আজকে আমরা একটা আত্ম-উন্নয়নমূলক মেডিটেশন বই রিভিউ করব. বইটির নাম ডোপামিন ডিটক্স. থিবো মেরিস এর লেখা বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন প্রিতম ও আফতাব উল হক. নিজের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, অনিয়মিত অগোছালো কাজকর্ম থেকে দূরে রাখতে বইটি অনেকটাই কার্যকর হবে।
আপনার আমার বিক্ষিপ্ত মনকে বশে আনার একটা দিক-নির্দেশনা মূলক বই হচ্ছে এ DOPAMINE DETOX। বিশেষ করে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, গেমস, গল্প গুজব, সময় নষ্ট করা প্রিয় মানুষগুলোর জন্য এটা একটা চিকিৎসামূলক বই.
বই: ডোপামিন ডিটক্স
লেখক: থিবো মেরিস
অনুবাদ: প্রিতম মুজতাহিদ
ফরম্যাট: pdf (পিডিএফ)
এই রিভিউতে আমরা তা জানব –ডোপামিন ডিটক্স বইটির নামকরণ অর্থাৎ ডোপামিন ও ডোপামিন ডিটক্স বলতে কি বুঝায়,বইটির বিষয়বস্তু অর্থাৎ বইটিতে কি কি আলোচনা করা হয়েছে, বইটির লেখক সম্পর্কে জানব, ফাইনালি বইটির বিস্তারিত রিভিউ জানবো এবং বইটি পড়তে কেমন সময় লাগবে, বইটির অনুবাদের মান কেমন, কোন বুকশপে বইটি এভেলেবেল রয়েছে ও কিভাবে ফ্রিতে পিডিএফ ডাউনলোড করে বইটি পড়া যায় তা জানব।
তো বন্ধুরা আমাদের আজকের এই রিভিউ শুরু করা যাক-
বইটির নামকরণ: ডোপামিন ও ডোপামিন ডিটক্স বলতে যা বুঝায়-
Dopamine হচ্ছে একধরনের নিউরোট্রান্সমিটার। অর্থাৎ মস্তিষ্ক থেকে বের হওয়া এক বিশেষ বস্তু। যা আমাদেরকে কাজ করতে জোর প্রদান করে। অর্থাৎ, সম্ভবত আমাদের অস্তিত্বের জন্যে ডোপামিন দায়ী।
Detox বলতে বিষাক্ত বা অস্বাস্থ্যকর পদার্থ থেকে শরীরকে রক্ষা করা।
মোদ্দা কথা, ডোপামিন একটা উত্তেজনামূলক বার্তা পাঠায় যা আমাদেরকে বলে, এই কাজটা করলে আপনি একটা ‘ rewarding experience’ এর মধ্য দিয়ে যেতে পারবেন।
আরো বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে- ডোপামিন হলো আমাদের মস্তিষ্কের অনেকগুলো নিউরোট্রান্সমিটারের একটি। এটি আমাদের মস্তিষ্কের “রিওয়ার্ড সিস্টেমের ” গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রোমাঞ্চকর কাজের পর এটি নিঃস্বরিত হয় এবং একই কাজ পূনরায় করার জন্য আমাদের উৎসাহিত করে। আমরা সেই কাজে আসক্ত হয়ে পরি। সেটি ভালো বা খারাপ উভয়ই হতে পারে। বর্তমান প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে নেতিবাচক দিকটাই বেশি।
বইটিতে আলোচনা করা হয়ে হয়েছে কিভাবে ডোপামিন ডিটক্সের মাধ্যমে এই সকল নেতিবাচক আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মাত্র ৪৮ ঘন্টার একটি প্লান আপনাকে ঘনঘন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার অভ্যাস পরিহারে সাহায্য করতে পারে।
প্রথমে, আলোচনা করা হয়েছে বইটি কাদের উপকারে আসবে। যাদের মন বিক্ষিপ্ত থাকে। কাজে মনোযোগ করতে পারেন না। নির্দিষ্ট কাজে ফোকাস করতে ব্যর্থ হন।
এরপর, বইটি কিভাবে তাদের হেল্প করবে তা শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে। আমরা ঠিক কি কারনে মনোযোগ হারাই, বিক্ষিপ্ত থাকি এবং তারসাথে ডোপামিনের সংশ্লিষ্টতা বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর, কিভাবে ৪৮, ২৪ বা সল্পমাত্রার ডোপামিন ডিটক্সের মাধ্যমে আমরা এসব থেকে মুক্তি পেতে পারি তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একদম শেষ অধ্যায়ে আলচনা করা হয়েছে একবার মুক্তি পাবার পর পুনরায় সংক্রমিত হয়া থেকে নিজেকে রক্ষার উপায়।
বইটির লেখক কেমন
ডোপামিন ডিটক্স বইটি লিখেছেন থিবো মেরিস যার বাংলা অনুবাদ করেছেন সাইফুল ইসলাম। বইটির লেখক থোবি মেরিস একজন আত্নউন্নয়ন বিষয়ক কোচ।মূল লেখক থিবো মেরিস “ব্যাক্তি ও ব্যাক্তিত্ব উন্নয়ন” বিষয়ক ব্লগ ও বই লেখার জন্য বিখ্যাত। বইটির বাংলা সংস্করণ মোড়কে বইটিকে “বিশ্বের সর্বাধিক ভাষায় প্রকাশিত সর্বাধিক বেস্টসেলার বই” হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
