ইসলামিক বই Pdf Download (All)
ইসলামিক থ্রিলার Pdf Download
ইসলামিক থ্রিলার Pdf Download link:
-
কুরআনের অলৌকিকত্ব – হারুন ইয়াহিয়া
113. আল্লাহ তায়ালা কোথায় আছেন? download
114. কুসংস্কার ইমান PART 1st download
115. কুসংস্কার ইমান PART 2nd download
116.জ্বিন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস 1download
117.জ্বিন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস 2 download
118.জ্বিন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস 3 download
119. জ্বিন ও শয়তান জগত download
120. নেককার ও বদকার লোকের মৃত্য কিভাবে হয়
121. আল্লাহ মৃত দেহ নিয়ে কি করবেন ?
122. ফেরেশতাদের নজরদারিতে মানবজিবন
123. আর রাহীকুল মাখতুম download
138. পিঁপড়াদের রাজ্যে download
139. রাসুল সাঃ এর স্ত্রীগন যেমন ছিলেন
আরও পড়ুনঃ
বইয়ের নাম: আদর্শ হিন্দু হোটেল
লেখকের নাম: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
জনরা: সামাজিক উপন্যাস
মুদ্রিত মূল্য: ৩০০ টাকা
রিভিউ প্রদানকারীর নাম: আজমাইন রাফিন
কাহিনী সংক্ষেপ:
‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’ এই মূলভাবের ওপর রচিত এই উপন্যাসটি মূলত রাণাঘাটের রেল-বাজারে বেচু চক্কতির হোটেলের বাবুর্চি হাজারি দেবশর্মাকে ঘিরে। মাসে সাত টাকা বেতনে দীর্ঘদিন ধরে এই হোটেলে কাজ করেন হাজারি ঠাকুর। ব্যক্তিজীবনে অসাধারণ সৎ এই মানুষটির রান্নার হাতও দুর্দান্ত রকমের ভালো, খদ্দেররাও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু এমন চমৎকার গুণের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও হাজারি ঠাকুরকে ঠিক পছন্দ করেন না একজন মানুষ। তিনি পদ্ম ঝি। কাগজে কলমে বেচু চক্কত্তি হোটেলের মালিক হলেও আদতে এই পদ্ম ঝিয়ের কথা মতোই হোটেল চলে। হোটেলের জন্য কী বাজার করা হবে, কী রান্না হবে, এসব বিষয় থেকে শুরু করে ক্যাশবাক্স পর্যন্ত রয়েছে পদ্ম ঝিয়ের প্রভাব। কোন এক অজানা কারণে বেচু চক্কত্তিও তাঁর ওপর কিছু বলেন না।
আগেই বলেছি, পদ্ম ঝি হাজারি ঠাকুরকে দেখতে পারেন না। খদ্দেররা এসে যখন হাজারি ঠাকুরের উদাত্ত প্রশংসা করেন, পদ্ম ঝিয়ের মুখ ভার হয়ে যায়। কোন কারণে খদ্দেরদের খাবারে কম পড়লে ভেজাল মিশিয়ে তা পরিবেশন করেন পদ্ম ঝি, আবার বাড়িতে নিয়ে যান হোটেলের উদ্বৃত্ত খাবারের শেষ কণাটিও। হোটেলের যেকোন সমস্যায় তিনি দায়ী করেন কর্মচারীদের, গভীর রাতে হোটেলের মালামাল চুরির দায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে তাই একবার জেলেও যেতে হয়েছিল হাজারি ঠাকুরকে। কাজ হারিয়ে হাজারি ঠাকুর স্বপ্ন দেখেন নিজের হোটেল খোলার, যা তিনি পরিচালনা করবেন সম্পূর্ণ সততার সাথে, খদ্দেরদের রান্না করে খাওয়াবেন বাজারের সেরা খাবারটা। কিন্তু মাত্র সাত টাকা মাইনে পাওয়া হাজারি ঠাকুর কীভাবে দুইশ টাকা জমিয়ে নিজের হোটেল খোলার?
