Books

মাইন্ড ওয়ারস ম্যারি ডি. জনস Pdf Download (বই)

হ্যালো বন্ধুরা, তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম মাইন্ড ওয়ারস ম্যারি ডি. জনস Pdf free Download latest version link। এছাড়াও, বরাবরের মত পাঠকপ্রিয় বন্ধুদের রিকোয়েস্ট উপেক্ষা না করে মাইন্ড ওয়ারস পিডিএফ ডাউনলোড লিংক আপডেট করার সর্বাত্বক চেষ্টা করি।  minds wars pdf bangla-

লেখক ম্যারি ডি. জনস এর মাইন্ড ওয়ারস বইয়ের বিবরণঃ

বইয়ের নাম (book): মাইন্ড ওয়ারস
লেখকের নাম(Author) ম্যারি ডি. জনস
প্রকাশনী(Publisher) এবং ক্যাটাগরি(বা ধরণ)  বাংলা সাহিত্য
ফাইল ফরম্যাট (file format): epub bangla, MOBI Bangla, kindle bangla Ebook, Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড)google drive full
১ম প্রকাশ (1st Published Date) 4th Print, 2018 সাল
Number of Pages ১১৫ পৃষ্ঠা
দেশ and ভাষা বাংলাদেশ
ফাইল সাইজ: এম্বি(মেগাবাইট)

 

 মাইন্ড ওয়ারস ম্যারি ডি. জনস বই রিভিউ (Pdf Book Review):

রূঢ় বাস্তব অথবা কাল্পনিক জগতে পুলকিত হওয়ার আগে ও লেখক ম্যারি ডি. জনস এর মাইন্ড ওয়ারস PDf google drive link(লিংক) দেওয়ার আগে আড্ডার মাধ্যমে কিছু কথা বলে নিই। আমাদের বই পড়ুয়াদের অনেকের মধ্য থেকে নেওয়া রিভিউ থেকে বলতে পারিঃ কারো বন্ধু থেকে, কারো কারো ধার করে, কারো কিনে, কারো অনলাইনে পিডিএফ পড়ে – এভাবে নানা পন্থায় বই পড়া যাত্রা আরম্ভ হয় যেখানে মাইন্ড ওয়ারস বইটি দিয়েও অনেকের বই পড়া সূচনা হতে পারে ।

বিশেষ করে কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিদেশী অনুবাদ বই দিয়ে এ যাত্রা শুরু, আর কারো বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্প দিয়ে বই পড়া শুরু হয়। তো এক্ষেত্রে যদি মাইন্ড ওয়ারস বইটি দিয়ে আপনার ১ম সাহিত্য প্রবেশ আরম্ভ হয় তবে বলব যে, খুব মনোযোগ দিয়ে বইটি পড়ুন। ছট করে এক ঘন্টার মধ্যে লেখক ম্যারি ডি. জনস এর বইটি শেষ না করে আস্তে আস্তে পড়ুন যাতে করে সাহিত্যরস আস্বাদন করতে পারেন। জীবনে অনেক দেশী বিদেশি নানা সংস্করণ এর গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ বই পড়ে নিজের জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধির পাশাপাশি অনুশীলন করার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে মাইন্ড ওয়ারস বইটিও সহায়ক হবে বলে মনে করি। একটুখানি পড়াতেই বইটি অসাধারন লেগেছে আমার কাছে।

প্রিয় লেখক ম্যারি ডি. জনস এর লেখা মাইন্ড ওয়ারস বইটি পাঠকগণ স্বাদরে গ্রহণ করেছেন বিধায় বলতে পারি বইটি সাহিত্য জগতে বিরাট ভুমিকা পালন করবে। অবসর সময়ে মাইন্ড ওয়ারস বইটির পিডিএফ, ইপাব, মোবি ফাইল পড়ে নতুন উদ্যোমে নিজেকে আবিষ্কার করার মাধ্যমে নতুন রূপে চলতে সাহায্য করবে আশা করা যায়। , জ্ঞানের সাথেই থাকুন।


আরও পড়ুনঃ

‘হারাম নগর’
শ্রী গিরগিটি লাল কলমধারী
বড়ো ইস্কুলের ঠিক পাশেই ভাঙা কাঁচের টুকরো গোঁজা মানুষ দেড়েক মতো উঁচু পাঁচিলটা টপকালেই চওড়া পিচ রাস্তা।আর তার ঠিক বিপরীত ধারেই সরুখালের ওপর পরপর দাঁড়িয়ে থাকা ছোট বড়ো নানান ধরনের খান পনেরো দোকান।রাধিকাপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির আপিস ঘরটা বাজারের একেবারে সর্বশেষ প্রান্তে আর ফরেন লিকারের দোকানটা তারও পাঁচশো মিটার মতো দূরে।কাঁটাতার ঘেরা এই বিদেশি জল দোকানের ঠিক সামনেই দুলালী মাসির বারোভাজা,ডিম সেদ্ধ,ঝালমটর ইত্যাদি মুখ ছাড়ানো সুরাচাটের গুমটি।