন বলতো, “তুই আমার সাথে আর কথা বলবি না”। কি আশ্চর্য ব্যাপার! আপা এই কথা বলার আগে হয়তো আপার সাথে আমি এমনিতেই ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি নাই এবং তাতে কোন সমস্যাও হয় নাই। কিন্তু এই সাত শব্দের এমনই আশ্চর্য ক্ষমতা! যা শোনার পর আমার দমবন্ধ দমবন্ধ লাগতো, পৃথিবী শূন্য শূন্য লাগতো…। আমার মনে হতো যেকোন কিছুর বিনিময়ে আমার আপার সাথে কথা বলতে হবে। নয়তো আমি দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো…সত্যি!
সেই সব মায়াময় স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে যতক্ষণ বইয়ে অয়ন এসেছে, পড়তে গিয়ে আমার দমবন্ধ লেগেছে। অয়নের মাঝে আমি নিজেকে গুলিয়ে ফেলছিলাম। পৃথিবীর সকল বড় বোনেরা বুঝি এমন অদৃশ্য দুই পাখা দিয়ে ছোট ভাইদের আগলে রাখতে চায়? মায়ের মতো?? কখনো তার চেয়েও বেশী???
অয়ন আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছে আরো। উপহার দিয়েছে দীর্ঘ নৈশব্দের স্পন্দিত সময়। দিয়েছে খাঁ খাঁ দুপুর, ধূসর আকাশ, নিঃসঙ্গ চিল, রোদের ভেতর গাছের ছায়া… সব ম্লান করে দেয়া অনুভূতি। যে অনুভূতির তুলিতে রঙের নাম ছিলো নুহা। যে নুহাকে অয়ন ভালবাসে। খুব কাছের বন্ধু হিসেবে না, অন্য কোনভাবে ভালবাসে সে। কিন্তু এইভাবে ভালবাসতে সে চায়নি।।।
কিন্তু এই গল্প শুধু অয়ন-নুহার নয়।
গল্পটা হয়তো সালমা বেগমের। যার আচঁল ছায়ায় লুটিয়ে পড়েছে শাশ্বত বাঙ্গালী মায়ের রূপ। কিংবা গল্পটা শামীমের, তনুর, বিনুর বা অন্য কারো। কিন্তু কোনভাবেই গল্পটা অনুর নয়।
অনু কোন চরিত্র নয়, সে এই নিঃসঙ্গ নক্ষত্রদের বুকে ধরা অসীম আকাশ। যেই আকাশে ঝড় আসে, ঝঞ্জা আসে, রৌদ্র হাসে না… মেঘ করে যায়, মেঘ গলে যায়, বৃষ্টি আসে না।
অনু সেই দরজা, যা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে এই নিঃসঙ্গ নক্ষত্রের দেশে। যেই দরজায় কড়া নেড়ে গেছে আলতাফ হোসেন, ওয়াসিম, জায়েদ খানদের মতো কিছু ঘৃণ্য কীট। যেই দরজা পেরোতে পেরেছে হাসান কিংবা মাহফুজ, যাদের মাধ্যেই আমরা দেখতে পেয়েছি স্বর্গীয় শুভ্রতা। আশ্চর্য সেই দরজার এপার ওপার আলো-অন্ধকার!!!
খুব কম বয়সে বাবাকে হারিয়েছে অনু। মাথায় তুলে নিতে হয়েছে মা আর ছোট তিন ভাই-বোনের দায়িত্ব। আমাদের সমাজে একটা মেয়ে হয়ে পরিবারের হাল ধরা সে তো চাট্টিখানি কথা নয়! তারপর সে যদি হয় পরিণত বয়সের অবিবাহিত মেয়ে। তবুও সে প্রায় সব ঠিক করে ফেলেছিল। কিন্তু বিধাতা হয়তো কখনো কখনো একটু বেশি নিষ্ঠুর হয়ে যান।
আর ওদিকে হাসান, যে শত অপবাদ, বৈরিতা ঠেলে বিশুদ্ধতম ভালবাসাটি নিয়ে হাজির হয়েছে অনুর দুয়ারে। কিন্তু সেই নিখাঁদ ভালবাসা ফিরে ফিরে যাচ্ছে কোন সে প্রতিবন্ধকতায়?
এই গল্প যার একটা বড় বোন আছে সে অনুভব করতে পারবে। অনুভব করতে পারবে যারা প্রেমে না পড়তে চেয়ে প্রাণপণে চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন, সে অন্য কারো। যতই তারা নিবিড় করে বাঁধুক প্রেমাদ্র জীবনে, যতই তারা চৌচির শরীরে সুমঙ্গলী বর্ষা হোক… তারা অন্য কারো। হ্যা এই গল্প আমার, আপনার, আমাদের…
কিংবা এই গল্প আমাদের কারো নয়। এই গল্প অন্য কারো। যাকে আমরা চিনি না। যে আমাদের কেউ হোক তা আমরা কখনোই চাই না। যে গল্প সময় স্তব্ধ করে দেয়, সেই গল্প আমরা চাইবো কেমন করে ?
যদি গল্পের অনুভূতির কথা বলতে চাই তবে বলতে হয়, এই গল্প হাসায়নি। ভালো লাগায়নি। ছোপ ছোপ কষ্ট গায়ে মেখে চলতে হয়েছে পথ। এখানে কেউ কেউ ভালোবেসে ভুল করে, কেউ কেউ ভালোই বাসেনা। কেউ কেউ চতুরতা দিয়ে খায় পৃথিবীকে, কেউ কেউ বেলা যায় ফিরেও আসে না। যাদের বাঁচার কথা ছিল, নেই, ভুল মানুষেরা আছে বেঁচে। তবুও পথ চলেছি! কী যেনো এক মায়া!! সুধা ভ্রমে বিষ খাই, বিষ এত মিষ্টি বুঝি???
প্রচ্ছদ আমি বুঝিনি। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে প্রচ্ছদের চাঁদটাকে আমি রিলেট করতে পারিনি। আকাশের অজস্র নক্ষত্র থাকতে একটা উপগ্রহ প্রচ্ছদে…!
এমনসব বইয়ে আমি আরো উঁচুমানের বাইন্ডিং চাই, ইনফেক্ট আমাদের দেশের বইতেই আরো ভালো মানের বাইন্ডিং হচ্ছে।
তাছাড়া কালার,পেপার,মুদ্রন… আমার ভালো লেগেছে।
সব গল্পেই শেষ থাকতে হয় এবং খুব সাধারণ এক পাঠক হিসেবে এই গল্পের শেষটা আমি মেনে নিতে পারিনি। আমিও স্বপ্ন দেখি, কেউ কোন একদিন হয়তো গল্পটাকে বদলে দেবে। বদলে দেয়া সেই গল্পে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে পাশ বালিশটাতে তাকেলেই দেখা যাবে জোছনার ছায়া। সেই ছায়ার ভেতরে মায়া হয়ে তাকিয়ে থাকবে একজোড়া চোখ। সেই চোখের ভেতরে মন। মনের ভেতরে মানুষ। সেই মানুষের নাম হবে ভালবাসা।
বই: নিঃসঙ্গ নক্ষত্র
লেখক: সাদাত হোসাইন
ধরণ: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: ভাষাচিত্র
মূল্য: ৪৭০ টাকা
রেটিং: ৭.৫/১০.