info

২জন নারী মুক্তিযোদ্ধার জীবনী ও খেতাবপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা

বাংলাদেশর মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। অনেকে খেতাবপ্রাপ্ত, আবার অনেক নারী খেতাব পাননি। তার মধ্যে রয়েছে- অঞ্জলি রায় গুপ্তা, আলমতাজ বেগম ছবি আশালতা বৈদ্য, আলেয়া বেগম, কাঁকন বিবি, খালেদা খানম, ছায়ারুন নেছা, জয়নাব বেগম, ডা. সিতারা রহমান, ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার ডা. লুৎফুন নেসা, তারামন বিবি, নাজমা বেগম (কাকনবালা বণিক) নিবেদিতা, ফরিদা খানম সাকী, ফেরদৌস আরা বেগম সহ আরো অনেকে। মুক্তিযুদ্ধে নারী সমাজের ভূমিকা ও দুইজন উল্লেখযোগ্য মুক্তিযোদ্ধার জীবনী বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। পরীক্ষায় রচনা ২০ পয়েন্ট অথবা ১২০০ শব্দ এর রচনা আকারে এই টপিক থেকে প্রশ্ন করা হয়, এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে থাকলে পরীক্ষায় স্টুডেন্টদের জন্য অনেক উপকার হবে বলে আশা করা যায়।

অঞ্জলি রায় গুপ্তা

নয় নম্বর সেক্টরের আওতায় ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন অঞ্জলি রায় গুপ্তা। পাকিস্তানি সেনাদের রদওয়া আগুনে দগ্ধ নিজেদের বাড়ির ছাই হাতে নিয়ে যুদ্জয়ের শপথ করেছিলেন অঞ্জলি এবং তার চার ভাই-বোন।

ঝালকাঠির কীর্তিপাশা গ্রামে ১৯৪৫ সালের ৮ই জুলাই জনুগ্হণ করেন অঞ্জলি রায় গুপ্তা । বাবার নাম সুশীল কুমার রায় এবং মায়ের নাম শোভা রানী রায়। ১৯৬১ সালে কীর্তিপাশা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বরিশালের চাখারে অবস্থিত ফজলুল হক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্বাতক পাস করেন তিনি । আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেন অগ্লি রায়।

১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ঝালকাঠির শিরযুগ আজিমুন্েছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি । বিভিন্ন এলাকার মুক্তিকামী মানুষ কীর্তিপাশা স্কুলমাঠে আসত যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে । একাত্তরের ২৫ মার্চের পর প্রশিক্ষণ আরো জোরদার হয়। প্রশিক্ষণ শিবিরের পাশেই তীদ্বের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। এভাবে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রশিক্ষণ দিতে ও নি তে মুক্তিযুদ্ধে নিজের অংশগ্রহণের কথা বলতে গিয়ে ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে অঞ্জলি রায় গুপ্তা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের বক্তৃতা তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে। এছাড়া মেষে জ্বালিয়ে দেয়। বাবা-মা, ভাইবোনদের নিয়ে বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে আশ্রয় নেন তিনি। তাদের লক্ষ্য করে জঙ্গলেই গুলি চালানো হয়।

তারা গর্ত কজে জঙ্গলেই লুকিয়ে থাকেন। একসময় গুলি থেমে গেলে গর্ত থেকে বেরিয়ে দেখেন, পুরো জঙ্গল পরিষ্কার হয়ে গেছে। ওদিকে আগুনে তাদের বিশাল বাড়ি পুড়ে ছাই । সেই ছাই ছুঁয়ে তারা পাচ ভাইবোন শপথ করেছিলেনন দেশ শক্রমুক্ত করার। আর তাদের বাবা তখন বলেছিলেন, “মরত যখন হবেই, একটা পাকিস্তানি সেনা মেরে তারপর মরো’ ।

নিজেদের বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বিলের মধ্যে পেয়ারাবাগানে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন তারা । ভাই শ্যামল রায় আর চার বোন অঞ্জলি, সন্ধ্যা, মণিকা ও সুদীপ্তা সিরাজ শিকদারের নেতৃতে পেয়ারাবাগানে যুদ্ধে অংশ নেন। কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঝালকাঠি-স্বরূপকাঠির সীমান্তবর্তী পেয়ারাবাগানে যুদ্ধের প্রস্ততি নেন তারা। সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনারা পেয়ারাবাগান পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়। ফলে পেয়ারাবাগান ছেড়ে যেতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের।