কর্মে যন্ত্রণা,সাংসারিক যন্ত্রণার মতো নানাবিধ জীবন যন্ত্রণা হতে মূলত মস্তিষ্ক সজীব এবং তাতে পুষ্টি প্রদানের উদ্দেশ্যে শীত,গ্রীষ্ম,বর্ষা সমস্ত মরসুমের প্রত্যেক দিবসেই এই রাস্তার অর্ধেক অংশ জুড়ে বসে তিন চার খানা ব্রিজ ফিনিসের আসর,ডাবু জুয়ার আসর।এলাকার বড়ো ঠিকাদার শ্রীযুক্ত ভবেন সৎপতি তাঁর একমাত্র ধন শ্রীমান রামকৃষ্ণ সৎপতি ওরফে ডোনাল মাষ্টার,কোথা থেকে যেনো হন্তদন্ত হয়ে ডাবু জুয়ার কাছে এসে ভিড় জনতার ফোকর দিয়ে নিজের বাম হাতে থাকা দলা পাকানো আকাশি রঙা একটা পঞ্চাশ টাকার ভেতরে পাঁচশোর নোট গোঁজা পুরিয়াটা ফেলল ঝান্ডি মুন্ডির ওপর।
চারকোনা পিচবোর্ডের বাকি ছবি গুলোর ওপরেও টাকা পড়ছে অবিশ্যি।ওদিকে হামানদিস্তার মতো চামড়ার তৈরী পাত্রটার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বড়ো সাইজের লুডোর মতো চৌক গুটি গুলো নাড়িয়েই চলেছে ডাবু জুয়ার লোকটা।বোধহয় অপেক্ষা করছে আরও কিছু টাকা যদি পড়ে।ভিড়ের মধ্যে উৎসাহী এক খেলোয়াড় অনেক ক্ষন হয়ে গেলো আর ধৈর্য্য রাখতে না পেরে বললে “ও কাকা ! এবার ডাবু লউটাও ত”।ততক্ষণে ডাবুকাকার এসিস্টেন্ট ধূনোর গন্ধওয়ালা একগোছা ধূপ জ্বালিয়ে মাটিতে পুঁতে ওস্তাদের মুখে নিভে যাওয়া পঁদি বিড়িটায় আরও একবার শেষবারের মতো দেশলাই কাঠির আগুনটুকু দিয়ে মাদারির মতো গলা উঁচু করে করকরিয়ে বললে “মা মনসার নাম লিয়ে সাহস করে উলটাওত গুরু”।তারপর দুবার পকপক করে মুখের বিড়িখানা টেনে ঢাপুস করে ডাবুটা উলটে চেপে দিলে কাকা।সামনের সবকটা জনতার মুখমন্ডলের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে ডাবুটা তুলতেই ভেতরের তিনখানা গুটির অবস্থানে নিজের পরিপূর্ণ হার দেখে,সটান দুলালী মাসির দোকানের সামনে এসে ঘুমসিতে ঝোলানো গ্যাস মেচিশটায় একখানা ছোট গোল্ড ফ্লেক ধরিয়ে সুখটান দিতে দিতে,খাড়খানা রাস্তার ওদিকে ঘোরাতেই ডোনাল মাষ্টারের লক্ষ্য পড়লো রামু নাপিতের সেলুন দোকানের দিকে, “আরে!,এ শালা তো গুজেন ঠাকুর মনে হচ্ছে”।তারপর দোকানের সামনে এসে দেখে যে গুনধর গোস্বামী ওরফে এলাকায় বহুল চর্চিত ইত্যাদি,গুজি,গুজেন,গজাঠাকুর দাঁড়ি কামানো শেষে মুখে ফটকিরির ম্যাসাজ নিচ্ছে।
“আরে বামুন দাদু যে ? তোমাকেই তো খুঁজছিলাম গো”।
গুজেন ঠাকুর তার সহজাত প্রবৃত্তি হেতু চেয়ারের পেছনে সরু মাথাদানিতে হেলান দিয়ে আয়নার সামনে নিজের চকচকে ভুঁড়ির ওপর বেশ বড়ো একটা চুল গজিয়েছে সেটা লক্ষ্য করতে করতেই ষাটোর্দ্ধ টাঁকলু বিন্দু দারা সিং এর মতো মুখমণ্ডল,বেঁটে খাটো চেহারায় হুনুম্যানের মতো দাঁত খিঁচিয়ে খিঁচিয়ে বললে ‘কেনোরে পেটশুলা,আমাকে খুঁজছিস কেনো ? তোর রান্ডুয়া বাপের আবার বিয়া দিতে হবে নাকি বে ?
ডোনাল মাষ্টার প্যাকেট থেকে একটা গুটখা মশলা বের করে ঠাকুর মশাই এর সামনে বড়ো আয়নার নিচে জোড়া লাগা লম্বা সরু ক্যাস ড্রয়ারের ওপরটাতে রেখে দিয়ে বললে “তোমার রাধেশ্যাম ভাই ডেকে পাঠিয়েছে গো,বামুন মোচ্ছব করাবে মনে হচ্ছে।
কথাটা শুনে মুহূর্তের মধ্যেই ঠাকুরমশাই খাটো গলায় অত্যন্ত স্নেহকন্ঠে বললে ‘আচ্ছা আচ্ছা ভাই ডেকে পাঠিয়েছে,অবশ্যই যাবো,অবশ্যই যাবো।আরে সেই তো পালনহার নিমাই,সেই তো জগৎঈশ্বর।শুধু কর্মজোরেই আজ সে এমন জায়গায় রয়েছে বুঝেছিস রামু? ওদিকে রামু কোন কথা বলেনা,সে খালি ঠাকুরের মাথায় কাঁচি আঙুলের ম্যাসেজ দিয়েই চলেছে।
‘কাল একেবারে সকাল সকাল দেখা করে আসবে তাহলে বামুন দাদু,আমি এখন চল্লুম গো
..
