চেষ্টার জিমনেসিয়াম ফিউচারের ক্যালসিয়াম PDf Download
cheshtar gymnasium futurer calcium jhongkar mahbub pdf download – চেষ্টার জিমনেসিয়াম ফিউচারের ক্যালসিয়াম PDf Download ঝংকার মাহবুব
বই | চেষ্টার জিমনেসিয়াম ফিউচারের ক্যালসিয়াম |
লেখকঃ | ঝংকার মাহবুব |
প্রকাশনী | আদর্শ |
ফাইল | পিডিএফ |
১ম প্রকাশ | বইমেলা ২০২১ |
মোট পেজ | 112 পৃষ্ঠা |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
এরই নাম ভালোবাসাঃ আজ সারাদিন বৃষ্টি পড়ছে। অনবরত ঝুমঝুম টুপটুপ শব্দ। ভবনের ভিতরে বসে থেকে এসব কিছুই টের পাওয়া যায় না। জানালার ধারে দীড়ালে কিছুটা শব্দ শোনা যায়। শুধু শব্দ শুনে কিছুই অনুমান করা যায় না। দূরে, বহু দূরে তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছে হয় কিন্তু জানালাটা খোলা যায় না। খুললেই বৃষ্টির ফৌটাগুলো রুমের ভিতর চলে আসে । ভিজিয়ে দেয় বিছানা । ওপাশে আল্পনার রুমে যেতে ইচ্ছে হয় ওর। আল্পনার রুমে বৃষ্টির ছিটে ফৌটাও ঢোকে না এবং জানালা খুলে ইচ্ছেমত বৃষ্টি দেখা যায়। আল্পনা বৃষ্টি তেমন পছন্দ করে না। বৃষ্টির দিনে সে পাতলা কম্বল প্যাচিয়ে শুয়ে থাকে আর শোভনের সাথে প্রেমের কথা বলে। প্রেমের কথা ছেড়ে মাঝে মাঝে চেঁচিয়ে উঠে। মাঝে মাঝে গালিগালাজও করে । শোভন বোধহয় ওপাশ থেকে লাইন কেটে দেয়। তারপর আল্পনা মোবাইলটা মেঝেতে ছুঁড়ে মারে। এভাবে বেশ কয়েকটি মোবাইল ভেঙ্গেছে। মোবাইল ভাঙ্গলে ওর আম্মু এবং আব্বু কিছুই বলে না। একে তো ত্র লেখাপড়া শেষ তারপর সদ্য চাকরি নিয়েছে।
এখন একটা কেন, দশটা মোবাইল কেনার সামর্থ আল্পনার আছে। একটা প্রাইভেট ফার্মে উচ্চ বেতনে,চাকরি করছে। ওর রেজাল্ট ভাল। সে কোথাও কখনো দ্বিতীয় হয়নি। সব সময় সব ক্লাশে প্রথম হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পেয়েছে। ভাল রেজাল্টের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়েই তার চাকরি হয়েছিল। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করবে না। অবশ্য ওর আম্মু-আব্বুরও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই। তার চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় আল্পনার কোন চাকরির ব্যাপারেই আগ্রহ নেই। ওর ইচ্ছে শোভনকে বিয়ে করে একগাদা ছেলেপুলের মা হয়ে পুরোদমে সংসার করবে। বেচারা শোভন পড়েছে বিপাকে । এত মেধাবী একটা মেয়ের সাথে প্রেম করেও বিয়ে করতে পারছে না। পড়ালেখা শেষ করে সেই কবে থেকে চাকরির চেষ্টা করছে। শোভনের রেজাল্ট আল্পনার রেজাল্টের মত নয়।
একমাত্র ইন্টার মেডিয়েট ছাড়া অন্য কোন ক্লাসেই তার প্রথম বিভাগ নেই। বেঁটে কাল রোগা লোকটার সাথে সম্পর্ক করে কোন আফসোস নেই আল্পনার। অথচ এই লোকটার নাম কি করে শোভন হল তাই ভাবতে পারেনা ছোটবোন তুলনা । নামটার গুণে নিশ্চয়ই শৌভনকে পছন্দ করে আল্পনা! বড় বোন আল্পনার চেয়ে দশ বছরের ছোট তুলনা । কিছুদিন হল তুলনা কলেজে ভর্তি হয়েছে। দুই বোনের স্বভাব-চরিত্র এবং চলাফেরার মধ্যে খুব একটা মিল নেই। আল্পনা শান্ত প্রকৃতির আর তুলনা চথ্চল প্রকৃতির । আল্পনা লেখাপড়ায় ভাল ছিল আর তুলনা লেখাপড়ায় খুব একটা ভাল নয়। সাধারণ একটা কলেজে ভর্তি হয়েছে সে। এত কম পয়েন্ট নিয়ে কলেজে ভর্তি হতে পেরেছে তাতেই সে গর্বিত। কলেজে ভর্তি হয়েই এক সমস্যায় জড়িয়ে গেছে।
