the-art-of-war-pdf-part-2

# All part; https://pdfpoka.com/the-art-of-war-pdf-bangla/

০৩ অধ্যায় – আক্রমণের কৌশল

১.

সানজু বলেন :

এক, সাধারণ একটা সামরিক অভিযানের সবচেয়ে বিচক্ষণতা হল দখলকৃত রাজ্যকে ধ্বংস করার চেয়ে অক্ষত দখল করা। শত্রু সৈন্যদের হত্যা করার বদলে তাদেরকে আটক করুন যাতে করে একটা অক্ষত বাহিনী তৈরি করা যায় অর্থাৎ পাঁচ জনের একটা দলকে হত্যা করার চেয়ে তাদেরকে দিয়ে দল গঠন করা ঢের ভালো। একশটা যুদ্ধের মধ্যে একশটাতেই জয়ী হওয়ার চরম উৎকর্ষতার পরিচয় নয়। কোন যুদ্ধ ছাড়াই শত্রুকে দমন করতে পারাটাই হল সুদক্ষতার পরিচয়। আর তাই যুদ্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শত্রুর কৌশলটাকে নসাৎ করে দেয়া।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, মহান ডিউক বলেন: ‘যারা সমস্যা সমাধান করতে পটু তারা সমস্যার উদ্ভব হওয়ার আগেই তার সমাধান করে ফেলে। যারা শত্রুর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে তারা শত্রুর থেকে হুমকি আসার আগেই তাদেরকে দমন করে ফেলে।’

লি চিয়াং এর ভাষ্যমতে, শত্রুর মুলে আক্রমণের পরিকল্পনা করে হান রাজবংশের সেনানায়ক কাউ সুন চারিদিক থেকে কাউ চুন রাজ্য ঘিরে ফেলে। সুন তার পরিকল্পনা মাফিক অফিসার হুয়ান-ফু ওয়ানকে পাঠায়। হুয়ান-ফু ওয়ান ছিল প্রচন্ড একগুয়ে আর বদমেজাজি। কাউ সুন তাকে হত্যা করে কাট চুন রাজ্যে জানায়: আপনার অফিসার এই কাজের জন্য উপযুক্ত ছিল না। আমি তাকে হত্যা করেছি। আপনি যদি উপযুক্ত কিছু করতে চান; তা দ্রুত করুন। নতুবা নিজেদেরকে রক্ষা করুন। ঐ দিনই চুন তার দুর্গ খুলে দিয়ে আত্মসমর্পন করেন।

কাউ সুনের জেনারেলরা জিজ্ঞেস করল: আপনি তো তার ভৃত্যকে হত্যা করেছেন, কিন্তু এখনও তো আত্ম সমর্পনের জন্য শহর অবরুদ্ধই করলেন না। এমনটা হল কেন?

কাউ সুন জবাব দিলেন: হুয়াং-ফু ওয়ান ছিল কাউ চুনের সবচেয়ে কাছের উপদেষ্টা। যদি হুয়াং-ফু ওয়ানকে ছেড়ে দিতাম সে তার কার্য যথাযথভাবে পালন করতে পারতো। কিন্তু তাকে হত্যা করায় কাউ চুনের সকল তেজ ধ্বংস করে দিলাম। বলা হয়ে থাকে: “যুদ্ধের সবচেয়ে বড় আক্রমণটা হল শত্রুর পরিকল্পনাটাকেই নসাৎ করে দেয়া।”

সব জেনারেলরাই বলে উঠল: ‘এটা তো আমাদের কল্পনাতেও ছিল না।’

দুই. দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শক্রর একতা নষ্ট করে দেয়া।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, শত্রুর মিত্র বাহিনীগুলোকে কখনও একত্রিত হতে দেয়া যাবে না।

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, শত্রুর মিত্র বাহিনীগুলোর মধ্যে একটা ফাটল তৈরি করে দিন। যদি শত্রুর কোন মিত্র বাহিনী থাকে তবে আপনার জন্য সেই শত্রু অত্যন্ত শক্তিশালি হবে, তাই সমস্যাটা অত্যন্ত জটিল; আর যদি শত্রুর কোন মিত্র না থাকে তবে সমস্যাটা বেশি জটিল নয়, আর সেক্ষেত্রে তাদের শক্তিও কম হয়।

তিন. তারপর যে উত্তম উপায়টা রয়েছে তা হল শত্রুর সৈন্যদেরকে আক্রমণ করা।

চিয়া লিন এর ভাষ্যমতে, মহান ডিউক বলেন: ‘যে সেনানায়ক কেবলমাত্র কোষমুক্ত তরবারি দ্বারা যুদ্ধ জিততে চায় তিনি যোগ্য সেনানায়ক নন।’

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, যুদ্ধে শত্রুর পরিকল্পনাটাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে পারেন, অথবা তার মিত্রদের মাঝে ফাটল ধরাতে না পারেন তবে তারাই যুদ্ধ জয়ের স্বাদ গ্রহণ করবে।

চার. সবচেয়ে যে বাজে পরিকল্পনা, তা হল শত্রু পক্ষের শহরগুলো আক্রমণ করা। শুধুমাত্র অন্য কোন উপায় না থাকলে তবেই শহর আক্রমণ করুন।

.

২.

সানজু বলেন, একটা সামিরিক অভিযানে ওয়াগন প্রস্তুত করতে এবং যুদ্ধের প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি তৈরি করতে সব মিলিয়ে তিন মাসের মত সময় লেগে যেতে পারে; সুরক্ষা দেয়াল পার হবার সিঁড়িগুলো তৈরি করতে অতিরিক্ত তিনটা মাস সময় ব্যয় করতে হবে। যদি সেনানায়ক এই সময়গুলোতে ধৈর্য্য ধারণ করতে না পারেন আর তার সৈন্যদেরকে পিপড়ার মত করে দেয়ালে উঠে যেতে আদেশ দেন তবে শহর দখল করা আগেই তার সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশের সলিল সমাধি হবে সেখানেই। এই ধরনের আক্রমণের একটাই পরিণতি হয়।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, অয়েই বংশের এক সম্রাট তাই উ (Wu) এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে ইউ তাই রাজ্য আক্রমণ করেন। শত্রু পক্ষের জেনারেল সাং তাং কে সম্রাট তাই উ কিছু ওয়াইন চেয়ে পাঠালেন। সাং সি একটা ড্রামে ইউরিন প্রবেশ করিয়ে সেটা বন্ধ করে পাঠালো। তাই উ সেটা পেয়ে ক্ষেভে ফেটে পড়ল এবং সাথে সাথে শহর আক্রমনের নির্দেশ দিলে সৈন্যরা সুরক্ষা দেয়ালের উপরিভাগে উঠতে উঠতেই অর্ধেক সৈন্য হতাহত হল।

.

