যখের ধন PDF download – Jokher Dhon Pdf
আবার যকের ধন হেমেন্দ্রকুমার রায় pdf download & Review:
বই রিভিউ : ১২
বইয়ের নাম : যকের ধন
লেখকের নাম : হেমেন্দ্রকুমার রায়
ধরণ : চিরায়ত উপন্যাস
প্রকাশনী : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
মূল্য : ১২০ টাকা
পৃষ্ঠা : ৯১
“যকের ধন” বাংলা কিশোর সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। তবে এই বইটি পড়তে হলে সবার আগে জানতে হবে ‘যক’ আসলে কি? যককে অনেকে যক্ষ ও বলে থাকেন। এই যক বা যক্ষ হলো প্রাচীনকালে ধনীদের ধনসম্পদ রক্ষাকারী প্রেতাত্মা। এই যককে কিভাবে ধনসম্পদের পাহারায় বসানো হয় তা জানতে হলে রবি ঠাকুরের একটা ছোটগল্প পড়লে বুঝতে পারবেন। যেমন – যক্ষরা যে ধনসম্পদ রক্ষা করে, সেই বিশ্বাসের এক মর্মান্তিক কাহিনী শুনিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর “সম্পত্তি সমর্পন” গল্পে। ভুল করে নিজের নাতিকেই মন্দিরের পাতালে একা ফেলে রেখে পাথর চাপা দিয়েছিলেন সেই গল্পের যজ্ঞনাথ। এইভাবে যক্ষের হাতে ধনসম্পদ হস্তান্তর করে পাথরের উপর মাটি চাপা দেন। তারপর স্তুপ করলেন ইট বালি দিয়ে।
মনে হলো মাটির ভেতর একটা কান্না উঠে আসছে। যক্ষ হয়ে গেল কিশোর গোকুল ওরফে নিতাই। তাহলে বুঝতে পারছেন ধনসম্পদ রক্ষা করতে প্রাচীনকালের ধনীরা তাদের সম্পত্তি লোকালয় থেকে দূরে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখতেন। সেই সম্পদের সাথে জীবিত কবর দিতেন এক কিশোরকে। পরে তারা মৃত্যুবরণ করে প্রেতাত্মা হয়ে ধনসম্পদ পাহারা দিতেন। কি মর্মান্তিক না!
আলোচ্য কাহিনীতে সেই যকের ধনের সন্ধানের দুঃসাহসিক অভিযান “যকের ধন”।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুমারের ঠাকুর দাদা মারা যাওয়ার পর তার সিন্দুকে অন্যান্য জিনিসের সাথে ছোট একটি বাক্স পাওয়া গেল। সেই বাক্সে মিলল একখানা পুরনো পকেট বুক আর ময়লা কাগজে মোড়া এক মৃত মানুষের মাথার খুলি। বেটা কি বুড়ো বয়সে পাগল হয়ে গেছিলো নাকি? এমন জিনিস কি কেউ সিন্দুকে ভরে রাখে? মায়ের কথা মতো বাড়ির পাশের এক ঝুপড়িতে খুলিটি ফেলে দেয় কুমার। দিন কয়েক পর ঠাকুর দাদার বন্ধু করালী মুখুয্যে কুমারদের বাড়িতে আসলে সিন্দুকে থাকা জিনিসগুলো সম্পর্কে তাকে জানায় কুমার। বিস্ময়করভাবে সেই রাতেই তাদের বাড়িতে চুরি হয়। কোনোকিছু চুরি না হলেও শুধু সিন্দুকে থাকা চন্দন কাঠের বাক্সটি। সিন্দুকে এতো জিনিস থাকতে চুর কেন শুধু বাক্সটা নিয়ে গেল?
তবে কি এই বাক্সের মধ্য কি কোনো রহস্য আছে? একটা মড়ার মাথার খুলি কেনই বা ঠাকুর দাদা রাখলেন এতো যত্ন করে? কৌতূহলী হয়ে ঝুপের ভেতর থেকে খুলিটা তুলে আনে কুমার। কয়েক দিন জঞ্জালে পড়ে খুলিটার একপিঠে যে কালো রঙ মাখানো ছিলো তা উঠে গেছে। রঙ উঠে সেখানে ভেসে উঠেছে অনেকগুলো অঙ্ক। খুলের ভেতরে এই অঙ্ক কেন? এই অঙ্কগুলোর মানেই বা কি?
