Books

নাটকের স্ক্রিপ্ট ডাউনলোড (সবগুলো)

 “Paka Dekha” by Swapan Gangopadhyay script-

ক্রিং ক্রিং…

শুভ – হ্যালো.. কে বলছেন? হ্যাঁ আমি শুভ।

নন্দিতা –আমি নন্দিতা বলছি, নন্দিতা বোস।

– নন্দিতা! কে নন্দিতা?

– বারে! এরই মধ্যে ভুলে গেলেন? পরশুদিন আপনি যাকে দেখে গেলেন।

– ও হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন! আচ্ছা, আমার নম্বর কোথায় পেলেন?

-আপনার মা সেদিনই আমাকে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ” তোমার যদি শুভর সাথে কোনো কথা থাকে বলতে পারো।”

-জানেন? মায়ের আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে।

-আপনার?

-হ্যাঁ আমারও, আমরা তো এই অগ্রহায়ণেই বিয়ের কথা ভাবছি।

-আমার কিন্তু আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞেসার ছিল।

-বেশ তো, বলুন না।

– সব কথা তো আর টেলিফোনে হয় না। আমি  ভেবেছি আমি একদিন আপনার বাড়ি যাবো।

 

২.

-গান (এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে এসো এসো আমার ঘরে…)

(কলিং বেলের আওয়াজ)

এই রে বেল বাজছে, এই  খুলছি খুলছি।

– আসবো?

-ও আপনি?, আসুন আসুন।

-রবীন্দ্র সংগীত গাইছিলেন?

-ওই একটু আধটু।

-উচ্চারণটা একটু ঠিক করবেন। বাইরে থেকে শুনতে লাগছিল এসো এসো আমার ঘাড়ে এসো।

 

3rd Scene

৩.

 (ক্রিং ক্রিং)

 -নিশ্চয়ই নন্দিতার ফোন। বড় ভয় করছে যদি নাকচ করে দেয়? আজই ফাইনাল মানে, পাকা কথার দিন। মাকে দেবো? না নিজেই ধরি যা  থাকে কপালে। হ্যালো, আমি মা বলছি, না সরি, সু….সু….শুভ বো…বো…বো…বলছি।

