Ahmed Sofa Somogro Pdf Download All

সূর্য তুমি সাথী Pdf Download আহমদ ছফা – Surjo Tumi Sathi PDF

 Surjo Tumi Sathi PDF

Book সূর্য তুমি সাথী
Author
Publisher
ISBN 9789844066565
Edition 7th Printed, 2017
Number of Pages 100
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা Pdf Download

আমি সব সময় ভুল সময়ে ভুল বই পড়ি… কয়েকদিন ধরে নানামুখী চাপে মন-মেজাজ বেশ ভাল রকমের বিক্ষিপ্ত এবং চড়া। এই সময় দরকার ছিল সুদিং কোনো বই। তা না, পড়ে বসলাম ‘সূর্য তুমি সাথী’। ‘সূর্য তুমি সাথী’ উপন্যাসটি লেখা সেই মানুষগুলোর গল্প নিয়ে যাদের ভিতরটা জ্বলছে আগুনের মত। যন্ত্রণা যাদের ভেতরটা পুড়িয়ে দিয়ে নিঃশ্বাসের সাথে বের করে দেয় আগুনের স্ফুলিঙ্গ। বইটা পড়বার সময় মনে হচ্ছিল আমার নিঃশ্বাসও মনে হয় আগুনের মত গরম। জানি না নিজের পারিপার্শ্বিকতার ফলাফল ছিল সেটা নাকি লেখকের বর্ণনার কৃতিত্ব। জানি না, জানতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তবে এটুকু না বললেই নয়। এই বইটি সাথে কিছুদিন আগে পড়া ইস্পাতের সাথে বেশ খানিকটা সাদৃশ্য বিদ্যমান। আসলে প্লট একই, কিন্তু একটির দৃশ্যপটে রয়েছে ইউক্রেন আর আরেকটিতে বাংলাদেশ, একটিতে পাভেলের সমস্ত জীবন, অন্যটিতে হাসিমের জীবনের কয়েকটি মাস, পাভেল নায়কোচিত, হাসিম খানিকটা ভিতু… কিন্তু দুটোতেই আছে শ্রেণী বৈষম্যের হাতে নিপীড়িত মানুষের দুঃখ গাঁথা, এক হবার বাসনা। তবে বিস্তারে অনেক পার্থক্য রয়েছে, ইস্পাতের পরিসর ছিল ব্যাপক, পটভূমিতে ছিল ঐতিহাসিক উত্থান, এতে তা নেই। কিন্ত এই বইটি পেয়েছে আহমেদ সফার বর্ণনার ঋদ্ধতা, যা ইস্পাতে ছিল না। যাই হোক, তুলনা কেন করছি!! তুলনা বাদ থাকুক। আগুন জ্বলা বইটির শেষ পর্যায়ে হাসন রাজার গান একটি গানের খানিকটা উদ্ধৃত করেছেন আহমেদ সফা, সেটিই না হয় মনে মনে গাইতে গাইতে ঘুমিয়ে পড়ি…

“মাটির পিঞ্জরের মাঝে বন্দি হৈয়া রে
কান্দে হাসন রাজার মন মনিয়ারে।
পিঞ্জরের ভিতরে ময়না ছটফট ছটফট করে
মজবুত পিঞ্জর ময়না ভাঙ্গিতে না পারে।”

ইট ওয়াজ অ্যা ভেরি ব্যাড টাইমিং ফর রিডিং দিস বুক! [দীর্ঘশ্বাস]