হ্যাঁরে হ্যাঁ যাবো যাবো ‘রাধেশ্যাম সুন্দর প্রভু তুমি পার করি দও মোরে,ওগো নদের নিমাইচাঁদ’,গুনগুন করতে করতেই আগামীকালের কর্মসূচি মাথায় একবারে ছেপে বসিয়ে নিলে সে।
পরদিন খুব ভোর ভোর উঠে গুজেন বামুন স্নান আহ্নিক সেরে শ্বেতশুভ্র লুঙ্গির মতো জড়ানো ধুতি,ছাই রঙা দামি পাকাসুতোয় তৈরী একখানা পুরনো পাঞ্জাবি পরে,বড়ো চাতাল পুকুরের ধার বরাবর শাল জঙ্গল পাশে লাল মুরামের ওপর দিয়ে খসখস করে চামড়ার চটিখানা পায়ে দিয়ে মুখে মাধব নাম যপ করতে করতে চলে যাচ্ছে…………রাধেশ্যাম ভাই এর সাথে তার সম্পর্ক কি আর আজকের।সেই কবে বড়ো ইস্কুলে পড়ার সময় হস্টেলে রাধেশ্যাম,ভবেন আর সে এই তিনমূর্তিতে মিলে একসাথে কতো হুল্লোড় কতো শয়তানি করেছে তারা।যদিও বা রাধেশ্যাম বয়সে এক ক্লাসের ছোট কিন্তু গুজেন ঠাকুর অত্যন্ত স্নেহ করতেন তাকে সেই ততকাল থেকেই।অমন মিষ্টতির্যক বোল আহাঃ আহাঃ আহাঃ। ইস্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে যখন তাৎক্ষনিক বক্তব্য রাখতো সে,মনে হতো যেনো স্বয়ং ভগৎ সিং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এসেম্বলিতে বিরোধ প্রদর্শন করে চলেছে।আর তার ক্ষুরধার বুদ্ধি…………।একাদশ ক্লাসে পড়ার সময় এক আশ্বিনের সন্ধ্যায় হস্টেলের ছাদে যখন প্রথমবার চারমিনারের তিনটে সুখটান তার মস্তিষ্ককে অত্যন্ত তৃপ্ত করেছিলো,ঠিক সেই ক্ষন হতেই ধূমপানের প্রতি আসক্তি,চারমিনারের প্রতি তার ভালোবাসা আজও বিদ্যমান রয়ে গেছে।তৎকালিন সময়ে এই রাধিকাপুর এলাকা এবং তার আশেপাশের বিস্তীর্ণ গ্রাম গঞ্জের একমাত্র ব্যক্তিব্যাঙ্ক,সুদকারবারী,জমি বেচা কেনার দলাল কিংবা এজেন্ট একটাই নাম হলেন শ্রী নবকুঞ্জলাল ভূপতি, রাধেশ্যাম এর পূজ্যনীয় পিতা।তিনি ছেলেকে বলতেন ‘লক্ষী দেবী বড়োই চঞ্চলা,তাঁকে বেঁধে যদি নাই রাখো সে তোমায় ফাঁকে ফেলে চলে যাবে আর তুমি ঘুণাক্ষরেও টের পাবে না।তাই খাতা,কলম অতিরিক্ত মাসিক দুটি টাকা পাবে ছাত্রাবাসে জীবননির্বাহ হেতু”।অগত্যা প্রতিমাসে ভুকনিবারন হেতু একবস্তা করে চাল আর হাতখরচ বাবদ দুটি করে টাকা মাথায় চাপিয়ে সোমবারের এক সকালে নদীপাড় ধরে হস্টেলের উদ্দেশ্যে যেতে যেতে তার মাথায় এলো যে মাত্র এই দুটি টাকা ? এই দিয়ে কিভাবে সারা মাস তার চারমিনার প্রেমিকার সাথে দেখা হবে,এই সমস্ত কিছু ভাবতে ভাবতে দূর থেকেই পথের ধারে হাট বসেছে লক্ষ্য পড়তেই,অন্তর আনন্দে তার পেটটা কেমন যেনো কাঁটা দিয়ে উঠলে।রাস্তা পেয়ে গেছে সে,চারমিনার আর তাকে কেউ আলাদা করে তো দেখাক,কতো বড়ো হিম্মত আছে কার।তড়িঘড়ি পা চালিয়ে হাটের মধ্যে ঢুকে সোজা একটি চালদোকানের সামনে এসে মাথার বস্তাখানা নামিয়ে বললে “ও কাকা চালের দর কতো করে ? আর খুদ,খুদের দাম ? তারপর আরকি,প্রতিমাসে বাড়ি থেকে আনা সুন্দরছাঁটা চালের অর্ধেক বিক্রি হতো হাটে আর কম দামে খুদ কিনে সঠিক পরিমাণে পরিপূর্ণ হতো বস্তা।তারপর বানিজ্য করে যা পয়সা বাঁচতো তাতে হস্টেলের ছাদে প্রতি সন্ধ্যায় গুজেনদা,ভবেন আর সে আয়েস করে চারমিনারের ধোঁয়ায় গুরুমস্তিস্ক ভিজিয়ে নিতো তিনজনে মিলে…………
এক আষাঢ়ের দুপুরে গুজেনের পিতা পূজনীয় অশ্বিনীঠাকুরের জলডুবি হয়ে আকস্মিক তিরোধান প্রাপ্তি ঘটে।অগত্যা ইস্কুলের পর্ব চুকিয়ে মাত্র সাড়ে সতেরো বছর বয়সেই পিতার যোজমানি রক্ষার কর্মে লিপ্ত হয় গুজেন।এদিকে ইস্কুল শেষে রাধেশ্যাম ও ভবেন গিয়ে উঠলে বিদ্যাসাগর কলজে।রাজনীতির মৃদুমন্দ দক্ষিণা বাতাস এখানেই প্রথম অনুভব করে সে।কিন্তু সমস্যা হলো গিয়ে,সত্তাধারী দলের নিতি আদর্শ তাকে বিশেষ প্রভাবিত করতে না পারায়,এক সকালে রাধেশ্যাম সটান গিয়ে হাজির হয় গুজেনঠাকুরের বাড়িতে …. “গুজেনদা ঘরে আছু নাকি?
