Books
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল Pdf Download❤️(কল্লোল লাহিড়ী)
বই: ইন্দুবালা ভাতের হোটেল কল্লোল লাহিড়ী pdf – indubala bhater hotel pdf download and read online.
Author | কল্লোল লাহিড়ী |
Publisher | সুপ্রকাশ |
Category | Novel,Literature |
Hard Cover | 157 pages |
ফাইল ফরম্যাট: | Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড) |
Published Country | India |
Language | Bangla |
Indubala vater hotel free pdf download and book review
Indubala Vater hotel book review(ইন্দুবালা ভাতের হোটেল বই রিভিউ):
গল্পটা হতে পারতো দুঃস্থ নারীর, গল্পটা হতে পারতো স্বপ্নবিলাসী উচ্ছ্বল গ্রাম্য কিশোরীর স্বপ্নহরণের, গল্পটা হতে পারতো স্বেচ্ছাচারি পিতার কাণ্ডজ্ঞানহীনতার, গল্পটা হতে পারতো বিয়ের নামে বলি দানের। গল্পটা হতে পারতো দুই বাংলার মানুষের বিভেদের। অথচ অদ্ভুতভাবে গতি সেসব দিকে না গিয়ে, গল্পটা হয়ে উঠেছে এক দৃঢ়চেতা নারীর। অবলা নারীর বাধ্যতামূলক বিচরনক্ষেত্র যে রান্নাঘর, সেটাকে তৈরি করেছেন একটি প্রতিষ্ঠানে। রান্নাকে রূপ দিয়েছেন শিল্পে।
গা ভর্তি গয়না নিয়ে কিশোরি ইন্দুবালা বউ হয়ে কোলকাতায় গিয়েছিল দেশভাগের আগেই। ঠাকুমা বলে দিয়েছিল গয়নাগুলো আগলে রাখতে। তা আর পেরে ওঠে নি। দোজবরে মদখোর, নেশাখোর স্বামী পৌরুষ দিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে সেসব।ছেনু মিত্তির লেনের পুরনো নোনাধরা দোতলা বাড়ির বাইরে কোলকাতার আর কোন দর্শনীয় জিনিসের বর্ণনা ইন্দুবালার মুখে শোনা যায় না। তাকে ঘিরে রাখে খুলনার কলাপোতা গ্রাম, বোসদের পুকুর, কপোতাক্ষ নদ।
পূর্ণিমা আমাবস্যায় তিথি নক্ষত্রের ফেরে শাশুড়ির সাথে গঙ্গাস্নানে যেতেন। ভাঙ্গা গাড়ির মত আজব জিনিস নিয়ে এসেছিল তার স্বামী। প্রথমবারে দেখে ইন্দুবালা শুধিয়েছিল – “এরেই বুঝি টানা রিক্সা বলে”? শাশুড়ির সামনে স্বামীর সাথে কথা বলার রেওয়াজ ছিল না। জবাব শাশুড়িই দিয়েছেন। “দেখেছো কখনও বাপের জনমে”? তাচ্ছিল্যের নামে অপমান তার গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। উঠতে বসতে বাঙাল বলা সে বাড়ির রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল। আর রিফিউজি সে সময় কোলকাতার আকাশ বাতাস জুড়েই।
ছোটবেলায় দাদুর কাছে হ্যারিকেনের আলোয় কৃতদাসের গল্প শুনতো। দাদুর বর্ণনার সেসব মানুষগুলো দিন রাত কাজ করতো। নাওয়া নেই, খাওয়া নেই। উঠতে বসতে মার। জাতের নামে অপমান, গায়ের রঙে অপমান। কাজ না পারলেই অন্ধ কুঠুরিতে বন্ধ করে রাখা। এক এক সময় ছেনু মিত্তির লেনের বাড়িটাকে অন্ধ কুঠুরি মনে হতো ইন্দুবালার।
নিজের একান্ত কেউ ছিলনা।
“সেইসব কথা কিছুটা জানে কর্পোরেশনের ওই ছিরছিরে জল পরা কল আর বাগানের আমগাছ, নারকেল গাছ। তার ডালে কদাচিৎ এসে পরা পাখিগুলো। কান্নার শব্দ যাতে বাইরে না বেরোয় মুখের ভিতর কাপড় গুঁজে নিতেন ইন্দুবালা। শুকনো মাটিতে চোখের জল পরলে বৃষ্টি নামতো শহর জুড়ে। শাশুড়ি জল ভরা মেঘের দিকে তাকিয়ে তাঁর সংসারের মঙ্গল কামনা করতেন।”
গল্পের এ সব সত্য। এসব সত্য এক সময় ঘুরে গেল।
সবকিছু ছাপিয়ে, সব না পাওয়া, নির্যাতন আর হয়রানি কেমন যেন মিইয়ে গেল। গল্পের আসরে নির্যাতিতা ইন্দুবালা কোন গুরুত্ব পেলো না। উল্টো, এই গল্পে ইন্দুবালা হয়ে উঠেছিলেন পুরোপুরি ভিন্ন এক বলিষ্ঠ চরিত্র। অসাধারন গুণবতী, দৃঢ়চেতা, স্বাধীনচেতা, একরোখা, জেদী।
গল্পটা হয়ে উঠেছিল ভালবাসার।
