পেতবত্থু Pdf Download (অভীক সরকার)
Petbotthu Avik Sarkar PDf download free – পেতবত্থু অভীক সরকার Pdf Download:
বইয়ের নাম: | খোড়া ভৈরবীর মাঠ |
লেখকের নাম: | অভীক সরকার |
প্রকাশনী: | পত্র ভারতী (ভারত) |
১ম প্রকাশ- Published/Edition | 2020 সাল |
Country | ভারত |
Language | বাংলা |
‘প্রেতবস্তু বলতে তুই কী বুঝিস থুবতেন? ঘন অন্ধকার রাতে, বিহারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীটির পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন দু’জন। যে মশাল এই অন্ধকার রাত্রিতে তাঁদের পথ দেখিয়ে এনেছে, সেটি প্রােথিত ছিল সামনের মাটিতে। তার আলােতে মাটিতে সদ্য-সদ্য আঁকা অষ্টভুজ ক্ষেত্রটি উদ্ভাসিত। সেদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন আচার্য রাহুলব, ওরফে প্রভু পদ্মসম্ভব। ‘খুব অল্পই বুঝি প্রভু। নিরাসক্ত স্বরে বলে থুবতেন যার ভেতরে কোনাে প্রেতাত্মাকে লুকিয়ে রাখা হয়। যার জন্য এই প্রেতবস্তু বানানাে হয়, তার সর্বনাশ ঘটে, সে সবংশে নিহত হয়। কথাটা পদ্মসম্ভবের কানে গেল কি না বােঝা গেল না।
ধীরে-ধীরে অষ্টভুজ ক্ষেত্রটিকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে পূর্ব থেকে শুরু করে দক্ষিণ হয়ে পশ্চিমপ্রান্ত ছুঁয়ে উত্তর দিকে এলেন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে কুঞ্চিত দৃষ্টিতে সমগ্ৰ ক্ষেত্রটিকে দেখলেন তিনি। তারপর সঙ্গে আনা পেটিকাটি খুলে চেয়ে রইলেন ভেতরে রাখা করােটিটির দিকে। ‘শিনজে কি প্রেত হয়ে গেছে প্রভু?’ নির্জীব স্বরে প্রশ্ন করে থুবতেন, ‘শিনজের প্রেত কি আমাকে মেরে ফেলবে? তাহলে কি শিনজের সঙ্গে আমার ফের দেখা হতে পারে? দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আচার্য পদ্মসম্ভব। যা ভয় করছিলেন তাই হতে চলেছে। উন্মাদ হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা দিতে শুরু করেছে থুবতেনের আচরণে।
“শােন থুবতেন। গম্ভীর মুখে বলেন পদ্মসম্ভব, ‘তাের মনিব আর তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এক অতি শক্তিশালী, অতি ভয়ঙ্কর প্রেতবস্তুর জন্ম দিয়েছে। এই বিশেষ প্রেকায় নির্মাণের প্রধান উপকরণ হচ্ছে কোনও হিংস্র পশুর জীবনীশক্তি। সেইজন্যই তারা হত্যা করেছে শিনজেকে। তাের শিনজে আর সে শিনজে নেই রে থুবতেন। এখন সে এক হিংস্র প্রেতশক্তি মাত্র। তার বােধ নেই, বিবেক নেই, দৃষ্টি নেই। সে শুধু জানে মৃত্যুর করাল ছায়া বিছিয়ে দিতে। জেনে রাখ থুবতেন, যতদিন এই প্রেতবস্তু পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়াবে ততদিন তাের, আমার, আমাদের কারও জীবনই আর নিরাপদ নয়। বােবা চোখে থুবতেন তাকিয়ে রইল আচার্য পদ্মসম্ভবের দিকে। ‘এই প্রেতবস্তুকে রােধ করা আমাদের আশু কর্তব্য থুবতেন। এখনও সে জাগ্রত হয়নি।
আমার ধারণা আজকালের মধ্যেই তার প্রেতচিত্ত সক্রিয় হবে। ‘তারপর?’ নিস্তেজ গলায় প্রশ্ন করে থুৰতেন। ‘তারপর?’ চাপা গলায় বললেন পদ্মসম্ভব, তারপর এক ভয়াবহ, অপ্রতিরােধ্য মহামার নেমে আসবে প্রকৃতির বুকে। একের পর এক মৃত্যু ঘটবে মানুষের। মারীতে উজাড় হয়ে যাবে গ্রামের পর গ্রাম। অপঘাতে মৃত মানুষের প্রেতদল পাতাল থেকে তুলে আনবে মহানরক। বজ্ৰখড়গ আর নরকপাল হাতে নেমে আসবেন দেবী চামুণ্ডা স্বয়ং। একবার যদি এই প্রেতকায়ার মুক্তি ঘটে, তাহলে মহা সর্বনাশ। তখন তাকে প্রতিরােধ করা স্বয়ং ঈশ্বরেরও অসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। অস্ফুটে একটিমাত্র শব্দ উচ্চারণ করে থুবতেন, তাহলে? চিন্তিত দেখায় ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ তন্ত্রবেত্তাকে। অন্যমনস্ক স্বরে বলেন, সাধারণ কোনাে উপায়ে এই প্রেতবস্তুর বিনাশ সম্ভব নয় থুবতেন। যে মন্ত্রবীজের দ্বারা এই প্রেতবস্তুর অন্তৰ্কায় নির্মিত তা এই দেশের নয়।
একমাত্র পােন পুরােহিতরাই এই প্রেতবন্ধনমন্ত্রে সিদ্ধ। আর যতদিন এই বন্ধন বজায় থাকবে, ততদিন শিনজে’র আত্মার মুক্তি নেই। অনাদিকাল পর্যন্ত সে এই প্রেতচক্রের অধীন হয়ে থাকবে। নরকের অগ্নি অনন্তকাল ধরে জ্বলতে থাকবে তার বুকে। এই বীভৎস প্রেতদেহ থেকে তার পরিত্রাণ নেই, তার মুক্তি নেই, তার উদ্ধার নেই। ‘কিন্তু… ওরা যে আমাকে বলেছিল, আপনি নাকি জীবন্ত অবলােকিতেশ্বর? থুবতেনের ক্লান্ত বিবর্ণ চোখদুটির কোণে জেগে ওঠে দু’টি অশ্রুকণা। আপনি পারেন না প্রভু? পারেন শিনজেকে উদ্ধার করতে? আমি ছাড়া যে ওর আর কেউ নেই প্রভু।
ডাউনলোড লিংকঃ-