৩.

সানজুর মতে, যারা যুদ্ধে অত্যন্ত পারদর্শী কোন যুদ্ধ ছাড়াই শত্রুকে তারা দমন করতে চাইবে। তারা কোন প্রকার আক্রমণ ছাড়াই শহরগুলো দখল করে এবং দীর্ঘায়িত কোন যুদ্ধ বিগ্রহ ছাড়াই শত্রু রাজ্যকে পরাজিত করতে পারে।

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, দক্ষরা কৌশলেই যুদ্ধ করে নেন। হান বংশের সাং কুং বিদ্রোহী ইয়াও অঞ্চলের ইয়ানকে উ নামক শহরে ঘিরে ফেলেন। কিন্তু কয়েক মাসের সফল সব প্রচেষ্ট সত্ত্বেও শহর দখল করতে পারছিলেন না। তার। অফিসার এবং সৈন্যরা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। তুং হাইয়ের রাজা সাং কু বলেন: যখন আপনার একতাবদ্ধ একটা সৈন্যবাহিনী আছে আর শত্রুকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছেন, যে তার শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত যুদ্ধ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ; তখন আপনার নেয়া কৌশলটা ঠিক নয়। তখন অবরোধ ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে এটুকু জানতে দিন যে সেখান থেকে পালানোর একটা পথ খোলা আছে আর তা পেলে তারা সেখান থেকে পালাবেই। আর তখন কোন গ্রামে তাদের পিছু নিয়ে ধরে ফেলতে পারবেন! সাং কুং এই কৌশলটা অনুসরণ করে ইয়ান উ কে ধরতে সক্ষম হন।

আপনার লক্ষ্য হবে সব কিছু একেবারে সুরক্ষিত অবস্থায় জয় করা। আর এভাবেই আপনার সৈন্যদের কোন ক্ষতি হবে না আর আপনারও উদ্দেশ্যটা পূরণ হবে। এটাই হল আক্রমণের মুল কৌশল। অতএব, সৈন্য ব্যবহারের একটা কৌশল আছে:

এক. যখন আপনার দশজন সৈন্য আর শক্রর একজন তখন তাকে ঘিরে ফেলুন;

দুই. যখন আপনার শক্তি শক্রর পাঁচগুণ, তখনই তাকে আক্রমণ করুন;

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, যদি আমার ক্ষমতা শত্রুর থেকে পাঁচগুণ বেশি হয়ে থাকে, আমি তাকে সরাসরি সতর্ক করব, হুংকার দিয়ে ভয় পাইয়ে দেব, একদিকে গিয়ে জোর চিৎকার করে অন্যদিকে গিয়ে আক্রমণ করে বসব।

তিন. যদি তার ক্ষমতার দিগুণ হয়, তাকে বিভক্ত করে ফেলুন।

তু-ইয়ু এর ভাষ্যমতে, দুই ভাগের এক ভাগ পরিমাণ ক্ষমতার জন্য যথেষ্ট না হয় তবে পরিস্থিতিটা অবলোকন করে তার সৈন্যদেরকে দুই ভাগ করে দিতে হয়। আর তাই মহান ডিউক বলেন: যদি কেউ তার শত্রুর সৈন্যদেরকে আলাদা করে দিতে না পারে সে এর ফলাফল সম্পর্কে ভাবারও সুযোগ পাবে না।

চার. যদি সমানে সামনে হয় তবে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারেন।

হো ইয়েন- সি এর ভাষ্যমতে, এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র যোগ্য জেনারেলই জয়ী হবেন।

পাঁচ. যদি শত্রুর থেকে কম শক্তিশালী হোন তবে যুদ্ধটা এড়িয়ে যান;

তু-মু এর ভাষ্যমতে, যদি সৈন্যরা শত্রুর সমকক্ষ হয় তবে ক্ষণিকের জন্য আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে হয়। এমনতো হতে পারে পরবর্তীতে ভালো কোন সুযোগ পেয়ে গেলেন আর তখনই নিজের সকল শক্তি নিয়ে জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, যদি শত্রু শক্তিশালী আর আমি দুর্বল হই তখন ক্ষণকালের জন্য যুদ্ধ থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সানজু বলেন, যদি আমি যুদ্ধ পরিচালনায় কম পারদর্শী হই আর শত্রু সেনারা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় থাকে; যদি আমি প্রবল তেজদ্বিপ্ত হই আর শত্রু সেই মুহূর্তে কিছুটা অসতর্ক এমনকি তখন শত্রু যেকোন দিক থেকে যতটাই শক্তিশালী হোক না কেন আমি আক্রমণের নির্দেশ প্রদান করি।

আর যদি কোন দিক থেকেই শত্রুর সমকক্ষ না হোন, যদি শত্রুর থেকে পালানোর কোন উপায় না থাকে তবে সেক্ষেত্রে ছোট একটা দল নিয়ে লুট করা শক্তিশালী কোন দলের বিরুদ্ধে এটা ঢের ভালো একটা কাজ।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, মেনসিয়াস বলেন; নিশ্চয়ই ছোট একটা দল বড় দলের সমকক্ষ নয়, আবার দুর্বল দল শক্তিশালী দলেরও সমকক্ষ নয় আবার সামান্য কিছু সৈন্যের শক্তি অনেকগুলো সৈন্যের শক্তির সমকক্ষ নয়।

.

৪.