চেনা গলা বুঝতে পেরেই গুজেন হাসিমুখে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির বাইরে এসে বললে “আরে!ঠাকুরপো যে,কি খবর এতো সকালে ? আয় ভেতরে আয়,বলেই হাঁক দিলে মাগো!রাধেশ্যাম আসছে একটু চা দাও”।
মাটির দেওয়ালে বহুবিধ দেবদেবীর ছবি ঝোলানো ছোট্ট একখানা ঘরের মধ্যে গিয়ে চৌকির ওপর বাবু হয়ে বসলে দুজন।“ বল কি সমস্যা ভাই?
“তেমন কিছু না,তুই তো ভূতূনাথ এম এল এর ঘরে পুজো করতে যাস তাই না”?
“হ্যাঁ….কিন্তু কেনো বলতো ?
“পরে বলবো সব,আগে একদিন মুলাকাত তো করা অ্যায়ার”।
“সে না হয় করানো যাবে,তারপর একটু চিন্তা করে বললে “পরশু দিন হরির জন্মদিবস আছে ওদের ঘরে,সাথে আবার রোববার।তুই একটা কাজ কর ওই দিন আমার সাথে চল ভাগ্য সাথ দিলে জরুর মুলাকাত হবে”।
ডান হাতে বাঁধা কালো চামড়ার ঘড়িটার ওপর একবার চোখ পড়লো,সোয়া সাতটা বাজে।লাল মুরাম ছাড়িয়ে পিচবাঁধের ওপর পঞ্চাশ গজ মতো হাঁটার পর রাস্তাপাশেই বামহাতি বিঘাছয়েক জমির ওপর গড়ে ওঠা রাধেশ্যাম ভাই এর দুইমানুষ মতো উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত রাজদূর্গের লৌহ রাজফটকের সামনে গুজেনঠাকুর আসতেই,রক্ষী দরজা খুলে দিলে।প্রধান ফটক থেকে একশো পা মতো কংক্রিট বাঁধানো রাস্তার ওপর দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে বামপাশে পেল্লাই একখানা তিনতলা সাদা রঙের প্রাসাদ,আবার তারও কুড়ি পা মতো হেঁটে গেলে ডানহাতে দুই তলা বিশিষ্ট ছাই রঙা আরেকখানা বাঙলো। তার ঠিক পেছনে একটা মস্ত বড়ো দিঘিপুকুর আর ওইপাড়ে পরপর সেগুন,শালের জঙ্গল।পুরোটাই অবিশ্যি কংক্রিটের প্রাচীর ঘেরা।ফটক পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গুজেন ঠাকুর প্রত্যেক বারের ন্যায় এবারও অত্যন্ত খুশি হয়,তার প্রিয়সখা রাধেশ্যামভাই এর আয় উন্নতিতে গড়া এই সাম্রাজ্য দর্শন করে।সেই হরিপুজোর দিন রাধেশ্যাম তারই হাত ধরে ভূতনাথ সমাদ্দারের বাড়িতে গিয়েছিলো আর তারপর থেকেই কেমন তরতর করে কপালটা খুলেছে তার।রাধেশ্যাম এর উন্নতিতে মোটেও হিংসে করে না সে,যার যেমন কর্মজোর সে তেমনই ফললাভ করবে তাইনা? আর তাছাড়া অমন উন্নতির শিখরে পৌঁছেও রাধেশ্যামভাই ভুলে তো যায়নি তাকে।
“আজ্ঞে যোজমান,এ হলো আমার পরমবন্ধু শ্রীমান রাধেশ্যাম,আপনার সাথে একটু কথা বলতে চায়”।উঁচু অট্টালিকাখানা ডাইনে ছাড়িয়ে চারিপাশ বাঁধানো ছোট্ট কৃত্রিম পদ্মপুকুরের একেবারে পাশে ঝাঁকড়া সবেদা গাছটার ঠিক নিচে আরমকেদারায় মুদ্রিত নয়নে শায়িত হৃষ্টপুষ্ট চুয়াড় দেহখানা।সাদাচেকের লুঙ্গির ওপর বৃহৎ চকচকে ভুঁড়িতে ওল্টানো মনুসংহিতাখানা শ্বাসপ্রশ্বাসের গতিতে একবার উঠছে একবার নামছে।ঠাকুরমশাই এর গলা শুনে অর্ধেক অবস্থায় বিপাসনা ভঙ্গ করে ঢুলু ঢুলু চোখে সামনে দুই যুবকের ওপর শোন্য দৃষ্টি রেখে কেদারা হাতলের ওপর প্রসারিত দুই হাতের আঙ্গুলগুলি ঈষৎ নাড়িয়ে বসতে আজ্ঞা দিলেন।
“তুমি তাহলে কথা বলো ভাই,আমি পুজোর জোগাড়ে যাই’, বলেই সামনে একখানা পেন্নাম ঠুঁকে গুজেন চলে গেলে।