-আপনার কি শরীর খারাপ? গলা কাঁপছে।

link- মঞ্চ নাটকের স্ক্রিপ্ট pdf

script 2 : ছন্দ নাটক: টাকার আপদ

(সুকুমার রায়ের ছোট গল্প অবলম্বনে রচিত)
নাটকের চরিত্রঃ জমিদার, মুচি এবং ঘোষক
(ঘোষকঃ)
আজকে আমি তোমাদের
বলব একটা গল্প
শুনে কিন্তু তোমরা
চিন্তা করবে অল্প।
অনেক দিন আগের কথা
বলছি আমি শোন,
এই যে তুমি, আমার কথায়
হাসছ বলো কেন?
ঐ যে দেখ, আসছে কে?
পরিচয় দেই তার
বিশাল বড় ধনী সে
বিরাট জমিদার।
এত টাকার মালিক তিনি
রাখার নেই যে স্থান,
টাকা আছে সুখ নেই
এই হলো তার গান।
এই গল্পের আরেকজন
দরিদ্র এক মুচি,
জুতা সেলাই করে তার
চলে রুটি রুজি।
গরীব! তাতে হয়েছে কি?
সুখী মুচি ভাই,
মুখে শুধু গান তার
অভিযোগ যে নাই।
(জমিদারঃ)
রোজ আমি এই পথে
যে সময়ই যাই
মুচিটার মুখে শুধু
গানই শুনতে পাই।
তোমরাই বল তো
সুখী কেন এতো সে?
(জমিদারঃ মুচির উদ্দেশ্যে)
এই মুচি, দেখোতো
জুতা বোধ হয় ছিঁড়েছে।
(মুচিঃ)
হুজুর এটা বলেন কি?
এটা তো নতুন জুতো,
এক্ষুনি ঠিক করে দি
এমন সারিয়েছি কতো।
(জমিদারঃ)
আচ্ছা মুচি বলতো তোমার
রোজগার কত দিনে?
(মুচিঃ)
কত আর হবি হুজুর
পঞ্চাশ একশ হবিনে।
(জমিদারঃ)
তাই নাকি? এতো কম?
সংসারটা চলে তো?
(মুচিঃ)
তা চলে যায় এক রকম
কষ্টে শিষ্টে যতো।
(জমিদারঃ)
তা তো বুঝি বেশ
সংসারে আর আছে কে?
(মুচিঃ)
সংসারটা বড়ই বেশ
আমি, বৌ আর তিন মেয়ে।
এই যে হুজুর হয়ে গেছে
এই যে জুতার পাটি,
সেলাই মজবুত হয়েছে
ছিড়বে না আর, গ্যারান্টি।
(জমিদারঃ)
বাহ হাতের কাজ তো বেশ
চমৎকার তোমার,
আর মুখের গানও খুব
পছন্দ হয় আমার।
এই নাও তোমায় দিলাম
টাকা এক হাজার,
কাজে দেবে, তোমারতো শুনি
টানাটানির সংসার।
(মুচিঃ)
সত্যি হুজুর, দিলেন তো?
কেমন সন্দেহ জাগে,
এতো টাকা একসাথে তো
দেখিনি আর আগে।
(ঘোষকঃ)
টাকা দিয়ে জমিদার
চলে যায় বাড়ী,
মুচির তো এদিকে
খুশীতে গড়াগড়ি।
কি করবে টাকা দিয়ে
পায় না ভেবে কূল,
পথে যদি যায় হারিয়ে
চিন্তায় ব্যাকুল।
রাত্রিতে ঘুম নাই
এই বুঝি চোর এলো,
মুচির ঘর থেকে
টাকা নিয়ে গেলো।
কাজে তার মন নেই
মুখে নেই গান,
টাকাটার উপরেই
যত্তো অভিমান।
ঠিক করে টাকাটা
ফেরত সে দেবে,
এক্ষুনি জমিদার
বাড়ী সে যাবে।
(মুচিঃ)
এই যে হুজুর এই নিন
আপনার টাকা,
গরীবের বাড়ীতে
যায় না তো রাখা।
(জমিদারঃ)
টাকা তুমি চাও না?
বলছ কি এটা?
তুমি একটা পাগল নাকি
ঠিক আছে তো মাথা?
(মুচিঃ)
মাথা হুজুর ঠিকই আছে
সুখ গেছে চলে,
টাকার আপদে আমি
গান গেছি ভুলে।
(ঘোষকঃ)
হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচল মুচি
টাকা ফেরত দিয়ে,
বাড়ীর পথে পা বাড়াল
গান গুনগুনিয়ে।
এতো দিনে বুঝল এবার
ধনী জমিদার,
টাকা আছে কড়ি আছে
সুখ কেন নেই তার।
(জমিদার টাকাটা ছুড়ে ফেলে দেবে)
টাকাই হলো যত
সব নষ্টের গোড়া,
সুখ কেড়ে কত
সময় থাকতে তাড়া।
টাকাই সর্বনাশের মূল
ডেকে আনে বিপদ
কি? বুঝলেনতো এবার
টাকাই যে আপদ।
(টাকার আপদ নাটকটি অ্যারিজোনার শিকড় বাংলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সেপ্টেম্বর ১৬, ২০০৬ তারিখে তাদের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে। এবং একইদিনে অ্যারিজোনা থেকে প্রকাশিত বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকা “সিঁড়ি” তে প্রকাশিত হয়।