সানজু বলেন, এখনকার সেনানায়করাই হলেন রাষ্ট্রের রক্ষক। যদি এই রক্ষণাবেক্ষণ চারিদিক থেকে সমানভাবে খেয়াল রেখে করা হয় তবে সে রাষ্ট্র শক্তিশালী বলে পরিগণিত হয়; আর যদি সেখানে ক্ষুত থেকে যায় তবে সে রাষ্ট্র নিশ্চয়ই দুর্বল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবে।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, মহান ডিউক বলেন: ‘যদি সার্বভৌম ক্ষমতা কোন সঠিক লোকের হাতে না থাকে তবে সেখানে ধ্বংস অনিবার্য।’

একজন শাসক তিনটি উপায়ে তার সৈন্যদের জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে আনতে পারেন;

এক. সামনে কি অপেক্ষা করছে সেটা যখন জানা না থাকে তখন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আগোনো উচিত নয়, আর যদি সৈন্যদের উদ্দমতা অবস্থায় থামিয়ে দেয়া হয় তবে সেটাকে বলা হয় “সৈন্যদের কার্যক্ষমতা দমিয়ে দেয়া।”

।চিয়া লিন এর ভাষ্যমতে, এগিয়ে যাওয়া এবং থেমে পড়ার নিয়ন্ত্রণ জেনারেল পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি এই বিষয়ের সিদ্ধান্ত রাজসভা থেকে নেয়া হয়ে এর চেয়ে বাজে কোন কাজ হতে পারে না।

দুই. সেনানায়ক সামরিক ক্ষেত্রে অজ্ঞ হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হয়, এর কারণে তার অধিনস্ত অফিসাররা হতবুদ্ধিকর হয়ে যায়।

সাও-সাও এর ভাষ্যমতে, ধরাবাধা নিয়মের দ্বারা কোন যোদ্ধা চলতে পারে না।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র, আইন এবং নির্দেশনার বাইরেও সৈন্যদের নিজেদের কিছু নিজস্বতা থাকে, যেটা তারা নিজেরাই অনুসরণ করে থাকে। যদি এগুলো রাষ্ট্রীয় ধরাবাধা নিয়ম হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হয় তবে অফিসাররা হতবুদ্ধিকর হয়ে যাবে।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, উদারতা এবং সদাচার হয়তো রাজ্য পরিচালনায় ব্যবহার করা হয় কিন্তু এসব দিয়ে একটা সৈন্যদল পরিচালনা করা যায় না। যুক্তি এবং নমনীয়তা দ্বারাই সৈন্যদল পরিচালনা করা যায় কিন্তু এগুলো রাজ্য পরিচালনায় ব্যবহার করা যায় না।

তিন. সমস্যার সমাধানে যোগ্য ব্যক্তিকে সৈন্যবাহিনী পরিচালনায় পাঠানো হলে অফিসারদের মনে সন্দেহের চির ধরে।

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, সামরিক ব্যাপারে অজ্ঞ ব্যক্তিকে যদি সৈন্য সভায় পাঠানো হয় তবে প্রতি মুহূর্তে সেখানে মতবিরোধ এবং হতাশা দেখা দেবে, ফলশ্রুতিতে পুরো বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হবে। আর তাই পেই তু সভার ডাক দেন এবং যুদ্ধ পরিচালনাকারিকে রহিত করেন; তারপরই সাও পাওকে পরাজিত করতে সক্ষম হন।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, সাম্প্রতি সময়ে রাজসভাসদদের মধ্যে থেকে সেনাবাহিনী পরিচালনাকারি নিয়োগ পেয়ে থাকেন যেটা সম্পূর্ণ ভুল একটা সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।

চার. সেনাবাহিনী যদি বিভ্রান্ত বা সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়ে প্রতিবেশি শাসক সমসার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এটাকে বলা হয়ে থাকে: ‘একটি বিভ্রান্ত সেনাবাহিনী অন্য কারও জয়ী হওয়ার পথ সুপ্রশস্ত করে।’

মেং এর ভাষ্যমতে, মহান ডিউক বলেন: উদ্দেশ্য সাধনে নেতা যদি বিভ্রান্ত হন তবে তিনি শত্রুর বিপক্ষে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারবেন না।’

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, অনুপযুক্ত মানুষকে নেতৃত্ব দেয়া যাবে না। লিন সিয়াংজু হলেন চাও রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, যিনি বলেন: চাও কু তার বাবার বইগুলো পড়েনি বলে এখনও পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে অক্ষম হয়েছিল। এখন মহামান্য আপনি শুধুমাত্র তার বাবার খ্যাতির নাম করে তাকে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে নিয়োগ দেন আর এটা হবে একটা বাঁশির ছিদ্রগুলোতে ঘাম দিয়ে আটকে দিয়ে সেখান থেকে সুর তোলার মত চেষ্টা করা।

.

৫.

সানজুর মতে, যুদ্ধের সম্ভাব্য পরিণতি পাঁচটি বিষয়ের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আগে থেকেই বলা যায়:

এক, যিনি জানেন কখন তাকে যুদ্ধ করতে হবে এবং কখন থামতে হবে তখনই তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

দুই. যিনি জানেন একটা বড় দল পাঠাবেন নাকি ছোট একটা চৌকশ দল আক্রমণে যাবে, তখনই তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যেখানে অনেকে খুবই কম আক্রমণ করেন, আর এই পরিস্থিতিটাকে কাজে লাগিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে পারেন।

তিন. যারা পদসোপান ভিত্তিক বা চেইন অব কমান্ড মেনে চলেন তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, আর তাই মেনসিয়াস বলেন: যুদ্ধক্ষেত্রের ভূমিটা যতটা উপযুক্ত হবে এর চেয়ে ঋতুর আনুকুল্য কম গুরুত্বপূর্ণ; আবার এই দুটোর আনুকুল্যের চাইতে মানবিক সম্পর্কগুলোর একতা ঢের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চার. যিনি বিচক্ষণতার সাথে শত্রুর ধৈর্য্যের বাধ ভাঙার জন্য অপেক্ষা করবেন তিনিই জয়ী হবেন।

সেন হাও এর ভাষ্যমতে; অপরাজেয় একটা সৈন্যদল গঠন করুন এবং শত্রুর বিশৃঙ্খলার জন্য অপেক্ষা করুন।

হো ইয়েন সিএর ভাষ্যমতে, এক ভদ্রলোক বলেন: ‘অদক্ষ সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভর করা এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি না নেয়া হল বড় ধরনের অপরাধ; আগে থেকেই সব কিছুর প্রস্তুতি নেয়াই হল সবচেয়ে বড় গুন!