মশিউর নামের একটা ছেলেকে মনে মনে ভালবেসে ফেলেছে। মশিউর খুব সাদামাটা পরিবারের লোক। ওর বাবা চায়ের দোকানদার আর মা গৃহিণী। ওদের চার ভাইবোনের মধ্যে মশিউরের মাথা ভাল এবং সে*ই একমাত্র কলেজে পড়ে । মশিউরের বড় ভাইফেরিওয়ালা। সে সারাদিন বাড়ি বাড়ি ঘ্ুরে.ফেরি করে বেড়ায় । ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সবার ছোট দুই ভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে এবং খাঁবার দোকানও মাঝে মাঝে দেখাশুনা করে। মশিউরের বড় ভাই হাফিজ উদ্দিন কলেজ গেইটে এসে মশিউরকে খৌজ করছিল। এ সময় তুলনার সাথে দেখা । গাড়ি থেকে নেমে কয়েক কদম হেঁটে গেইট দিয়ে কেবলমাত্র ঢুকছিল তুলনা। অমনি হাফিজ উদ্দিন পিছন থেকে ডাক দিল- এই যে আপু, শোন। “আমাকে বলছেন”! খানিকটা ইতস্ততা করে তুলনা বলল। হ্যা । আমার ছোট ভাই মশিউর এই কলেজে পড়ে। ওকে একটু ডেকে দেয়া যাবে! আমি ওর বড় ভাই। আমার নাম হাফিজ উদ্দিন। ওকে বললেই হবে। আমি তো মশিউরকে চিনি না। আপনি দাড়োয়ানকে বলেন। এসময় মশিউর এসে ভাইয়ের সামনে দীড়াল। কি ব্যাপার ভাইয়া, তোমার তো সেই কখন আসার কথা। এত দেরি করলে কেন! আমি কয়েকবার এসে গেইট থেকে ফিরে গেছি। তোমার মোবাইল বন্ধ কেন?
মোবাইলটা আজ কয়েকদিন ধরে নষ্ট। সারাবার সময় পাই না। নে ধর, টাকা রাখ । দেখিস, সাবধানে রাখিস। মায়ের শরীর এখন কেমন রে? ডাক্তার জর্দা খেতে নিষেধ করেছে তবুও খায়। ভাল হবে কিভাবে! কথা শুনে না বলেই তো অসুখ ছাড়ে না । শুনলাম টুনি না কী এসেছে! হ্যা, একবার ভাবীকে নিয়ে বাসায় যেও। মাকেও দেখে এলে টুনিকেও দেখে এলে। ঠিক আছে যাব। তুই যা, ভিতরে যা। পড়ালেখা ঠিকমত করিস। গেইটের পাশে দীড়িয়ে এতক্ষণ ওদেরকে খেয়াল করছিল আর কথাবার্তা শুনছিল তুলনা। মশিউরকে সে অনেকবার দেখেছে, কথাও হয়েছে দু’য়েকবার। কিন্তু মশিউর যে একজন ফেরিওয়ালার ভাই হতে পারে এটা কখনো মাথায় আসেনি ওর। মশিউর খুব স্মার্ট। পোশাক আশাক এবং চলাফেরাও খুব সুন্দর। তার চেয়েও সুন্দর মশিউরের কথা বলার ধরণ। টাকাটা পকেটে রাখতে রাখতে কলেজের ভিতরের দিকে চলে গেল মশিউর। তুলনা দীড়িয়ে রইল। হীঁড়ি-পাতিলের বাক কীধে নিয়ে হাফিজ উদ্দিন হাটতে লাগল । নাচের ভঙ্গিমায় হাটছে হাফিজ? বী কীধের বাঁক বা হাতে ধরে রেখে ডান হাত ছড়িয়ে দিয়ে নেড়ে নেড়ে হাটছে। হাটার তালে পুরো শরীর দুলে। এটাই বোধহয় বীকওয়ালাদের হাটার ‘ধরণ। ভাবতে ভাবতে ভিতরে যায় তুলনা। মশিউরকে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছে তুলনা । সারা কলেজ তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি। তাই