Books
দূরবীন উপন্যাস PDf ও রিভিউ – Durbin Pdf Download
দূরবীন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় PDF Download
Book | দূরবীন |
Author | শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় |
Publisher | আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত) |
ISBN | 8170664365 |
Edition | 18th Printed, 2015 |
Number of Pages | 616 |
Country | ভারত |
format | epub, MOBI, Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড) |
দূরবীন উপন্যাস রিভিউ
খুব ভাব নিয়ে বসেছিলাম সকালে ‘অদ্ভুত প্রেম’ এর পর্ব ত্রিশ লেখার জন্য। ভেবেছিলাম যে করেই হোক আজ অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাব। পরবর্তী পর্বে বা তার পরের পর্বে ইতি টানব। কিন্তু একটা কারনে মেজাজ বিগড়ে পুরো মুডটা নষ্ট হয়ে গেছে।
সাধারণত মন খারাপ হলে একটু বই নাড়াচাড়া করলে বা গাছগুলোর সাথে সময় কাটালে মন ভালো হয়ে যায়। আমি গাছগুলোতে ঠিক মত পানিও দেয়া হয়না। শীতকালীন অনেক গাছ মরে গেছে। এগুলো কাটাই আর কিছু গাছের ঢাল ছাটাই করলাম। না, লেখার মুড এলো না।
বেশ কয়েক মাস আগে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর “দূরবীন” বইটা নিয়ে। পোষ্টে দিয়েছিলাম ২০ বছর পর আবার পরতে যাচ্ছি দেখা যাক কি হয়। না, বইয়ের রিভিউ দিব না। এতো বড় স্পর্ধা আমার নেই। আমি কেবল আমার জীবনের সাথে জড়িত কিছু ঘটনা বলছি।
সাল ২০০০। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। বরাবরই আমার বই পড়ার নেশা। বইয়ের নেশায় ডুবলে আমার আর দুনিয়ার খবর থাকে না। আমার মেয়ে যদি বলে ‘খুদা লেগেছে’ আমি তাকে জবাবে বলি ‘না খেলে হয়না একবেলা?’ এমন বাজে নেশা।
আশেপাশের কোন খবর থাকে না। নাওয়া খাওয়া বা কখন দিন গড়িয়ে রাত হয়ে যায় কিছুর খবর থাকে না। ফলাফল স্বরূপ পরবর্তি দুইদিন মাথা ব্যাথায় চিত হয়ে পরে থাকা। আবারও দুনিয়াদারীর খবর না রেখে!
আমার মায়ের শর্ত ছিল টেস্ট পরীক্ষার পর এক সপ্তাহ যত ইচ্ছে বই পরতে পারব কিন্তু এর পর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন গল্পের বই ছুঁয়ে দেখতে পারব না। পরীক্ষা শেষ হলে তখন আমাকে যে বই চাইব কিনে দিবে। যাই হোক পড়ার প্রেশারে আর গল্পের বইয়ের দিকে চোখ দেয়ার উপায় ছিল না। আর বাসায় ও নতুন কোন বই ছিল না। অবশ্য অন্য সময় হলে নতুন বই না পেলে আমি পুরোনোগুলো পড়া শুরু করে দিতাম। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম তাই আর এমনটা করিনি।