নাটকের স্ক্রিপ্ট নামঃ টক-শো

চরিত্র সমুহ : উপস্থাপক , বিজ্ঞানী , কবি , নায়িকা , দর্শক

মোট ডায়লগ ঃ ৭৮

বিজ্ঞানী ঃ ১৯

নায়িকা ঃ ১৪

কবি ঃ ২০

দর্শক সারি থেকেঃ ০৪

উপস্থাপক ঃ ২০

[একজন উপস্থাপক এবং তার সামনের তিনটি চেয়ারে বসা দু’জন মধ্যবয়স্ক লোক এবং একজন সুন্দরী তরুণী। তরূণীর হাতে চিরুণী ও মেকাপ-বক্স, দর্শক কে দেখা যাবেনা। তারা পর্দার পিছন থেকে ডায়লগ দিবে।]

উপস্থাপক ঃ সুধী দর্শকমন্ডলী, উপস্থিত ভাইয়েরা ও সহপাঠিনীরা, আমন্ত্রণ জানাচ্ছি . . .

দর্শক ঃ আবে ঐ, বোন বল।

উপস্থাপক ঃ এ্যা!! ইয়ে মানে উপস্থিত ভাইয়েরা এবং তাদের বোনেরা, আজকের আমাদের এই ‘টক শো’ অনুষ্ঠানে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি আমাদের প্রিয়, আপনাদের প্রিয়, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ, আমাদের হৃদয়ের . . .

দর্শক ঃ ঐ থাম! সামনে আগা।

উপস্থাপক ঃ ও ইয়ে, মানে . . .। হ্যা, তো যা বলছিলাম। আমাদের প্রথম অতিথি, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বদরুল হাসান।

বিজ্ঞানী ঃ (গম্ভীর মুখে) পি এইচ ডি।

উপস্থাপক ঃ ধন্যবাদ . . . আমাদের দ্বিতীয় অতিথি- বিশিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তি, বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ, ছোটদের ভালবাসার, বড়দের স্নেহের পাত্র, জনদরদী, প্রত্যুৎপন্নমতি, ফুলের মত চরিত্রের অধিকারী . . .

(দর্শক সারি থেকে কেউ ছেঁড়া সেন্ডেল ছুঁড়ে মারবে)

এ্যা, ইয়ে, মানে দ্বিতীয় অতিথি হলেন কবি শাহ্ মোঃ কলিম।

কবি ঃ একি! মঞ্চে সেন্ডেল! আর সেন্ডেলের এ কি দশা? স্যান্ডেল দেখেই তো বোঝা যায়, এ কোনো হতদরিদ্র নিঃস্ব লোকের একমাত্র সম্বল। আহা . . . এ দেখেই তো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, যার জন্ম আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে, তিনি বলেছেন,

(বিজ্ঞানী গম্ভীর ও তরুণী বিরক্ত মুখে তাকাবে। উপস্থাপকের মাথায় হাত।)

হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করিয়াছ মহান,

তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান . . .

উপস্থাপক ঃ স্যার! স্যার! থামেন, স্যার! আমাদের অনুষ্ঠান বড়ই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য।

কবি ঃ সেকি! কবিতাটা আমার পুরো মুখস্ত ছিল।

উপস্থাপক ঃ এবারে পরিচয় করিয়ে দিই তৃতীয় ও শেষ অতিথিকে। যিনি একাধারে সুন্দরের প্রতীক, যাঁর হাত দ্বারা হয় শিল্পের প্রতিফলন, লক্ষ্য-কোটি হৃদয় যাঁর এক হাসিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, যিনি হচ্ছেন আমাদের সকলের রাতের স্বপ্ন, দিনের দিবাস্বপ্ন, মধ্যাহ্নের অনুভূতি, অপরাহ্নের ছায়াবীথি, পাবলিকের হৃদয়ের ধরকন, চলচ্চিত্র নায়িকা মিস. চন্দ্রিমা।

দর্শক ঃ কিরে? এইবার এত কম কইলি . . .

(মিস. চন্দ্রিমা দর্শকের কাতারের দিকে হাত নাড়বেন)

কবি ঃ আমি মিস. চন্দ্রিমাকে একটা কবিতা শোনাতে চাই।

নায়িকা ঃ ইস্ . . .