পাঁচ. যে শাসকের সেনানায়ক সুদক্ষ এবং যিনি সেনানায়কের স্বাধীন সিদ্ধান্তে বাধা প্রদান না করেন তারা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, আর তাই মাস্টার ইয়াং বলেন: জেনারেল নিয়োগ করা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা; আর যুদ্ধের ময়দানে সিদ্ধান্ত নেয়ার সার্বভৌম ক্ষমতা হল জেনারেল এর।

ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, সার্বভৌম কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সঠিক সেনানায়ক খুঁজে বের করতে হবে। তার উপর সকল দায়দায়িত্ব অর্পন করে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

হো ইয়েন সি এর ভাষ্যমতে, যখন আপনি যুদ্ধে থাকবেন তখন প্রতি পদক্ষেপে একশ রকমের পরিবর্তন আনতে হবে। যখনই সুযোগ পাবেন তখনই এগিয়ে যাবেন; যখন বুঝতে পারবেন এগুতে গেলে কঠিন বাধার সম্মুখিন হবেন তখন একটু বিরতি দেবেন। এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেয়া থাকলে আপনি আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে চান এমন সিদ্ধান্ত জানাতে আর কর্তৃপক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসতে আসতে সব কিছু পুড়ে ছাই পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যাবে। আর এটাকে বলা হয় একজন যুদ্ধ পরিচালনাকারিকে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা।

আর তাই পাঁচটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে ফলাফল কার দিকে যাবে। তাই আমি বলি: শত্রুকে এবং নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তবেই একশটা যুদ্ধ করলেও আপনি বিপদে পড়বেন না।

যখন আপনি নিজের সৈন্যশক্তি সম্পর্কে অবগত থাকবেন কিন্তু শত্রুর সম্পর্কে অজ্ঞ তখন হার জিতের আশংকা ফিফটি ফিফটি। যদি শত্রু এবং নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুই জানবেন না, তবে মনে রাখুন আপনি প্রতিটা যুদ্ধেই বিপদে পড়তে যাচ্ছেন।

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, এই ধরনের যোদ্ধাকে বলা হয় ‘ক্ষ্যাপাটে যোদ্ধা’। তার কাছে পরাজয় ছাড়া আর কি বা আশা করা যায়?

 

০৪ অধ্যায় – রণকৌশলগত বিন্যাস

১.

সানজু বলেন:

আদিকালের সুদক্ষ যোদ্ধারা প্রথমে নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে তারপর শত্রুর দুর্বল কোন জায়গায় আঘাত হানার জন্য সুযোগ খুঁজতে। অপরাজেয়তা একজনের উপরই নির্ভর করে; শত্রুর দুর্বলতাকে যিনি নিজের কাজে লাগাতে পারেন। বলা হয়ে থাকে, যাদের যুদ্ধ সম্পর্কে সুনিপুন জ্ঞান আছে তারাই অপরাজেয়। এমনটা নয় যে তারা শত্রুর দুর্বলতার কারনে সবসময় অপরাজেয় হয়েছে।

মেই ইয়াও চেন এর ভাষ্যমতে, নিজের সৈন্য সম্পর্কে আমার অজ্ঞতা থাকলে সেটা আমি পুষিয়ে নিতে পারবো; কিন্তু শত্রুর সৈন্য সম্পর্কে অজ্ঞতা থাকলে সেখানে জয় পরাজয় অনিশ্চিত।

আর তাই বলা হয়ে থাকে যে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী জানে কিভাবে জিততে হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সব কিছু করা সবসময় করা যায় না। অপরাজেয়তা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপরই নির্ভর করে; আর জয় নির্ভর করে আক্রমণের উপর। পর্যাপ্ত শক্তি না থাকলে তখনই কেউ প্রতিরোধ করে; আর যখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সামর্থ্য থাকে তখনই আক্রমণ করে। দক্ষ প্রতিরোধকারীরা নিজেদেরকে গোপন করে রাখে, পারলে পৃথিবীর সাত স্তরের নীচে; যারা আক্রমণে দক্ষ তারা সাত স্বর্গ থেকেও চলে আসেবে আক্রমণ করার জন্য। এভাবে তারা নিজেদেরকে আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় আর জিতেও যায়।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, যারা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাজাতে দক্ষ তারা মাথায় রাখে পাহাড়, নদী, আর চলার পথে উঁচু ঢিবিগুলোকে শত্রু থেকে প্রতিরক্ষা পেতে কাজে লাগায়। কোথায় আক্রমণ করতে হবে সেটা শত্রুদের জানার অসম্ভব করে তোলে। তারা নিজেদেরকে মাটির সাথে লুকিয়ে রাখে।

যারা আক্রমণে দক্ষ তারা মাথায় রাখে যে বর্তমানের ঋতুগত পরিবেশ এবং ভূমির সুবিধাটা গ্রহণ করে; পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আগুন জ্বালায়। তারা এমনভাবে আক্রমণ করে যেন আকাশ থেকে অগ্নিগোলা বিক্ষিপ্ত হচ্ছে।

.

২.

সানজুর মতে, শুধুমাত্র জয়ী হওয়াই দক্ষতার সর্বোচ্চ পরিচয় নয়।

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, হান সিং চাও রাজ্য দখল করে সকালের নাস্তা না সেরই ওয়েল এর দিকে রওয়ানা দেন। তিনি বলেন: ‘চাও সৈন্যদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে তারপরেই খাবার গ্রহন করব।’ জেনারেল সকলে তার সাথে একমত হওয়ার ভান করল। তর্জন গর্জন ছড়িয়ে তার সৈন্যরা নদীর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। চাও সৈন্যরা নদীর অন্যপাড়ে থেকে কোন প্রস্তুতি না নিয়ে হান সিং সৈন্যদের কার্যক্রম দেখে হাসতে থাকল। তাদের দিকে তিরস্কারও করল: ‘হান সিংয়ের সেনানায়করা জানে না কিভাবে সৈন্যবাহিনী পরিচালনা করতে হয়!’ তারপরই হান সিং সৈন্যরা চাও রাজ্য আক্রমণ করে লর্ড চেংএন কে হত্যা করে রাজ্য দখল নেয়।