যথারীতি পরীক্ষা শেষ হবার পর গেলাম বই কিনতে। আমি তো হাবুডুবু খাচ্ছি কোনটা রেখে কোনটা নিব। এখানে বলে নেই আমি সেই পিচ্চি বেলা থেকেই সেন্ট্রাল প্লাজার “বুকস” আর “বুক ল্যান্ড” এই দুই দোকান থেকে বই নিতাম। বুকস এর দাদা খুব আদর করতেন নাতনী বলে সম্মোদন করতেন। আমার আম্মুকে সবসময় মা বলে ডাকতেন। তো সেই দাদাই সাজেস্ট করলেন ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নেয়ার জন্য। আমার আম্মু একটু আপত্তি করছিলেন বড়দের বই বলে! পরে দাদা বললেন ‘এটা দিয়েই শুরু করুক”। বলে নেই এর আগে উপন্যাস পড়া হয়নি। তিন গোয়েন্দা বা কিশোর গল্প উপন্যাস পড়েছিলাম। এক বন্ধুর কাছে থেকে শরৎ চন্দ্রের ‘চরিত্রহীন’ নিয়ে লুকিয়ে পড়েছিলাম।
আমার জন্য লুকিয়ে বই পড়া কোন ব্যাপার ছিল না। কারন আমি ছোটবেলা থেকেই রুমের দরজা লাগিয়ে ঘুমাতাম। ফজরের সময় উঠে জানালার পাশে বসে সেই আলোতে খুব সহজেই পড়তে পারতাম। যাই হোক পরবর্তীতে এক সময় কি করে যেন আমার মায়ের হাতে সে বই পরে আর প্রচুর বকা দেন। তারপর আর উপন্যাস পড়া হয়নি।
রবীন্দ্র রচনাবলী আমার এক মাসেই শেষ। কারন এসএসসির পর সেই তিন মাস আমার কিছু করার নেই। অনেকের কলেজ ভর্তির যেই টেনশন ছিল আমার সেটা ছিল না। কারন আমি আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে্র কলেজেই ভর্তি হব। তাই সেই মাস খালার বাসায় বেড়ানো, বই পড়া আর হুজুরের কাছে পড়া (সহীহ ভাবে আরবী পড়ার জন্য আব্বু হুজুরকে বলেছিলেন পড়াতে) ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না। রাত জেগে বই পড়লে আম্মু বকা দিত তাই অপেক্ষায় থাকতাম আম্মুর রুমের আলো নেভার অপেক্ষায়। কয়দিন পরই আবার ধরা খেলাম, সাথে বকাও। পরে ভেবে দেখলাম আমার পুরনো কৌশলই ভালো। ভোরের আলো ফুটতেই জানালার পাশে বসে পড়া শুরু করে দিতাম। আম্মুও খুশী আমিও।
এক মাস পর বইটা শেষ করে তো আমার আবার দম বন্ধ হবার অবস্থা। সারাদিন কি করি কি করি। আম্মু বিরক্ত হয়ে আবার নিয়ে গেলেন বই কিনে দিতে। সেদিন দোকানে দাদা ছিলেন না। ওনার কর্মচারী ছেলেটি আমাকে ‘দূরবীন’ দিয়ে বলে এইটা নিয়ে যান। আম্মু বইটা কেমন জিজ্ঞেস করতেই বলল ‘এখনই বয়স এই বই পড়ার’।
আহা এই যেন এক অন্য দুনিয়া! ধ্রুব ধ্রুব ধ্রুব!!! চরিত্রের প্রেমে এমন বাজে ভাবে পরলাম কি বলব। আম্মুর সাথে বাইরে গেলেও আমার মন পরে থাকত বাসায় বইয়ের পাতায়। এরপর কি হবে? এই চিন্তায় থাকতাম সারাক্ষণ। বইটি দুইবার পড়েছি। আবার পরবর্তীতে কেবল ধ্রুবর পার্টগুলো পড়েছি দুইবার।
ফলাফল স্বরূপ আমি মানুষের মাঝে ধ্রুবকে খুঁজে বেড়াতে লাগলাম। অনেক বন্ধুর সাথে কথা বলার পর জানতে পারলাম তাদেরও একই অবস্থা। আসলে কি আছে এই ধ্রুবর মাঝে? ধ্রুবর বর্নিত রূপের মোহ? না ধ্রুবর কেয়ারলেস ভাব? কি সেই জিনিষ? যা সকলের মাথা নষ্ট করে দেয়।
কলেজের দুই বছর তেমন একটা গল্পের বই পড়ার সুযোগ পাইনি। একেতো সময় কম, তার উপর রেজাল্টের ধারাবাহিকতা যদি বজায় না থাকে তাহলে মান সম্মান সব শেষ। তাই আর সেই ধ্রুবকে নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। ভার্সিটি লাইফে অনেকটা ইচ্ছেকৃত ভাবেই পড়িনি। কেন জানি না। হয়তো ভয় পেয়েছিলাম!
