বিভা ও বিভ্রম সাদাত হোসাইন Pdf Download
biva o bivrom pdf by sadat hossain pdf download | বিভা ও বিভ্রম সাদাত হোসাইন Pdf Download link-
বইয়ের নাম: বিভা ও বিভ্রম
লেখকের নাম: সাদাত হোসাইন
ক্যাটাগরি: সমকালীন উপন্যাস
ফাইল ফরম্যাট: Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড)
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন
১ম প্রকাশঃ 2021 সাল
মোট পেজ সংখ্যাঃ 200+ পৃষ্ঠা
সুদুরে গেছি হারিয়ে: একটু একটু করে যখন মনে পড়ছে তখন আমি পার্কের গাছতলায় । নিজেকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে। এই আমি কী সেই আমি! না, এটা আমি নই। আমি সেই বার বছরের আমাকে দেখতে চাই, এই ব্রিশ-পয়ত্রিশ বছরের পাগলিকে নয়। মিমি-সঞ্জু-রিমি-মঞ্জু, সিরিয়াল ভাবে আমাদের জন্ম। অর্থাৎ মিমি-রিমি-সঞ্জু-মঞ্জু আমরা চার ভাই বোন। বাবা কাঠমিন্ত্রী আর মা গৃহিনী। বাবা কাঠমিস্তি হলেও মোটামুটি ভালই দিনকাল কেটে যাচ্ছিল।
বার বছরের আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি, আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট ভাই সঞ্জু ক্লাস থ্রিতে পড়ে, সঞ্জুর চেয়ে তিন বছরের ছোট রিমি সবে মাত্র ক্লাস_ওয়ানে ভর্তি হয়েছে আর পাঁচ বছরের সঞ্জু তখনো স্কুলের মুখ দেখেনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গভি পার হবার.আগেই হঠাৎ করে আমাদের উপর নেমে আসে অশান্তি। কাঠমিন্ত্রী বাবা দ্বিতীয়_বিয়ে করে বৌ ঘরে তুলেছে । কোন রকমে দিনাতিপাত করা সংসারটা হঠাৎ করেই যেন অচল হয়ে গেল। সৎ মা’কে বাসায় রেখে বাবা কাজে যায় না। ফলে খুব দ্রুত অভাব অনটন শুরু হলো। অভাব অনটনের সাথে আরো একটি জিনিস যুক্ত হয়েছে তা হলো নিয়মিত ঝগড়াঝাটি আর কোলাহল । ঝগড়াঝাটি দিন দিন এত ভয়ানক রূপ ধারণ করছে যে, রক্তারক্তি হতেও বাকি নেই। প্রতিদিন ঝগড়াঝাটি আর অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাবার জন্যই বাবাকে নিয়ে পালিয়ে যায় সৎ মা। বাবা ছাড়া মা যেন অথৈ সাগরে ডুবতে বসেছে।
তখন আমাদের লেখাপড়া তো দূরের কথা দু’বেলা পেটভরে আহার করাটাই দায় হয়ে পড়েছে। বাসা ভাড়া আর চার ভাইবোনের খাবার যোগাড় করতে গিয়ে মা হিমসিম খাচ্ছে । আমাদের এমন কোন আত্রীয়-স্বজনও নেই যার কাছে গিয়ে কোন রকমের উপকার পেতে পারি। দু’একজন আত্রীয়-স্বজন আছে বটে তবে তারা খুবই গরীব । আমাদের মতই দিন এনে দিন খাওয়ার মত অবস্থা । বড় সন্তান হিসেবে ছোট ভাইবোনদের জন্য কিছু করতে হয় বলেই বাধ্য হয়ে মানুষের বাসায় কাজ নেই। আমার উঠতি বয়সের বাড়ন্ত শরীরে যদিও যৌবনের লেশমাত্র নেই। তবুও আমার গৃহকর্তা রাক্ষসের মত আমার দিকে চেয়ে থাকে। চেয়ে থাকে গৃহকর্তার বড় ছেলেটিও। ওদের দিকে তাকাতে আমার ভয় লাগে। যেহেতু এ বাসায় কাজ করি, একবার না একবার হলেও ওদের দিকে তাকাতেই হতো। সকালে রুমে চা দিতে গিয়ে গৃহকর্তার বড় ছেলের রোষানলের শিকার হই। হঠাৎ করেই ছেলেটি আমার বুক চেপে ধরে। প্রচন্ড ব্যাথায় ছটফট করি। সহ্য করতে না পেরে চিৎকার শুরু করি। ওরা এগিয়ে এসে আমাকেই দোষারোপ করে। কোন টাকা পয়সা না দিয়েই লাথি দিয়ে বের করে দেয় আমাকে । আমি কীদতে কীদতে বাসায় ফিরি।
