(All) আহমদ ছফা বই Pdf Download

পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রে জীবনবোধের উন্মেষ এবং বিভূতিভূষণের প্রকৃতিনির্ভর রচনাসমূহে জীবনের যে উপলব্ধির বিকাশ; আহমদ ছফার এ লেখাটি একই গোত্রভুক্ত হয়েও স্বাতন্ত্রের দাবি করতে পারে। মানবজীবনের সঙ্গে বিহঙ্গজীবন ও উদ্ভিদজীবনের যে একটি অবিচ্ছন্ন সম্পর্ক, আহমদ ছফা এ রচনাটিতে সে সম্পর্কসমূহের নানান মাত্রা নির্দেশ করতে চেষ্টা করেছেন।

ক্ষুদ্র তৃণাঙ্কুর থেকে স্পন্দিত নক্ষত্র পর্যন্ত যে চরাচরপ্লাবিত জীবনপ্রবাহ, মনুষ্যজীবনের একাংশ মাত্র উপলব্ধ এবং তরঙ্গিত হয়। মানুষ একা নয়, বিচ্ছিন্ন নয়। সবকিছু যেমন চলছে, সেও চলছে। সবকিছু যেমন দাঁড়িয়ে আছে, সেও দাঁড়িয়ে আছে।

এ রচনাটি মানবজীবনের সঙ্গে অন্যবিধ জীবনপ্রবাহের যেমন সেতুবন্ধন তেমনি বাংলাসাহিত্যের সঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের একটি সেতুবন্ধন হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করা যায়।

❑

মাটির মানুষের জগতে হিংস্রতা এবং হানাহানি দেখে আকাশের পাখির জগতে আমি আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানেও হিংস্রতা এবং জাতির বৈরিতার প্রকোপ দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং মানুষের মতো কর্তব্য পালন করার জন্য আমার মানুষের কাছে ফিরে না গিয়ে উপায় কী? আমি বৃক্ষ নয়, পাখি নয়, মানুষ। ভালো হোক, মন্দ হোক, আনন্দের হোক, বেদনার হোক আমাকে মানুষের মতো মানুষের সমাজে মানুষ্যজীবনই যাপন করতে হবে। মনুষ্যলীলার করুন রঙ্গভূমিতে আমাকে নেমে আসতে হবে। তথাপি আমার জীবন আমি একেবারে মধ্যবিন্দুতে বৃক্ষজীবনের চলা অচলার ছন্দদোলা গভীরভাবে বেজেছে,

বিহঙ্গজীবনের গতিমান স্পন্দন বারংবার আমার চিন্তা-চেতনা অসীমের অভিমুখে ধাবমান করেছে। এই পুষ্প, এই বৃক্ষ, তরুলতা, এই বিহঙ্গ আমার জীবন এমন কানায় কানায় ভরিয়ে তুলেছে, আমার মধ্যে কোনো একাকীত্ব, কোনো বিচ্ছিন্নতা আমি অনুভব করতে পারিনে। সকলে আমার মধ্যে আছে, আমি সকলের মধ্যে রয়েছি। আমি পুত্রের কাছে বিশেষভাবে ঋণী। আমার পাখিপুত্রটি আমাকে যা শিখিয়েছে কোনো মহৎ গ্রন্থ, কোনো তত্ত্ব কথা, কোনো গুরু-বাণী আমাকে সে শিক্ষা দিতে পারেনি। একমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজের মুক্তি অর্জন করতে পারে। আমার পাখিপুত্র মুক্ত, আমি মুক্ত, আমাদের সম্পর্ক থেকে প্রত্যহ অমৃত উৎপন্ন হয়। এই আকাশের জীবনের সঙ্গে আমার জীবনের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কি অমৃত সমুদ্রে অবগাহনে নয়?

❑

সন্দেশ প্রকাশনী আহমদ ছফার জীবিতাবস্থায়ই তাঁর রচনাবলী দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশ করে। সম্ভবত কোনো লেখক এর জীবিতাবস্থায় তাঁর রচনাবলির প্রকাশ ‘আহমদ ছফা রচনাবলী’ দিয়ে শুরু।

সন্দেশ এই লেখকের ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ এবং রচনাবলী তিন খন্ড ছাড়াও একটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘গাভী বিত্তান্ত’ প্রকাশ করেছে।

আহমদ ছফার জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩০ শে জুন চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানাধীন গাছবাড়িয়া গ্রামে, এক কৃষিজীবী পরিবারে।

মৃত্যু ২০০১ সালের ২৮ জুলাই, ঢাকায়।

❑

পাঠকদের উদ্দেশে বলবো—

একজীবনে খুব বেশি বই পড়ার সুযোগ পাবেন না, তাই আজেবাজে অগুরুত্বপূর্ণ বই কিনে-পড়ে সময় নষ্ট করার চেয়ে বেছে-বেছে ভালো ও সেরা বইগুলো পড়া উচিত।