দ্য প্রফেট বাংলা অনুবাদ Pdf Download
দ্য প্রফেট আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ বাংলা অনুবাদ pdf free – দ্য প্রফেট কাহলিল জিবরান pdf download – the prophet kahlil gibran pdf download bangla
book | দি প্রফেট |
Author | কহলীল জিবরান |
Publisher | মাওলা ব্রাদার্স |
Quality | হার্ডকভার |
file | pdf download – পিডিএফ |
Edition | 2nd Printed, 2015 |
Number of Pages | 112 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
রিভিউ:
পৃথিবীতে মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তিদের একজন মুহাম্মাদ (সাঃ)। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে, এককভাবে সবচেয়ে বেশি ভক্তিশ্রদ্ধা পাওয়া মানুষের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে, (প্রথম স্থানে যিশুখ্রিস্ট/ঈসা আঃ)। পৃথিবীর প্রায় ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদ (সাঃ)। কিন্তু আমরা আমাদের রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে আসলে কতটুকু জানি? তাঁর জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কেই বা আমাদের ধারণা কতটুকু গভীর এবং কার্যকর?
.
সাধারণত জীবনচরিতকে আরবী সাহিত্যের ভাষায় সীরাহ (سيرة) বলা হয়ে থাকে, যার শাব্দিক অর্থ পথ। শুরুতে পৃথকভাবে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সীরাহ সংকলন করা না হলেও তাঁর জীবনের ঘটনাগুলো হাদিসে এবং নির্দিষ্টভাবে মাঘাযি হিসেবে সাহাবী এবং তাবে’য়ীদের মধ্যে প্রচলিত ছিলো। মাঘাযি শব্দের অর্থ যুদ্ধ, যা মহানবী (সাঃ)-এর জীবনের শেষদিকের সিংহভাগ; তবে ব্যাবহারিকভাবে এ দ্বারা তাঁর জীবনকেই নির্দেশ করা হতো। প্রাথমিকভাবে বেশ ক’বার সমগ্র জীবনী সংকলনের চেষ্টা সত্ত্বেও সর্বপ্রথম ৭৬৭ খৃষ্টাব্দের দিকে প্রথম পূর্ণাঙ্গ সীরাহ সংকলিত হয় মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের হাত ধরে, যা পরবর্তী সকল সীরাহ গ্রন্থসমূহের রেফারেন্স এবং হাদিস এবং কুর’আনের বিভিন্ন অংশের নাযিলের ইতিহাসের সাথে বিভিন্নভাবে যোগসূত্র হিসাবে কাজ করে। এর পরের কয়েক দশকে আরো কিছু সীরাহগ্রন্থ সংকলিত হয়, ইবনে হিশাম, ইবনে কাসীর প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। হাদিস এবং সীরাহ সাহিত্যের মধ্যে বড় পার্থক্য ছিলো, হাদিসের মতো সীরাহ সাহিত্যে নির্ভুলতা এবং সত্যতাকে ততোটা কঠোরভাবে পালন না করে কিছুটা স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।
.
এখন এ বিশাল পটভূমির পরের অংশে আসা যাক। আন্তর্জাতিক প্রায় সকল ভাষাতেই প্রাথমিক সীরাহগ্রন্থগুলো অনুবাদের পাশাপাশি কিছু মৌলিক কাজও হয়েছে এর উপর। তবে বাংলা ভাষায় প্রাথমিকভাবে, কবি গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখের কিছু প্রচেষ্টা দেখা গেলেও এরপরে যেন সাধারণ জনমানুষের সাহিত্য থেকে আস্তে আস্তে সীরাহসাহিত্য হারিয়ে যায়। ফলাফল, নবীজীর (সাঃ) জীবন সম্পর্কে স্কুলের ইসলাম শিক্ষা বই থেকে বুড়ির কাটা দেয়া, হেরা গুহার ধ্যান, খন্দকের পরীখা খনন আর ওমরের খোলা তলোয়ার নিয়ে এগিয়ে আসা বাদে খুব কম ঘটনাই সাধারণ মানুষের কাছে পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে।
.
আধুনিককালে বেশ কিছু প্রচেষ্টা হয়েছে এ ধারায়, তবে নিতান্তই ধর্মীয় বিষয় থেকে বেরিয়ে সাধারণভাবে সবার কাছে পৌঁছানোর জন্য এখনো অনেক রাস্তা বাকি। এখানের পুরো আলোচনার কারণ আজকের বইটি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে পাঠককে প্রস্তুত করা।
.