“কি বলবো কি বলবো ভাবতে ভাবতেই “আজ্ঞে আমার নাম শ্রী রাধেশ্যাম ভূপতি নিবাস রাধিকাপুর।বিদ্যাসাগর কলেজে রাজনীতি বিষয়ে বি.এ প্রথমবর্ষে পড়াশোনা করছি আপাতত।আপনি হয়তো আমার বাবাকে চিনবেন শ্রীনবকুঞ্জলাল ভূপতি”।
“বিলক্ষণ চিনি,তারপর বলো”
“আসলে আমি আপনার দলে কাজ করতে চাই”
প্রস্তাবটি শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর গলায় জমে থাকা কফের দলাটা দুবার হঁহঁ শব্দে ভেতরে টেনে নিয়ে কাটাকাটা গুরু গম্ভীর সুরে ভূতনাথ সমাদ্দার বললেন “কিন্তু ব্যাটা,তুমি নিশ্চয়ই জানো যে আমি যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত সেটি বর্তমানে ক্ষমতায় নেই।তুমি একজন যুবক বালক,আর এই মুহূর্তে সত্তাধারী দলে যোগদান করলে তোমার ভবিষ্যতউন্নতি দ্রুত সম্ভব”।
“দল ক্ষমতায় নেই ঠিকই কিন্তু আপনি তো পাঁচবার বিধায়ক হয়েছেন।এই এলাকায় কারুর হিম্মত নেই যে আপনাকে হারায়”।এক নিশ্বাসে নির্ভীক ভঙ্গিমায় অমন দৃপ্তকন্ঠের উত্তর শুনে ভূতনাথ সমাদ্দারের পূর্ণপাকা চাঁড়া গোঁফটার নিচে খানিক মৃদু হাসি ফুটে উঠলে।তারপর একটু সহজ হয়ে বললেন “বেশ,তবে তোমায় কিছু কথা বলছি শোন।এই স্বাধীনপরাধীন মানুষ জগতে তুমি একজন সম্পূর্ণ স্বকীয়স্বাধীন ব্যাক্তিরূপে জন্মেছ,আপাতত তোমার চোখের মনিতো সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।এই সমাজের সমস্ত পূর্ব তৈরী নিয়মকানুন কোন দিনই তোমায় বন্দী বানিয়ে রাখতে পারবে না।রাজনেতা হওয়ার কোন লক্ষণই তোমার মধ্যে নেই”।কথাটা শুনে রাধেশ্যাম একটু অপ্রস্তুত হতেই সমাদ্দার দুই চোখ বুজে বললে “কৌটিল্য বিষ্ণুগুপ্ত চানক্যকে চেনো ? যে কিনা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে রাজা তৈরী করেছিলেন,দ্যা কিং মেকার………..আমি চাই তুমি সেই কাজটাই করো।জনগণ রাজাকে পূজো করবে আর রাজা তোমায়,কেমন”? বলেই একটু তির্যক হাসলেন।
ছোট মাথায় এতো প্যাঁচ সহ্য করতে না পেরে রাধেশ্যাম একটু আমতা আমতা করে বললে “কিন্তু!”
এইবার এক ঝটকায় আরামকেদারার ঠেস ছেড়ে শক্ত হয়ে উঠে তার চোখে চোখ রেখে বললে “এই মুহূর্তে এদেশের সব থেকে দামি এবং মনোরঞ্জক খেলা হলো রাজনীতি।আর বর্তমানে তার সমস্ত খেলোয়াড় এবং দর্শক দুটোই মহাগান্ডু।সবাই যে যার ফায়দা ভোগ করতেই অত্যন্ত মশগুল।এদের ভেদ করা অতীব সহজ।শুধু যে হিঁদুমুসুর জাতেরই লড়াই হয় তা কিন্তু নয়,এই সমাজে আরও অনেক জাতের ভাগ আছে ডোম,তাঁতি,মেথর,মুচি,সাঁওতাল,ভূমিজ,পির,ফকির,চাষা,মাষ্টার,ডাক্তার,পুলিশ সবাই আলাদা আলাদা আর তাদের হিংসার লড়াইটা কিন্তু আরও ভয়ঙ্কর।তোমার কাজ হবে সেই সমস্ত অনুজাতীগুলিকে আরও ছোট ছোট খন্ডে,মানে সবাইকে সবার থেকে আলাদা আলাদা করে ভেঙে দিতে হবে।কিন্তু তাদের কেন্দ্রবিন্দু হবে তুমি।খোঁজ খোঁজ সেই সমস্ত জাতগুলির ভেতরে ঢোকার সূত্র খোঁজ।মেঘনাদের মতো মেঘের আড়ালে থেকে যুদ্ধ করবার কৌশল রপ্ত করো।আমার বয়স এখন আশি,পুরো পঁচাত্তর বছরে আমার অর্জিত সমস্ত রাজনৈতিক ফল তোমায় দিয়ে যাবো আমি,যার মধ্যে সাদা-কালো,পাপ-পূন্য সবই কিন্তু আছে।কি,নিতে পারবে”?
