অন্দরমহল Pdf Download সাদাত হোসাইন – Andarmahal Sadat Hossain Book pdf
অন্দরমহল সাদাত হোসাইন pdf download
book | অন্দরমহল |
Author | সাদাত হোসাইন |
Publisher | ভাষাচিত্র |
ISBN | 9789849133643 |
Edition | 1st Published, 2016 |
Number of Pages | 438 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা Pdf Download |
রাত দ্বিপ্রহর পেরিয়েছে অনেক আগে। সারাদিন মাছ ধরে ক্লান্ত নিতাই তার নৌকা খানা গঙ্গাবতী নদীর তীরে ভিড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎই দেখে তার নৌকার পাশে আরেকটি নাও। ছইয়ের ভিতরে মুখ অবধি ঢেকে শুইয়ে রাখা আছে একটি বালককে। মাথার কাছে জলের ঘটির গলায় বাঁধা চিরকুট। কিন্তু এ কী! ছেলেটার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, সারা গায়ে যে মহামারী গুটিবসন্ত! তীব্র আতংকে জমে গেলো নিতাই!
খবর গেলো দেবেন্দ্রনারায়ণ এর কাছে। গঙ্গাবতীর পাশ ঘেঁষে বিশাল জমিদার বাড়ি, তারই মেজোকর্তা তিনি। জমিদার বিষ্ণুনারায়ণের তিন সন্তানের মধ্যে মধ্যম হলেও, বড় পুত্র অবনীন্দ্রনারায়ণের বদলে বৃদ্ধ পিতার জমিদারি দেবেন্দ্রনারায়ণই দেখেন। প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারি দেবুর মধ্যে জমিদারি রক্তের খামখেয়াল, বহুগামিতা, চন্ডাল-রাগ সবই বিদ্যমান।
এতো পরাক্রম সত্বেও সেই কালরাতে নদীর তীরে পাওয়া রহস্যময় ছেলেটির জন্যই বদলে গেলো দেবেন্দ্রনারায়ণের জীবনছক। দীর্ঘকাল ধরে জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে পাতা হয়েছে ষড়যন্ত্রের শতরঞ্জ খেলা! বীণাবালা জাল গুটিয়ে এনেছেন। তার সাথে খেলায় যোগ দিল আরো অনেকেই, কেউ লোভের ফাঁদে, কেউ প্রতিশোধের অনলে জ্বলন্ত।
দেবেন্দ্রনারায়ণকে চুকাতে হবে অনেক পাপের হিসেব। শুধু কি তিনি? প্রকৃতি ছেড়ে কথা বলে না কাউকেই, সকলের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়।
গঙ্গামহলের প্রতিটি ইঁট যে চিৎকার করে বলছে লোভ, বঞ্চনা, আর প্রতিহিংসার গল্প!
পাঠপ্রতিক্রিয়া: যেকোনো গল্প পড়ার সময় পাঠক মাত্রই কল্পনা করে নেয় একটা দৃশ্যপট। তা না হলে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ডুব দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ‘অন্দরমহল’ উপন্যাসের সময়কালটা পুরনো পটভূমিতে লেখা হলেও, সেটা ঠিক কবে সে বিষয়টি লেখক এড়িয়ে গিয়েছেন। ভূমিকাতে দায়মুক্তির জন্য উল্লেখ করেছেন বাস্তবের সঙ্গে সংস্পর্শ এড়াতে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়কাল বেছে নিচ্ছেন না। উপন্যাস শুরু করার আগেই এমন শুভংকরের ফাঁকির মত ঘোষণা পুরো সময় মাথায় চাপ ফেলেছিল।