বিজ্ঞানী ঃ নাহ্! এইসব কবিদের নিয়ে আর পাড়া গেলনা। ওলয়েজ তাদের সস্তা কিছু জাহির করা চাই।

কবি ঃ এই যে বদরুল ভাই! কি বলছেন আপনি? কাকে সস্তা বলছেন? জানেন, আমার ‘ওগো এই সস্তা বসুমিতা’ কবিতার বই কয় কপি বিক্রি হয়েছে?

উপস্থাপক ঃ জ্বি আমি জানি। গত বইমেলায় সতের হাজার পাঁচশত তিপ্পান্ন কপি বিক্রি হয়েছিল।

কবি ঃ তাহলেই বুঝে নিন? ম্যাডাম কি আমার কবিতার বইটি পরছেনে?

নায়িকা ঃ হ্যা পরছে। কবিতাগুলি চমৎকার

বিজ্ঞানী ঃ ম্যাডাম কি মহান বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের ফিলোসোফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া মাথেম্যাটিকা বইটি পরছেনে?

নায়িকা ঃ পরেছি। কাহনিটি খুব দুঃখের। লাস্ট এ নায়ক নায়িকার মিল হয় না। ………!! উপস্থাপক ভাইয়া………।

উপস্থাপক ঃ ইয়ে, ম্যাডাম, উপস্থাপকটা ঠিক আছে। ভাইয়াটা বাদ দেন।

নায়িকা ঃ উপস্থাপক মামা, আমার ‘বস্তা কেন সস্তা’ ছবিটিও কিন্তু খুব হিট ছিল। ওটার কথা . . . তো . . . বলছেন . . . না . . . মামা!

উপস্থাপক ঃ ইস্! আবার মামা ক্যান?

দর্শক ঃ ঠিকই আছে।

উপস্থাপক ঃ যাহোক, তিনবার সেন্সর বোর্ডের দরজায় আছাড় খেয়ে চতুর্থবার ঘুষ দিয়ে ছাড়া পায় ‘বস্তা কেন সস্তা’ ছবিটি। মুক্তি পেয়ে সাথে সাথেই হয় সুপার হিট। এখনও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আপনারা শুনতে পাবেন,

‘পড়েনা চোখের পলক,

কি তোমার বস্তার ঝলক…’

বিজ্ঞানী ঃ এই ব্যাটা উপস্থাপক! আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ কি? (কবির দিকে ইঙ্গিত করে) এইসব সিলি লোকজনের মধ্যে আমার কি কাজ?

কবি ঃ এই যে বদরুল ভাই, আপনি কিন্তু বেশি বলছেন।

উপস্থাপক ঃ আহা! কুল ডাউন প্লিজ। বদরুল হাসান সাহেব আপনার ইদানীংকার গবেষণার ব্যাপারে আমন্ত্রিত দর্শকদের কিছু বলুন।

বিজ্ঞানী ঃ (প্রসন্ন মুখে একটু নড়ে-চড়ে বসে) . . . Very good question. At this moment I am working on an emerging theory………..

কবি ঃ আহ্হা! একি? ইংরেজি ভাষা কেন? মাতৃভাষা বাংলায় বলতে পারেননা?

বিজ্ঞানী ঃ কেন? তুমি ইংরেজি বোঝনা? আমাদের ঐসব সাইন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট ইংরেজিতেই হয়।

কবি ঃ তা তো হবেই! আরে . . . মনে করতেছেন কিছু বুঝিনা? বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরা অত ভাল হইলে কি আর হাইড্রোজেন, অক্সিজেনের সংকেত H2, O2 – এইভাবে পড়া লাগত? উদযান এর সংকেত উ২, অম্লযান অ২- এইভাবেই পড়তে পারতাম।

বিজ্ঞানী ঃ এই ডাম্প স্টুপিড-টা টা বলে কি? আরে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন কি তোমার বাপ-দাদার সম্পত্তি, যে ওগুলোকে তুমি উদ্যান অম্লযান বলবে আর সংকেত দেবে উ২, অ২?