থেকে নবগ্রাম ইউনিয়নে যাতায়াত করছিল। একই সঙ্গে তারা নবগ্ৰাম ও বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালায়। অঞ্জলি এবং তার সাথী যোদ্ধারা শত্রুর বোটে আক্রমণ জালান। এই ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা ককটেল ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের নৌকায় হামলা চালিয়েছি। এসময় তাদের কয়েকজন নিহত হয়েছিল।”

যুদ্ধের সময়ের একদিনের বিপদ্রজনক পরিস্থিতির কথা জানান অঞ্জলি রায় গুপ্তা। তীর ভাষায়, “আমরা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম । আর ঠিক সে সময় পাকিস্তানি সেরানাও রাস্তায় উঠে গেছে। আমি যাচ্ছিলাম পূর্বদিকে। কিন্তু দেখি সামনে, পেছনে এবং ডান দিক থেকেও পাকিস্তানি সেনারা আসছে। আর বামদিকে ছিল নদী । মানে আমাকে ধরার জন্য তারা এভাবে আমাদের ঘেরাও করেছে। আমি যে কীভাবে পালাবো তার কোনো বুদ্ধিই পাচ্ছিলাম না। এমন সময় আমাদের দলের মধ্যে একজন আমাকে হাত দিয়ে ঠেলা দিল যে, আপনি সরে পড়ন। আমি নদীর মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে ওপারে চলে গেলাম । কিন্তু আমার পেছন থেকে দুজন ধরা পড়ে যায় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে।”

দেশ স্বাধীন হয়। কিন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে অগ্লির মুক্তিযোদ্ধা ছোট দুই বোনোর মাথা গৌজার ঠাই হয়নি। তারা চনে যান ভারতে । এমনকি তারা ক্ষোভ ও অভিমানে সনদ পর্যন্ত নিতে আসেনি বলে জানান অঞ্জলি রায় গুপ্তা। এমনকি তারা পাচ ভাইবোন সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও সনদ পেয়েছেন মাত্র দু’জন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও তাঁর কর্মস্থলে যোগ দেন অঞ্জলি রায় গুপ্তা। শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব অঞ্জলি সেই বিদ্যালয়টিকে পরবতীকালে কলেজ পর্যায়ে উত্তীর্ণ করেন। সেই করেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০০৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

আলমতাজ বেগম ছবি

আলমতাজ বেগম ছবি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শ্যাকরাইল গ্রামে ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাবিবুর রহমান আর মা জাহানারা বেগমের ৯ সন্তানের মদ্যে পঞ্চম সন্তান তিনি।

বাবার কর্মক্ষেত্রে বরিশালে হওয়ায় তিনি বরিশাল শহরেই বড় হন, বাবা-মায়ের ৯ সন্তানের মধ্যে পঞ্চম সন্তান তিনি।

আলমতাজ বেগম ছবি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শ্যাকরাইল গ্রামে সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাবিবুর রহমান আর মা জাহানারা বাবার কর্মক্ষেত্র বরিশালে হওয়ায় তিনি বরিশাল শহরেই বড় হন, পড়াশোনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আলমতাজ বেগম ঝবি বরিশালের জগদীশ সারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বড় ভাই কৰি অধ্যাপক হুমায়ুন কবির এবং মেজো ভাই ফিরোজ কবির; সিরাজ শিকদারের বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। দুই ভাইয়ের বন্ধুরা তাদের বিএম কলেজ কলেজ রোডের বাসায় আসতেন । আর রাজনীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করতেন। এই আলোচনা শুনে শুনে আলমতাজ বেগম ছবির মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জন্ম নিয়েছিল । জানতে পারেন এটি হলো বাম রাজনীতি, তখন এর নাম ছিল পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট (সর্বহারা) পার্টি। আলমতাজ বেগম ছবি আলোচনা থেকে শুনেছেন পশ্চিমারা আমাদের দেশ শাসন-শোষণ করেছে, এটা বন্ধ করা দরকার। আর আলোচনার বিষয় নিয়ে পোস্টার লিখতে যা লিখে দিতেন আলমতাজ বেগম ছবি; তার হাতের লেখা ভালো থাকায়।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আলমতাজ বেগম ছবির মেজো ভাই ফিরোজ কবির যুদ্ধে যান। ভাইয়ের যুদ্ধে যাওয়া তাকে আরো বেশি নাড়া দেয়। আলমতাজ বেগম ছবি যুদ্ধে যাবার পরিকল্পনা করেন৷ তবে মনের কথা মুখে বলা কেবল ভাবতেন যদি যুদ্ধে যেতে পারতেন। তার ভাই তখন বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার সীমান্তবর্তী আটঘর-কুড়িয়ানা পেয়ারাবাগানে শিকদারের নেতৃতে গড়ে ওঠা স্বাটিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। হঠাৎ একদিন ভাই এসে আলমতাজ বেগম ছবিকে বললেন, তিনি যুদ্ধে যাবেন কি না? আলমতাজ বেগম ছবি যেন এই কথার অপেক্ষাতেই ছিলেন । তার প্রাণ নেচে উঠল। প্রথমে পরিবারের অমত থাকলেও ভাইয়ের সহযোগিতা আর নিজের আগ্রহের কাছে সবকিছু হাক মানে । আলমতাজ বেগম ছবি চলে গেলেন সিরাজ শিকদারের ক্যাম্পে।

