দ্য ফরটি রুলস অফ লাভ Pdf free Download
The Forty Rules of Love Bangla pdf download – দ্য ফরটি রুলস অফ লাভ এলিফ সাফাক Pdf Download
বইঃ দ্য ফরটি রুলস অফ লাভ
লেখক: এলিফ শাফাক
অনুবাদক: শাহেদ জামান
পাবলিকেশন্স: রোদেলা প্রকাশনী
দ্য ফরটি রুলস অফ লাভ রিভিউঃ
বহমান স্রোতের মাঝে আঙুলের আলতাে ছোঁয়ায় ছুঁড়ে দাও একটি নুড়ি পাথর। এর ফলে যা ঘটবে তা হয়তাে চোখে দেখে বােঝা যাবে না। পাথরটা যেখানে পানির সংস্পর্শে আসবে সেখানে ছােট্ট কয়েকটা ঢেউ উঠবে, শােনা যাবে ছপ করে একটা শব্দ। যদিও নদীর স্রোতের শব্দে সেই শব্দ চাপা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ব্যস, এটুকুই।
এবার হ্রদের মাঝে একটি পাথর ছুঁড়ে মারাে। এবার যা ঘটবে তাকে তাে চোখে দেখা যাবেই, বরং তা বহু গুণ বেশি সময় ধরে স্থায়ী হবে। পানির যেখানে পাথরটা পড়বে সেখানে বৃত্তাকারে তৈরি হবে ঢেউ, তারপর কয়েক মুহূর্তের মাঝেই তাদের সংখ্যা হবে অসংখ্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি মাত্র পাথরের কারণে তৈরি হওয়া গােলাকার ঢেউগুলাে ছড়িয়ে পড়বে চারপাশে, যতক্ষণ না পানির উপর সব জায়গায় তাদের উপস্থিতির চিহ্ন তৈরি হয়। কেবলমাত্র তারপরেই হ্রদের কিনারে বাড়ি খাবে ঢেউগুলাে, এবং ধীরে ধীরে মিলিয়ে আসবে। নদীর বুকে যদি কোনাে পাথর এসে পড়ে, তাহলে নদী তাকে স্রোতের সাথে বহমান অগণিত যাত্রীর মাঝে স্রেফ আরও একজন বলে ধরে নেয়। তার কাছে এটা মােটেই অকল্পনীয় নয়, এমন কিছুও নয় যাকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না । কিন্তু পাথরটা যদি কোনাে হ্রদের বুকে পতিত হয়, হ্রদ আর কখনও আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না।
চল্লিশ বছর ধরে নিস্তরঙ্গভাবে কেটে গেছে এলা নানা দিক দিয়ে একঘেয়ে এবং সাধারণ মনে হলেও, এতে কখনও ক্লান্তি বােধ করেনি ও। গত বিশ বছর ধরে ওর প্রতিটি ইচ্ছে, প্রত্যেকটি বন্ধুর সাথে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, এবং প্রতিটি সিদ্ধান্তকে স্মর্গই করে নিয়েছে নিজের বৈবাহিক সম্পর্কের কষ্টিপাথরে। ওর স্বাভিভিড একজন সফল ডেন্টিস্ট। কঠোর পরিশ্রম করে সে, যথেষ্ট উপার্জন করে। এলা সব সময়ই জেনে এসেছে যে তাদের দুজনের মাঝে এমন কোনাে সম্পর্ক নেই যাকে খুব গভীর বলা যায়। কিন্তু এলার ধারণা, একটা দম্পতিকে যে পরস্পরের সাথে মানসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সg / জীবন, ৭ হতেই হবে এমন তাে কোনাে কথা নেই। বিশেষ করে যখন এত দীর্ঘ একটা সময় বিবাহিত অবস্থায় পাড়ি দিয়েছে তারা।
বৈবাহিক সম্পর্কের মাঝে প্রেম এবং ভালােবাসার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার থাকে, যেমন পারস্পরিক বােঝাপড়া, মমতা, দয়া; এবং মানুষকে সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে কাছাকাছি যে জিনিসটা নিয়ে যেতে পারে-ক্ষমা। এসবের কাছে ভালােবাসার অবস্থান গৌণ। অবশ্য কেউ যদি সারা জীবনটা উপন্যাস বা রােমান্টিক সিনেমার মাঝে কাটাতে চায়, যেখানে প্রধান চরিত্ররা বাস্তবের চাইতে আলাদা, এবং যাদের ভালােবাসার সাথে কেবল কিংবদন্তীরই তুলনা চলে-তাহলে আলাদা কথা। এলার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ওর ছেলেমেয়েরা। জিনেট নামে খুব সুন্দরী একটা মেয়ে আছে তাদের, কলেজে পড়ছে এখন। আর আছে এক জোড়া যমজ ছেলে মেয়ে, অরলি এবং আভি। এছাড়াও তাদের পরিবারের আরও একজন সদস্য হচ্ছে বারাে বছর বয়সের একটি গােল্ডেন রিট্রিভার জাতের কুকুর, যার নাম স্পিরিট। সেই ছােট্টবেলা থেকে এলার প্রাণােচ্ছল একজন বন্ধু এবং ওর সকালবেলায় হাঁটতে যাওয়ার সঙ্গী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে সে।