এগুলোর মানে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলে কুমারের মনো পড়লো সেই পকেট বুকের কথা। চোর বাক্সটা নিয়ে গেলেও পকেট বুকটি আলাদা রাখায় সেটি নিতে পারে নি। পকেট বুকেই কুমারের জন্য অপেক্ষা করেছিলো দারুণ এক চমক। সে সময় মনে পড়লো বিমলের কথা।
কুমারের চেয়ে তিন বছরের চেয়ে বড় হলেও বিমল তার চমৎকার বন্ধু। বিমলের সাহায্যেই অঙ্কগুলোর সমাধান করে তারা সন্ধান পায় যকের ধনের। সেই যকের ধন উদ্ধারে তাদের যেতে হবে আসামের এক দুর্গম পাহাড়ের ওপাশে যেখানে এক পুরোনো বৌদ্ধ মন্দির আছে। তারা কি পারবে যকের ধন উদ্ধার করতে? উদ্ধার অভিযানে বের হয় তারা আর সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে যেতে থাকে কাহিনী, যার তীব্র আকর্ষণ পাঠককে নিয়ে যাবে বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।
সেই দুঃসাহসিক রোমাঞ্চকর অভিযানে কুমার-বিমলের সঙ্গী হতে চাইলে হাতে নিতে হবে থ্রিল আর সাসপেন্সে পূর্ণ এ বইটি। কথা দিচ্ছি এলবার শুরু করলে শেষ না করে উঠতে পারবেন না।
“যকের যন” বাংলা সাহিত্যের প্রথম কিশোর ক্লাসিক। এর আগে বাংলা সাহিত্যে কম-বেশি ক্লাসিক, থ্রিলার, এডভেঞ্চার ঘরানার বই লেখা হলেও কিশোর উপযোগী এটিই প্রথম। বইটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। ১৯২৩ সালে বাংলা সাহিত্যে এতোটা চমৎকার বই বই হতে পারে তা বইটা পড়ার আগে জানা ছিলো না। প্রায় শত বছর আগের এই বই বর্তমান সময়ের কিশোর।উপন্যাসের সাথে টক্কর দিতে পারবে। কি নেই এই বইতে? থ্রিল, টুইস্ট, টেনশন, এডভেঞ্চার, সাসপেন্স, এক্সাইটমেন্ট সব কিছু মিলিয়ে পুরো প্যাকেজ।
বইটির চরিত্র মূলত পাঁচজন। প্রধান দুই চরিত্র কুমার আর বিমল। কুমারের বয়স ১৭ বছর। বিমল তার তিন বছরের বড়। সে খুব সাহসী আর বুদ্ধিমান। যকের ধন খোঁজার মূল লিডার সে। কুমার তার সহযোগী। নিতান্ত সহজ সরল চরিত্র সে। গল্পের বাকি চরিত্র বিমলের চাকর রামহরি, কুমারের পোষা কুকুর বাঘা। গল্পের ভিলেন চরিত্রের নাম করালী। সে অধিকাংশ সময়ই ছায়ার মতো থাকে। এক্টিভিটি দেখা যায় তেমন সংলাপ নেই।
“যকের ধন” বাংলা কিশোর সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। এই বইয়ে লেখকের লেখায় যে কল্পনার গভীরতা আর দক্ষতার অনন্য পরিচয় মেলে তা আজও যে কোনো বয়সী পাঠক কিংবা লেখকের চোখ কপালে তুলতে সক্ষম। তবে একটা কথা যার “চাঁদের পাহাড় ” আগে পড়েছেন তাদের কিছুট কম উপভোগ্য লাগতে পারে। কারণ “চাঁদের পাহাড়” এ প্রকৃতি, ভূগোল আর ভয়ের বর্ণনায় এটা একটু দুর্বল।
তবে গল্পের ফিনিশিংটা দেখার মতো। এর চেয়ে ভালো শেষ আর বোধ হয় হবে না। “যকের ধন” উপন্যাসটা যে এতই জনপ্রিয়তা পায় যে লেখক “আবার যকের ধন” নামের আরেকটি উপন্যাস বই প্রকাশ করেন।