আকস্মিক এহেন প্রস্তাবে সম্মত হয়ে লড়াকু ভঙ্গিমায় রাধেশ্যাম বললে “হ্যাঁ পারবো,আর্শীবাদ করুন”,বলেই তৎক্ষনাৎ একটা পেন্নাম ঠুকতেই সমাদ্দার বুড়ো চোখ বুজে নিজের কপালে হাত জড়ো করে বিড়বিড় করে বললে “জয়তু,জয়তু,জয়তু…………ওম শ্রীপরমাত্মনে নমহঃ……….
সেদিন বাড়ি ফিরে অনেক চিন্তা,ভাবনা,ছক আঁকার পর এতটুকু সময় অপচয় না করে গুজেনদা আর ভবেনকে সাথে নিয়ে পূর্ননিক্ষেপ করলে নিজেকে রাজনীতির ময়দানে।
এদিকে পুত্র রাজনীতিতে পা দিয়েছে তা খুব ভালো কথা।কিন্তু আবার যদি বিপ্লবীসন্ন্যাসী টন্ন্যাসী হয়ে যায় সে আবার আরেক বিপদের বিষয়।তাই তড়িঘড়ি নিজ শ্রেনীগোত্রীয় শ্রীযুক্ত নীলমণি সৎপতি মহাশয়ের কনিষ্ঠা কন্যা,মানে পরমবন্ধু ভবেনের ভগিনী আরতিদেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে রাধেশ্যাম।বছর মাথায় রাজকুমারের মতো ফুটফুটে একটা ছেলেও হলো তাদের,নাম রাখলে নয়নকুমার।
এদিকে বেশ কয়েক বছর পর রাজনীতি গদির পালাবদল ঘটলে।দায়িত্বের সাথে সাথে সম্পত্তির পরিমাণও দিনদিন খানিক বাড়তে লাগলে অবিশ্যি।শহরে তিন চার খানা ফ্লেটবাড়ি,এলাকায় এলাকায় চাষের জমি প্রায় পঞ্চাশ বিঘে মতো হবে।চাষ করো কিন্তু কোন টাকা পয়সা লাগবে না,খালি পুরো গ্রামের ভোটটা যেনো তার মনোনীত প্রার্থীর ঝুলিতেই পড়ে।এছাড়াও হাইওয়ের পাশে বিঘে কুড়ি জমি,ইঁটভাটা,বালি খাদান,চারখানা চারচাকা গাড়ি,ট্রাক দু তিনটে,একখানা প্রাইভেট কলেজ,সোনাদানা একেবারে এলাহী ব্যাপার।তারপর আবার রাস্তায় পয়সা,খালে পয়সা,জঙ্গলে পয়সা।দুফুট রাস্তা কমিয়ে দিলে টাকা,খাল একটু কম গভীর হলে টাকা।
এদিকে একমাত্র পুত্র নয়নকুমার এখন ছাব্বিশ বছরের পরিনত যুবক।তার নয়নকুমার নামটা অবিশ্যি বয়েস বাড়ার সাথে সাথে মুছে গিয়ে বন্ধুবান্ধবদের কাছে,এলাকায় ক্যাপ্টেন নামে বহুল পরিচিত হলে সে।ক্যাপ্টেনই বটে,অমন বড়োবাপের ছেলে একটুআধটু দোষগুণ তো থাকবেই।কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমায় আগে যেমন মন্ত্রীর ছেলে করতো আরকি।হোটেলে মালটাল খেয়ে টাকা পয়সা না দিয়ে ভাংচুর করা,উন্মাদের মতো গাড়ি ছোটানো,এই রাস্তায় একটু মেয়েটেয়ের হাত ধরে টানাহ্যাঁচড়া করা,একটু রেপটেপ করা এইসব আরকি।কুকর্মের তালিকা দিন দিন বাড়ছে দেখে রাধেশ্যাম সিদ্ধান্ত নিলে ছেলের বিয়ে দেবে।এক সিরিয়ালের নায়িকার সাথে বিরাট উৎসব অনুষ্ঠান করে পুরো এলাকা জুড়ে রঙবাহারি আলোক জ্বালিয়ে,নামীদামি শিল্পি,মন্ত্রী,সন্ত্রি দলের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সমস্ত কর্মীবন্ধুদের সাথে নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চললে সেই বিবাহ অনুষ্ঠান।