মন খারাপ করে কলেজের বারান্দায় পিলারের গায়ে হেলান দিয়ে দীড়িয়ে রইল। লুবনা আর সাথী এসে তুলনার পাশে দীড়িয়ে লেখাপড়া নিয়ে কথা বলতে চাইল। তুলনাকে অন্যমনস্ক দেখে ওরাও চিন্তিত হয়ে গেল। লুবনা ভয়ে ভয়ে আস্তে শৌধাল- কি রে, মন খারাপ! ‘না। কেন, বলবি কিছু”? স্বাভাবিকভাবে জবাব দেয় তুলনা । না মানে, একাউন্টিং পড়ার জন্য তুই কি জামাল স্যারের ব্যাচে পড়া শুরু করবি? আমরা শুরু করতে চাইছি। স্যারের কাছে দুই মাসের এ্যাডভান্স দিয়ে শুরু করতে হয়। আমরা আজ টাকা জমা দিব। জামাল স্যারের ব্যাচে আমারও পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু আম্মুর বারণ আছে। প্রাইভেট পড়ার-জন্য বাসায় স্যার রেখেছে।
ও…। তোরা ভাই বড় লোক মানুষ। তোদের মত পয়সা তো আর আমাদের নেই। ফালতু কথা বন্ধ কর। মশিউরকে দেখেছিস কোথাও? কোন মশিউর! গাধা মশিউর না কী গাঁদা মশিউর? মানে! এসব কি ধরণের প্রশ্নঃ আমাদের ক্লাসে তো দুইটা মশিউর। যে মশিউর লেখাপড়ার ‘ল’ জানেনা সে হলো গাধা মশিউর আর যে খুব মেধাবী সে হলো গাঁদা মশিউর । অর্থাৎ ফাগুন মশিউর । গীঁদা ফুল দেখতে দারুন লাগে আর আমাদের মশিউরকে দেখতেও দারুন লাগে। তাই ওর নাম দিয়েছি গাদা মশিউর। অন্যকিছু ডাকতে যদি সম্ভব হতো তাহলে তাই ডাকতাম । আমি বোধহয় গাদা মশিউরকেই খুঁজছি । চল, ক্লাসে যাই। মশিউর ক্লাসে নেই। তুলনা মন খারাপ করে বসে আছে। হঠাৎ করে মনটা কেন যে মশিউরের জন্য ব্যাকুল হয়ে গেল তা বুঝতে পারছে না। বাইরে বৃষ্টি। মন খারাপ করেই ক্লাসটা_শেষ করল। ক্লাস শেষ করে বারান্দায় দীড়াতেই বাইরে চোখ গেল। মশিউর/গেইট দিয়ে ঢুকছে। ক্লাস ফাঁকি দেয়ার ছেলে মশিউর নয়। কোথায় গিয়ে যে সময়টা ব্যয় করে এল চিন্তা করে মিলাতে পারছে না তুলনা । বাসায় ফেরার পর চিন্তা যেন আরো বেড়ে গেল। মশিউরের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। ওর কাছে মোবাইল আছে কিন্তু মশিউরের নম্বর নেই। কোনভাবে যদি নম্বরটা যোগাড় করতে পারত তাহলে ফোন করে ওকে চমকে দিত তুলনা । তুলনা। উকি দিয়ে কাউকে দেখতে পায় না। ভিতরে ঢোকার সাহস হয় না। পারমিশন না নিয়ে রুমে ঢুকলে বোন বকা দিয়ে বসে। আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকে দেখে রুম খালি। কান পেতে বাথরুমের দরজার সামনে দীড়াল। ভিতরে কোন শব্দ নেই। দরজা খুলে নিশ্চিত হল আল্পনা বাথরুমেও নেই। সে বারান্দায় গেল। বৃষ্টির পানিতে বারান্দা ভরে. গেছে। জুতো ছেড়ে খালি পায়ে পানির উপর হাটছে। পানি নিয়ে খেলা করা ওর দারুণ পছন্দ। তাই দেরি না করে পানি নিয়ে খেলতে লাগল। সে মনে করেছিল আল্পনার বারান্দায় বৃষ্টির পানি ঢোকে না। আল্পনার রুমের জন্য মনে মনে আফসোস করল। ইস্ এই রুমটা যদি আমার রুম হতো!
চেষ্টার জিমনেসিয়াম ফিউচারের ক্যালসিয়াম ঝংকার মাহবুব ভাইয়ের এ বইটির পিডিএফ ডাউনলোড শীগ্রই দেওয়া হবে। সাথেই থাকুন।
Downloadবই লিংক: click here(rokomari link)