(উপস্থাপক নায়িকার কাছে গিয়ে বসার চেষ্টা করবে)

নায়িকা ঃ এই যে উপস্থাপক মামা! আপনি কিন্তু বলতেছি সইরা বসেন। আপনার চেয়ার ছিল কবি সাহেবের পাশে। চেয়ার উঠায়া বেহায়ার মত আমার পাশে আইসা বসছেন! রিয়াজ আর ফেরদৌস ছাড়া আর কাউকে আমি এত ক্লোজে আসতে দেইনা।

উপস্থাপক ঃ ওহ্! ইয়ে, দর্শকমন্ডলী, এবারে আমরা কবি শাহ্ মোঃ কলিম- এর কাছে জানতে চাইব উনার বর্তমান কার্যক্রম সম্বন্ধে . . .

কবি ঃ (প্রসন্ন মুখে একটু নড়ে-চড়ে বসে) জ্বি আমি বর্তমানে ‘বিহিত্য’ নিয়ে কাজ করছি।

উপস্থাপক ঃ বিহিত্য? শব্দটাতো নতুন মনে হচ্ছে! তা এই বিহিত্যের মহত্বটা কি?

কবি ঃ মানে আমি দেখলাম, নিউটন আর আইনস্টাইনের পরে বিজ্ঞান তো থেমে আছে। আর সাহিত্য নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু করছে। তাই ভাবলাম বিজ্ঞান আর সাহিত্যের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ বিহিত্য বানানো যায় কিনা!

উপস্থাপক ঃ কি রকম? কি রকম?

কবি ঃ এই যেমন নিউটনের গতি সম্পর্কিত তিনটি সূত্রকে বিহিত্যে ঠিক এইভাবে প্রকাশ করা হয় . . .

(পকেট থেকে কাগজ বের করে)

বাহ্যিক কোন বল না করিলে প্রয়োগ,

স্থির বস্তুর অবস্থান যে হবেনা বিয়োগ।

গতিশীল বস্তু যাবে সুষম দ্রুতিতে,

পরিবর্তন হবেনা তার চলমান গতিতে।

পরিবর্তনের হার বস্তুর ভরবেগের,

নির্ভর করে এর উপর প্রযুক্ত বলের।

যদিও দু’জনের সম্পর্ক সমানুপাতিক;

তারপরও ঘটনা রয়েছে একাধিক।

বল প্রয়োগ করা হবে যেদিকে–

বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন ঘটবে সেদিকে।

যদি কোন বস্তুকে দেওয়া হয় ক্রিয়া,

অবশ্যই সে দেবে তার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া।

যদি না দিত সে প্রতিক্রিয়া

এক বস্তু যে যেত আরেক বস্তু ভেদ করিয়া।

নায়িকা ঃ ওয়া . . . ও!

কবি ঃ ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।

বিজ্ঞানী ঃ লোকটা দেখি বদ্ধ পাগল! সাইন্স এর কি বড় অপমান! মহান বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটনের নাম ধরে ডাকছে, তার সুত্র কে কবিতা বানাচ্ছে! বলি, সাইন্স কি এতই সোজা?

নায়িকা ঃ ইয়ে কবি ভাইয়া, আমার সিনেমা ‘শাশুড়ী ছিনতাই’- এ কিন্তু কবিতাটা আমার লিপ-এ গান হিসেবে যাবে। মিউজিক ডাইরেক্টর আর রহমান-কে বললেই একটা মিউজিক দিয়ে দিবে।

বিজ্ঞানী ঃ (রেগে) হোয়াট? স্যার নিউটনের সূত্র যাবে বাংলা সিনেমায় গান হয়ে? হায় আল্লাহ্! কেন একটা আপেল তুমি স্যার নিউটনের মাথায় ফেলেছিলে? হোয়াই?