অসাধারণ দক্ষতায় চমৎকার ভাবে লেখক গল্পের মোড় ঘুরিয়েছেন। রান্নার প্রতি ভালবাসা, চুলার গনগনে আঁচের প্রতি ভালবাসা, টগবগ করে ফুটতে থাকা ভাতের প্রতি ভালবাসা, খুলনার কলাপোতার প্রতি ভালবাসা,সীমান্তের ওপাড়ে যাওয়া ট্রেনের প্রতি ভালবাসা, গভীর রাতে খেতে আসা এক দঙ্গল নকশাল ছেলেমেয়ের প্রতি ভালবাসা। দুই বাংলার প্রতি ভালবাসা। এই বাংলার কলাপোতা গ্রামে তার প্রাণ ঐ বাংলায় আছে তার সন্তানেরা।
রান্নাঘর ঘিরেই ইন্দুবালার জগৎ তৈরি হলো। সে গল্প আত্মপ্রত্যয়ী নারীর। মাছওয়ালি লছমিকে দিয়ে শুরু। আর পিছনে ফিরতে হয় নি। সামনের অফিসের লোকজন খেয়ে যায়। মেসের ছেলেমেয়েরা আসে। কিছুদিন বাদে সাইনবোর্ড শোভা পায় “ইন্দুবালা ভাতের হোটেল”।
ইন্দুবালার বয়স বাড়ে। তার হোটেল বন্ধ হয় না।
পূর্ব বাংলার এক কিশোরি শশুর বাড়িতে এসে রান্না করেছিল নিতান্ত দায়ে পরে। পূর্ব বাংলার রান্না শিখেছিল ঠাকুমার কাছে। পশ্চিম বাংলার রান্নার চিনি আর পূর্ব বাংলার ঝাল ব্যালেন্স করে সাথে প্রচুর ধৈর্য আর ভালবাসার মিশ্রনে ইন্দুবালা রাঁধতেন তাঁর নিজস্ব রেসিপিতে। ইন্দুবালার মুখ ঝামটা দেয়া শাশুড়ি মারা যাবার আগে খুশি মনে ইন্দুবালাকে আশির্বাদ করেছিল, —
” সবাইকে এইভাবে খাইয়ে পরিয়ে সুখী রাখিস বউ।”
ইন্দুবালা ভাবেন তার কথাই ফলেছে। নইলে এতোগুলো মানুষকে এই বয়সে কিভাবে খাওয়াতে পারেন? বলা হয় মৃত্যুপথযাত্রীর কথা নাকি ক্ষনার বচনের চাইতেও ফলপ্রদ।
চমৎকার মুন্সিয়ানায় গল্পের অবয়ব ঘুরিয়েছেন লেখক কল্লোল লাহিড়ী। ব্যক্তিজীবনে কল্লোল লাহিড়ী চলচ্চিত্র বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন। সাথে আছে -তথ্যচিত্র নির্মাণ, টেলিভিশন ধারাবাহিক, ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য রচনা এবং নিজের ব্লগে লেখালেখি।
এপাড় ওপাড় যাদের সম্বন্ধ হয়েছে, দেশভাগে তারা পরস্পর ভীনদেশী হয়ে যায়। হৃদয়ের হাহাকার বাড়ে।
“এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া মানুষদের ভীড় বাড়ে। পাসপোর্টে ছাপ পরে। বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে ইমিগ্রেশন পার করে মানুষ। এক সময়ে যে দেশটা নিজের ছিল সেটারই বেড়া টপকায়।”
অনেক কাল পরে এপাড় বাংলায় কোলকাতার ট্রেন আসে যায়। পড়ন্ত বয়সের ইন্দুবালার ঘোরলাগা বিস্ময় জাগে। সে আটকা পরে আছে কোলকাতায়, ট্রেন ঠিক যেতে পারছে। নিজ দেশের মাটিতে এই ট্রেন চলে। এই ট্রেন কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গায়, তার বাড়ির সীমানা চেনে। গভীর আবেগে ট্রেনটা ধরে দেখে। নিজ দেশের মাটির স্পর্শ পায় যেন।
বয়স সত্তরোর্ধ হয়েও, এই উপন্যাসে কিশোরী ইন্দুবালা বিচরন করে গেছেন দাপটের সাথে। কোলকাতার ছেনু মিত্তির লেনে পুরো জীবন কাটলেও, খুলনার কলাপোতা গ্রাম আর কিশোরী ইন্দুবালাই সবসময়ের জন্য জীবন্ত ছিল।
আছে হরেক পদের রকমারি রান্না। প্রতিটা রান্নার বর্ণনা এমনই জীবন্ত, আনাড়ি যে কেউ সেসব অনায়াসে করতে পারবে। তবে, অবশ্যম্ভাবী ভাবে শর্ত হিসেবে রান্নায় ধৈর্য আর ভালবাসার মিশেল থাকতে হবে। রান্নাঘর যাদের বিরক্তির যায়গা, তারাও এই ইন্দুবালার রান্নাঘরে সেঁটে থাকতে চাইবেন। এতোই মজাদার, এতোই চমকপ্রদ,লেখার প্রতিটি আঁচড় সামনে টেনে নিয়ে যায়।
অসহায় নারীর রান্নাঘরকে, নির্যাতীতা হবার ক্ষেত্রটাকে, লেখনীর মুন্সিয়ানায় একেবারে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন না। একেবারে বাস্তব প্রয়োগ আছে এতে। ভাললাগা, প্রিয় একটি বই।
Indubala vater hotel free pdf link:
Download