ট্রেজার আইল্যান্ড Pdf download
ট্রেজার আইল্যান্ড pdf download free translated – treasure island bangla pdf download links-
বই: ট্রেজার আইল্যান্ড
লেখক: রবার্ট লুইস স্টিভেনসন
অনুবাদ: প্রদীপ কুমার সেন
প্রকাশনী: আজকাল
মূল্য: ২০০ টাকা
জনরা: অ্যাডভেঞ্চার, থ্রিলার, কিশোর ক্লাসিক
“আমার হাত বান্ধিবি পা বান্ধিবি,
মন বান্ধিবি কেমনে”
লোকগীতির এই লাইন দুটি নর-নারীর প্রেমের ফলে সৃষ্ট অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণকে নির্দেশ করে। তবে এক ভিন্ন অর্থে এই লাইন দুটিই হয়ে উঠে লেখক রবার্ট লুইস স্টিভেনসনের জীবনের প্রতিচ্ছবি। কিশোর বয়সে স্টিভেনসন আর পাঁচজনের মতো দূরন্তপনায় মেতে উঠতে পারেনি, রোগের শিকল তাকে আবদ্ধ করে রাখে ঘরের কোণে। তবে সেই শিকল তার মনকে আবদ্ধ করতে তো পারেই নি, বরং করে তোলে আরো দূরন্ত। দূরন্ত চিত্তের সাধ মেটাতে লেখক কল্পনার দুয়ার খুলে প্রবেশ করে এক ভিন্ন জগতে। সেই জগতে অসীম ক্ষমতা তার, অদৃষ্টও হার মানে তার কাছে। সেখানে তিনি চাইলেই পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ছুটে যেতে পারেন গুপ্ত রত্নভান্ডারের খোঁজে; কিংবা ছুটে যেতে পারেন পৃথিবী ছাড়িয়ে দূর অজানায় কোনো এক গ্রহের তরে। লেখকের কিশোর মনের এসব কল্পনাগুলো লিপিবদ্ধ করার ফলে সৃষ্টি হয় “ট্রেজার আইল্যান্ড”, “কিডন্যাপড” এর মতন অসামান্য কিছু বই, যা আজও পুলকিত করে পাঠকদের। অদৃষ্টের বিচিত্র খেলায় যেই ফুসফুসের ব্যাধি স্টিভেনসনের জন্য হয়ে ওঠে কাল, সেটাই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাঠকদের কাছে হয়ে ওঠে আশীর্বাদ।
নিজেদের সরাইখানা “অ্যাডমিরাল বেনবো”কে ঘীরে বেশ সাবলীল আর নিরীহ গোছেই দিনগুলো কাটছিলো যুবক জিম হকিন্সের। বদমেজাজি ক্যাপ্টেন বিলি বোনসের আগমনে বিষিয়ে ওঠে সরাইখানার পরিবেশ। এক পর্যায়ে বিলি বোনস মারা গেলে তার সিন্দুক থেকে নিজের পাওনা বুঝে নিতে গিয়ে হকিন্স পেলো একটা ম্যাপ। ম্যাপটা ঘীরে জিম হকিন্সের জীবনের সবচেয়ে আতংক পূর্ণ ঘটনাগুলো ঘটে গেলো। একই সঙ্গে উন্মোচিত হলো বিরাট সম্ভাবনার দ্বার, কারণ ম্যাপে রয়েছে গুপ্তধনের হদিস! ডাক্তার লিভজি আর জমিদার ট্রেলনির সহায়তা নিলে সেটা বুঝতে পারে হকিন্স। মানচিত্র অনুযায়ী তারা বেরিয়ে পড়লো সমুদ্রযাত্রায়, গন্তব্য গুপ্ত রত্নভান্ডার আগলে রাখা ট্রেজার আইল্যান্ড। নিজের একঘেয়ে আর নিরীহ জীবনটা যেন অসহ্য হয়ে উঠেছিল তারুণ্যের তেজে উদ্দীপ্ত হকিন্সের কাছে। অ্যাডভেঞ্চারের ঝোঁকে সেও জাহাজে চেপে বসলো বিশেষ অতিথি রূপে। সেই সঙ্গে রাঁধূনী বেশে উঠে পড়লো ধূর্ত জলদস্যু লং জন সিলভার। খোঁড়া সিলভার যেন উত্তাল সমুদ্রের চেয়েও বেশি ভয়াবহ। সেই এক সিলভারই নিছক এক গুপ্তধন উদ্ধারের অভিযানকে বাঁচা মরার লড়াইয়ে রূপ দেবার নেপথ্য ভূমিকা পালন করে। ঘনিয়ে আসতে থাকে বিদ্রোহের মানবসৃষ্ট ঝড়। প্রায় সকলেই সিলভারের পাতা লালসার ফাঁদে ফেসে যায়, নৈতিকতা বিকিয়ে যোগ দেয় তার দলে। খুন-জখম, স্নায়ুযুদ্ধ পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে এগোতে থাকে গল্প।
হকিন্সদের ছোট্ট দলটা কিভাবে মোকাবিলে করবে সিলভারদের? কি হয় শেষ পর্যন্ত জাহাজের অভিযাত্রীদের? গুপ্তধন কি ধরা দেবে কারোর নিকট?
রোমাঞ্চ, টুইস্ট আর দুর্ধর্ষ এডভেঞ্চারে ঠাসা এক গুপ্তধন উদ্ধারের অভিযান জিম হকিন্স বর্ণনা করে “ট্রেজার আইল্যান্ড”এ। মূল ঘটনা প্রবাহে প্রবেশ করতে কিছু সময় নিয়েছেন লেখক। তবে গল্পের মূল ধারায় প্রবেশের পর থেকে আমার আগ্রহ আর আকর্ষণ বাড়তে থাকে৷ গোলাবারুদের লড়াই যেমন রোমাঞ্চিত করে, তেমনি লড়াইয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক দিকটা মানসিক চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি করে। ভিন্ন আর বিপদসংকুল পরিবেশে এসে জিম হকিন্স বেপোরোয়া হয়ে ওঠে৷ হকিন্সের সব দুঃসাহসিক আর উদ্ভট পদক্ষেপ গুলো বেশ উপভোগ করি আমি৷ অন্যদিকে লং জন সিলভারের প্রতি সৃষ্টি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সেখানে নিঃসন্দেহে ক্রোধের পরিমাণটাই বেশি, তবে তার বিচক্ষণতাতে সৃষ্ট মুগ্ধতার পরিমাণও কম নয়। শেষ পরিণতি তৃপ্তিদায়ক। আমার মতে শুধু কিশোরই নয়, বরং বড়দের কাছেও বইটা হবে সুখপাঠ্য।
ব্যক্তিগত রেটিং- ৮/১০
পিডিএফ ডাউনলোড –