সমরেশ মজুমদার বই

মানুষের মা Pdf Download – Manusher Maa pdf

সমরেশ মজুমদার মানুষের মা Pdf Download free – Manusher Maa pdf Download  by Samaresh Majumdar

 

বই: মানুষের মা
লেখক : সমরেশ মজুমদার
প্রকাশনা: আনন্দ পাবলিশার্স
ব্যক্তিগত রেটিং:[১০/১০]
রিভিউ করছি:- হিমাদ্রি শর্মা
‘সমরেশ মজুমদার’ এর অনবদ্য এক সৃষ্টির নাম “মানুষের মা”। এটি একটি দারুণ উপন্যাস যেখানে নারীশক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। লেখক দেখিয়েছেন নারীসমাজের জাগরণের দৃশ্য। তুলে ধরা হয়েছে অদ্ভুত এক উত্তরণের কাহিনি। রক্তমাংসের ঈশ্বরী রূপে গড়ে ওঠা এক নারীর গল্প উপস্থাপিত হয়েছে লেখকের হাতের ছোঁয়ায়।
উপন্যাসের শুরু ধর্মনারায়ণের স্বপ্নের মধ্য দিয়ে।এক রাতে ধর্মনারায়ণ স্বপ্ন দেখলেন নদীর পাশের ঐ বুনো ঝোপের ধারে একটি বেলগাছের নীচে মাটির তলায় শুয়ে আছেন মা। পরের দিনই ওখানকার মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় চার ফুট উচ্চতার এক বিগ্রহ। তার পরপরই ধর্মনারায়ণের নির্দেশে সেখানে রাতারাতি মন্দির নির্মাণ করা হলো এবং সেই মন্দিরে ধর্মনারায়ণ ঐ বিগ্রহকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এরপর থেকেই সেখানে নিয়মিত পূজো করা হতো এবং ক্রমশই সেখানকার লোকজন মন্দিরের নাম দিয়ে দিলো ‘মায়ের বাড়ি’। তারপর থেকেই মন্দির দর্শনে চারিদিকের মানুষ জড়ো হওয়া শুরু করে। তখন মন্দিরটির দেখাশোনা করতেন ধর্মনারায়ণের পৌত্র উদিতনারায়ণের কন্যা বিম্ববতী এবং তাঁর স্বামী মুক্তোনারায়ণ। তাদের ছেলে তারাপদকে পরবর্তীতে মন্দিরের পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ক্ষ্যাপাটে প্রকৃতির তারাপদের পড়ালেখায় মন ছিল না বললেই চলে। আকাশে মেঘ দেখলে সে নেচে উঠতো। সবসময় উচ্চশিক্ষিত মানুষের মতো জ্ঞানগর্ভ কথা বলতো। স্কুলে যেত না, নদীর ধারে বসে মায়ের গান গাওয়াটাই ছিল তার প্রধান কর্ম।
কামাখ্যাপ্রসাদ ও সরস্বতীর কন্যা সরলাবালা।শৈশবে সে বেশিরভাগ সময় কাটাত অসুস্থ প্রাণীদের সাথে। তাদেরকে সেবাযত্ন দিয়ে সুস্থ করাই ছিল সরলাবালার প্রধান কাজ। তারাপদের বিয়ের জন্য সরলাবালাকে দেখতে এসে পছন্দ করে ফেলেন তারাপদের বাড়ির লোকেরা। কিন্তু এত ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে দিতে নারাজ ছিলেন সরলাবালার মা সরস্বতী। কিন্তু তার পিতা কামাখ্যাপ্রসাদ এত ভালো সম্বন্ধ হাতছাড়াও করতে চাইলেন না। অতঃপর তড়িঘড়ি করে তারাপদের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো সরলাবালার। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে সরলাবালা নিতান্ত বালিকা বলে বিয়ের কার্য শেষ হলেও সে বাপের বাড়িতে থেকে যায়।
কিছুকাল পরে কামাখ্যাপ্রসাদ অস্থির হয়ে পড়লেন মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি দিয়ে আসতে। দিনক্ষণ ঠিক করে একদিন মেয়েকে নিয়ে তারাপদের বাড়িতে গেলেন কামাখ্যাপ্রসাদ। কিন্তু মন্দিরে আসার পর সেখানে প্রত্যাখ্যাত হয়ে কামাখ্যাপ্রসাদ ও তাঁর মেয়েকে ফিরে আসতে হয় নিজ গৃহে।
ঐদিকে তারাপদের দিন কাটত মাতৃসাধনায়।অতঃপর বিম্ববতীর হস্তক্ষেপে সরলাবালা ফিরে আসে স্বামীগৃহে। সরলাবালা ফিরলেও তাদের কোনও দাম্পত্যজীবন শুরু হলো না। স্বামী তারাপদ থাকত মন্দিরে মায়ের পূজোয় ব্যস্ত। মায়ের সাথে সে কথা বলতো, হাসতো, কখনো-কখনো মাটিতে লুটিয়ে পড়তো। সরলাবালা থাকত অন্য আরেকটা কক্ষে।