পেয়ারাবাগানে যাওয়ার পর প্রথমেই সিরাজ শিকদারের সঙ্গে পরিচয় হলো। তার কাজে অনেক প্রশ্ন ছিল আমার । খুব কম কথা বলা স্বভাবের সিরাজ ভাই মাথা নেড়েই উত্তর দিতেন। ওখানে যাওয়ার পরই আমাকে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হলো । অস্ত্র চালানো, গেরিলা প্রশিক্ষণ এভাবেই এক এক করে সব শেখানো হচ্ছিল। তার চেয়েও বেশি শেখানো হচ্ছিল যুদ্ধকালে মনোবল কিভাবে বাড়ানো যায়। আমার জন্য এটা তেমন কঠিন কাজ ছিল না। কারণ আমার মাথায় সবসময়ই ছিণ যুদ্ধ করব, পাকিস্তানি সেনাদের হটাব। কথাগুলো বলেছেন আলমতাজ বেগম ছবি।

সেই ভয়াবহ আর রোমাঞ্চকর দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আনমনা হয়ে যান আলমতাজ বেগম ছবি । কত রাজ যে বিছানা ছাড়া ঝোপে- জঙ্গলে কাটাতে হয়েছে, কত ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধে মুখোমুখি হতে হয়েছে তা ভাবতে গেলে এখনো শিউরে ওঠেন 158! মাস ছিলেন পেয়ারাগান, সেরংগল, আটঘর, কুড়িয়ানা প্রভৃতি রণাঙ্গনে । ভাত খেতে হয়েছে কলাপাতায়।

কাপড় কাচা, রান্না করার সময়ও তার কাছে অস্ত্র থাকত। শাড়ি বদলে লু্দি, প্যান্ট-শার্ট পরে সদা প্রস্তুত থাকতেন আলমতাজ বেগম ছবি। এই স্বাটিতে একমাত্র মেয়ে হওয়ায় তাকে একটি বিশেষ কাজও করতে হতো; ছদ্মবেশে খবর আনা-নেয়ার কাজ। প্রশিক্ষণের সময় থেকেই তিনি এই কাজ করতেন। যদি জানতেন কোনো গ্রামে একজন রাজাকার আছে, তিনি হেঁটেই ওই গ্রামে চলে যেতেন। তার খবর নিতেন, গতিবিধি জানতেন । রাজাকারটি কি করে, কোথায় যায়, কার কার সাথে যোগাযোগ করে, সব জেনে এসে ক্যাম্পে জানাতেন। সে অনুযারী অপারেশন চালানো হতো।

প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আলমতাজ বেগম ছবি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে সিরাজ শিকদারের সাথে স্বরূপকাঠির সন্ধ্যা নদীতে অপারেশনে যান। সেই যুদ্ধে আলমতাজ বেগম ছবি পাকিস্তানি বাহিনীর গানবোটে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারেন। তিনি যখন গ্বেনেডের পিন খুললেন, তখন বুকের মধ্যে ধড়ফর করছিল-কী জানি গ্রেনেডটা বুঝি তার হাতের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয়! ওই যুদ্ধে গানবোটের সব পাকিস্তানি সৈন্য আর তাদের দোসররা মারা যায়।

পরের অপারেশনের নেতৃতে ছিলেন আলমতাজ বেগম ছবি। তারা জানতে পারেন ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেল দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি স্পিডবোট যাবে। তারা প্রথমে পরিকল্পনা করে ছয়-সাতজন মিলে হামলা চালাবেন, কিন্ত বেভে দেখলেন এই দলের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করার মতো অস্ত্র তাদের কাছে নেই। অবশেষে সিরাজ শিকদারের নির্দেশে আলমতাজ বেগম ছবি গেরিলা কায়দায় স্পিডবোটিতে গ্রেনেড আর হাতবোমা নিক্ষেপ করেন। তার এই অতর্কিত হামলায় বোটটি ডুবে যায়। এখানেও সব
পাকিস্তানি মৃত্যুবরণ করে । পারিবারিকবাবে ঠিক হওয়া বড় ভাইয়ের সহপাঠী আলমতাজ বেগম ছবির সহযোদ্ধা সেলিম শাহনেওয়াজের সাথে বিয়ে হয়।