কিন্তু এই ধ্রুবকে আমার জীবন থেকে কেন যেন সরাতে পারিনি। প্রায় ভাবতাম কি ছিল সেই চরিত্রে, কেন সবাই এমন ফীল করে? এরপর অনেকটা ইচ্ছেকৃত ভাবেই গল্পের বই পড়া কমিয়ে দিয়েছিলাম। প্রথমত গল্পে ডুবে যেয়ে সব ভুলে যাওয়া। দ্বিতীয়ত খুব বাজে মাইগ্রেন পেইনের কারনে ডাক্তার আমাকে ছোট ছাপার অক্ষরের যে কোন কিছু পড়তে নিষেধ করেছিলেন। সেই মুহুর্তে আমার বেসিক পড়াশুনা নিয়েই টানাটানি, গল্পের বইয়ের তো আর প্রশ্নই আসে না।
এরপর জীবনের নিত্য নতুন অধ্যায়ের সাথে খাপখাওয়াতে নিজেকেই ভুলতে বসেছিলাম, সেখানে গল্পের বইয়ের স্থান কোথায়? যাই হোক রচনা লিখে ফেললাম। কেন জানিনা আমি ছোট করে কিছু মনে হয় লিখতে পারি না। নাকি লিখতে চাইনা কে জানে। তবে আমার যেটা মনে হয় একটু পটভূমিতে না গেলে কাহিনী পূর্নতা পায় না।
গত বছর লক ডাউনে হঠাৎ জীবন যেন থমকে গিয়েছিল। যে আমি প্রায় দুপুরে খাবার সময়টুকু পেতাম না, সেই আমি টানা ত্রিশদিন বা তারচেয়ে বেশী সময় ধরে ঘরবন্দী আছি! টানা এক সপ্তাহ বাসা থেকে বের না হলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। সেখানে এতদিন বাইরের চেহারা দেখিনি প্রথমে বিশ্বাস হত না। প্রথম কয়দিন কাটালাম সিনেমা দেখে, টুকটাক DIY (do it yourself) আর গাছ গুলোকে একটু বিশেষ খাতির যত্ন করে।
এরপর হঠাৎ একদিন মাথায় এলো সেই ২০০০ আর এখন ২০২০। বিশ বছর! কমতো নয়। আবার ‘দুরবীন’ নিয়ে বসি। দেখা যাক বিশ বছর পর আমার উপর কি প্রভাব ফেলে। উত্তেজনায় ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। প্রথম দুইদিন সেই আগের মত নেশায় ধরল। মনেই হচ্ছিল না আমি পঞ্চম বারের মত পড়ছি বইটা। তবে এবার আর কেন জানি ধ্রুবর প্রতি সেই ভালোলাগায় একটু ঘাটতি পরছিল। আগের সেই ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
যেভাবে এগুচ্ছিলাম ভেবেছিলাম সপ্তাহ খানেকের মাঝে বইটা পরে শেষ করে এরপর বাকি স্ট্যাটাস দিব। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। আবার সেই বিশ্রী মাথা ব্যাথায় সপ্তাহ খানেক কুপোকাত। একটু ভালো লাগতেই আবার বই নিয়ে বসলাম দেখি একই অবস্থা। তখন সিদ্ধান্ত নেই কৃষ্ণকান্তর পার্ট বাদ দিয়ে কেবল ধ্রুব আর রেমির পার্টগুলো পড়ব। আমার আসলে কৃষ্ণকান্তর পার্টগুলো পড়ার তখন প্রয়োজন ছিল না।
যাই হোক বিশ বছর অনেক লম্বা একটা সময়। বছর না ঘুরতেই মানুষের চিন্তাধারা বদলে যায় আর এতো লম্বা সময়ে বদলাবে না সেটা তো হবার হয়। আসলে ঠিক বদলানোও বলব না। সেই সময়টা ছিল টিনএইজ। স্রোতের বিপরীতে যাওয়া, বা রঙিন চশমার মাঝ দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখা, খুব বেশী কোন কিছু বিচার বিশ্লেষন না করাটাই হল সেই বয়সের প্রকৃতি। সর্বোপরি টিনএইজে আসলে চিন্তাধারাটা তেমন পরিণত হয়না বা পরিপক্কতা পায়না। তাইতো স্রোতের বিপরীতে যাওয়া তাদের নেচার। আর অনেকেই সেই সময় মারাত্মক ভুলগুলো করে বসে।