পাশাপাশি উপন্যাসের পদ্ম ঝিয়ের কাছ থেকে হাজারি ঠাকুরের পাওয়া বিরূপ আচরণই শেষ কথা নয়, এই আচরণের সম্পূর্ণ বিপরীতটি হাজারি ঠাকুর পেয়েছিলেন কুসুমের কাছ থেকে। কুসুম সরাসরি হাজারি ঠাকুরের আত্মীয় না, তবে দূরসম্পর্কের আত্মীয় বলা যেতে পারে। তবে নিজের কন্যাস্থানীয় এই মেয়েটি হাজারি ঠাকুরের জন্য বিভিন্ন সময়ে যা করেছে, তা ব্যাখ্যাতীত, হয়তো তাঁর নিজের মেয়ে টেঁপিও এতটা করতে পারতো না।
এছাড়া উপন্যাসে আছে বেচু চক্কত্তির পার্শ্ববর্তী হোটেলের মালিক যদু বাড়ুয্যের কথা, আছে নরেনের কথা, আছে অতসীর কথা, আছে হাজারি ঠাকুরের স্ত্রী-কন্যার কথা। প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে উপন্যাসে কাহিনীতে, আর উপন্যাসের সমাপ্তিটা তো চমৎকার। পাঠক খুব করে চাইবেন একটা দারুণ সমাপ্তির জন্য, হাজারি ঠাকুরের স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিলনের জন্য, কিন্তু লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে খেলা করছে কোন চিন্তা? সমাপ্তিটা পাঠকের মন মতো হবে তো?
এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসটা মূলত প্রায় নিঃস্ব এক ব্যক্তির আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব স্বপ্নের গল্প, শূন্য থেকে শিখরে ওঠার প্রচেষ্টার গল্প, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েও লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার অসীম সাহসের গল্প। মাত্র সাত টাকা মাইনে পাওয়া হাজারি ঠাকুরও স্বপ্ন দেখেন দুইশ’ টাকা জোগাড় করে নিজের হোটেল বসানোর। শুধু স্বপ্ন দেখাই শেষ নয়, জীবনের প্রতিটিই পদক্ষেপে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেন লক্ষ্যের দিকে। পথে কত বাধা-বিপত্তি আসে, কত কাঁটা বিছানো থাকে, কতবার শঙ্কা জাগে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার, বিহ্বল চোখে হাজারি ঠাকুর তবুও অবিচল থাকেন আপন লক্ষ্যে, প্রতিনিয়ত তাড়া করে চলেন নিজের স্বপ্নটাকে। কিন্তু স্বপ্নের পথে এই অন্তহীন যাত্রার সমাপ্তি কোথায়? হাজারি ঠাকুর কি শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরটা তোলা থাকুক পাঠকের জন্য।
পাঠক মাত্রই বুঝতে পারছেন, এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হাজারি ঠাকুর।
এছাড়াও এই উপন্যাসে আছে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। হাজারি ঠাকুরের মত সৎ, নিষ্ঠাবান চরিত্রের ঠিক বিপররেতে আছেন পদ্ম ঝি, সম্ভবত এই উপন্যাসে পাঠকের সবচেয়ে অপছন্দের চরিত্রও এটা। পদ্ম ঝি সৎ নন, বেচু চক্কত্তির সাথেও আছে নামহীন সম্পর্ক, আর সবচেয়ে বড় বিষয়, পদে পদে হাজারি ঠাকুরকে যাবতীয় বিপদে ফেলাই যেন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। তবে পদ্ম ঝি নামক এই নারী চরিত্রটির দ্বারা বিভিন্ন সময়ে হাজারি ঠাকুর যতখানি অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে পড়েছেন, সম্ভবত তার চেয়ে অনভিপ্রেত সাহায্য পেয়েছেন উপন্যাসের অন্য নারী চরিত্রগুলোর থেকে। উপন্যাসের বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লিখিত কুসুম, অতসী, বা টেঁপি, প্রতিটি কন্যাস্থানীয়ার কাছ থেকে প্রাণখোলা ভালোবাসা পেয়েছেন হাজারি ঠাকুর, কখনো কখনো পেয়েছেন আর্থিক সাহায্যও। উপন্যাসে তাই একটি নারী চরিত্রের কদর্য রূপই তুলে ধরা হয়নি, তুলে ধরা হয়েছে নারী চরিত্রের প্রার্থিত রূপটিও। উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্রগুলোর মধ্যে মতি চাকর, যদু বাড়ুয্যে, নরেন উল্লেখযোগ্য, যারা কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছেন।
এবার একটু নিজের অনুভূতির গল্প বলি। এর আগে ‘চাঁদের পাহাড়’ আর ‘পথের পাঁচালি’ ছাড়া বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য কোন বই পড়ার সৌভাগ্য হয়নি আমার, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ পড়ার পর মনে হচ্ছে, জীবনের অনেক গুলো দিক এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। প্রকৃতির অনন্যসাধারণ বর্ণনা, সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও টানাপড়েন, মানবহৃদয়ের বিভিন্ন অবস্থার বর্ণনা এই উপন্যাসে যেভাবে উঠে এসেছে, তা আমাকে লেখকের অন্য বইগুলো পড়ার জন্য আগ্রহী করে তুলেছে। আর এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমার এই পর্যন্ত পড়া বইগুলোর মধ্যে ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ অন্যতম সেরা ক্লাসিক উপন্যাস।