গল্পের কিছু কিছু জায়গাতেই গল্পপ্রবাহকে ‘অনেকদিন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গল্পে যেখানে জীবন-মরণের টানটান উত্তেজনা, সেখানে ‘অনেকদিন কেটে যাওয়া’ সময় খুব বিভ্রান্তিকর। কখনো আবার লেখক এই অনির্দিষ্ট সময়ে এগিয়ে গিয়ে, ফ্ল্যাশব্যাকে কি কি ঘটে গেছে বর্ণনা করেছেন। এর চাইতে ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে গল্প এগিয়ে গেলে পড়তে বেশি ভালো লাগতো৷ পুরো উপন্যাস পড়ার পরও ঠিক ঠাহর করতে পারিনি ‘অন্দরমহল’ এর পুরো ঘটনাটা কতোটা সময় যাবত ঘটেছে।
পরিচয়ের পুনরুক্তি ঘটেছে গল্পে বারবার। গঙ্গাবতীর তীর ঘেঁষে গঙ্গামহল, পরপর কয়েক পাতায় এই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। রতনকান্তিকেও প্রতিবার গানের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে না দিলেও চলে।
গল্পে রহস্য জমিয়ে তুলে আবার সব উত্তর দিয়ে দেওয়া হয়েছে একটু পরে পরে। সাসপেন্স তাই থমকে যাচ্ছিলো। কি ঘটবে পাঠক সহজেই ধরে নিতে পারবেন, এবং বুঝে নেওয়ার জন্য আগে থেকে প্রচুর সূত্র রাখা হয়েছে। অবশ্য লেখক কোনো রহস্য উপন্যাস লিখতেও চাননি, তিনি চেয়েছেন লোভ- লালসা আর পরিণতির গল্প বলতে।
‘অন্দরমহল’ উপন্যাস ভালো লাগার প্রধান কারণ এর পটভূমি। জমিদার বাড়ি, ক্ষমতার লড়াই, আর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের গল্প পড়তে এমনিতেও ভালো লাগে, অন্যরকম একটা জগতে বাস করা যায় পড়ার সময়টা। গঙ্গামহল, প্রমত্তা গঙ্গাবতী নদী, বজরাডুবির চর, বারোহাটির ভূতূড়ে জঙ্গল আর বাগানবাড়ি – সবকিছুই ছিল উত্তেজনাময়।
বড় কলেবরে লেখা উপন্যাসের অনেক চরিত্র, তাদের ব্যাপ্তি শক্তিশালী এবং গভীর। দেবেন্দ্রনারায়ণ উগ্র মেজাজের বুনোঘোড়া, যিনি স্ত্রী রেণুকাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাকে দিয়েই কিশোরী দাসীর সাথে মিলিত হওয়ার শয্যা প্রস্তুত করে পাশে বসিয়ে রাখেন, অথবা নির্মাণকাজ মনমতো না হওয়ার রামচরণ কারিগরের দু’হাত কেটে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার চরিত্রেই আবার সংমিশ্রণ ছিল অপরাধবোধে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া স্নেহশীল জন্মদাতার। বাইজি হেমাঙ্গিনী দেবী, বিভুঁই, হরিহরণ বণিক, রতনকান্তি, সর্বজয়া, দ্বিজেন্দ্র – সব চরিত্রের আলাদা আলাদা গল্প লেখক সুন্দরভাবে বলে গিয়েছেন।
লেখকের ‘নির্বাসন’ পড়েছিলাম এর আগে। সেই তুলনায় এই উপন্যাসের গল্পের গাঁথুনি আর চরিত্রায়ন অনেক বেশি ভালো লেগেছে। লেখক যা কিছু দর্শন এবং স্বরচিত গান ব্যবহার করেছেন তাতে বিরক্তি লাগেনি, বরং গল্পের প্রয়োজনে এসেছে।
প্রকৃতি মানুষের হিসাব তার জীবদ্দশাতেই অনেকটা বুঝিয়ে দেয়, হোক তা পাপের প্রায়শ্চিত্ত বা পূণ্যের প্রতিদান। যে এক জীবনে মানুষ লোভের পিছনে ছুটে বেড়ায়, তাতে শান্তি কি পায়? ‘আমাদের কিছুই নেই, অথচ সবটা সময়জুড়ে ভাবি, এই বুঝি নিঃস্ব হলাম!’ – এই জীবনবোধ নিয়েই পাঠককে ভাবাবে অন্দরমহল উপন্যাসটি