Books
সমাজকর্ম বই অনার্স ১ম বর্ষ Pdf Download
সমাজকর্ম বই অনার্স ১ম বর্ষ pdf free Download – National University Book Pdf link
আরও পড়ুন-
বই: ফ্রন্টলাইন
উপন্যাসের কাহিনির সূত্রপাতস্থল আন্দামান সমুদ্র। মালয়েশিয়াগামী তিনশ রোহিঙ্গা যাত্রী বাংলাদেশ পেরিয়ে যেতে সক্ষম হলেও বাধাগ্রস্ত হয় মুনাউং দ্বীপের কাছাকাছি। থেমে যায় তাদের স্বপ্নযাত্রা। উপরন্তু তাদের অধিকাংশদের শরীরে করোনার ভাইরাস। মাঝসমুদ্রে ভেসে বেড়ানো ছাড়া কিছুই করবার থাকে না এই অসহায় মানুষগুলোর। একটা স্থলজ ভূখণ্ডের অভাবে স্রোতের শেওলার মতন ভাসতে হয় তাদের।
পথিমধ্যে নাসিরুদ্দিন নামে এক যুবকের মা মারা যায়। উপয়ান্তর না দেখে দায়সারা জানাজা পড়িয়ে বেচারির লাশকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয় অনন্যোপায় নাসিরউদ্দিন। এই কঠিন পরিস্থিতি তাকে দেয় এক আশ্চর্য শিক্ষা- জাগতিক তাবৎ ভয় আর প্রত্যাশাকে ডিঙ্গিয়ে যাবার শিক্ষা…
নাসিরউদ্দিনদের আশ্রয় হয় বাংলাদেশের রিভিউজি ক্যাম্পে। কপালের ফেরে স্বদেশ, স্বভূমি থাকা সত্ত্বেও তাদের উদ্বাস্তুর মতো জীবন যাপন করতে হয়। কিন্তু সেখানেও শান্তি কই! উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে নশু নামক ডাকাতবাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় হয় সার্বক্ষণিক।
পড়ে পড়ে মার খেতে খেতে যখন হতাশ এই অসহায় মানুষগুলো তখন আগমন ঘটে নতুন এক চরিত্রের- মেজর শাফায়াত। ইমাম সামিউল হাসানের সাথে আলোচনার প্রাক্কালে তিনি বলেন:
“উই নিড এ হিরো।”
হিরো! কে সে? ইমাম সাহেবের দূরদর্শিতা একজনের কথাই বলে- নাসিরউদ্দিন…
এই সেই নাসিরউদ্দিন, যে আন্দামান সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল তার জন্মদাত্রী মায়ের লাশ- একইসাথে তার সমস্ত পিছুটান, দুর্বলতা।
লড়াইটা প্রথমে শুরু হয় নশু বাহিনীর বিপক্ষে। তারপর ক্ষুদ্র স্বার্থ থেকে তারা অগ্রসর হয় বৃহৎ স্বার্থের দিকে -তাদের দেশমাতৃকা মায়ানমারের মাটিতে প্রোথিত নাড়ির শেকড় উদ্ধারে। কী হবে এরপর? দীর্ঘদিন ধরে অন্যায় আর শোষণের যাতাকলে পিষ্ট হওয়া এই মুসলমান জনগোষ্ঠীটি কি পারবে তাদের অধিকার আদায়ের মাধ্যমে ইনসাফকে প্রতিষ্ঠা করতে? নাকি আবারও বরণ করবে পরাজয়ের মালা জানতে হলে পড়তে হবে ‘ফ্রন্টলাইন’।
একসময় পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বুকে রাজত্ব করা মুসলমান জাতিটি তাদের গৌরব হারিয়েছে অনেকদিন আগেই যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে। যুগে যুগে একটা যোগ্য নেতার অভাববোধ করেছে তারা। এ অভাববোধ প্রকাশিত হয়েছে ফররুখ আহমদ, কাজী নজরুল ইসলামের কলমে। ‘পাঞ্জারী’, ‘কাণ্ডারী হুশিয়ার’ কবিতাদ্বয়ে আলোচিত হয়েছে সেসব দরকার। ‘ফ্রন্টলাইন’ পড়তে গিয়ে আমার বারংবার এই দুইটি কবিতার কথাই অন্তঃকরণে প্রবলভাবে নাড়া দিচ্ছিল। আমার প্রিয় দারবিশ লতিফুল ইসলাম শিবলী কি সেটাই চান? দেশের এমন দুর্যোগে হাতে আলোকবর্তিকা নিয়ে একজন যোগ্য পথপ্রদর্শক, হাল ধরবার মত একজন দক্ষ মাঝি?
ফ্রন্টলাইনে মূলত এই প্রয়োজনই আলোচিত হয়েছে। আর তার সাথে লেখক খুব নিপুণতা আর আধুনিকতার সাথে দেখানোর চেষ্টা করেছেন এ থেকে উত্তরণের পথ।
কল্পিত প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম, মেজর শাফায়াত, ইমাম সামিউল হাসানের মতো উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী চরিত্রগুলো নাসিরউদ্দিনের পাশাপাশি সাহস যোগাবে পাঠককেও। শক্তি যোগাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অকুতোভয় চিত্তে মাথা তুলে দাঁড়াবার।
বর্ণনাশৈলির চমৎকারিতে পূর্বের মতোই মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। টুকটাক দু-একটা প্রিন্টিং মিস্টেক নজরে এসেছে যা পরবর্তীতে সংশোধনের দাবি রাখে। ভালো লেগেছে বিভিন্ন চরিত্রকে দিয়ে বলানো লেখকের উদ্ধৃতিগুলো-
***”হিরোরা প্রতিদিন জন্মায় না, কখনো কখনো কোনো জাতির হাজার বছরও লেগে যায় একটা হিরো পেতে।
***জেগে ওঠা মানুষ হলো পাহাড়ের মাথা থেকে লাফিয়ে নামা ঝরনার মতো, তাকে আর গাইড করার প্রয়োজন হয় না। সে জানে তাকে কী করতে হবে আর কোথায় যেতে হবে।”
***নেতা হবার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা হলো নেতা হতে চাওয়া।”
***বল কখনোই খেলোয়াড় হতে পারবে না, সে চেষ্টাটাই ভুল। “
পরিশেষে ভালো লেগেছে ফ্রন্টলাইন। যারা পড়েননি তাদের পড়বার আমন্ত্রণ।