এদিকে সামনেই আবার বিধায়ক নির্বাচন।ওপর থেকে আদেশ এসেছে যে তাকেই প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে এবারেও।তড়িঘড়ি ফোনটা লাগালে দলের কার্যকরী কমিটির সভাপতি ভবেন সতপতিকে “হ্যালো,ভবেন? শোনো,তুমি আগামী কাল সমস্ত মেম্বারদের সকাল দশটায় বসাও,বিশেষ আলোচনা আছে।আর হ্যাঁ অতিঅবশ্যই ফরিদপুর আর সেকপুরের মোল্লা সাহেবদের চিঠি পাঠাও।সেদিন কি একটা নাম বলেছিলে,আরে ওইযেগো আদিবাসী এম এ পাশ মেয়েটা,তাকেও খবর দাও কালকের মিটিংয়ের জন্যে।আর ভালো কথা,আমি ঠিক করেছি এবার সুনীতা মা বিধায়িকা হচ্ছেন”।কথাটা শুনে ফোনের ওদিক থেকে ভবেন সতপতি অত্যন্ত আনন্দের সাথে বললে “তোমার যেমন ইচ্ছে বন্ধু”।আসলে এই সুনীতা মা হলেন ভবেন সতপতির একমাত্র পুত্রবধূ মানে ডোনাল মাষ্টারের স্ত্রী।ডোনাল এবং সুনীতা দুজনেই অবিশ্যি রাধেশ্যাম পিসেমশাই এর কৃপায় প্রাইমারি স্কুলের চাকরিটা গতবছরই পেয়েছে।এরপর আবার পুত্রবধূ বিধায়িকা হবেন তাতে ভবেন খুশি হবে না তো কে খুশি হবে।
ভোটের আর মাত্র মাসখানেক মতো বাকি।প্রায় প্রতিদিনই এলাকার কোননা কোন জায়গায় মিটিং,মিছিল একেবারে ঠাসা কর্মসূচি।সেদিন প্রচার শেষে দুপুরে এক কর্মীবন্ধুর গৃহে আহারে বসেছে রাধেশ্যাম সবাইকে সাথে নিয়ে,বেলা আন্দাজ একটা মতো হবে।তার মোবাইলটা বেজে উঠলে।ফোনটা ধরে ওদিকের ব্যাক্তির কথা শেষ হতে না হতেই বাড়া ভাত ছেড়ে এক ঝটকায় উঠে উন্মাদের মতো চিৎকার করে বললে “গাড়ি বের কর জলদি”।ছেলের জোরালো এক্সিডেন্টে হয়েছে হাইরোডে।মোটরবাইকের রেস করছিলো সে।হঠাৎ দুটো ট্রাক আর বাসের মাঝামাঝি এসে পড়ে সে,অবস্থা আশঙ্কাজনক।শহরের বড়ো হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে বটে কিন্তু বাঁচার কোন আশা নেই।ডাক্তার এসে জানালেন তিনদিনের আগে কিচ্ছু বলা যাবে না।এদিকে মাস তিনেক হলো স্ত্রী আরতিদেবীরও ক্যান্সার ধরা পড়েছে,একেবারে শেষ পর্যায় চলছে।
গভীর রাতে হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে সোজা নিজের বাঙলোয় উঠে জামা কাপড় ছেড়ে বাথরুমে ঢুকে বিবস্ত্র হয়ে ঢাকনা চাপা কুমোডের ওপর উঠে বসলে সে।মুখে তামুক ভর্তি রোলটায় দেশলাই কাঠিখানা জ্বালিয়ে লম্বা একটা সুখটান মেরে শরীরের সমস্ত শিরা উপশিরায় ধোঁয়া প্রসারিত করে দেওয়ালে সাঁটানো আয়নায় নিজের চেহারাটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে সে।কেমন যেনো বুড়ো হয়ে গেছে সে।ধন-সম্পত্তি পদগরিমা আজ সবই আছে তার কাছে কিন্তু তবুও কেমন যেনো কিসের একটা অভাব বোধ করছে সে।তার গুরু ভূতনাথ সমাদ্দারের মুখখানা ভেসে উঠলো হঠাৎ।আর সেদিনের কথাগুলোও ‘কোন অবস্থাতেই তুমি বিচলিত হবে না,তুমি স্বকীয়স্বাধীন,তুমি কিং মেকার”…….ফোয়ারা কলের নীচে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা জলে মাথা,দেহ ভেজাতে ভেজাতে নিজের অন্তরমনটাকে গুরুর সেদিনের কথাগুলোয় অনেক বোঝানোর পর শান্ত করলে নিজেকে।তারপর সব ভুলে পরদিন থেকে আবার আসন্ন নির্বাচনযুদ্ধের প্রস্তুতিতে পুনরায় নিজেকে পূর্ণমনপ্রাণে সঁপে দিলে।
বুড়ো গুজেন ঠাকুর বাড়ির সামনে আসতেই এবাড়ির সর্বপুরনো চাকর রামতারক কাছে এসে বললে “বামুনঠাকুর কি বাগানে বসবেন”?