ছোটজাতের ছোটজাত হাসিম। পিতৃপ্রদত্ত নামখানা একরকম ভুলতে বসেছে। বান্যিয়ার পুত বলে ডাকে লোকে। তার এই নামকরণের পেছনে গভীর লজ্জা আর বেদনা লুকায়িত। পূর্বপুরুষ ছিল বনেদী হিন্দু। বাপ তার ভালবেসেছিল কাজী বাড়ির মেয়ে জরিনাকে। তার টানে উদাস হল, ঘর ছাড়ল, সবশেষে ধর্ম ত্যাগ করল। নগদ অর্থ আর স্বর্ণ তুলে দিল বাড়ির কাজের লোকের হাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জরিনাকে পাওয়া হল না। পরিবর্তে বিয়ে হল ঐ বাড়িরই দাসীর সাথে। নির্মম মানসিক পীড়ায় পার করে দিল একটা জীবন। মরা মুখটা মাও দেখতে পেল না। মুসলমানের মরা দেখা যে পাপ। হোক না নিজের ছেলে।

বাবার উপর খুব ক্ষোভ জন্মে হাসিমের মনে। কি দরকার ছিল এসব করে? যন্ত্রণা তো শুধু নিজে ভোগ করল না। উত্তরাধিকার সূত্রে দিয়ে গেল হাসিমকে। আজ লোকের কাছে সে করুণার পাত্র, ঘৃণার পাত্র। দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতেই যেখানে শরীরের রক্ত পানি করতে হয় সেখানে সাধ, আহ্লাদ বা আবেগের মূল্য কোথায়? স্ত্রী সুফিয়াকে নিয়ে তার ছোট্ট পৃথিবী। চাওয়া-পাওয়ার বালাই নেই। তবে এতটুকু বেঁচে থাকাকে টেনে নিতেই সমাজ সংসারে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়।

সমাজের উঁচুতলার মানুষেরা যেন হাসিমদের কৃপা করে ধন্য করে। তারা কাজ- কর্জ না দিলে চলবে কি করে তাদের? খলু ব্যাপারী, কাদের, কানা আফজলদের তো আর খাবার নিয়ে ভাবতে হয় না। তিন চার বছরের চিকন চাল মজুদ করে সালিশ আর দাঙ্গা হাঙ্গামা করে বাড়ায় সম্পত্তির পরিধি। খলু ব্যাপারীর হাতিয়ার ভাতিজি জোহরা। তাকে দুবার বিয়ে দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছে। আর তার খোরপোষের বাহানায় জমি আদায় করে নিয়েছে পাত্রপক্ষ থেকে। এখন আবার খেলছে নতুন চাল। কাদিরও কম যায় না। আর সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে কানা অাফজল। এক সময়কার ফরমায়েশ খাটা লোকটি আজ গণ্যমান্য ব্যক্তি। তাদের সাথে সুদখোর অধরবাবুদেরও খাতির বিস্তর। ধর্মের সীমারেখা তাদের বেলায় অকেজো।

ধর্মের দোহাই দিয়ে বড়মানুষেরা প্রতিনিয়ত ছোটলোকদের অবহেলা করে। তাদের পাপ- পুণ্যের হিসাব করে। হাসিম বাঁদীর ছেলে একথা তাকে ভুলতে দেয় না। বুড়ি দাদী রক্তের টানে লুকিয়ে চুরিয়ে নাতিকে দেখতে আসে। সে কেন ধর্ম কর্ম করে না এ নিয়ে মুরুব্বী গোছের লোক দু’কথা শুনিয়ে দেয়। জীবনের গঞ্জনা তাকে বিষিয়ে তোলে।

এর মধ্যেই তার সাথে পরিচয় ঘটে অসাধারণ কিছু মানুষের সাথে। যাদের কাছে তার সামাজিক অবস্থান নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। জাত-ধর্ম নিয়ে কোন বাছ-বিচার নেই। ওলাওঠায় গ্রাম যখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবার পথে তখন তারা ঘুরে ঘুরে তাদের সেবা করে। মুসলমানদের কবর দেয়। হিন্দুদের সৎকার করে। নিজেকে নতুন করে চেনে হাসিম। মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। জীবনের আলোকিত পথ কি তাকে আলিঙ্গন করবে না সে আবার অন্ধ সমাজের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে?

Download PDF 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!