ডোপামিন ডিটক্স বইয়ের বিস্তারিত রিভিউ
নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে নিউজফিডে হারিয়ে গিয়েছি, এক ঘণ্টার জন্য পড়তে বসে তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে ফেলেছি, গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করতে গিয়ে গেমসে ডুবে গিয়েছি, জরুরী আলাপ সাড়তে গিয়ে আড্ডাতেই সময় শেষ করে ফেলেছি।
এভাবেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ করতে গিয়ে আমাদের সামনে আরেকটি কাজ এসে হাজির হয়। ফলে মূল কাজটি আর ঠিকভাবে করা হয় না বা করা হলেও যথাসময়ে শেষ করতে পারি না। এভাবে কত লক্ষ্য, কত স্বপ্নই যে অপূর্ণ রাখি আমরা, তার হিসেব নেই। কিন্তু কেন? কেন আমাদের মন এভাবে বার বার বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে? কেন আমরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলি?
ডোপামিনের ফাঁদে পড়ে। বর্তমান দুনিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তির এত ব্যাপকতা যে, আমাদের মস্তিষ্ক সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে। একটি শেষ হবার আগেই নতুন আরেক প্রলোভন এসে হাজির হয়। এই প্রলোভনের মাধ্যমেই কর্পোরেট দুনিয়া ব্যবসা করে। কিন্তু নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমরা হারাই নিজেদের জীবনের সবচেয়ে দামী সুযোগগুলো। নষ্ট করি মহামূল্যবান সময়গুলো। এজন্যই আপনাকে মস্তিষ্কের ডোপামিনকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে।
★ মস্তিষ্কের ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটারের ফাঁদে ফেলে আমাদের যে ক্ষতি করা হচ্ছে, তা কাটিয়ে উঠবার জন্য চমৎকার কিছু রাস্তা দেখিয়েছেন থিবো মেরিস। তার ওয়ার্ল্ড বেস্ট সেলিং বই ‘ডোপামিন ডিটক্স’ সেসব রাস্তাগুলো নিয়েই লেখা।
বইটা আমার পড়া বই গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সেরা বই। বইটিতে লেখক কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস শেয়ার করেছেন যে কিভাবে আমরা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের কাঙ্খিত কাজে মনযোগী হতে পারি। এমনটি না যে বইটি পড়ার পর আমি একদম সবকিছু ছেড়ে সারাদিন পড়াশোনা করার এনার্জি পেয়ে যাবো, ম্যাজিকালি এমনটা হয়ে যাবে এমন না, তবে বইটি পড়ে অন্তত একটু হলেও মানসিক প্রশান্তি পেয়েছি।
★তিনি তিন ধরনের ডোপামিন ডিটক্স এর কথা উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ
“”””(ক) ৪৮ ঘন্টার সম্পূর্ণ ডোপামিন ডিটক্স।
“””” (খ) ২৪ ঘন্টা ডোপামিন ডিটক্স।
“”””(গ) আংশিক ডোপামিন ডিটক্স।
★একটা সফল ডিটক্স জন্যে তিনটা পদ্ধতি মেনে চলুন:
“”””””(ক) আপনার মনোযোগে প্রধান বাঁধাটা কে শনাক্ত করুন। আপনার দিনের পরিকল্পনা সাজান।
“””””(খ)যে জিনিসগুলো আপনার মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে সেগুলো প্রতিহত করতে বিকল্প ব্যবস্থা নিন।
“””””(গ) লক্ষ্যের সাথে মিল রেখে সকালবেলার রুটিন (ঘুম থেকে উঠার পরে কি করবেন) তৈরি করুন।যেমনঃ (১)কোরআন তেলাওয়াত (২) ধ্যান, (৩)স্ট্রেচিং, (৪)প্রশান্তকারী মিউজিক শোনা
★উৎপাদনশীলতার মূল বিষয় ৩ টা শব্দে বলা যায়:
(ক)ফোকাস বা মনোযোগ।
(খ) ধারাবাহিকতা।
(গ) প্রভাব।
অনেক কথাই বলে ফেলেছি। এর থেকে বেশি বললে বইটি পড়ে আর ভালো লাগবেনা। তাই আর স্পয়লার দিলাম না। বইটি আমার অন্যতম একটি পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে। আশা করি যে কেউ এই বইটি পড়ে অনেক নতুন কিছু শিখতে পারবে।
হ্যাপি রিডিং।
বইটি পড়া কি সময় সাপেক্ষ?