যুদ্ধে সফল হওয়া এবং সার্বজনীনভাবে একজন সুদক্ষের খেতাব পাওয়া কিন্তু দক্ষতার সর্বোচ্চ শিখর নয়; চাঁদ আর সূর্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারাটা কিন্তু ভালো দেখতে পাওয়ার পরিচয় নয়; বর্জ বিদ্যুতের শব্দ শুনতে পারাটাও শোনার ক্ষমতা বেশি বলা যায় না। আদিকালে যাদেরকে যুদ্ধে পারদর্শি বলা হতো তারা কিন্তু আসলেই খুব সহজেই শত্রু বিনাশ করতে পারতো। আর তাই বিজিতরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করে, তার বুদ্ধিমত্তার খ্যাতির জন্য নয়।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আগেই যুদ্ধ জয় করা হয় এমন একটা ব্যাপার যা সাধারনেরা কখনও কল্পনাও করে নি। এভাবে বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারকারীরা কখনও খ্যাতি পাওয়ার প্রতি দৃষ্টিও রাখে না। এমন কোন কৌশল অবলম্বন করে যেখানে সে অস্ত্র রক্তাক্ত করার আগেই শত্রুর রাজ্য দখল হয়ে যায়।

হো ইয়েন সি এর ভাষ্যমতে, যখন আপনি শত্রুকে কোন প্রকার সম্মুখ যুদ্ধ না করেই দমন করেন কেউ আপনার সাহসিকতার প্রশংসা করবে?

তিনি বলেন, কোন ভুল না করলে যুদ্ধ জয় সহজ হয়ে যায়। ‘কোন ভুল না করা’ বলতে সেনানায়ক যা যা করেছে তার সবগুলো কৌশলই যুদ্ধের সামান্য হলেও সুফল এনে দিয়েছে এমনটা বোঝানো হচ্ছে; আর ইতোমধ্যে সে শত্রুকে দমন করে ফেলেছে।

চিয়েন হাউ এর ভাষ্যমতে, পরিকল্পনা ছাড়া অপ্রয়োজনে একটা পা ও ফেলবেন না; কৌশল ছাড়া একটা পদক্ষেপও নেয়া যাবে না।

আর তাই দক্ষ কমান্ডার এমন ভাবে সৈন্য সাজাবেন যেখানে তার পরাজয়ের কোন সম্ভাবনা থাকে না আর সুযোগ পেলে সেটা শক্রর বিরুদ্ধে যথাযথ কাজে লাগাবে। এভাবে একটা সৈন্যদল যুদ্ধের আগেই বিজয় লাভ করে;

তু-মু এর ভাষ্যমতে, ওইয়ের ডিউক লি চিং বলেন: ‘এখনকার দিনে, সেনানায়ক হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো একেবারে পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, তার মিত্রদের সাথে একতা বজায় রাখা, একটা অত্যন্ত বুদ্ধিসম্পন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়া সামনের অনেকগুলো পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে, ঋতু বৈচিত্রের পরিস্থিতি বুঝতে পারা এবং মানবিক ব্যাপারগুলো বুঝতে পারার সক্ষমতা, এই সবকিছুই থাকতে হবে তার। একজন সেনানায়ক তার সৈন্যদের সক্ষমতা অনুমাণ করতে না পারা অথবা উপযুক্ত সুযোগ গ্রহণ করতে না পেরে ভুল সময়ে আক্রমণ করে বসা অথবা আক্রমণ করতে দ্বিধা করা, মনোযোগ দিয়ে বায়ের কথা ভুলে যাওয়া অথবা তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা সাজাতে ব্যর্থ হওয়া যাবে না। হাস্যকর হলেও সত্য, সে অবিশ্বাস্য খবরের বিশ্বাস করে বিচলিত হয়ে পড়ে। পরে তার দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নাকি বিরতি দেবে এমন বিচলিত হয়ে পড়ে। এমন কাজ করা আর কিছু নিষ্পাপ লোককে আগুনে নিক্ষেপ করার মধ্যে কি পার্থক্য আছে? এটা কি ঠিক এমন নয় যে গরু আর ভেড়াগুলোকে হায়েনা বা বাঘের খাবার হওয়ার জন্য সেদিকে তাড়িয়ে দেয়া?’

যারা যুদ্ধ সম্পর্কে সুনিপুন তারা যুদ্ধের সকল নিয়মগুলো মান্য করেন। আর এর কারনেই তারা যুদ্ধের পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করতে সক্ষম হন।

.

৩.

সানজুর মতে, আর্ট অব ওয়ারের উপাদানগুলো হল: প্রথমত, যুদ্ধক্ষেত্রের পরিমাপ; দ্বিতীয়ত, সৈন্যের পরিমানের অনুমান; তৃতীয়ত, হিসাব করে প্রতিটা পদক্ষেপ নেয়া; চুতর্থত, শত্রুর সাথে শক্তির তুলনা; পঞ্চমত, যুদ্ধে জয়ের সুযোগ।

জায়গার পরিমাপ যথাযথ যুদ্ধক্ষেত্রের ভূমি পরিমাপ থেকে উদ্ভূত। সৈন্যের পরিমাপ কথাটি এসেছে সৈন্য সাজানোর গঠন প্রণালি থেকে, তুলনা এসেছে। গঠন প্রণালি থেকে আর জয় এসেছে শক্তির তুলনার মাধ্যমে।

হো ইয়েন সি এর ভাষ্যমতে, ‘ভূমি’ শব্দটার মধ্যে দুরত্ব এবং টিরেনের অবস্থার উভয় বিষয়ই জড়িত; ‘পরিমাপ’ হল হিসাব করে পদক্ষেপ নেয়া; সৈন্যদের আক্রমণে পাঠানোর আগে, শত্রুর এলাকায় জায়গাটার মধ্যে কি কি অসুবিধা হতে পারে তার হিসাব করে ফেলা; রাস্তার দিকগুলোর হিসাব নিকাশ করা; সৈন্যদের পরিমান গুনে ফেলা; যুদ্ধ সরঞ্জামাদির পরিমান জানা এবং তার বর্তমান নৈতিক অবস্থার সম্পর্কে জ্ঞান রাখা ইত্যাদির পরিকল্পনা করা।

