সুলতানার স্বপ্ন Pdf & রিভিউ
সুলতানার স্বপ্ন pdf (free download পিডিএফ) বেগম রোকেয়ার শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ।
লেখক নাম:-বেগম রোকেয়া
প্রথম প্রকাশ:-1908
সংরক্ষণ:-2005
প্রকাশক:-ন্যাশনাল পাবলিকেশন
পৃষ্ঠাসংখ্যা:-110
মূল্য:-100৳
ব্যক্তিগত রেটিং:-4.00/5.00
সুলতানার স্বপ্ন সারমর্ম আলোচনা (রিভিউ)
মুসলিম নারী মুক্তির পথ পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া (1880-1932)। মুসলিম সমাজের কুসংস্কার ও জড়তা দূর করে নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠা কল্পে লেখালেখি শুরু করেন।বেগম রোকিয়া স্রোতের প্রতিকূলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।যা খুব কম মানুষই পারেন।বেগম রোকেয়ার একটি বিস্ময়কর লেখা পাঠকনন্দিত গ্রন্থ “সুলতানার ড্রিম” বা “সুলতানার স্বপ্ন”।
”সুলতানার স্বপ্ন” কল্পলোকের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে সুলতানা নামক চরিত্রের স্বপ্নের বর্ণনার মাধ্যমে।স্বপ্নের বর্ণনা আগে তার ধারণা তিনি জেগেই ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন সুলতানা এক রাতে তার স্বয়ং কক্ষে বসে। হঠাৎ সিস্টার ‘গুড মর্নিং’ শুনেছি জিমুনী ভাবটা কেটে গেল।সারা একজন ইউরোপীয় রমনী। রাতের বেলায় গুড মর্নিং মনে হয় অবাক হলেও প্রকাশ করলেন না।
রাতের বেলা অন্ধকার পুরুষেরা ঘুমাচ্ছে,তাই কোনো দ্বিধা না করে সিস্টার সাথে ঘুরতে বেরিয়ে যান।বের হয়ে বুঝতে পারলেন ভগিনী আসলে সারা নয়,অন্য কেউ।তবুও তাকে সারা বলেই সম্বোধন করেছেন।তিনি আবিষ্কার করলেন যে,সে তার পরিচিত জায়গায় নয় বরং নারী স্থানে অবস্থান করেছেন।ভ্রমণকালে দেখলেন বাইরের আলোকোজ্জ্বল দিন নগরীর লোকেরা জেগে উঠেছে রাজপথের লোকে-লোকারণ্য। সুলতানা পরাধীন ভারতবর্ষের দিনের বেলায় পথে হেঁটে বেড়াতে চেয়েছেন এবং লজ্জা সংকোচ পা জড়িয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু কোন পুরুষ দেখতে পান নাই পথে। স্ত্রীলোকের রয়েছে যারা তাকে দেখে হাস্য-পরিহাস করেছিল।তিনি তাদের ভাষা না বুঝলে স্পষ্ট বুঝেছিলেন যে তাদের উপহাসের লক্ষ্য কেবল তিনি। সারা কে জিজ্ঞেস করে তিনি জানালেন অনেকটা পুরুষ ভাবাপন্ন অর্থ এই যে আপনাকে পুরুষের মতো ভীতু এবং লজ্জা নম্র দেখায়। ভগিনী সারা সুলতান কে বলেছে,এরা যেমন পুরুষ চলেনা মেয়ের এখানে স্বচ্ছন্দ চলে, শয়তানি এখানে শৃংখলাবদ্ধ,পুরুষরা অন্তঃপুরে জননিরাপত্তার স্বার্থে পুরুষরা রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয় না। তাই মেয়েরা এখানে অধিক নিরাপদ এখানে অপেক্ষা করেছিল রাজ্যের সব বিষয় নারীস্থান।দেশ যেখানে নারীরা শিক্ষা-দীক্ষায় যেখানে কোন মারামারি হানাহানি নেই,নেই কোনো অশান্তি।
এখন প্রশ্ন হল পুরুষরা অন্তঃপুরে কেন?নিজেদের ব্যর্থতার কারণে। একবার পার্শ্ববর্তী রাজ্যের কয়েকজন বিদ্রোহী যারা ওই রাজ্যের শাসন মেনে নিতে পারছিল না তার আশ্রয় নিয়েছিল এই রাজ্যে।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ বেধে যায়।