বইটি “দ্য প্রফেট”,
লেখিকা লেজলি হেইজেলটন, পেশায় একজন সাংবাদিক।
মূল ” The First Muslim” বইটির বাংলায় অনুবাদ করেছেন Abdullah Ibn Mahmud ।
বাংলাদেশে “আদী প্রকাশন” বইটির প্রকাশনায় কাজ করেছে।
.
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবনবৃত্তান্ত বিভিন্ন দেশের মুসলিম অমুসলিম সবাইকেই বিভিন্নসময় বিভিন্নভাবে আকৃষ্ট করেছে। তবে এ নিয়ে কাজ করা খুব কম মানুষই নিরপেক্ষ থাকতে পেরেছেন। এদের মধ্যে একজন লেজলি হেইজেলটন। জাতিগতভাবে ইহুদী হলেও বিশ্বাসগতভাবে তিনি অজ্ঞেয়বাদী। বি.দ্র. ইহুদী শুধু ধর্মীয় না, জাতিগত পরিচয়ও, কারণ ইহুদী ধর্ম একটি জাতিভিত্তিক ধর্ম।
.
তা এই জীবনীগ্রন্থের বিশেষত্ব হচ্ছে যে, আয়তনে কম এই সাহিত্যকর্মটিতে লেখিকা মূলত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে একজন পশ্চিমার চোখে যতটা সম্ভব নিরপেক্ষভাবে, একজন মানুষ হিসাবে পর্যবেক্ষণ এবং মনোবৈজ্ঞানিক দিক থেকে বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া গতানুগতিক পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্ট সাহিত্যিকদের ইসলাম এবং নবী (সাঃ) সম্পর্কিত ভুলধারণা এবং কুযুক্তিগুলোও যতোটা সম্ভব খন্ডনের চেষ্টা করেছেন। ইহুদি ধর্মীয় ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ক্লাসিক সীরাহ, ইতিহাস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকায় ঘটনাপ্রবাহ বুঝতে, এবং বিশ্লেষণ করতে খুব বেশি বিপাকে পড়তে হয়নি। কিছু বিচ্ছিন্ন ভুল যদিও মূল গ্রন্থে ছিলো, কিছু অস্পষ্ট আলোচনা, যা পরে অনুবাদক পরিষ্কার করে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
.
অনুবাদের দিক থেকে দেখলে এটি অবশ্যই একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অনুবাদক শুধু আক্ষরিক অনুবাদে না গিয়ে নিজেও যথেষ্ট গবেষণা করে তথ্যসমূহ যাচাই এবং টীকাপ্রদান করেছেন। মূলগ্রন্থের বেশকিছু ভুল ভালোভাবেই অনুবাদে সংশোধন করা হয়েছে।
.
এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখা ভালো। এ বইটি পড়ার আগে অবশ্যই পাঠকের অন্য পূর্ণাঙ্গ সীরাহগ্রন্থের সাথে পরিচয় থাকা প্রয়োজন। এর কারণ এ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত হওয়া। প্রাথমিক ধারণার জন্য আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরীর “আর রাহীকুল মাখতুম (The Sealed Nectar)” উৎকৃষ্ট এবং অবশ্যপাঠ্য। এর বাইরে সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভীর “নবীয়ে রহমত”, মার্টিন লিংগসের “মুহাম্মাদ সা.” উল্লেখ করা যায়।
.
সর্বোপরি, এই বইটি মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনকে জানা এবং ভিন্ন আঙ্গিক এবং মুসলিম হিসাবে ধর্মীয় আবেগের বাইরে থেকে একবার দেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এবং সীরাহ এমন একটি বিষয় যা একবার পড়ে ফেললেই শেষ হয়ে যায় না। সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে সবচেয়ে বেশি বেশি জানাটাও জরুরি। সব মিলিয়ে বইটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। লেখিকার কথার ভঙ্গিমা, অনুবাদকের দুর্দান্ত অনুবাদ, ভাষাশৈলী; পছন্দের সীরাহগ্রন্থসমূহের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে সহজেই।
.
লেখায় ভুলত্রুটি থাকা স্বাভাবিক, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আবেদন রইলো।