তারপর একদিন তারাপদ এসে সরলাবালাকে বলে সে যেন ইষ্টনাম জপ করতে থাকে, মা’কে যেন সে সারাক্ষণই ডাকে, কক্ষ থেকে যাতে বাইরে বের না হয়, কাউকে যাতে সে তাঁর মুখদর্শন না করায়।সরলাবালা তো তাঁর সাধক স্বামীর কথা অবজ্ঞা করতে পারে না। স্বামীর আদেশ না মানলে পাপ হবে বলে বিশ্বাস করতো সরলাবালা। তাই সে স্বামীর আদেশে নিজেকে গৃহবন্দী করে ইষ্টনাম জপ করা শুরু করে দেয়। সময়ের ক্রমেই সরলাবালার জীবন পাল্টাতে শুরু করে। তারাপদের ধর্মসাধনায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে নিজস্ব জীবনপথ খুঁজে নেয় সরলাবালা।
মানুষের জন্য সরলাবালা কাজ করা শুরু করে দিল।তলাটের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বাড়িতে গিয়ে সে ভুক্তভোগীর মাথায় হাত রাখতেই তিনি প্রচন্ড শান্তি অনুভব করতেন, কমে যেত তার সকল জ্বালা-যন্ত্রণা। এরকম চলতে চলতে চারিদিকে সরলাবালার এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। সবাই বিশ্বাস করা আরম্ভ করে যে, সরলাবালার উপর মায়ের আশীর্বাদ আছে, তিনি যেন স্বয়ং মা রূপে এসেছেন ধরাতে। সবাই সরলাবালাকে ‘মা জননী’ বলে ডাকা শুরু করে দিলো। তলাটের গরীব, দীন-দুঃখী সকল মেয়েদের নতুন জীবন দিলেন মা জননী। সবাইকে মন্দিরে কাজের ব্যবস্থা করে দিলেন, অনেককে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সেলাইয়ের কাজ শেখার ব্যবস্থা করে দিলেন। এতে গ্রামের মেয়েরা আবার তাদের নতুন জীবন পায়। সময়ের সাথে-সাথেই মা জননী হয়ে উঠলেন সকল অসহায়, অধিকার বঞ্চিত, শোষিত মেয়েদের আশ্রয়দাত্রী। সরলাবালা অতি অল্পশিক্ষিত নারী হয়েও গ্রামের সকল মেয়েদের জীবন বদলে দিয়েছিলেন। গ্রামের মেয়েদের চিকিৎসার জন্য, তারা যাতে নিজেদের অসুখের কথা ডাক্তারকে বলতে পারে, গ্রাম্য ঝাড়ফুঁকে যাতে তাদের আটকে থাকতে না হয়, তাই একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তুলেন বিম্ববতীর সহযোগিতায়। সবার সিদ্ধান্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম রাখা হলো ‘মা জননী স্বাস্থ্যকেন্দ্র’। যদিও মা জননী এতে রাজি ছিলেন না।
মা জননী ছিলেন উদার মনমানসিকতার একজন মানুষ। মানুষকে ক্ষমা করে দিতেন শত অপরাধের পরও। তবে তারসাথে অপরাধীকে মা’কে ডাকার জন্য বুঝিয়ে বলতেন। এই যেমনঃ- মন্দিরের পুরোহিত নিবারণ (যাকে তারাপদ বারণ বলে ডাকত) সবসময়ই চেষ্টা করতো মা জননী কে কিভাবে তাড়ানো যায়। বিভিন্ন সময় নানান বিষয়ে কানমন্ত্র দিতো তারাপদকে। একপর্যায়ে তো সাহস করে বিম্ববতীকে বলেই ফেললো নিবারণ, এই সরলাবালাকে যাতে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। এটা শুনে বিম্ববতী রেগে গিয়ে নিবারণকে মন্দির থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। তখন সরলাবালা বিম্ববতীকে বলে নিবারণকে যেন না তাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাঁকে যেন মন্দিরে ঠাঁই দেওয়া হয়। এরপর থেকেই নিবারণের জীবন পাল্টে যায়। সে মায়ের পথে চলে আসে।
⏩উপন্যাসটির সবচাইতে সত্য-সুন্দর লাইনগুলো ছিল (স্ব-বিবেচনায়):-👇
🔯 “শিশু যখন মায়ের পেট থেকে বেড়িয়ে এল তখন থেকেই তার যাত্রা শুরু হয়ে গেল মৃত্যুর দিকে।জীবনে সে যা করবে তা ঢেউ এর মতো, আসবে আবার মিলিয়ে যাবে। কিন্তু মৃত্যু অবধারিত। তার হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই।”🔯
‘সমরেশ মজুমদার’ এর “মানুষের মা” উপন্যাসটি মূলত অদ্ভুত এক উত্তরণের কাহিনি নিয়ে রচিত।নারীশক্তির জাগরণের একটি গ্রাম্য বালিকা এই আখ্যানে ক্রমে হয়ে ওঠে রক্তমাংসের এক ঈশ্বরী।
স্বার্থক, অনবদ্য এই উপন্যাসটি পড়তে পেরে। তাই এবার আপনিও পড়ে ফেলুন অনবদ্য এই উপন্যাসটি।
বইতে হাসি, বইতে বাঁচি।❣️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!