দ্য ফরটি রুলস অফ লাভ বইয়ে – এখন অবশ্য বয়স হয়েছে তার, ওজন বেড়ে গেছে বেশ। কানে মােটেই শুনতে পায় না, চোখের দৃষ্টিও অত্যন্ত ক্ষীণ। বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে স্পিরিটের। কিন্তু এলা ভাবতে ভালােবাসে যে স্পিরিট চিরকাল বেঁচে থাকবে। অবশ্য ওর চিন্তাভাবনার ধরণটাই এমন। মৃত্যু জিনিসটার মুখখামুখি ও কখনই হতে পারেনি, সেটা যে কোনাে কিছুরই হােক না কেন। কোনাে অভ্যাস, কোন অবস্থা, এমনকি একটা বৈবাহিক সম্পর্ক-এই ব্যাপারগুলােরও যদি অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে, তবু তা দেখেও না দেখার ভান করে এলা। রুবিনস্টাইন পরিবার বাস করে ম্যাসাচুসেটসের নর্দাম্পটনে।
বাড়িটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের, বেশ বড়। কিছুটা মেরামতি দরকার হয়ে পড়েছে, কিন্তু এখনও অনেক সুন্দর দেখতে। পাঁচটা বেডরুম আছে। বান্ড্রিতে, তিনটে বাথরুম। শক্ত কাঠের তৈরি চকচকে মেঝে, আর তিনটে গা রাখা যায় এমন একটা গ্যারেজ। সেই সাথে ফ্রেঞ্চ ডােরের ব্যবস্থা, যেটা-বাড়ির বাইরে তৈরি করা একটা ইনস্যুরেন্স, রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান, কলেজ যৌথ ব্যাংক একাউন্ট সহ অনেক কিছুই আছে তাদের। যে বাড়িময় করছে সেটা ছাড়াও আরও দুটো আরামদায়ক এপার্টমেন্টের তারা একটা বােস্টনে, আরেকটা রােড আইল্যান্ডে। এই সব ঠার পরিশ্রম করে উপার্জন করেছে সে আর ডেভিড। ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকার জন্য দামি আসবাবসহ বিশাল বাড়ি, যার ভেতরে ভেসে বেড়ায় ঘরে বানানাে খাবারের জিভে জল আনা সুগন্ধ-এমন চিন্তাভাবনা হয়তাে কারও কারও কাছে একটু প্রাচীন ধারার মনে চেয়ে সুবিধাজনক by হতে পারে।
কিন্তু এই পরিবারের কাছে এটাই আদর্শ জীবনের প্রতিচ্ছবি। উভয়ের মিলিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এমন একটা দৃশ্যপটকে মাথায় রেখেই বৈবাহিক জীবনকে গড়ে তুলেছে তারা; এবং নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সবটুকু হলেও, ভবিষ্যৎ স্বপ্নের অনেকটাই সফল করে তুলেছে। গত ভ্যালেন্টাইন ডে’তে এলার স্বামী ওকে একটা হৃদয় আকৃতির হীরার লকেট উপহার দিয়েছিল। তার সাথে একটা কার্ড, যাতে লেখা ছিল : প্রিয় এলাকে, অত্যন্ত মৃদুভাষী হলেও যার মনটা অনেক বড়, যার ধৈর্য প্রায় অসীম। ধন্যবাদ তােমাকে, আমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য। ধন্যবাদ, আমার স্ত্রী হওয়ার জন্য। তােমারই, ডেভিড । যদিও ব্যাপারটা কখনও ডেভিডের কাছে স্বীকার করেনি এলা, কিন্তু কার্ডের লেখাগুলাে পড়তে গিয়ে ওর মনে হয়েছে, ওগুলাে যেন কোনাে মৃতব্যক্তির কবরফলকে লেখা হয়েছিল। আমি মারা গেলেও ঠিক এই কথাগুলােই লেখা হবে, মনে মনে ভেবেছিল ও।
আর যারা লিখবে তারা যদি সৎ হয়, তাহলে হয়তাে এই কথাগুলােও যােগ করে দেবে স্বামী আর সন্তানকে ঘিরে নিজের সম্পূর্ণ জীবন গড়ে তুলেছিল এলা, তাই জীবনের কঠোর দিকগুলােকে একাকী মােকাবেলা করার মতাে কোনাে ক্ষমতা ছিল না তার মাঝে। খেয়ালখুশিমতাে যারা জীবন চালাতে চায় তাদের দলে ছিল না সে। তার জন্য এমনকি কফির নিয়মিত ব্র্যান্ড বদল করাও ছিল অনেক বড় ব্যাপার। আর ঠিক এই সব কারণেই, এলা যখন তার বিশ বছরের বিবাহিত জীবন শেষে, ২০০৮ সালের শরতে ডিভাের্সের জন্য আবেদন করল তখন কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারল না। এমনকি এলা নিজেও না।
কিন্তু কারণ একটা ছিল। আর তা হলাে : ভালােবাসা। একই শহরে বাস ছিল না দুজনের। এমনকি একই মহাদেশেও নয়। দুজনের মাঝে যে পার্থক্য, তা কেবল দূরত্বের ভিশীল নয়, এমনিতেও ওরা ছিল দিন আর রাতের মতাে আলাদা। জীবনযাপন ছিল এত বেশি আলাদা, যে একজন আরেকজনের উপস্থিতি সহ্য করবে এটাই ছিল অচিন্ত্যনীয়; প্রেমে পড়া তাে অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু তবুও ঠিক তাই হলাে। আর ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটল, এত দ্রুত যে এলা কিছুই বুঝে উঠতে সামনে পড়লে কেউ কি নিজেকে”a9াপতি পারল না, নিজেকে সামলানাের কোনাে স পেল না। অবশ্য ভালােবাসার ভালােবাসা এমন আচমকা খল এলার জীবনে, যেন হঠাৎ করেই কেউ একজন তার জীবনের নিস্তরঙ্গ হদে ছুঁড়ে দিয়েছে একটা পাথর। পারে?
the forty rules of love bangla pdf book free download link: Click here