কেবল আলমতাজ বেগম ছবির নিরাপত্তার কথা ভেবে একাত্তরের ২৮ মে যুদ্ধক্যাম্পে গুলির শব্দ আর বারুদের গন্ধের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়। অন্য সহযোদ্ধারা বেশ আনন্দ করলেন আর ফুল দিয়ে তাদের বরণ করলেন। বিয়ের পরই এলো শোকের ছায়া। পেয়ারাবাগান অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা ও সাংগঠনিক শক্তি বেড়ে যাওয়ায় হানাদাররা বাগান পরিষ্কারের পাশাপশি চতুর্মুখী অভিযান চালায়! জুলাই মাসে রাজাকার দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ পাকিস্তানি সেনারা/পেয়ারাবাগান ক্যাম্প ঘিরে ফেলে ।

এ সময় হানাদার বাহিনীর হাতে-ধরা পড়ে আলমতাজ বেগম ছবির মেজো ভাই মুক্তিযোদ্ধী কমান্ডার ফিরোজ কবির ওরফে মনু। সর্বহারা পার্টির কাজ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগেই পায়ের দুটি আঙ্গুল উড়ে যাওয়ায় তাকে চেনা খুব সহজ হয়েছিল পাকিস্তানি সেনাদের । ১৮ আগস্ট আরেক বন্দি মুক্তিযোদ্ধা এম জি কবির ভুলুর সামনেই পাকিস্তানি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনে শহিদ হন ফিরোজ কবির। এ সময় আলমতাজ বেগম ছবি পেয়ারাবাগন ছেড়ে স্বামীর গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায় চলে যান। আর তার স্বামী যোগদান করেন পাবনা ক্যাম্পে ।

কিন্তু রাজাকাররা জেনে যায় আলমতাজ বেগম ছবির খবর। তখন শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পাশে নূর মোহাম্মদ নামে একজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে তার স্বামীর চাচাতো ভাই-সহযোদ্ধা দিপুর সাথে পাবনার মুক্তাঞ্চলে চলে যান। সেখান থেকে ঢাকায় । জিগাতলা হয়ে হাজারীবাগের এক ট্যানারির কাছে তিনি একটি গোপন আস্তানায় বসবাস শুরু করেন । এখানে এসেও তিনি বসে ছিলেন না। ঢাকায় পার্টির মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অভিযানে অংশ নেন।

খেতাবপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা

খেতাব ১৯৭৩ [গেজেট] বৰ্তমান খেতাসূত্র
বীরশ্রেষ্ঠ সর্বোচ্চ পদ
বীর উত্তম ৬৮ ৬৭ উচ্চপদ
বীর বিক্রম ১৭৫ ১৭৪ প্রশংসনীয় পদ
বীর প্রতীক ৪২৬ ৪২৪ প্রশংসাপত্র
মোট ৬৭৬ ৬৭২ *

see- মুক্তিযুদ্ধে নারী pdf

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান নিয়ে উক্তি-

মুক্তিযুদ্ধে নারীর ইতিহাস কেবলই নির্যাতনের!

প্রশ্ন-উত্তর পর্ব

বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা কতজন?

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম এবং তারামন বিবি নামক ২ জন নারী বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।। ডা. সিতারা বেগম ২নং সেক্টরে এবং তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন।

bdwar বীর প্রতীক খেতাব পাওয়া নারী মুক্তিযোদ্ধা

এছাড়াও, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কাঁকন বিবি পাকিস্তানী বাহিনীর বিপক্ষে মুক্তিবাহিনীর হয়ে ৫ নং সেক্টরের গুপ্তচরের কাজ করেন।  এজন্য ১৯৯৬ সালে তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয,  তবে এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোন গেজেট প্রকাশিত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধে খেতাব প্রাপ্ত কতজন ২০২৩ এ?

বর্তমানে খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৭২ জন। বীরশ্রেষ্ঠ — ৭জন, বীর উত্তম — ৬৭জন, বীর বিক্রম — ১৭৪জন এবং বীর প্রতীক — ৪২৪জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!