কল্পরাজ্যে দুটি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সৃষ্টিশীল গবেষণা কেন্দ্র।একটি বিশ্ববিদ্যালয় আবিষ্কার করেছে মেঘ থেকে পানি সংগ্রহের পদ্ধতি। যার ফলে মানুষকে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না।আরো আবিষ্কার করেছে সৌরশক্তি সংগ্রহের পদ্ধতি নারীস্থান সবুজ সমারোহ ভরপুর এক দেশে বিজ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে মেয়েরা আবিষ্কার করেছে এমন যন্ত্র, যা মেঘের পানি শোষণ করে নিতে পারে।ফলে দেশটিতে এরোপ্লেন চলে,কৃষিকার্যে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারে হয়। উল্লেখ্য যে বেগম রোকেয়ার যখন লেখেন তখন ভারতবর্ষে এরোপ্লেন তো দূরের কথা,মোটর গাড়ি এসে থাকলেও তিনি তা দেখেনি।বিদ্যুৎ শক্তি সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। মেঘ থেকে পানি সূর্য থেকে শক্তি সংগ্রহের চেষ্টা করে সেখানে বিজ্ঞানীরা করেছিলেন না।
এই গ্রন্থে বেগম রোকেয়া একটি স্বপ্নের রাজ্য বা ইউটোপিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে সমাজের নারী ও পুরুষের প্রচলিত ভূমিকা উল্টে গেছে। নারীরা সমাজের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান চালিকাশক্তি আর পুরুষরা প্রায় গৃহবন্দি। এই সমাজে কোন অপরাধ নেই এখানে প্রচলিত ধর্ম ও ভালোবাসা সত্যের।
সময়ের তুলনায় অনেক বেশি অগ্রসর হচ্ছিলেন নারী শিক্ষার অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া।তার সুলতানার স্বপ্ন নিতান্তই কল্পনা।এতে তিনি লিখেছেন একজন নারী স্থানের কথা।দেশ শাসন থেকে শুরু করে সবকিছু করে নারীরা।আর পুরুষেরা করে ঘরের কাজ পুরুষরা যন্ত্রপাতি পরিচালনা করে খাতাপত্র হিসেবে শিশুদের দেখাশোনা করা এবং রান্নাবান্না করে পুরুষরা ঘরের কাজ।পুরুষরা করে দেহের কাজ,নারীরা করে মস্তিষ্কের কাজ।
কল্পনা জ্ঞানের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান সীমাবদ্ধ,কল্পনা অসীম ।সেই জন্যই হয়তো আইনস্টাইন কল্পনার কাছে তার ঋণ স্বীকার করেছিলেন। ‘সুলতানাস ড্রিম’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বুনতে বেগম রোকেয়া কল্পনা শক্তি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
“সুলতানার স্বপ্ন” একটি প্রথম শ্রেণীর সাইন্স ফিকশন। জগদীশচন্দ্র বসুর গল্প “পলাতক তুফান” কে বাংলা ভাষায় প্রথম সায়েন্স ফিকশন বলা হয়।এটি প্রকাশিত হয়েছিল 1921 সালে অন্যদিকে বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানাস ড্রিম’ প্রথম প্রকাশিত হয় 1908 সালে ।গল্পটা যদিও বাংলায় লেখা হতো এটি বাংলা ভাষার প্রথম সায়েন্স ফিকশন হতে, কিন্তু বর্তমানে এটি সায়েন্স ফিকশন হিসেবে পরিচিত না পেয়ে নারীবাদী হিসেবে পরিচিত।যে যুগে নারী শিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না,মেয়েরা মাতৃভাষা বাংলা শিখতে পারতা না, সে যুগে নারীর লিখিত সায়েন্স ফিকশন তাও ইংরেজিতে সত্যিই বিস্ময়কর।