কবি ঃ বদরুল ভাইয়ের সমস্যাটা কোথায়? এতে তো বিজ্ঞানের প্রচার হবে। আর্টসের-কমার্সের ছেলেমেয়েরা, এমনকি রিক্সাওয়ালারাও নিউটনের সূত্র জানতে পারবে!

বিজ্ঞানী ঃ এই ব্যাটা কবি বেশি কথা বলবেনা। You and only you are responsible for this.! তোমার বিহিত্যের একটা বিহিত যদি আমি না করছি, তাহলে . . . তাহলে . . .

উপস্থাপক ঃ তাহলে বদরুল সাহেব তাঁর নাম বদরুল পাল্টিয়ে ‘বদ’ রেখে দিবেন। সে যাকগে, বদরুল সাহেব, আপনি কি মনে করেন- বিজ্ঞানই সব?

বিজ্ঞানী ঃ অবশ্যই! এই দুনিয়াটা তো দাঁড়িয়েই আছে বিজ্ঞানের উপর। নাহলে ঐ সাহিত্য আর সিনেমা তো সব ভুলে ভরা! Full of errors!

কবি ঃ কেন? সাহিত্যে ভুল কই?

বিজ্ঞানী ঃ হুহ্! সাহিত্যে ভুল নেই মানে? আরে রবীন্দ্রনাথেই তো সবচেয়ে বড় ভুল!

উপস্থাপক ঃ কি বলেন! রবীন্দ্রনাথে ভুল!

বিজ্ঞানী ঃ নাহলে আর বলছি কি? রবীন্দ্রনাথ বলেছে, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি কে নিবে মোরে বাহিরে . . .’। ঘরের চাবি ভাঙলে তালা খুলবে কেমন করে? How come? বলা উচিত- ‘ভেঙে মোর ঘরের তালা কে নিবে মোরে বাহিরে’। আর সিনেমার কথা তো বাদই দিলাম। উপস্থাপক কী যেন বলল, ‘পড়েনা চোখের পলক, বস্তার কী ঝলক।’ আরে ঝলকানিতে তো পলক আরও বেশি পড়বে।

কবি ঃ আরে এইসব যদি আপনি বুঝতেন, তাহলে কি আর দুঃখ ছিল? গানের একটা লাইনই ঠিকমত বলতে পারেননা, আসছেন রবীন্দ্রনাথের ভুল ধরতে!

বিজ্ঞানী ঃ তুমি মনে হয় সব কিছুই বেশি বোঝ?

(উপস্থাপক একটা গোলাপ বুক-পকেট থেকে বের করে নায়িকার দিকে বাড়িয়ে দিতে যাবে)

নায়িকা ঃ এই যে উপস্থাপক ভাই! আমি কিন্তু last warning দিতাছি। সইরা বসেন।

উপস্থাপক ঃ আহা! এমুন কর ক্যান! আমি কি দেখতে খারাপ?

বিজ্ঞানী ঃ মানুষের পূর্বপুরুষ যে বাঁদর ছিল, সেটা বোঝার জন্য ডারউইনের তত্ত্ব পড়া লাগেনা। তোমার চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।

(দর্শক সারি থেকে তালি শোনা যাবে/শাবাস! মারহাবা! মারহাবা!)

কবি ঃ এ ব্যাপারে আমিও বদরুল ভাইয়ের সাথে একমত। সত্য ও ন্যায়ের পেছনে আমি সদা দণ্ডায়মান।

নায়িকা ঃ সব, উপস্থাপক মামা, আমার শ্যুটিং আছে। যা জিজ্ঞেস করার তাড়াতাড়ি করেন।

উপস্থাপক ঃ ও হ্যাঁ। ইয়ে, নায়িকা চন্দ্রিমাকে তার নিকটবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সম্পর্কে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।

নায়িকা ঃ হিঃ হিঃ। আগামী ঈদে আমার অভিনীত ‘তোমারে ভালবাসতে বাসতে মইরা গেলাম – Romeo Must Die” সিনেমাটি রিলিজ পাবে। সিনেমার কাহিনীটা কিন্তু মর্মস্পর্শী। নায়ক নায়িকাকে ভালবাসে, নায়িকা ভালবাসে নায়কের খালাত ভাইকে। নায়কের খালাত ভাই নায়িকার মামাত বোনকে, মামাত বোন নায়কের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়কে। দুঃসম্পর্কের আত্মীয় নায়িকাকে . . . মানে . . . মানে . . . কাহিনীটা পুরোপুরি . . .