ঘটনা শুনে আমার মা’ও আমাকে দোষারোপ করে- এ বাসার কাজ ছেড়ে আসাটা তোর বোকামি হইছে। আমি তো নিজে নিজে বের হয়ে আসি নাই। ওরাই তো আমাকে লাথি দিয়ে বের করে দিল। রর লাথি দিবে না তো কী করবে, তুই এমন চিন্লাপাল্লা না করলেই পারতি। শরীরে কেউ এমন একটু-আধটু ধরলে “চিৎকার করতে হয় না। এ বয়সি ছেলেরা পাবি। এ বাসা থেকে আসার সময় তুই এই কয়দিনের বেতনটা নিয়ে আসিস নাই কেন? তুমি এমনভাবে বলছ যে এ বাসাটা আমার ওরা যদি কোন টাকা না দেয় তাহলে আমি কীভাবে আনব! ভাল করেছিস, এখন উপোস থেকে মর। বেতন না হোক পেটে ভাতে দিন তো কেটে যাচ্ছিল। অন্য কোন বাসায় যদি কাজ নেই তাহলে হয় না। কাজ পাওয়া এত €সাজা! ঢাকা শহরে তোর মত হাজার হাজার মানুষ হন্য হয়ে কাজ খুঁজছে । কোথাও কাজ নাই। আমাদের খাবার যোগাড় করতেই কষ্ট হয়, বাসা ভাড়া দিব কোথা থেকে? তাই আটশো টাকার বাসা ছেড়ে একশ বিশ টাকার বস্তি বাসায় উঠেছি আমরা চার ভাই বোন আর মা।
খাবারের অভাবে মাথায় কোন বুদ্ধি আসে না। মানুষের বাসায় খাবার দেখে আর খাবারের ঘ্রাণ শুঁকে জিহ্বা রাক্ষসের মত হয়ে যেতো । উপোস থাকতে থাকতে নিজেদের মধ্যে নিজেরা এতো বেশি ঝগড়া করছিলাম যে আশে পাশের লোকজন আমাদের ঝগড়া মিটাতে আসতো । দু’একজনের বুদ্ধি পরামর্শ নিয়ে মা চলে যায় ইট ভাঙ্গতে আর আমি চলে যাই আরেকটি বাসায় কাজ করতে । আমি আগে যে বাসায় কাজ করতাম বেতন ধরেছিল পঞ্ঝাশ টাকা প্রতিমাসে । এখন যে বাসায় কাজ করছি তাও পঞ্চাশ টাকা বেতনে । আমাদের প্রতি বাবার উদাসিনতা এতটা অমানবিক হবে কল্পনাও করতে -পারি নাই। প্রথমদিন ইট ভেঙ্গে মায়ের অবস্থা কাহিল । রাতে প্রচন্ড জ্বর উঠেছে। উঁষধ খাওয়ানো বা ডাক্তার দেখানোর মত কোন টাকা পয়সা আমাদের কাছে ছিলনা ।
আমি অন্যের বাসায় কাজ করে রাতে ঘরে ফিরে দেখি স্ু-মঞ্ত্ু-রিমি মাকে ধরে কীদছে। জুরের ঘোরে মা অনেক আবোল-তাবোল বকছে। প্রতিবেশিদের উপকার আর আমাদের সেবায় দুদিনের মধ্যে মা ভাল হয়ে আবার ইট ভাঙ্গতে যায়। আমি প্রতিদিন চলে যাই আমার কাজে। সম্ভু-মন্ত্ররিমি কোন কাজ নেই বলে বাসায় থেকে কখনো হৈ-হুল্লোড় কখনো মারামারি করে। দিনদিন ওরা এতটাই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যায় যে, প্রতিদিন বাসায় ফেরার পরই মায়ের কাছে নালিশ আসে । মা কখনো ওদেরকে বুঝায় কখনো পিটিয়ে শাসন করে। মা আর ভাইবোনের কষ্ট দেখে রাত্রে আঁধারে আমি চোখের পানি ফেলি।
মা আর ভাইবোনের কষ্ট কিভাবে দুর করানযায় তাই ভাবি সারাক্ষণ। যে বাসায় কাজ করি তাদের বিলাসিতা দেখে আমার কষ্ট আরো বাড়ে। ইস্ একবার যদি ওদের ফেলে দেয়া খাবারটা বাসায় নিয়ে মা আর ভাইবোনকে খাওয়াতে পারতাম তাহলে অনেক ভাল হতো । দেখতে দেখতে একদিন ঘটনা খুলেই বলি ম্যাডামকে । আমার কথা শুনে ম্যাডাম প্রতিদিনই তাদের বেঁচে যাওয়া খাবারটুকু দিয়ে দিত। এরপর থেকে প্রতিদিনই আমি খাবার নিয়ে আসি এবং মা আর ভাইবোনদের খাওয়াই । খাবার আনতে আনতে বা খাবার খেতে খেতে ওদের সবার অবস্থা এতটাই পাল্টে গেছে যে, একদিন খাবার না আনলেই ওরা আফসোস করে। মোটামুটি কেটে যাচ্ছিল। কিছুদিন যেতে না যেতেই সম্ত্র-মঞ্জুর নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে নালিশ আসা শুরু করল। স্তর খারাপ ছেলেদের সাথে সারাদিন ঘুরাঘুরি করে আর মঞ্জু বস্তির বাচ্চাদের সাথে মারামারি করে। রিমি যতটুকু পারে ঘরের কাজকর্ম শেষ করে ঘরে বসে থাকে চুপচাপ। রিমির কষ্ট আমি বুঝতে পারি। হঠাৎ লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রিমি খুব কষ্ট পেয়েছে । ছোট বলেই হয়তো কষ্টের কথা কাউতে বলতে পারে না।
বিভা ও বিভ্রম সাদাত হোসাইন Pdf Download link: click here