এভাবে বিজিত সৈন্যবাহিনী শত ঝামেলার সমাধান করতে পারে; আর পরাজিত বাহিনী শত ঝামেলার সৃষ্টি করে। এমনটা হয়ে থাকে কারণ বিজিত সেনানায়ক তার সৈন্যদেরকে হাটু সমান পানিতেও যুদ্ধ করতে প্রস্তুত করে ফেলে যেখানে তারা হঠাৎ উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করতে পারে।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, পানির ধর্মই হল নীচু জমিগুলো ডুবিয়ে দেয়া, যখন কোন বাধ ভেঙে যায়, পানি অসম্ভব গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। আর এখন সৈন্যগুলোকে পানির জায়গায় প্রতিস্থাপন করুন; তাদের বিশৃঙ্খলার কার্যগুলোকে সুবিধা হিসেবে গ্রহণ করুন; এমন সময় আক্রমণ করুন যখন সে আক্রমণের প্রত্যাশা করে নি; তার সামথ্য সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করুন এবং তার দুর্বল জায়গায় আঘাত করুন এবং পানির মত কেউ আপনার প্রতিবাদও করার সুযোগ পাবে না।

 

০৫ অধ্যায় – কমান্ডার হিসেবে আপনার সক্ষমতা যাচাই করুন

সানজু বলেন:

১.

সাধারণত, বিশাল একটা সৈন্যদলকে পরিচালনা করা ঠিক ছোট একটা সৈন্যদল পরিচালনা করার মতই। এটা একটা সংগঠনের ব্যাপার মাত্র।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, একটা সৈন্যবাহিনী চালনা করতে প্রথমে অবশ্যই যে কাজটা করতে হবে তা হল একজন সেনানায়কের উপর দায়িত্ব অর্পন এবং তার সাহায্যকারী উপদেষ্টা নিয়োগ এবং তাদের মধ্যে যথাযথ পদসোপান ভিত্তিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।

একজন মানুষ একা একজন মানুষই; দুইজন মিলে হয় যুগল আর তিনজন মিলে হয় ত্রয়ী। একটা যুগল আর একটা এয়ী মিলে পাঁচজনের একটা ক্ষুদ্র দল; দুটো ক্ষুদ্র দল মিলে একটা বিভাগ; দুটো বিভাগ মিলে একটা প্লাটুন; দুটো প্লাটুন মিলে একটা ক্যাম্পানি; দুটো ক্যাম্পানি মিলে একটা ব্যাটেলিয়ন; দুটো ব্যাটেলিয়ন মিলে একটা রেজিম্যান্ট; দুটো রেজিম্যান্ট মিলে একটা গ্রুপ; দুটো গ্রুপ মিলে একটা বিগ্রেড; দুটো বিগ্রেড মিলে একটা পূর্ণাঙ্গ সৈন্যদল গঠিত হয়। প্রত্যেকটা ছোট দল তার চেয়ে বড় একটা দলের অঙ্গ সংগঠন এবং বড় দলটা ছোট দলকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রত্যেকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত। আর এভাবে একজন সেনানায়ক জানেন দশলক্ষ সেনার দ্বারা গঠিত একটা সৈন্যবাহিনী পরিচালনা করা আর একটা ছোট দলকে পরিচালনা করা একই কথা।

আর অনেককে নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক অল্প কয়েকজনকে নিয়ন্ত্রণ করার মতই। এটা শুধুমাত্র সৈন্যবিন্যাস আর পরিচালনা করার দক্ষতার বিষয়।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, যখন সৈন্যদেরকে যুদ্ধে লাগিয়ে দেয়া হয়, তখন চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, এবং ঐ অবস্থায় না দেখা পর্যন্ত কারো কথা শোনার মতো পরিস্থিতিতে তারা থাকে না। আর তাই অফিসার এবং সৈন্যদেরকে এগিয়ে যাওয়া এবং থেমে যাওয়ার জন্য পতাকা দেখিয়ে বা ড্রামের শব্দ শুনিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আর তাই সাহসি সৈন্যকে একাকি এগিয়ে যাওয়া ঠিক নয় আবার কাপুরুষের মত পালিয়েও যাবে না।

.

২.

শত্রুর আক্রমণের পরেও ঐ সৈন্যবাহিনীর পরাজয়ের গ্লানি বহন না করে বেচে থাকার নিশ্চয়তা থাকে বিশেষ এবং নিয়মিত বাহিনী ভাগ করে যুদ্ধ পরিচালনা করার মাধ্যমে।

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, যারা শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে তার নিয়মিত বাহিনী; যারা সৈন্যবাহিনীর চারিদিকে থাকে তারা হল বিশেষ বাহিনী। কোন কমান্ডারই এই বিশেষ বাহিনী ছাড়া শত্রু আক্রমণ করে সুবিধা করতে পারবে না।

হো ইয়েন-সি এর ভাষ্যমতে, আমার নিয়মিত বাহিনীকে বিশেষ বাহিনী হিসেবে এবং বিশেষ বাহিনীকে নিয়মিত সাধারন বাহিনী হিসেবে প্রতিপক্ষের কাছে উপস্থাপন করি। তাছাড়া নিয়মিত সাধারন বাহিনী বিশেষ বাহিনীর মত এবং বিশেষ বাহিনী সাধারণ নিয়মিত বাহিনীর মত আচরন করে।

প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সৈন্য পাঠানো আর পাথরে ডিম ছুঁড়ে মারা একই ব্যাপার। নিয়মিত সাধারণ সৈন্যদের দ্বারা প্রতিপক্ষকে ব্যস্ত রাখুন আর বিশেষ বাহিনী ব্যাবহার করুন জয়ী হওয়ার জন্য। যারা সুযোদ্ধা তাদের কাছে বিশেষ বাহিনী ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি আকাশ এবং মাটির মধ্যবর্তী দুরত্বের সমান অথ্যাৎ অসীম; বিশাল বিশাল খড়স্রোতা নদীগুলোর বহমান পানির মত। তাদের জন্য যেখানে শেষ সেখানেই শুরু; চক্রাকারে আবর্তনশীল, সুৰ্য ডোবার পরে যেমন চাঁদ এসে আবার সুৰ্য্য উঠে ঠিক তেমন। তারা মরে যায় আবার পূর্ণজন্ম নেয়; পুনরাবৃত্ত, ঋতুর বারবার ফিরে আসার মতই।

সানজুর বলেন,

এক. পাঁচটা মিউজিক্যাল নোট দিয়ে অসংখ্য মেলোডি সৃষ্টি সম্ভব, যার সব শুনে শেষ করা সম্ভব নয়।