না। মোট ৬৩ পেজের ছোট্ট কিন্তু তথ্যবহুল এই বইটি একটা টানা পড়লে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের কম সময়ে পড়ে ফেলা সম্ভব। তবে আপনার যদি নিউরোট্রান্সমিটার কি ও কিভাবে আমাদের আচরন নিয়ন্ত্রণ করে সে সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকে কিংবা একটানা পড়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে ধিরে ধিরে সময় নিয়ে পড়তে পারেন।
অনুবাদের মানঃ
জঘন্য! আমি মূল লেখকের বইটি পড়িনি। বাংলা অনুবাদটি তথ্যবহুল হলেও অনুবাদের ধরন একদম শিশুসুলভ। সরাসরি গুগল ট্রান্সলেশন ব্যবহার করলে যেমন হয়। উদাহরণ হিসেবে ১৭ নং পেজের এই লাইনটি “আপনার একশন গাইড ব্যবহার করে, একটি অতীত পরিস্থিতি লিখুন যেটা আপনি বন্ধ করতে পারেননি “! এখানে লেখক বলছে চেয়েছেন, আপানার যদি এমন অভ্যাস থাকে না করলে আপনি থাকতে পারেন না সেটি নোট করুন। আবার পেজ ১৮ তে ” এবং, আরও অত্যাধুনিক এলগরিদমকে ধন্যবাদ, কোম্পানিগুলো আমাদের আঁকড়ে ধরে রাখতে যা ব্যবহার করে”! এই ধরনের বাংলা বাক্য গঠন একমাত্র গুগল ট্রান্সলেশনেই সম্ভব। ইংরেজি বাক্যটা সম্ভবত ছিল “And thanks to algorithms…….. ” এই ধরনের অনুবাদে তাহলে মানব লেখকের কাজ কি ছিল? আমার ব্যক্তিগত মত, সম্ভব হলে মূল লেখকের ইংরেজি বইটি পড়ুন।
কোথায় পেয়েছি/ বইটি কোথায় পাওয়া যায়?
বইটি পান্ডুলিপি নামক একটা অনালাইন পেজ থেকে অর্ডার করেছিলাম। এই বইসহ মোট ৮ টি বিখ্যাত ভাষান্তরিত বই ৫৭০ টাকা ক্যাশ অন ডেলিভারিতে কিনেছিলাম। অর্ডারের ১ দিন পরেই বইটি Redex এর মাধ্যমে পেয়ে যাই।
বইটির পান্ডুলিপি/হার্ডকপি ফিজিক্যাল বইয়ের দোকানগুলো ছাড়াও অনলাইনের বিভিন্ন বুকস্টোর যেমন রকমারি থেকে কিনতে পারেন। তবে অনলাইনে পিডিএফ ভার্সনও পাওয়া যায়। আপনি চাইলে ইন্টারনেট হতে পাওয়া এর পিডিএফ ভার্সন পড়ে নিতে পারেন, যা আমাদের এই কনটেন্টের ডেসক্রিপশনে যুক্ত করা হচ্ছে।