“সেই ভালো,শীতের সকাল খানিক রোদ খাওয়া যাক”,বলেই বাগানে গিয়ে আমগাছটার নিচে গোলকরে পাথরবাঁধানো বেদিতে গিয়ে বসে খবরের কাগজ পড়তে শুরু করলে।কিছুক্ষণ পর অবিশ্যি ট্রে ভর্তি রকমারি নোনতা,খেজুর,কাজুবাদাম সাথে চায়ের কাপ,মাগ দিয়ে চলে গেলে এবাড়ীর এক সেবিকা।আর তার পেছন পেছন দাঁড়ি গোঁফহীন, আকাশি রঙা মোলায়েম সূতির ফুলহাতা পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা পরা,ষাট ছুঁই ছুঁই,চোখে কালো ফ্রেমের চশমা।ছিপছিপে লম্বা শরীরটা বোধহয় বয়সের কারনেই খানিক কুঁজ হয়ে হেঁটে আসছেন বাহুবলি শ্রীরাধেশ্যাম ভূপতি।প্রতিঅভ্যাসবশত গলায় ঝোলানো নীলরঙা ফিতায় আটকে থাকা সাদাকালো বোতাম বিশিষ্ট মোবাইলটায় কথা শেষ করে এসে বসলেন বেদির ওপর।নিজের হাতে দামি চিনাপাত্রে ফাসক্লাস এলাচ আদা মেশানো লাল চা ঢালতে ঢালতে বললে “ তারপর, ঠাকুরদা খবর কি”? ওদিকে গুজেন ঠাকুর খবরের কাগজে মনোযোগ দিয়ে গতকালকের পনেরো বছরের তরুনীর ধর্ষনের খবরটা পড়া শেষ করে,কাগজখানা ভাঁজ করে রাধেশ্যাম এর দিকে এগিয়ে দিলে।বাম হাতে কাগজখানা ধরে চা পাত্রটা গুজেনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললে “কতো লিড হবে মনে হচ্ছে ?
গরম চায়ে একচুমুক দিয়ে বললে “চল্লিশ হাজার মতো তো হওয়া উচিত,তারপর রাধামাধবের ইচ্ছে”।ওদিকে খবরের কাগজের হেডলাইনে চোখ বোলাতে বোলাতে রাধেশ্যাম বললে “এগারো তারিখেই বিজয় মিছিলটা হোক বুঝলি,আর মাসখানেক পর একটা বেশ বড়ো করে ব্রাহ্মণভোজন করাবো ভাবছি।তুই একটা কাজ কর গুজেনদা, ওই আশেপাশের মোটামুটি শদুয়েক মতো ব্রাহ্মণকে চিঠি কর বুঝলি”?
ব্রাহ্মনভোজনের কথাটা শুনে গুজেনবামুন অত্যন্ত তৃপ্ত হয়ে আহ্লাদের সুরে বললে “এ তো খুবই উত্তম প্রস্তাব,তুমি ভাই কিচ্ছু চিন্তা কোরোনা সবকিছু একেবারে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকেই করাবো”। তারপর আরও নানান কথাবার্তা হতে হতেই ওদিক থেকে চাকর রামতারক একখানা হুইলচেয়ারে করে বসিয়ে সাতাশ-আঠাশ বছর বয়সী এক বিকলাঙ্গ যুবককে তাদের সামনে রেখে চলে গেলে।ছেলেটির দিকে তাকিয়ে গুজেন বললে “কেমন আছো বাবা”? হাত পা অবশ,ঘাড়খানা বেঁকে বাম কাঁধের ওপর ঝুঁকে আছে,কোন উত্তর দিলে না খালি একবার মানসিক ভারসাম্যহীন মৃদু হাসি হেসে দিলে।না,ক্যাপ্টেন মরে নাই………সে বেঁচে আছে।
এবারের নির্বাচনেও রাধেশ্যামের হাতে গড়া প্রার্থীরই জয়জয়কার হলো।ফলাফল ঘোষণার সাত আট দিন পর স্ত্রী আরতিদেবীও ছেড়ে চলে গেলেন।অর্ধাংঙ্গিনীর শ্রাদ্ধশান্তি কর্মানুষ্ঠান সম্পূর্ণ করার দুইদিন পর গৃহশান্তি যজ্ঞ করিয়ে হিঙের কচুরি,পোলাও,মাখনপনীর,দই,নানাবিধ মন্ডামিঠাই সহযোগে দুশো ব্রাহ্মণসেবা দিলে রাধেশ্যাম।প্রতিজন উপঢৌকন পেলে একটি করে কাশ্মীরি শাল,চুলপাড় ধুতি,সুতির পাঞ্জাবী,তোয়ালে,ফাইবারের চেয়ার ইত্যাদি।আশীর্বাদ গ্রহন শেষে নিজ হাতে একটি করে গনেশ আঁকা স্বর্ণমুদ্রা প্রতিজনের হাতে দিয়ে বিদায় দিলেন সবাইকে।ওদিকে প্রধান ফটকের বাইরে বিধায়িকা সুনীতাদেবীর সাদা রঙের নীলবাতিওয়ালা গাড়িটাও এসে হাজির হলো।রাধেশ্যাম এর নির্দেশ অনুযায়ী প্রত্যেক দিনের শুরুতে আর শেষে এসে বিধায়িকাকে হাজিরা এবং সম্পূর্ণ দিনের কাজের খতিয়ান পেশ করতে হবে তার থানে এসে।তাই দিনের শেষে এসেছে আরকি।ওদিকে বিধায়িকা আসার অপেক্ষায় রাধেশ্যাম নিজের অফিস ঘরে গিয়ে কালাচামড়ার তৈরী সিংহাসনে বসে আয়েস করে একটা চারমিনার জ্বালালে………………….

মাইন্ড ওয়ারস পিডিএফ ডাউনলোড by ম্যারি ডি. জনস লিংক(link or homepage):

Bangla PDf ownload

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!