দুই. মৌলিক রং রয়েছে মাত্র পাঁচটা কিন্তু সেগুলো মিশিয়ে অসংখ্য রং বানানো সম্ভব, যার সব দেখে শেষ করা সম্ভব নয়।

তিন. পাঁচটা মৌলিক স্বাদের সমন্বয়ে অসংখ্য স্বাদ তৈরি সম্ভব, যার সব স্বাদ দেখে শেষ করা একদম অসম্ভব।

তেমনি যুদ্ধে নিয়মিত আর বিশেষ বাহিনীর দ্বারা এত কৌশলে আক্রমণ করা সম্ভব যে একা কেউ এর সব কখনও আত্মস্থ করতে পারবে না। আর এই কারনে দুটো বাহিনীই পুনঃ ব্যবহারযোগ্য; তাদের কার্যক্ষমতা কখনও শেষ হবার নয় ঠিক যেমন একটা রিং এর মত যার কোন শেষ প্রান্ত নেই। এর শেষ এবং শুরু কোথাও কেউ কি সেটা সঠিক বলতে পারবে? পাথরের গায়ে পানির স্রোত যেমন আছড়ে পড়ে, এমনটা ঘটে কারণ এটাই তার ধর্ম; ঠিক তেমনি সৈন্যরা শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, এটাকেই বলে মোমেন্টাম;

তু-ইউ এর ভাষ্যমতে, এমন কৌশলে আক্রমণ করুন যেমন বাজ পাখি তার শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাজ পাখি নিশ্চিতভাবে তার শিকারের কোমর ভেঙে দিতে পারে কারণ সে ঠিক সময়েই আঘাত হানে। আর এটাকেই বলে টাইমিং।

এভাবেই একজন দক্ষ যোদ্ধার মোমেন্টাম হল অসাধারন একটা পরিকল্পনা, এবং যে সময়ে আক্রমণের পরিকল্পনা থাকে সে ঠিক সে সময়ে আক্রমণে যাবে। তার সকল ধ্যান ধারনা শুধুমাত্র তীর-ধনুকের উপর থাকে; সঠিক সময়ে সে ট্রিগারে চাপ দেবে।

.

৩.

তর্জন-গর্জন আর যুদ্ধ ধ্বনিতে সৈন্যবাহিনীকে বিশৃঙ্খল মনে হতে পারে, কিন্তু সেখানে অপেক্ষা করছে ভিন্ন কিছু; সৈন্যবাহিনী চারিদিকে ঘিরে ফেলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে কিন্তু তারা হেরে যেতে পারে না।

লি চুয়াং এর ভাষ্যমতে, সমর যুদ্ধে মনে হবে সবকিছুই যেন গোলমেলে। কিন্তু পতাকা আর ব্যানার দেখা মাত্র তারা একত্রিত হয়ে যায়; কিছু যুদ্ধ ধ্বনিও থাকে যেগুলো তাদেরকে মেনে চলতে হয়।

সঠিক কোন সিদ্ধান্ত নেবেন কিন্তু ভেবাছেকা খাওয়ার ভান করুন; সাহসি হলে ভীতুর ভান করুন; দক্ষ-শক্তিশালী হলে দুর্বলের ভান করুন।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, এর মানে যদি কেউ বিশৃঙ্খলার ভান করে তবে তাকে ভেতরে ভেতরে খুব শৃঙ্খল হতে হবে। তবেই তিনি সিদ্ধান্তহীনতার ভান করতে পারেন। কেউ যদি ভীতুর ভান করতে চায় তবে তাকে যথেষ্ট সাহসি হতে হবে আর সেখানে তার শত্রুর জন্য অপেক্ষা করবেন তাই তাকে সাহসি হতেই হবে, আর তখনই তিনি ভয়কে জয় করতে পারবেন। যিনি দুর্বলের ভান করবেন তাকে অবশ্যই অসম্ভব শক্তিশালী হতে হবে যাতে করে শত্রুর সৈন্যদের মধ্যে একটা অহংকারী ভাব তুলে দেয়া যায়। শুধুমাত্র তার পক্ষেই দুর্বলের ভান করা মানায়।

সৈন্যদের শৃঙ্খলা এবং বিশৃঙ্খলা নির্ভর করে সৈন্য সাজানোর উপর; সাহসিকতা এবং কাপুরুষতা নির্ভর করে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির উপর; শক্তিশালী এবং দুর্বলতা নির্ভর করে সৈন্য বিন্যাসের উপর।

লি চুয়ান এর মতে, এরপর যখনই সৈন্যরা সুযোগ পাবে ভান করা কাপুরুষরা তাদের সাহসিকতার পরিচয় দেবে; যদি সুযোগের সদব্যবহার করতে না পারে তবে সাহসিরাও কাপুরুষ হয়ে যাবে। আর্ট অব ওয়ারে ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। নিয়ম যদি ফলাতেই হয় তবে তা পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।

এই কাজে যারা দক্ষ তারা এমন একটা পরিস্থিতির তৈরি করে যাতে শত্রু তাদের পাতা ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হয়; তারা শত্রুকে এমন কিছুর লোভ দেখাবে যাতে তারা সেটা নিশ্চিত নেয়ার পায়তারা করে, আর সেটা নেয়ার লোভে শক্তি সেখানে ক্ষয় করবে যেটাকে নিজের সুযোগ হিসেবে নেয়া যেতে পারে।

আর তাই দক্ষ কমান্ডার সেই সুযোগে বিজয় অর্জন করে।

চেন হাও এর ভাষ্যমতে, যুদ্ধে বিজিতরা বিশেষ করে শত্রুর থেকে পাওয়া সুযোগগুলোকে কাজে লাগায়। তারা শুধুমাত্র সৈন্যদের উপর হার জিতের ফয়সালা চাপিয়ে দেয় না।

সেনানায়ক শুধু দক্ষ সৈনিক নিবার্চন করে আর তারাই পরিস্থিতির সামাল দেয়।

লি চুয়ান এর ভাষ্যমতে, আর এখন শুধু বীরেরা যুদ্ধ করবে, চালাকরা প্রতিরক্ষা করবে আর বুদ্ধিদীপ্তরা পরিকল্পনা করবে। আর এভাবে প্রত্যেকের প্রতিভার মূল্যায়ণ করা যায়।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, যাদের কোন ধরনের প্রতিভা নেই তাদের কাছে সমাধান চাওয়া একেবারে উচিত নয়।