কবি ঃ থাক থাক। ম্যাডাম আর কষ্ট করবেন না। আমরা বুঝতে পারছি গল্পটা প্যাথেটিক।

নায়িকা ঃ না না! এটা রোমান্টিক।

উপস্থাপক ঃ সিনেমাটা আসলে authentic. মানে ভাই তার বোনকে ভালবাসে। মানে ভ্রাতৃত্ববোধ।

নায়িকা ঃ দূর ব্যাটা চুপ কর।

বিজ্ঞানী ঃ সিনেমাটা তো মনে হচ্ছে খুবই ট্র্যাজিক। ভাল বাসতে বাসতে মরে গেলাম। Must be লাস্ট সিনে কেউ মারা যায়। Must be someone is going die.

নায়িকা ঃ বিজ্ঞানী চাচা! কে বলছে আপনি বিজ্ঞান ছাড়া কিছু বুঝেননা? কি চমতকার সিনেমেটিকাল সেন্স! উপস্থাপকটা তো একটা গাধা!

উপস্থাপক ঃ এইটা কিন্তু ঠিক হইতাছেনা, আমাকে বান্দর-গাধা বলা হইতাছে।

কবি ঃ ছাগলটা বাদ পড়ছে। ঐটা আমার তরফ থেকে লাগায়া নাও।

বিজ্ঞানী ঃ (কবিকে) অন্যকে নিজের মত করে ভাবা ঠিক না।

কবি ঃ বদরুল ভাই কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি কইরা ফালাইতেছেন। বয়সে বড় বইলা সম্মানটা রাখছি।

বিজ্ঞানী ঃ (উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে) হুমকি দিচ্ছ? Are you trying to scare me? আমার মুখ না হয় বন্ধ করলা, পাবলিকের মুখ বন্ধ করবা কিভাবে? পাবলিক সত্য কথা বলবেই। And the truth is যে তুমি একটা ছাগল। you are a big big goat.

(কবিও উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে)

নায়িকা ঃ বিজ্ঞানী চাচা তো ডায়লগও খারাপ দেয়না।

কবি ঃ বদরুল ভাই আপনে আপনার কথা ফিরায়ে নেন।

বিজ্ঞানী ঃ আইনস্টাইনের থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি চেঞ্জ হতে পারে, কিন্তু তোমার সম্পর্কে আমার মতামত বদলাবেনা। never.

(কবি নায়িকার হাত থেকে চিরুনি নিয়ে বিজ্ঞানীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাবে। মাঝখানে উপস্থাপক চলে আসবে)

কবি ঃ ব . . .দ . . . রু . . . ল . . . ভা . . . ই

(কবি উপস্থাপককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবে, উপস্থাপক নায়িকার গায়ে ধাক্কা খাবে)

নায়িকা ঃ কি? আমারে ছুঁইছিস! তরে যদি আমি তরকারির চামচের এক চামচ ডাস্টবিনের ময়লা না খাওয়াইছি . . .

(নায়িকা উপস্থাপককে ধাওয়া করবে)

কবি ঃ (চিরুনি হাতে) ব . . .দ . . . রু . . . ল . . . ভা . . . ই

বিজ্ঞানী ঃ পালাই।

[উপস্থাপক মঞ্চত্যাগ করবে, তার পেছনে নায়িকা। বিজ্ঞানী মঞ্চত্যাগ করবে, তার পেছনে চিরুনি হাতে কবি]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!