এখন আসি বিশ বছর পর আমার অনুভূতিতে। আমি শুরুতেই বলেছি আমি কোন বুক রিভিউ দিচ্ছি না। আমি কেবল আমার অনুভূতির প্রকাশ করছি তাও সেটা কেবল ধ্রুবকে নিয়ে। এবার উপন্যাসটি পরে আমার যা মনে হয়েছে ধ্রুব চরিত্রটি ইরেসপনসিবল একটা ছেলের চরিত্র। সে তার বাবার উপর জিদ করে তার নিজে জীবন নিয়ে খেলা করছে। সে রেমিকে পছন্দ করে কিন্তু বাবার পছন্দ করে আনা মেয়ের কাছের নিজের ভাললাগা বা ভালোবাসার প্রকাশ করতে সে নারাজ। এখানে হয়ত তার ইগো কাজ করছে। বাবার পছন্দকে স্বীকৃতি দিলে বাবা জিতে যাবে এমন কিছু একটা ভেবে সে রেমিকে এড়িয়ে চলে।
এখন কথা হল আসলে ভালোবাস কি চায়? কাউকে ভালোবাসলে মুখে যেমন বলতে আবার কাজে কর্মেও তার বহিঃপ্রকাশ ফুটিয়ে তুলতে হয়। কেবল মুখে বলে গেলাম ভালবাসি কিন্তু তার প্রতি কোন দায়িত্ব পালন করলাম না সেটা যেমন সমুচিন নয় আবার মুখে না বলে কেবল দায়িত্ব পালন করে যাওয়াটাও সমুচিন নয়।
ভালোবাসলে সেটা মুখে বলতে হয়, কাজে কর্মে বুঝিয়ে দিতে হয়। ভালোবাসার মানুষের পছন্দ অপছন্দের খেয়াল করতে হয়। তানাহলে ভালোবাসা একসময় মরে যায়। একটা পর্যায়ে গিয়ে ফাঁসির ফান্দার মতো মনে হবে সম্পর্ককে। ভালোবাসাকে মনে হবে প্রহসন। আবার খুব বেশী প্রাগলভ্যও সম্পর্ককে হালকা করে দেয়। তাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব যত্নবান হতে হয়। কেননা সম্পর্ক অনেকটা স্বচ্ছ কাঁচের মতো। একবার যদি ভেঙ্গে যায় হাজারো চেষ্টায় জোড়া লাগালেও ফাটলের দাগগুলো কিন্তু দৃশ্যমান থাকে। সেটা ঢাকা যায় না।
যাই হোক আমি যদি আমার জীবনের এই প্রান্তে এসে ‘দুরবীন’ উপন্যাসটি পড়তাম তাহলে কখনই ধ্রুবর প্রেমে পরতাম না। আমার খুব ইচ্ছে ছিল আমার ভার্সিটি লাইফে এই গল্পটা একবার পড়ার। কিন্তু কেন যেন সুযোগ হয়ে উঠেনি। তাই তখন কি অনুভূতি হত সেটা আর বলতে পারছি না।
আমার খুব ইচ্ছে আমার মেয়ের টিনএইজে একবার, তারপর মধ্য বিশে একবার এবং মধ্য তিরিশে একবার বইটি তাকে পড়তে দিব। আর কি অনুভূতি সেটা জানতে চাইব।
লেখাটি ২০২০তে দেয়ার ইচ্ছে ছিল বিশ বছর আগে পরের ব্যবধান তুলে ধরার জন্য। কিন্তু নানা অজুহাতে হয়ে উঠেনি। একুশ পেরিয়ে আজ দিলাম। বইয়ের ছবিটি সংযুক্ত করলাম। দীর্ঘ একুশ বছর ধরে বইটি আমার কাছে আছে। অনেকবার বাসা বদল হয়েছে কিন্তু একটু আঁচ লাগতে দেইনি। এটাও কি ভালবাসা?