Bengali to English Translation Book Pdf Download (All)
অনুবাদ সাহিত্য Pdf Download All Books
onubad book pdf – বাংলা অনুবাদ বই সংকলন pdf – অনুবাদ সাহিত্য pdf free download link:
২০০টি অনুবাদ বইয়ের ডিরেক্ট পিডিএফ লিংক
আরও পড়ুন-
আমাদের বেশিরভাগেরই মোগল যুগের ইতিহাস জ্ঞান আওরঙ্গজেবে পৌঁছেই শেষ হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। যদিও আওরঙ্গজেবের পর মোগল সম্রাটরা নখদন্তহীন বাঘে পরিণত হন, তবু ১৭০৭ এর পর আরও ১৪ জন মোগল প্রায় ১৫০ বছর মসনদে ছিলেন! হ্যাঁ, তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে কিন্তু মসনদে যে তাঁরাই ছিলেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই। পূর্ববর্তী ৬ শাসক যেখানে বাংলা থেকে কাবুল পর্যন্ত শাসন করেছেন সেখানে পরবর্তী শাসকগণের কারও আওতায় ছিল শুধু দিল্লী, আবার কারও শুধু বাসস্থান লাল কেল্লা । এইসব কম আলোচিত মোগল শাসকদের নিয়েই মাহমুদুর রহমান লিখেছেন তাঁর মোগল ইতিহাস নিয়ে দ্বিতীয় বইটা।
বইটা শুরু হয়েছে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর ঠিক পর থেকে যখন বাবার সিংহাসন দখলের জন্য তিন ভাইয়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় আর শেষ হয়েছে শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের রেঙ্গুনে নির্বাসনের মধ্য দিয়ে। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মোগল শাসন আর আক্ষরিক অর্থে মোগল শাসন থাকেনি কেননা ততদিনে ভারতবর্ষে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে শিখ, জাঠ, মারাঠারা ; প্রায় স্বাধীন নবাবী গড়ে উঠেছে বাংলা, অযোধ্যা আর দক্ষিণাত্যে ; বাইরে থেকে এসে জাঁকিয়ে বসেছে ইংরেজ আর ফরাসিরা ; ঘন ঘন আক্রমণ শুরু হয়েছে আফগানিস্তান থেকে। ফলে মোগল ইতিহাসের সরল রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে অনেকগুলো পার্শ্বরাস্তা, অনেক কানাগলি। এই বইয়ে লেখক আমাদের সেই মূল সরল রাস্তার পাশাপাশি বাকিসব পার্শ্ববর্তী রাস্তা আর কানাগলির গল্পও বলেছেন।
তো বইটা আমাকে কি দিল? সহজ কথায় বললে আওরঙ্গজেব পরবর্তী মোগল সম্রাটদের সাথে বইটা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এতদিন পরবর্তী মোগলদের সাথে সম্পর্কিত কেবল দুইটা বিষয়ই জানা ছিল ( পানিপাতের তৃতীয় যুদ্ধ এবং সিপাহী বিপ্লব), কিন্তু বইটা আমাকে এর বাইরে আরও অনেককিছু জানতে সাহায্য করেছে। আবার পানিপাতের যুদ্ধ বা সিপাহী বিপ্লব সম্পর্কে যা জানতাম না তা তেমন জানিয়েছে তেমনি জানা বিষয়গুলো নতুন আঙ্গিকে দেখতে শিখিয়েছে মোগলনামা। পানিপাতের যুদ্ধে আবদালীর পরিবর্তে মারাঠারা জিতলে যে পুরো উপমহাদেশের চিত্র ভিন্ন হয়ে যেত বা সিপাহী বিপ্লব যে আদৌ ঐ অর্থে ‘ স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ছিল না বা মোগলদের পতনের কারণ যে শুধু তাঁদের অযোগ্যতা আর সুরা, নারী নিয়ে মেতে থাকাই না বরং আরও গভীর কারণ বিদ্যমান বা সিরাজের পরই যে একদিনেই ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের হাতে আসে নি – এসব বিষয় বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে বইটা। আর মোগলদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, আমলাতন্ত্রের জেঁকে বসা এসব তো ছিলই।
ইতিহাসে কম আলোচিত বা অনালোচিত কিছু ব্যক্তির সাথেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বইটা। জাহাঙ্গীর – নুর জাহান বা শাহজাহান – মমতাজের কথা তো আমরা জানি কিন্তু জাহানদার – লাল কুয়ারের কথা কি জানি? বইটা আমাকে জানিয়ে এই অনালোচিত মোগল প্রেমোপাখ্যানের কথা। এছাড়া সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়, চেন কালিজ বা নিযাম, রণজিৎ সিং, বেগম সমরু, মণিকর্ণিকা প্রভৃতি চরিত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বইটা।
সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ বই pdf – বইয়ের ভাষার ব্যাপারে যদি আসি তো বলা যায় লেখক প্রথম পর্বের মতো সহজ ভাষাই ব্যবহার করেছেন। কখনও গল্পচ্ছলে, কখনও বৈঠকী আমেজে তিনি মোগলদের কাহিনী শুনিয়েছেন। কিন্তু যে ব্যাপারটা নজরে পড়েছে তা হলো লেখক প্রথম পর্বে মোগল শাসকদের সর্বনামে সম্মানসূচক চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার না করলেও এই পর্বে করেছেন। প্রথম পর্ব পড়ার সময় চন্দ্রবিন্দুর অনুপস্থিতি নিয়ে আমি ভেবেছিলাম কিন্তু সেই চন্দ্রবিন্দু যে এখানে পাব তা ভাবিনি। আরেকটা ব্যাপার হলো লেখক বেশ কয়েক জায়গায় সর্বনামে সে আর তিনি গুলিয়ে ফেলেছেন। একই ব্যক্তির সর্বনাম হিসেবে এক জায়গায় সে আর আরেক জায়গায় তিনি ব্যবহার করেছেন। এমনকি একই বাক্যে সে আর তিনির মিশ্রণও দেখা গিয়েছে।
ভূমিকাতে লেখক জানিয়েছেন যে পাঠকের চাপে বইটা তিনি দ্রুত শেষ করতে বাধ্য হয়েছেন। সেই কারণেই কি না জানি না, প্রোডাকশনে তাড়াহুড়ো আর অমনোযোগ নজরে এসেছে। প্রচ্ছদটা প্রথম পর্বের তুলনায় সাদামাটাই বলতে হবে। আর বানানের কথা কি আর বলব, প্রায় প্রতি পৃষ্ঠায় এক বা একাধিক ভুল বানান দেখা গিয়েছে, এমনি কোথাও কোথাও বাক্যের গঠনও এলোমেলো। প্রুফ রিডিংয়ে আরেকটু মনোযোগী হলে এই সমস্যা এড়ানো যেত।
যাহোক, মোটের উপর লেখকের বইদুটো নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। লেখক যে মোগলদের নিয়ে আরও লিখতে ইচ্ছুক তা বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ পেয়েছে। তো আমি রইলাম সেই বইয়ের অপেক্ষায়, আর ততক্ষণে আপনারা যারা এখনও বইদুটো পড়েননি তারা শুরু করতে পারেন সেই মোগলদের ইতিহাস যাঁদের বংশের বিশজন সম্রাট ভারতবর্ষ শাসন করেছে তিনশত বত্রিশ বছর, যাঁরা ঘোড়া নিয়ে বীরের মতো এলেও ভারতবর্ষ ছেড়েছে গরুর গাড়িতে মুখ লুকিয়ে।