সাও সাও যখন হান চুয়াং রাজ্যের চ্যাং লু এর বিরুদ্ধে আক্রমণ করল, তখন সে জেনারেল চ্যাং লিয়াও, লি তিয়েন, এবং লো চিন কে এক হাজারের বেশি সৈন্যকে পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন যারা হো ফেই কে প্রতিহত করার জন্য। সাও সাও সৈন্য কমিশনার, সিয়েহ তি কে নির্দেশ পাঠালো এবং খামের এক কোণায় লিখে দিল: ‘যখন যুদ্ধ শুরু হবে ঠিক তখনই এটা খুলবে।’ কিছুক্ষণ পরেই অউ রাজ্যের সান সুয়ান এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে হো ফেইকে আটক করার জন্য আসে। জেনারেলরা খামটা খুলে পড়ে যেখানে লিখা ছিল: ‘যদি সান সুয়ান আক্রমণে আসে তবে জেনারেল চ্যাং এবং লি যুদ্ধে যাবে। জেনারেল লো শহর রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। সৈন্য পরিচালনাকারী যুদ্ধে অংশ নেবে না। বাকি সব জেনারেলই যুদ্ধে অংশ নেবে।’

চ্যাং লিয়াও বলেন: ‘আমাদের প্রভু এখান থেকে অনেক দূরে তাবু খাঁটিয়েছেন, আর আমরা যদি সেখান থেকে অস্ত্র আসার অপেক্ষায় থাকি তবে শত্রুরা আমাদেরকে নিশ্চিন্ন করে দেবে। আর তাই নির্দেশনা থেকে বোঝা যাচ্ছে শত্রু একত্রিত হওয়ার আগেই আমরা তাদেরকে আক্রমণ করব যাতে করে তাদেরকে পথেই আটকানো যায় আর আমাদের সৈন্যদের মাঝে চঞ্চলতা বাড়ে। তারপর আমরা শহর রক্ষার কাজে নেমে পড়ব। আর জয় বা পরাজয় এই কৌশলের উপরই নির্ভর করছে।’

লি তিয়েনে এবং চ্যাং লিয়াও আক্রমনে যায় এবং সান সুয়ানকে পরাজিত করে। এর পর সেদিনের মত ফিরে যাতে করে তাদের নিজেদের সৈন্যরা নিরাপদ অনুভব করে। সান সুয়ান দশদিন ধরে বেআইনিভাবে শহরে আক্রমণ করে তছনছ করে কিন্তু দখল করতে না পেরে ফিরে যায়।

ঐতিহাসিক সান সেন গোপনে এর সবই পর্যবেক্ষণ করেন এবং বলেন: ‘এখন তারা যুদ্ধটাকে একটা ছলচাতুরির আখরা বানিয়ে ফেলেছে। হো ফেই এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলতে গেলে কিছুই ছিল না, দুর্বল আর কোন প্রকার সৈন্যবাহিনী বলতে ছিল না। কেউ যদি একজন জেনারেলকে বিশ্বাস করতো যিনি যুদ্ধ করতে পছন্দ করতেন সেটা আরও ঝামেলা বাড়িয়ে দিত। যিনি যুদ্ধ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তার উপর নির্ভর করতে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতো।’

তিনি পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে সৈন্যদের যুদ্ধে পাঠান যেমনটা একজন সাধারণ মানুষ তার কাজে গাছের গুঁড়ি অথবা পাথর ব্যবহার করে। সব কিছুর হিসাব করেই সিদ্ধান্ত নেন যেন যেখানে আছেন সেখানে স্থির থাকতে পারেন; অসমান জায়গা হলে সেখান থেকে সরে যাবেন। যদি চারকোনাকৃতির হয় তবে থেমে যাবেন; যদি গোলাকার হয় তবে চারিদিকে ঘুরে পজিশন নেবেন। এভাবেই উপযুক্ত দক্ষ সৈন্যদেরকে যুদ্ধে গোলাকার পাথরের চাইয়ের সাথে তুলনা করা যায় যেখানে তারা পাহাড়ের উপর থেকেও নেমে আসতে পারে।

তু-মু এর ভাষ্যমতে, এভাবে কম শক্তি ব্যবহার করে বেশি ফলাফল অর্জন করতে হয়।

চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, লি চিয়াং বলেন: ‘যুদ্ধে তিন ধরনের পরিস্থির উদ্ভব হতে পারে:

এক. ‘সেনানায়ক তার শত্রুকে কম শক্তিশালী ভাবে, আর তার অফিসাররা আর সৈন্যরা যুদ্ধ করতে চায়, তখন জয়ের জন্য তাদের ইচ্ছাশক্তি একটা ঘুর্নিঝড়ের বাতাসের বেগের চেয়েও বেশি হয়ে যায়।’

দুই. ‘টেরেইনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে, এমন একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠন করে যেখানে প্রবেশের রাস্তা কুকুর ঘরে ঢোকার মত সংকীর্ণ অথবা পাহাড়ি এলাকার ভেতর দিয়ে ভেড়ার পাকস্থলীর মত রাস্তা আকাবাকা, যেটা পার করেই শত্রুকে তাকে আক্রমণ করতে হবে।’

তিন. ‘শত্রুর অবস্থার ক্ষেত্রে, যখন শত্রু যুদ্ধ আর পথশ্রমে ক্লান্ত অথবা তার শিবির স্থাপন করে সরেনি কিংবা শত্রদলের অর্ধেক কেবল একটা নদী পার হয়েছে বাকি অর্ধেক এখনো নদীর ওপাড়ে। এই পরিস্থিতিটা হলো শত্রু সৈন্যদেরকে সম্মান করা।’ উপরের তিনটি পরিস্থিতিই যেকোন কমান্ডারের জন্য বিশেষ সুযোগ, এমন সুযোগে একজন কমান্ডার এমন ভাবে তার সৈন্য পরিচালনা করে, যেন খাড়া ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পরা পাথরের বোল্ডার একেকটা, উপর থেকে ফেলতে ধাক্কা লাগে সামান্যই কিন্তু ফলাফল ভয়াবহ।

 

# All part; https://pdfpoka.com/the-art-of-war-pdf-bangla/

Back to top button
error: Content is protected !!